বুধাইপুড়ি বিলে কাটানো কিছুসময়
04-06-2022
২১ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। অনেকদিন হয়ে গেলো বাড়িতেই আছি। ঐদিকে আমার কলেজ খোলা হয়ে গেছে, নিয়মিত ক্লাসও হচ্ছে। আর আমি এখনও বোকার মতো বাড়িতেই বসে আছি! তার অবশ্য কারণ রয়েছে। আমি যেখানে থাকি অর্থাৎ যে মেসে থাকি আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে থাকি। ঈদের আগে বাড়িতে এসেছিল তারপর তাদের অনেকের ধান কাটার ধুম পরে যায়। ধান নিয়ে তারা সবাই রীতিমত ব্যস্ত হয়ে পরে। আরও কয়েকজনের কিছু পারিবারিক সমস্যা রয়ে গেছে। কি আর করার! একা একা তো আর মেসে গিয়ে থাকা যাবেনা। পুরাদমে ক্লাস হয়ে যাচ্ছে কলেজে। অনেকগুলো ক্লাস মিস করে ফেলেছি। আর এখন সপ্তম সেমিস্টারে আছি। এই সেমিস্টারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আর বাড়িতে বসে থাকতে পারতেছিনা। কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিয়ে বললাম যাবে কিনা! দুইজন রাজি হলো আর বাকিরা পরে আসবে। তো আমি ১ তারিখে অনলাইনে টিকেট কেটে ফেলি বিজয় ট্রেনের। আগামীকাল আমার ফেনীতে যাওয়ার তারিখ। রাতে অবশ্য ট্রেন ছাড়বে।
কাল চলে যেতে হবে ফেনী। ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাড়িতে প্রায় এক মাসের উপরে। ফেনীতে মনটা চাইছিলনা। তবে কি আর করার পড়াশোনার জন্য তো যেতেই হবে। মনটা একটু খারাপ ছিল। আর সকাল থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বাহিরে কোথাও বের হওয়াও মুশকিল। দুপুরের পরে অবশ্য বৃষ্টি থামলো তবে আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন রয়ে গেল। এরকম ওয়েদারে বাহিরে ঘুরলে মন্দ হয়না। আমাদের গ্রামের ভিতরে একটি বিল আছে। বিল বা খাল যাই বলেন। এই বিল বা খালের নাম হচ্ছে বুধাইপুড়ি বিল। এখানে গিয়ে মাঝে মাঝে আমি একা বসে থাকতাম। অনেকদিন হলো যাওয়া হয়না। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই চলে গেছে বুধাইপুড়ি বিলের দিকে একটি রাস্তা। হেটেঁ গেলে দশ মিনিটের মতো লাগে। দুপুরের পরে আমার ফুফাতো ভাই আসলো তার সাইকেলটা নিয়ে। ভাবলাম সাইকেল চালিয়ে গেলে মন্দ হয়না।
বেরিয়ে পড়ি বুধাইপুড়ি বিলের দিকে। সাইকেল চালিয়ে গেছি এজন্য বেশিক্ষণ লাগেওনি। এই বিলের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বিলের মাঝে আমাদের একটা জমি ছিল। ঠিক তারপাশে একটি ভূট্রা ক্ষেত ছিল। আমার বাবা যখন জমিতে কাজ করতো তখন বাবার জন্য এখানে খাবার নিয়ে আসতাম। আর এখানে সবসময় পানি থাকতো। জমি কখনো শুকায় না বললেই চলে। বাবাকে খাবার দিয়ে ভূট্রা ক্ষেত থেকে ভূট্রা চুরি করে নিয়ে আসতাম! হাহাহা। এখন দেখি ভূট্রা ক্ষেত নেই। তবে পাটশাক চাষ করা হয় জমিতে। আর বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বাধ বেধেঁ বোলের পাত্র দিয়ে পানি কমিয়ে মাছ ধরতাম। কতো মাছ ধরেছি এই বিল থেকে।
বিলের মাঝ দিয়ে দেখলাম পিচঢালা রাস্তা হয়েছে। আগে এ রাস্তাটা মাটির ছিল। বিলের ওপারের মানুষগুলো অনেক কষ্ট করে মাটি রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হতো যখন বর্ষার মৌসুম আসতো। এ সময় রাস্তা পানিতে তলিয়ে যেত। জমির ফসল সব তখন পানিতে ডুবে যেত। বিলরে বাধের এখানে ভালো বেগে পানি প্রবাহিত হতো। আর সেখানে ছোট টাকি জাল ফেলে মাছ ধরতো। আমার এখনও মনে আছে সেই মাছ ধরার কথা। পানির বেগের মাঝে জাল ফেলে রাখতো আর ছোট ছোট অনেক মাছ উঠতো। খুব আনন্দ হতো তখন মাছ ধরা দেখে। তবে দুর্ভোগও পোহাতে হতো। কারণ চলাফেরা করতে কষ্ট হয়ে যেত মানুষজনের।
এখন যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়েছে। বিলের বাধের মাঝে এখন একটি ছোট করে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বেশি পানি হয়ে গেলে এপারের পানি ওপারের বিলে প্রবাহিত হতে থাকে। আর বর্ষার মৌসুমে এখন রাস্তাও ডুবে যায়না। তবে ফসল পানিতে তলিয়ে গেলেও সেটা বেশিক্ষণ এর জন্য না। পানি বাধ দিয়ে চলে গেলে আবার সেই আগের মতো হয়ে যায়। এখন ধানকাটা শেষ। জমি পানিতে ভরপু। পানির প্রবাহ এখন কম। আর কিছুদিন পরেই বর্ষাকাল। মাছ ধরার হিড়িক পড়ে যাবে এখানে। মাছ ধরার দৃশ্য যদি আপনি দেখেন তাহলে আপনিও মুগ্ধ হয়ে যাবেন। সেই কবে দেখেছি আমারও ঠিক মনে নেই।
সব থেকে ভালো লাগে বিলের দুইপাশেই বিস্তৃত গ্রাম। গ্রাম দুটির নাম অবশ্য একই। গ্রামের দুপাশের দৃশ্যগুলো দেখলেও মন ভালো হয়ে। চোখ যেন অনেকদূর পর্যন্ত হারিয়ে যেতে চায়। পানি এখন বেশি এজন্য পানির প্রবহ ধারা দেখতে পাওয়া যায়। বাতাসের বেগটা এখানে সবসময় যেন বেশি থাকে। গরমকালে মানুষজন এখানে বসে বিশ্রাম করে। কৃত্রিম বাতাসের থেকে প্রকৃতির দেয়া বাতাস উপভোগ করা এ যেন অন্যরকম ফিলিংস। অনেকদিন পরে গিয়ে কিছুক্ষণ বাধের উপর বানানো ব্রিজের উপর বসে থেকে আশেপাশের পরিবেশ উপভোগ করি। কাল চলে যাবো ফেনী। এজন্য গ্রামের সৌন্দর্য আরেকটু উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। এ বিলটা আমার অনেক চিরচেনা। আগের থেকে অনেকটা রুপ পরিবর্তন হয়েছে। তবে সৌন্দর্য যেন আগের মতোই আছে। এরকম কোলাহলপূর্ণ জায়গায় গেলে নিমিষেই আপনারও মন ভালো হয়ে যাবে।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 4 june , 2022 |
ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। কিছু কথা ও কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালোই লাগছে। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন বিলে এগুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। এইরকম সুন্দর দৃশ্য পটভূমি ও উপভোগ করতে খুবই ভালো লাগে ।আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ভাই
বিল মানে একরাশ স্বস্তিকর অবস্থা। বিকেল বেলা নদীর পাড়ে এভাবে বসে থাকতে সত্যিই খুব ভালো লাগে ।সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এখানে পাঁচ মিনিট বসে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আপনার প্রতিটি কথা আমার ভালো লেগেছে এবং উপস্থাপনা সুন্দর ছিল
একদম ঠিক বলেছেন সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এখানে গিয়ে বসলে মনটাই ভালো হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে
বুধাই পুড়ি নামটা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আসলে আমি একজায়গায় গিয়েছিলাম সে জায়গার নাম ছিলো ভোদাই। যাইহোক, আপনার পোস্ট পড়ে ও সুন্দর ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আমি রীতিমতো মুগ্ধ ভাই। আপনার জন্য আর পক্ষ্য থেকে ভালোবাসা রইলো ভাই।
হাহাহাহ!! ভাই নামটা একদম আনকমন 😂। এলাকায় এই নামেই ডাকে। ধন্যবাদ আপনাকে
বুধাইপুড়ি বিলে কাটানো কিছুসময় দেখে অনেক ভালো লাগলো। যায়গায় নামটি কিন্তু অনেক সুন্দর। আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগছে। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হুম জায়গাটা সুন্দর এবং নিরিবিলি পরিবেশ। ধন্যবাদ আপনাকে
খুবই সুন্দর একটা জায়গা দেখলেই বোঝা যায় আসলে এরকম জায়গায় বসে থাকতেও ভাল লাগে। তবে আপনার এই বিলটি নাম শুনে আমি সত্যিই খুবই মজা পেলাম। হাসি পেয়েছিল তবে যাইহোক আপনার খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন অনেক ভাল ছিল আপনার পোস্ট।
হাহাহা ভাইয়া বিলের নামটি একদম আনকমন 😁। ধন্যবাদ আপনাকে
বুধাইপুড়ি বিল নামটি সুন্দর। তবে বিলের মাঝে রাস্তা ও কালভার্ট মনে হল।ধান কাটার সময় এমন টা হবেই । বাড়ীতেই সময় দিতে হবে। তবে পড়াশুনার দিকে নজর দেয়াটা উচিৎ। যা হোক ভাল মত যান গন্তব্যে । ভাল থাকবেন।
হ্যা ভাইয়া পড়াশোনাই মনোযোগ দেয়া দরকার আরেকটি সেমিস্টার বাকি আছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া 😍
আপনি দারুন একটি পরিবেশে দারুণ সময় কাটিয়েছেন। বিকেলবেলা বিলের ধারে বসে থাকতে আসলে অনেক ভালো লাগে। আপনার সুন্দর ভাবে গুছিয়ে আপনার পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন
সত্যি বলতে কি ভাই সপ্তম সেমিস্টার টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সেমিস্টারের ফলাফলের উপর টোটাল সিজিপিএ নির্ভর করে তাই আমি মনে করি আপনার উচিত মনোযোগ দিয়ে এই সেমিস্টারটা কমপ্লিট করা। গ্রামের দৃশ্য দেখলে আমাদের সকলেরই মন ভালো হয়ে যায় । কারণ গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য সব সময়ই আমাদেরকে আকৃষ্ট করে। ধন্যবাদ আপনাকে।
এ ধরণের পরিবেশের সাথে সময় কাটাতে আসলেই অনেক ভালো লাগে ভাইয়া।বুধাইপুড়ি বিলে কাটানো চমৎকার কিছু মুহূর্ত আজকে আপনি আমাদের মাঝে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। আপনার কাটানো মুহূর্ত গুলো দেখে আমারও ইচ্ছা হচ্ছে এ ধরনের পরিবেশে সময় পার করতে।