ব্যস্ত শহরে ফেরা
07-06-2022
২৪ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। তবে সম্প্রতি সীতাকুন্ডের আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ মারা গেলো এটা শুনে খারাপ লাগছিল খুব। সরকারী কর্মকর্তাসহ অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে মালিক পক্ষ বলেছিল ফ্যাক্টরিতে এক্সপোর্ট এর জিনিসপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু সেখানে ক্যামিকেল উপাদান ছিল। যার ফলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সীতাকুণ্ড এর নিউজটা আম্মাও শুনেছিল। এজন্য অবশ্য আমাকে ফেনী যেতে না করতেছিল বার বার। ট্রেনের রাস্তায় যদি কিছু হয় আবার! আসলে মায়ের মন তো এমনই। সন্তানের মঙ্গল যিনি ভাবে সর্বদা।
আপনারা হয়তো জানেন আমার কলেজ খোলা হয়ে গেছে। পুরা দমে কলেজে ক্লাস হচ্ছে। আর একটি সেমিস্টারই বাকি আছে। শেষটা ভালো করা দরকার। কথায় আছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। গত ১ তারিখে আমি অনলাইনে টিকেট বুকিং দেয় বিজয় এক্সপ্রেস এর। টিকেট কাটতে গিয়ে আবার আরেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। এক বন্ধুকে বলেছিল স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে। কিন্তু দুদিন ধরে সে স্টেশনে গিয়েও টিকেট পায়নি। আর পাবেই বা কি করে ট্রেনের টিকেট যে আগেই ব্ল্যাকাররা নিয়ে নেয়। তারপর সেটা বেশি দামে বিক্রি করে। আমার বন্ধু নিশাদ একসাথেই পড়াশোনা করি। আর একই মেসে থাকি। তাকে বলেছিলাম টিকেট সংগ্রহ করতে। কিন্তু পরে শুনে যে লোককে বলেছিল টিকেট দিবে দুইটা পরে শুনি এখন নাকি একটা টিকেট আছে। আমি বললাম তাহলে একটা টিকেট সংগ্রহ করে তুমি ফেনী চলে যাও। সে একটা টিকেট পেয়ে দুইতারিখে ফেনীর উদ্দেশ্যে চলে যাবে।
পরে অবশ্য অনলাইনে টিকেট পেয়েছি। তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে যেন সবকিছুর দামই বাড়া শুরু করছে। আগে টিকেট ছিল ২৮০ টাকা আর এখন সেটা হয়ে গেল ৩১৫ টাকা। অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করলে সার্ভিস চার্জ সহ ৩৩৫ টাকা। এমতাবস্থায় চলাচল করাই কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে। কি আর করার আছে বাসে আসলে ৬০০ টাকার উপরে ভাড়াই লেগে যাবে আর ঝামেলা তো আছেই। এজন্য ট্রেনের সেবাটাই ভালো আমার জন্য। চেয়েছিলাম ৪ তারিখে ফেনী এসে পড়তে কিন্তু অনলাইনে কোনো টিকেট পেলাম না। আগেই সব বুকিং হয়ে গেছে। তাই ৫ তারিখের টিকেট সংগ্রহ করলাম। এস চেয়ার ছিল বুকিং সিট নাম।
সকাল থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ভাবতেছিলাম সারাদিন বৃষ্টি হলে তো বাহিরেই যাওয়া যাবেনা। সেই ঈদের আগে বাড়িতে এসেছিলাম পরিবারের সবার সাথে ঈদ করতে। দেখতে দেখতে সময়টা কিভাবে চলে গেল টেরও পেলাম না! ইচ্ছে ছিল আরও কয়েকদিন বাড়িতে থাকার। কিন্তু কি আর করার যেতে যে হবেই। না হলে ক্ষতি হয়ে যাবে। মনটাও ভীষণ খারাপ লাগছিল। মেসের খাওয়া দাওয়া আর বাড়ির খাওয়া-দাওয়া বুঝেনই তো। যারা মেসে থাকেন তারা হয়তো জানেন। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ কি মেসের খাবারে পাওয়া যায়। মায়ের হাতে রান্না করা সব খাবারই যেন মধুর লাগে। মেসে ডালে লবণ হলে পানি হয়ে যায় বেশি আবার পানি কম হলে লবণ কম হয়। এই হলো খাবারের অবস্থা। বাড়িতে প্রতিদিম মায়ের হাতের মজার মজার খাবার খেয়েছি। যেটা ফেনীতে গিয়ে মিস করবো জানতাম। তবে সকল পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় সেটা এখন শিখে গিয়েছি।
বৃষ্টি বিকালের আগে অবশ্য থেমে গেল। আমি আগেই ব্যাগ ঘুছিয়ে রেখেছিলাম। আমাকে আগে যেতে হবো কিশোরগঞ্জ। যেহেতু রাতে ট্রেন আর বাড়ি থেকে রাতে বের হলে গাড়িও পাওয়া যায়না। তাই বিকালেই বের হয়ে পড়ি আর মামার বাসায় চলে যায়। মামার বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ অবশ্য রেস্ট নেই। তারপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়েও নেয় কারণ ট্রেনে সারারাত সজাগ থাকতে হবে। মামার বাসা থেকে রেল স্টেশন কাছেই ছিল। এজন্য দশটার দিকে বের হয়। আমার ট্রেন আসবে ১০:৪০ এর দিকে। একটু আগে এসে রেল স্টেশনে বসে থাকি। ট্রেন তখনও আসেনি। অনেক মানুষজনই দেখতে পেলাম রেল স্টেশনে। অনেকেই হয়তো চট্রগ্রাম যাবে। ১০:৫০ এর দিকে ট্রেন এসে স্টেশনে দাঁড়ালো। আমার সিট ছিল ট বগীতে। তো ট বগী খুঁজতে থাকি আমি । ট্রেনের শেষের দিকে লক্ষ্য করলাম ট বগী। ২০ নাম্বার সিট ছিল আমার। আর নরমালি আমি জানালার পাশে বসে জার্নি করতে ভালো লাগে। ব্যাগগুলা উপরে রেখে সিটে বসে পড়ি। পাচঁ মিনিটের মতো দাঁড়িয়েছে ট্রেন। তারপর ট্রেন ছেড়ে দেয়। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকি। ট্রেন তার আপন গতিতে চলা শুরু করে দেয়। জানালার পাশে বসে বাহিরের বাতাস এসে যেন আমার সারা শরীরে লাগছিল। আর নিমিষেই শরীরও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।
বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন দিয়ে এর আগেও যাতায়াত করেছি। স্টেশনে কম সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। আমি এবার একা যাচ্ছি ফেনী। এর আগে অবশ্য একা গিয়েছিলাম। এজন্য এক্সপেরিয়েন্স অবশ্য আছে। তবে ট্রেনে জানালার পাশে বসাটাও রিস্ক। কারণ হচ্ছে জানালা দিয়ে হাত মেরে ফোন নিয়ে চলে যায়। এরকম ঘটনার শিকার হয়নি কখনো তবে দেখেছি। বিশেষ করে ভৈরব স্টেশনে আসতেই এমন ঘটনা বেশি হয়। এজন্য আমি অবশ্য সতর্ক ছিলাম। ফোন পকেটে রেখে বসে ছিলাম তখন। ট্রেন চলতে শুরু করলেই তারপর ফোনটা হাতে নেয়। আপনারা যারা রাতের বেলায় ট্রেনে জার্নি করেন অবশ্যই সতর্ক থাকবে। ভৈরব পার হতেই লক্ষ্য করলাম বাহিরে লাইটিং। পরে দেখি এটা ভৈরব ব্রিজ। রাতের বেলায় এজন্য অবশ্য বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল। বাহিরের ওয়েদারটাও ঠান্ডা ছিল। ট্রেনের ভিতরে খেয়াল করলাম অনেকেই ঘুমাচ্ছে। আমার অবশ্য ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছিল। কারণ লাইটের আলো একদম চোখের উপরে এসে লাগছিল। আর লাইটের আলোতে আমি ঘুমাতে পারিনা তেমন। অনেকেই এই লাইটের আলো উপেক্ষা করেও ঘুমাচ্ছে।
আমি কি আর করবো একা একা গান শুনতে থাকি। আর একের পর এক স্টেশন পার হচ্ছি। শুধু খেয়াল ছিল কখন ফেনী স্টেশন আসবে। জানতাম ৪:২০ এর দিকে ফেনী স্টেশনে আসে। ফোনে অবশ্য এলার্ম দিয়ে রাখছিলাম। যদি আমাকে চট্রগ্রাম নিয়ে চলে যায় তখন! হাহাহা এই ভয়ে এলার্ম দিয়ে রাখলাম। ৪:৩০ এর দিকে ফেনী এসে থামলো ট্রেন। তখন ফজরের আযান দিচ্ছে চারিদিকে।। হালকা আলো লক্ষ্য করতে পারলাম। মাথা আমার তখন অনেক ভার লাগছিল। ঠিক মত ঘুমাতেও পারিনি। অনেকদিন পরে মনে হচ্ছিল ফেনী শহরে পা দিয়েছি। তারপর রিকশা করে মেসে চলে আসি। ভাড়া অবশ্য একটু বেশিই দিতে হয়েছিল। কারণ এতো সকালে রিকশা পাওয়া যায়না।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 5 june , 2022 |
ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। কিছু কথা ও কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালোই লাগছে। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
আসলে আমাদের সময় গুলো দেখতে দেখতে কিভাবে চলে যায় আমরা বুঝতে পারি না। যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে। তাই আপনি 5 তারিখে টিকিট বুকিং দিয়েছেন কিন্তু সারাদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল এছাড়া আপনার মা সীতাকুণ্ডের বিষয়টি জেনে ।আপনাকে আসার সময় বারবার সাবধান করে দিচ্ছিল ।আসলে মারা এমনই হয় যারা সবসময় সন্তানের খেয়াল রাখে ।ধন্যবাদ আপনাকে।
জি ভাইয়া মা তো মা ই। দিতে চায়ছিল না তবুও আসলাম। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া
ট্রেনে উঠলে মাঝে মাঝে আমারও এই সমস্যা হয়, এই জন্যই আমি সবসময় জেগেই থাকি। তো যাই হোক এতদিন পর যখন কলেজে আসলেন ক্লাস করুন এই কয়টা দিন। আর আছিই মাত্র কয়েকটা দিন 😍
হুম রাতে জার্নি করলে জেগে করাই ভালো। ধন্যবাদ ভাই
জীবন থেমে থাকে না, জীবন চলতে থাকে জীবনের গতিতে। আপনি ঈদের সময় বাড়িতে গিয়েছেন আর এখন যাচ্ছেন ফেনিতে। এর উদ্দেশ্যে ব্যস্ততম শহরে আপনি পড়াশোনা করেন বুঝতে পারছি। তবে আপনার এই দীর্ঘ ছুটিতে আপনার মন ভরল না। আরো আমরা চাকরি থেকে ঈদের ছুটি তিন চার দিনের ছুটি পেয়েও কতটা মন ভরে। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য অনুভূতিগুলো আমাদেরকে শেয়ার করার জন্য।
হাহাহা ভাই আপনারা চাকরিজীবী মানুষ বাড়িতে গেলেও বেশি থাকতে পারেন না 🙂 আর আমি গেলে তো আসতে মন চায়না।
আমাদের গ্রামে গেলে সেখানে ট্রেনের সুবিধা নেই । যেতে হয় বাস দিয়ে আর ভাই কি বলবো বাসের ভাড়া কথা । 200 টাকার জায়গায় এখন ভাড়া হয়েছে 500 টাকা ।কিছুই করার নেই এটাই স্বাভাবিক জীবন, মেনে নিতে হবে আমাদের এগুলো । আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভালো থাকবেন ভাই।
হুমম ভাই বাস জার্নি বোরিং লাগে ভাই। ট্রেনেই চলাচল করি। ধন্যবাদ আপনাকে
ভাইয়া, আপনার লেখা পোষ্ট পড়ে সত্যি আমার খুব ভালো লেগেছে। আসলে ভাইয়া, সীতাকুণ্ডের এই অবস্থাটা জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী এটা সত্যি কথা এটা মানতেই হবে। এছাড়াও ভাইয়া, মায়ের মন তো তাই হয়তো আপনাকে যেতে দিয়েছিল না তারপরও নিজের পড়ালেখার তাগিদ হলে যেতে হয়। যাইহোক ভাইয়া,খুব সুন্দর ভাবে গিয়েছেন শুনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জি আপু সীতাকুণ্ড এর ভয়াবহতা আমাদের ভাবিয়েছে। আপনাকেও ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্য করার জন্য।
আপনি ঠিক বলেছেন ভাই মায়ের মন সব সময় এমনই। মায়ের ভালোবাসায় কেউ ভাগ বসাতে পারেনা। অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
জি ভাইয়া একদম মায়ের ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা