জোর যার, মুল্লুক তার
10-06-2022
২৭ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি আপনাদের দোয়াই ভালো আছি। টাইটেল দেখেই হয়তে বুঝতে পারছেন কি বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আমাদের আশেপাশে একটু থাকালেই দেখবেন অনেক মানুষ আছে জোর কাটিয়ে ক্ষমতা চালাচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে নিপীড়ন এর শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ জনগনকে। এখন সমাজ ব্যবস্থা এমন হয়ে গেছে যার গায়ের জোর বা প্রভাব প্রতিপত্তি বেশি তার মূল্যই যেন বেশি। সমাজ ব্যবস্থার এই যে বেহাল দশা এটার দায় কার? আমাদের তাই তো।। হ্যাঁ! আমাদেরই তো এর জন্য দায়ী। আমরা মুখ বুঝে সব সহ্য করি ঠিকই কিন্তু সামনে কিছু বলিনা। এটাই আমাদের দূর্বলতা। সামনে বললে কি জানি কি করে বসে! যায়হোক আমি ঐদিকে আর যাবোনা। এবার মূল কথায় আসা যাক।
আপনারা হয়তো জানেন যে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফের শুরুটা হয়েছিল কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে। ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানে আমি পড়াশোনা শুরু করি। সাবজেক্ট ছিল ইলেকট্রিক্যাল। তখন থেকেই দেখতাম আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংকট। এক টিচার কয়েক বিষয়ের উপরে ক্লাস নিতো। কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হতো না। কারিগরি মানেই হলো প্র্যাকটিক্যাল এর উপর জোর দিতে হবে। কিন্তু সেটা তখন সেভাবে পায়নি বলতে পারেন। থিওরি অবশ্য আমি ভালো বুঝতাম আর প্র্যাকটিক্যাল একটু দূর্বল ছিলাম। বিদ্যুৎ এর কাজ করতে ভয় করতো। তখন অবশ্য কিছু কাজ শিখেছিলাম। এই যেমন সুইচের সাথে বাল্ব বা ফ্যানের সংযোগ আর ওয়্যারিং। যথাযথ প্র্যাকটিস এর অভাবে এখন এগুলাও ভুলতে বসেছি।
কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ বিশাল আয়তনের এরিয়া নিয়ে অবস্থিত ছিল। কিশোরগঞ্জ এ কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়াসে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল। শুরুতে এটা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কর্মসূচি ছিল। তারপর কারিগরি পরিসরটাকে আরও একধাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা এড করা হয়। তখন থেকেই শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করে। তখন অবশ্য ডিপ্লোমাদের জন্য আলাদা কোনো বিল্ডিং ছিল না। এজন্য কলেজের শ্রেনিকক্ষে পাঠদান চলতো। এই প্রতিষ্ঠানে আমি দুটি বছর পড়াশোনা করেছি। মাঝে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেকটা সময় বন্ধ ছিল। আমাদের চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা দিয়েছি। তারই মাঝে করোনা মহামারী আরও বেড়ে যাওয়ায় সরকার থেকে নোটিশ আসে কাছাকাছি কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। তারই মাঝে হঠাৎ একদিন শুনি আমাদের কলেজ থেকে ডিপ্লোমা উঠিয়ে দেয়া হবে। কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে নোটিশ এসেছে যে, আমাদের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ পাঠিয়ে দেয়া হবে। এটা শুনে খারাপ লাগছিল আবার ভালোও লাগছিল। কারণ কারিগরি রিলেটেড ছিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। আর বাংলাদেশে সরকারি ৪৯ টির মতো পলিটেকনিক রয়েছে।
অবশেষে আমরা কলেজ থেকে চলে যেতে হবে। এরই মাঝে কলেজ চয়েজ করতে বলে। আমি যেটা চয়েজ দেয়নি কলেজ সেটা আসে। আমাকে একদম ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ পাঠিয়ে দেয়া হয়। কি আর করার আছে ফেনীতেই পড়ালেখা করতে হবে। ফেনীতে এসে ভর্তি হয়। এরই মাঝে কলেজ থেকে বলে কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। আমাদের তিন সেমিস্টারের মার্কশিট ছিল কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে। তখন আমরা সেখানে গিয়ে মার্কশিট আনতে যায়। কিশোরগঞ্জ কলেজের একটি মাত্র প্রিয় শিক্ষক ছিল মির্জা স্যার। আমাদের ম্যাথ ক্লাসটা উনি নিতেন। আর আমি ম্যাথও ভালো পারতাম এজন্য আমাকে উনি আদরও করতো। যখন তিন সেমিস্টারের মার্কশিট আনতে যায় স্যার আমাদের খোজঁ খবর নেয়। তারপর অবশ্য মার্কশিট নিয়ে চলে আসি। পরে অবশ্য জানতে পারি স্যার এই প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রান্সফার হয়েছে। স্যার আমাদের না্দাইল টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ট্রান্সফার হয়েছে। স্যারে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে আরেকজন শিক্ষক।
গত ৩১ মে,২০২২ ইং তারিখে কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে যায়। মূলত গিয়েছিলাম মার্কশিট আনতে। আমাদের চতুর্থ সেমিস্টারের মার্কশিট এই প্রতিষ্ঠানে এসেছে। গিয়ে দেখি মির্জা স্যারের চেয়ারটা অন্য একজন নিয়েছেন। নতুন যে স্যার এসেছে উনার নাম হচ্ছে হাকিম স্যার। দেখতে হুজুর টাইপের। স্যারকে সালাম দিয়ে বললাম আমি চতুর্থ সেমিস্টারের মার্কশিট নিতে এসেছি। উনি ডিরেক্ট আমাকে বলে দিলো মার্কশিট নিতে হলে ২০০ টাকা লাগবে। আমি তো একদম রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম! গত তিন সেমিস্টারের মার্কশিট নিয়েছি টাকা লাগেনি এখন এক সেমিস্টারের মার্কশিট নিবো এজন্য টাকা লাগবে। তো আমাদের কিশোরগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমার দেখা মতে সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। স্যার আমার পরিচিত ছিল এজন্য আমি স্যারকে গিয়ে বিষয়টি জানায়। স্যারও শুনে অবাক হয়ে গেল। স্যার পরে গিয়ে হাকিম স্যারকে বললো আমার মার্কশীট দিয়ে দিতে।
পরে অবশ্য প্রধান শিক্ষক বলে যায়। তারপর হাকিম স্যার আমাকে বলে এডমিট কার্ড লাগবে তা না হলে মার্কশিট দিবে। আমি স্যারকে বললাম আমি অনেকদূর থেকে এসেছি মার্কশিট দিয়ে ভালো হয়। স্যারের কথা এডমিট কার্ড লাগবেই মার্কশিট নিতে হলে। ভাগ্যিস ফোনে এডমিট কার্ড এর ছবি তোলা ছিল। এজন্য পাশে একটি কম্পিউটার এর দোকানে গিয়ে প্রিন্ট করিয়ে নিয়ে আসি। তারপর আসার পর আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট দাড় করিয়ে রাখলো কোনো কারণ ছাড়াই। আমি পরে এডমিট দেখালাম পরে বললো এখন একটি দরখাস্থ লিখতে হবে! আমি তো আবারও অবাক হয়ে গেলাম এখন আবার দরখাস্থ লিখে জমা দিতে হবে। একটি দরখাস্থও লিখলাম সেখানে বসে। তারপর এটা নিয়ে আবার অফিসে স্যারের রুমে আসলাম। এদিকে যোহরের আযান দিয়ে দেয়।। আর আমাকে বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। কি আর করা! বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। একি পরে দেখি স্যার নামাজ পড়ার জন্য বেরিয়ে পরেছে। অথচ উনি আমাকে হুদাই এতোক্ষন অপেক্ষা করিয়ে রাখলো। আমিও নাসরবান্দা! আজকে মার্কশিট না নিয়ে যাবোনা। অবশেষে স্যার নামাজ পড়ে আসলো। এসে অফিসের কিছু কাজ শেষ করে ফাইনালি আমাকে মার্কশিটটা দিল।
মোরাল অব দা স্টরি ইজ জোর যার, মুল্লুক তার। আপনি দেখেন আমি আগের তিন সেমিস্টারের মার্কশিট নিয়েছি এতো হয়রানি হতে হয়নাই। আর এক সেমিস্টারের মার্কশিট নেয়ার জন্য এতো হয়রানি হতে হলো। ক্ষমতা এমন একটা জিনিস। কেউ সেটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করে, কেউ আবার খারাপ কাজে।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 31 May , 2022 |
ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। কিছু কথা সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালোই লাগছে। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
This post was upvoted by @hustleaccepted
Use our tag #hustleaccepted and mention us at @hustleaccepted to get an instant upvote.
Also, you can post at our small community and we'll support you at Hustle Accepted
Visit our website at Hustle Accepted
This post was upvoted by @hustleaccepted
Use our tag #hustleaccepted and mention us at @hustleaccepted to get an instant upvote.
Also, you can post at our small community and we'll support you at Hustle Accepted
Visit our website at Hustle Accepted
ভাই যথাযথ প্র্যাকটিস না করলে আমরা যে কোনো কাজই ভুলে যাবো। তাই আমাদের উচিত প্রত্যেকটি কাজ চর্চার মধ্যে রাখা যাতে করে কাজটি আমরা ভুলে না যাই। যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে ।ধন্যবাদ আপনাকে।
জি ভাইয়া আপনি একদম ঠিকই বলেছেন। আমাদের উচিত যথাযথ প্র্যাকটিস করা ।
আমাদের দেশের এই একটা সমস্যা ভাই। অনেক শিক্ষক সংকট। আমিও ক্লাস নাইন থেকে টেকনিক্যাল লাইনে পড়ি সেজন্য বিষয়টি আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি। এবং আশ্চর্যের বিষয় মার্কশীটের জন্য টাকা চাইবে কেন। আমাদের কিন্তু কোনো টাকা লাগে না। তবে এডমিট কার্ড টা চাওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল। ঐগুলো সাথে করে নিয়ে যাওয়ায় ভালো। যাইহোক ভালো লিখেছেন ভাই।।
আগে তিনবার মার্কশিট আনলাম টাকা লাগলো না এইবার টাকা চেয়ে বসলো, মেজাজটা এতো খারাপ হয়ছিল। তারপর ডিরেক্ট প্রধান শিক্ষককে বলি উনি সমাধান করে।
হ্যাঁ ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন জোর যার মুল্লুক তার। তবে আজ এই অবস্থার জন্য দায়ী আমরাই। কারণ আমরা কাউকে কিছু বলি না ভয়ে। বিত্তশালী অর্থবান লোক দের বয় পাওয়া, তারাও সেই ভয় কে কাজে লাগিয়ে রাজত্ব করে যাচ্ছে। তবে আপনার কলেজের মার্কশিট এর ব্যাপারটা আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছে। যেখানে তিনটে পরীক্ষার মার্কশীট আপনি নিয়েছেন কোন হয়রানি হতে হয় নাই। কিন্তু এমন একটা শিক্ষক এসে বসলো অথচ সেই হুদাই আপনাকে হয়রানি করছে। ব্যাপারটা খুবই খারাপ লাগে যা সহ্য করার মতো নয়। মনে হচ্ছে যেন শরীরটা ঝিমঝিম করছে দাত কাটছে। তবে আপনি ধৈর্য সহকারে তার পরেও মার্কশিট নিয়ে গেছেন সেজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আর আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
জি ভাই আপনি ব্যাপারটা বুঝেছেন এজন্য খুশি হলাম শুনে। ধন্যবাদ আপনাকে
আসলে ভাইয়া আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থায় এখন এমনই হয়ে গিয়েছে জোরদার তারিখ ক্ষমতা রয়েছে আর যে একটু দুর্বল তাকে সবাই সমাজের নিচু অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।
আমাদের এইদিকে মার্কশিট নিতে টাকা নেয় না কিন্তু কিছু কিছু জায়গাতে দেখতে পায় মার্কশিট নেবার জন্য সরাসরি শিক্ষকেরা টাকা চেয়ে বসে। আপনার মত আমিও আমার মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুলো ছবি তুলে রাখি যেন প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে।
জি ভাইয়া প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট ফোনে ছবি তুলে রাখতে হয়। কখন দরকার লেগে যায় বলা যায় না। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।