প্রাণের বিদ্যাপীঠ || জীবনের শুরুটা যেখান থেকে
25-05-2022
১১ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন আপনারা? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে ভালোই আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে একটু ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবো। টাইটেল দেখে হয়তো বুঝে গেছেন কি নিয়ে কথা বলবো। হ্যা! ঠিক ধরেছেন আজকে প্রাণের বিদ্যাপীঠ নিয়ে কথা বলবো যেখানে আমি অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছি।
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাটা শুরু হয় পরিবার থেকে । আর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শুরু হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে। কোনো একটি বিদ্যালয়ে প্লে,নার্সারি বা ক্লাস ওয়ান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষকদের মুখের কথা ও বাণী আয়ত্ত করতে শুরু করে। শিক্ষকরা সবসময় আমাদের চেষ্টা করে সর্বোচ্চটা দিয়ে হলেও যেন আমরা কিছু অর্জন করতে পারি। সমাজের রীতিনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুই যেন শিক্ষকদের কাছ থেকেই শিখতে পারি। তাইতো শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি শিক্ষকদের কাছ থেকে।
যায়হোক, আজকে সকাল থেকেই রোদ ছিল। আকাশ একদম নীল দেখতে লাগছিল। রোদের জন্য কোথাও যাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু কাজ শেষ করে ফুফুর বাসায় গিয়েছিলাম। বাসায় গিয়েছিলাম মূলত কিছু কাজ করবো বলে। পরে আর করাও হলো না। ফুফুর বাসা থেকে আমার প্রাইমারী জীবনের অনেকটা জীবন যেখানে অতিবাহিত করেছে সেই স্কুল কাছেই ছিল। কতোদিন হয়ে গেল শৈশবের সেই স্কুলটাতে যাওয়া হয়না। মাঝে মাঝে ভাবি যাবো, পরে আর যাওয়া হয়না। বন্ধুরা সবাই মিলে প্লেন করি একদিন সবাই গিয়ে বসবো কিন্তু সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরায় আর যাওয়া হয়না। আমি ভাবলাম স্কুলটা ঘুরে আসি। যেহেতু অনেকদিন হলো যাওয়া হয়না একবার গিয়ে দেখে আসা যাক প্রাণের সেই স্কুলটাকে।
ফুফাতো ভাইয়ের সাইকেল ছিল তো ভাবলাম সাইকেল চালানো হলো আর স্কুলটাকেও দেখা হয়ে যাবে। কাছেই ছিল স্কুল এজন্য বেশি সময়ও লাগেনি। আমি স্কুলে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে পড়ি। কারণ আগের পুরনো সেই বিল্ডিং নেই। আছে মাত্র একটা। নতুন বিল্ডিং করা হয়েছে। এজন্য স্কুলটাকেও দেখতে সুন্দর লাগছে। আপনাদের তো স্কুলের নামটিই বলা হয়নি! আমার এ স্কুলের নাম হচ্ছে ২৫ নং চারিআনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল। অনেক বছরের পুরনো একটি স্কুল। স্কুলটিতে ভর্তি হয়েছিলাম ২০০৯ সালে। তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম। এর আগে অবশ্য আরেকটি স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলাম। এ স্কুলে ভর্তি হওয়া নিয়ে একটি মজার ঘটনা আছে। আমি যখন আমার মায়ের সাথে এ স্কুলে প্রথম এসেছিলাম তখন আমি তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন এতোটাও রিডিং পড়তে পারতাম না। প্রধান শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করেছিল অফিস কক্ষে কি লিখা আছে? আমি অবশ্য বলে ফেলছিলাম। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। ভর্তি হতে হলো দ্বিতীয় শ্রেণীতেই।
স্কুলের ঠিক কোণায় একটি মহিলা আসতো বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে। আমরা তাকে মাসি বলে ডাকতাম। মাসির কাছ থেকে দুইটাকা দামের চিপস, এক টাকা দামের ভার্মিজ আচার কতো খেয়েছি। বাড়ি থেকে যখন স্কুলে আসতাম সাথে পাচঁ টাকা নিয়ে আসতাম টিফিনে কিছু খাওয়ার জন্য। টিফিন হওয়ার আগেই মাসির কাছ থেকে দুইটাকার চিপস, ভার্মিজ আচার কিনে নিতাম। এই ভার্মিজের আচার এখন কোথাও পায়না। যতদূর শুনেছি বয়সের ভারে আমাদের শৈশবের সেই মাসি এখন ক্লান্ত। হাটঁতে পারেনা এখন। ঘরে বসেই বন্দি জীবন পার করেছে। আমাদের সময় থেকেই দেখতাম লাঠি দিয়ে হেটেঁ হেটেঁ স্কুলে আসতো আর মাথায় খাদিতে করে দোকানের জিনিসপত্র নিয়ে আসতো।
প্রিয় কিছু ম্যাডাম মারা গিয়েছে অনেকদিন হলো। মাধ্যমিকে যাওয়ার পরে এ স্কুলে আর তেমন আসা হয়নি। ফাতেমা ম্যাডাম ধর্ম ক্লাসটা নিতো আমাদের। কি সুন্দর করে আমাদের বুঝিয়ে পড়াতো। উনি আজ পরপারে! সুফিয়া ম্যাম আমাদের সমাজ বইয়ের ক্লাসটা নিতো। সমাজের অনেক বিষয়াবলী শিখেছি ম্যাম এর কাছ থেকে। উনিও যতদূর শুনেছি মারা গেছে বিগত দুই বছর আগে। শিমু ম্যাডাম আমাদের বিজ্ঞান ক্লাসটা নিতো। উনি একটু রাগী ছিলেন। অনেক মার খেয়েছি পড়ার জন্য। উনিও এখন বিয়ে করে স্যাটলড হয়ে গিয়েছি। তবে এই স্কুলেই এখনও শিক্ষকতা করছে। নাজমা ম্যাডাম আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। বাংলা ক্লাসটা করাতো উনি। কি সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়াতো আমাদের। উনি কখনো মারতে দেখেনি কাউকে। বিউটি ম্যাডাম আমাদের গণিত ক্লাসটা নিতেন। গণিতে পিতা-পুত্রের অঙ্ক করতে গিয়ে কতো প্যাচঁ লাগিয়েছি! ম্যাম একবার এমন মাইর দিয়ে এই পিতা পুত্রের অঙ্কের ভুলের জন্য এর পর আর কখনো ভুল হয়নি।
বিকালের রোদ একদম মুখে এসে লাগতেছিল গাছের এক পাশ দিয়ে এসে। আর আমি এসব কথা ভাবতে লাগলাম।। কি রঙিন ছিল দিনগুলি। কোনো চিন্তা ছিলনা, শুধুই ছিল দূরন্তপনা। স্কুলের প্রতেকটি ব্যাঞ্চ আমার চেনা, স্কুলের কোণায় কত শতো কাহিনী লুকিয়ে আছে। লিখলে হয়তো আরেকটি গল্প হয়ে যাবে।সব থেকে ভালো লাগলো নতুন কিছু বিল্ডিং দেখতে পেরে। পড়ালেখা ধরণও নিশ্চয় পরিবর্তন হয়েছে। শুনেছি আমাদের সেই নাসুম স্যার এখনও প্রধান শিক্ষক হিসেবেই এ স্কুলে আসেন। পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় আমাদের ইংরেজি ক্লাসটা স্যার নিতো। প্রাইমারী লেভেলে পড়ালেখায় বলতে পারেন মোটামোটি ছিলাম। তবে এ টুকু দিয়েই চলে যেত। ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিল দস্তগীর। নাসুম স্যার তাকে খুব আদর করতো। আমার ভালো একজন বন্ধুও ছিল সে। পঞ্চম শ্রেণীতে বিদায় অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুদিন আগে স্যার আমাদের একটা রচনা শিখতে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত কেউ সেদিন শেখেনি। স্যার একদম বেঞ্চের মাথা থেকে বেত দিয়ে মার দিতে লাগলো। আমিও খেলাম মার। স্যার অবশ্য পরে আমাদের বলেছিল যে সমাপনী পরীক্ষার জন্য আরও সিরিয়াস হতে হবে
২০১২ সালে স্কুলটি থেকে বেরিয়ে পরি। দীর্ঘ দশবছর হয়ে গেল স্কুলটি থেকে পড়াশোনা করে এসেছি। কিন্তু স্মৃতিগুলো সেই আগের মতোই আছে। চাইলেই তো আর শৈশবের সেই স্কুলে ফিরে যেতে পারবোনা! জীবন সময়ের তালে তালে চলেই যাচ্ছে। শৈশবের সেই দিনগুলিকে বড্ড মিস করি।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | Nandail,Chariany para |
Date | 24 May, 2022 |
যায়হোক, আজ এই পর্যন্তই । ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
আপনার বিদ্যালয়টি দেখতে খুব সুন্দর। আসলে আমাদের সবার স্মৃতি জড়িত এই বিদ্যালয়ের সাথে। আপনার পোস্ট পড়ে আমার নিজের স্কুলের কাটানো মুহুর্তের কথা মনে পড়ে গেলো। ধন্যবাদ ভাই।
হুম রঙিন ছিল দিনগুলি। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ভাইয়া।
আমাদের সকলের বিদ্যালয়ের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা কাজ করে এবং যখনই আমি আমার বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যায় তখন সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। খুব সুন্দর ভাবে আপনি সেই অনুভুতি গুলো উপস্থাপন করছেন, সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
হুম আপু। অনেকদিন পরে স্কুলে গেলাম মনে পড়ে গেল স্মৃতিগুলো। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আপনার প্রাণের বিদ্যাপীঠের গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে এরকম স্মৃতিবিজড়িত গল্প সবার জীবনে কমবেশি লুকিয়ে আছে। সেগুলো শুধু স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে ।অতীতের স্মৃতিবিজড়িত গল্পগুলো পরতে আমার অনেক ভালো লাগে।
হুম ভাই একদম ঠিক বলেছেন আপনি। এরকম স্মৃতিবিজড়িত গল্প সবার জীবনে থাকে।
আপনার প্রানের বিদ্যাপীঠ এবং অনুভূতি নিয়ে পুরো গল্পটা পড়লাম।
দারুন লিখেছেন 👌
এধরনের লিখনী অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনাকে ইনশাআল্লাহ 👌।
দোয়া রইল 🥀
দোয়া করবেন ভাইয়া 🥰🥰। যেন অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারি।
পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ভাই। আমরাও একদিন প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করেছি, আমাদের রয়েছে স্কুল। তবে এতটা গুরুত্ব দিয়ে কখনও শেয়ার করা হয়নি আপনাদের মাঝে। আপনি যে এই বিষয়টা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, তা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। খুবই খুশি হলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্যগুলো দেখে। আশা করি আমিও একদিন আপনাদের মাঝে শেয়ার করব, আর তুলে ধরব আমার সেই শৈশবের স্মৃতি গুলো।
আপনার শৈশবের সেই স্মৃতিবিজড়িত কথাগুলো শুনার অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
ছোটবেলা এর এই বিদ্যালয়ের প্রতি সবাই আসলে আলাদা টান থাকে। আপনি আপনার ছোটবেলার এই বিদ্যা পাঠের গল্প এবং অনুভূতি শেয়ার করেছেন খুবই ভালো লাগছে। সাথে কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন ভালো লাগছে আপনার পোস্টটি।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে
বিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের সবারই একটা আলাদা টান কাজ করে। যখন বিদ্যালয় সামন দিয়ে যাই তখন পুরনো কত স্মৃতি মনে চলে আসে। আপনার পোস্টটি পড়েও যেন সেই বিদ্যালয়ের স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভাসছিলো। ধন্যবাদ ভাইয়া । আর আপনার বিদ্যালয়টি অনেক সুন্দর।