ক্ষমতা || পার্ট-১

14-08-2022

৩০ শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। তো আমাদের চারপাশে পাশে অনেক ঘটনাই তো ঘটে থাকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আপনাদের সাথে গল্প শেয়ার করার জন্য।

calligraphy-7188024_1280.webp

copyright free image from pixabay

রহিমা খালার এক মেয়ে এক ছেলে। স্বামী পেশায় সিনএনজি চালায়। আর রহিম খালা আমাদের মেসে রান্না করে। মেসে উঠার পর থেকেই রহিমা খালার রান্না খেয়ে আসছি । রহিম খালার সাথে মাঝে মাঝেই আমার কথা হতো। রহিমা খালার স্থায়ী বাড়ি নোয়াখালী। তবে খালার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম পিতা মাতার অসম্মতিতে করিম চাচাকে বিয়ে করেছে। এজন্য গ্রামেও যাওয়া হয়না। বিয়ের সাতবছর হয়ে গেল কিন্তু এখনও বাড়িতে যায়নি। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ছেলের বয়স আনুমানিক ৮ বছর হবে হয়তো। নাম তার শিহাব। আর মেয়েটির বয়স ৩ বছর হবে হয়তো। নাম তার নাইমু। আমাদের মেসের পাশেই একটা বাসায় ভাড়া থাকে। শুনেছি সেই সাতবছর ধরে এই বাসাতেই আছে। বাসার সুযোগ সুবিধাও নাকি ভালো।

তাদের সাথে আরও কিছু পরিবার থাকে। স্বামী পেশায় সিএনজি চালায়। শুনেছি এই সিএনজিটা কিস্তিতে কিনেছে। এজন্য অবশ্য প্রতিমাসে তাদের কিস্তি দিতে হয়। কিস্তি দিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে সংসার চলে যেত। তবে স্বামীর স্বল্প রোজগারে সংসার চালাতে একটু হিমশিম খেতে হলো। এদিকে ছেলেটাও বড় হয়ে গেছে। রহিমা খালার স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে অনেক বড় আলেম মানুষ হোক। এজন্য অবশ্য তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছে। খরচ আরেকটু বেড়ে গেল। নাইমু মেয়েটিও বড় হয়ে যাচ্ছে। রহিমা খালা আমাদের মেসের পাশেই বাড়ি থাকায় আমাদের রান্না-বান্নার কাজ করে দিয়ে যেত। অবশ্য রহিমা খালা আমাদের মেসে আগে থেকেই রান্না করে। আমাদের আগে যে বড় ভাইয়েরা এখানে থাকতে তারা রহিমা খালার হাতের রান্না খেয়েই ডিপ্লোমা লাইফ পার করেছে।

রহিমা খালাকে আমি প্রথমে চিনতাম না। প্রথমে ঐভাবে পরিচয় হয়ে উঠেনি। আর খালা নোয়াখালী ভাষায় কথা বলতো আমার বোধগম্য হতেও কষ্ট হতো। শুনেছিলাম খালাকে আমাদের বাসার মালিক শুরু থেকেই বলেছিল এখানে রান্না করতে। এক সাথে দুই মেসের রান্না করতে হয় খালাকে। এটা খুব কষ্টের ছিল। তারপরও মনে হতো উনি কোনো কষ্টই করছে না। উনার কষ্ট শরীরেও লাগে না। মাঝে মাঝে আমার কোনো কিছু রান্না হলে রান্না করে দিতো। খুব সকাল সকাল এসে রান্নার কাজ শুরু করে দিতো। মেসে নরমালি সকালের মিল খাওয়া হয়না। একেবারে দুপুরে খাওয়া হয়। সকাল ১১ টার আগেই দুই মেসের রান্নার কাজ শেষ করে ফেলতো। আমরা অবশ্য কলেজ থেকে এসেই খাওয়ার কাজ সেরে ফেলতাম।

রান্নার সময় তার মেয়ে নাইমুকে নিয়ে আসতো। আর ছেলেটাকে সকাল সকাল মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিতো। করিম চাচাও সকাল সকাল সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো। রহিম চাচার সাথে তেমন পরিচয় হয়নি। তবে খালার কাছ থেকে শুনেছি চাচা মানুষটা নাকি অনেক ভালা। এখনও সেই আগের মতোই রহিমা খালাকে ভালোবাসে। চাচা নাকি কখনো জোর গলায় কথাও বলেনি। এটা শুনে অবশ্য আমার কাছ খুব ভালো লাগছিল। খালার কাছে জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল? উনি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আর কিছু বললো না। আমি খালাকে আর জোর করলাম না।

রহিমা খালার সংসার ভালোই চলছিল। আমাদের মেস থেকে যে টাকা পেতো সেটা দিয়েই কিস্তির টাকা হয়ে যেত। আর করিম চাচার টাকা দিয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যেত। খালার কাছ থেকে শুনেছিলাম আর বেশি কিস্তিও বাকি নেই। সামনে কুরবানি ঈদ। খালাকে বলেছিলাম বাড়িতে গিয়ে ঈদ করবে কিনা। মুখে শুধু মুসকি একটা হাসি দিয়ে বলেছিল না মামা। বাড়িতে যাওয়া সৌভাগ্য হয়নাই। বুঝেছিলাম সেদিন খালার ভেতরের অবস্থা। পরিবারের সাথে ঈদ করাটা কত যে কষ্টের। রহিমা খালারা কুরবানী দেয় না। ঈদের দিন মুরগী এনে রান্না করে ঈদ পার করে দেয়। সামনে আমাদের কলেজও বন্ধ হয়ে যাবে। ঈদের ছুটিতে আমরা সবাই বাড়িতে চলে যাবো। খালাকে অবশ্য ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। খালা মাঝে মাঝে দেখতাম মেসের বাড়িওয়ালাদের এখানেও কাজ করে দিতো।

চলবে.....



10% beneficiary for @shyfox❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68492.14
ETH 2699.27
USDT 1.00
SBD 2.72