ছোটগল্পঃ-রুম নাম্বার-১০৩

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

14-11-2023

৩০ কার্তিক , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


villa-3237114_1280.jpg

copyright free image from pixabay

শীতের রাত! থমথমে পরিবেশ চারিদিকটাই! কোনো মানুষজনের আনাগোনা নেই রাস্তাঘাটে। একটু সামনে হেটেঁ যেতেই নেহালের চোখে পড়ল সামনে গোরস্তান! গোরস্তানটা দেখে অনেক পুরনো মনে হলো। এদিকে কেউ মারা যায়নি। মনে হয় না বিগত পাচঁ বছরে এখানে কাউকে কবর দেয়া হয়েছে। নেহাল যতই গোরস্থানের কাছে ততই যেন একটা কনকনে শীত অনুভূব করছে! বাতাসের হাওয়া তার দিকেই আসছে বারবার! এতো শীতল বাতাসের অনুভূতি এর আগে কখনো পায়নি নেহাল। নেহাল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়! গোরস্থানের কাছে যেতেই দেখতে পায়, ঠিক কোণায় খেজুর গাছের ঠিক নিচে একটা কবর! সেখান থেকে ধোয়ার মতো বের হচ্ছে! মোবাইলের ফ্লাশ অনকরতেই নেহাল স্পষ্ট দেখতে পায়!

নেহাল ভয়ে ঘামতে থাকে। এমন পরিবেশে তো কখনো পরেনি। এর আগেও গোরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়া হয়েছে কিন্তু এমনটা হয়নি।

-কি রে নেহাল! উঠ, অনেক দেরি যাচ্ছে! আর কত ঘুমাবি তুই!

মায়ের ডাকে নেহালের ঘুম ভাঙে! বিভৎস স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসে নেহাল! কপাল ঘাম জমা হয়েছে। নেহালের মা মারা গিয়েছে কয়েকবছর আগে। স্বপ্ন দেখে যে নেহাল ভয় পেয়েছে সে বুঝতে পারে! বালিশের পাশেই ফোনটা রাখা! ঘড়িতে তখন রাত ২ টা বেজে ৩০ মিনিট! সারা মেসে কেউ নেই আজ! সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে গিয়েছে।। নেহাল অবশ্য ট্রেনের টিকেট পায়নি! যেটা পেয়েছে সেটাও আবার দুদিন পরের ঠিক! তার মানে নেহালকে একা একা আরও দুইটা রাত পার করতে হবে।।

ভাবতে ভাবতেই নেহালের গলা শুকিয়ে যায়! রুমে আগে থেকেই লাইট জ্বালিয়ে রাখা। রুমে একা থাকায় লাইট জ্বালিয়েই ঘুমিয়েছিল নেহাল! ভয় ভয় কাজ করছে। এতো রাতে কেউ নেই! যেখানে নেহালের মেস, সেটা আবার ভার্সিটি থেকেও কিছুটা দূরে! একটা নির্জন পরিবেশে অবস্থিত! নকিবের কাছে ১০৩ নাম্বার রুম সম্পর্কে ভৌতিক কিছু শুনেছিল। কিন্তু নেহাল এসব ভূত-টূত বিশ্বাস করেনি। অনেকটা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু নেহালের কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে ভূত-টূত বলেও তো কিছু একটা আছে। নয়তো তার এতো ভয় করছে কেন? কেনই-বা তার এতো আজেবাজে স্বপ্ন মাথায় আসছে! না না, এই রুমে আর থাকা যাবে না! কাল-ই রওনা দিতে হবে বাড়ির উদ্দেশ্য! ঠিক তখন জানালার পাশে একটা কান্নার শব্দ ভেসে আসে নেহালের কানে! ভালো করেও শুনতে পাচ্ছিল না! কিন্তু নেহাল জানালার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে কান্নার শব্দটা এদিক থেকেই আসছে। এতো রাতে কে কাঁদবে? কান্নার শব্দ শুনে নেহালের আরও ভয় বেড়ে গেল!

নেহাল আগের রাতে নকিবের পরামর্শে আগেই কিছু কুরআন তেলাওয়াত ডাউনলোড করে রেখেছিল। নেহাল যেহেতু একা থাকবে রুমে, রাতে সমস্যাও হতে পারে সেটা ভেবেই নেহালকে পরামর্শ দিয়েছিল নকিব! নেহাল তখনই কয়েকটি কুরআন তেলাওয়াত নামিয়ে রেখেছিল! আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত প্লে করে নেহাল শুয়ে পরলো! এখন যেন কান্না শব্দটা শোনা যাচ্ছে না! কিছুটা সাহস পেল!

সূরা শুনতে শুনতে নেহালের চোখে ঘুম চলে এল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারই সে একই শব্দ! কেউ কাদঁছে! এবার কান্নার আওয়াজটা যেন আরও বেশি জোরে শোনা যাচ্ছে । নেহালের ভয়ের পরিমাণটা আরও বেড়ে গেল! বিছানার মশারিটা তুলে সাহস করে জানালার কাছে যেতে লাগল নেহাল! শীতের রাতে ফ্লোরও অনেক ঠান্ডা হয়ে আছে! যে পাশটাই জানালা ঠিক সে পাশে একটা ঘন জঙ্গল! এজন্য দিনের বেলায়ও জানালাটা খোলা হয় না! জানালার কাছে আসতেই কান্নার আওয়াজটাও কম শোনা যাচ্ছে! মনে মনে সে আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগল।

জানালা যখনই খুলতে গেল তখন যা দেখল তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নেহাল! সারা শরীর রক্তে মাখা, খর্বাকৃতি চেহারা, বিশাল বিশাল চোখ! নেহাল দেখেই প্যারালাইজড এর মতো ফ্লোরে বসে পরল! নেহালের বুক ধুরু ধুরু কাঁপছে! হার্টের গতি যে বেড়ে গেছে সেটা বুঝতে পারছে! দ্রুত কুরআন তেলাওয়াত করতে লাগলো নেহাল! আয়াতুল কুরসী পরে বুকে ফুঁ দিল কয়েকবার! এই প্রথম কোনো অতৃপ্ত আত্মাকে দেখলো নেহাল!

নেহাল সূরা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেল তার নিজেরও মনে নেই! রাতের ঘটনাটা সে মোটেও ভুলতে পারছে না। বারবার তার চোখের সামনে সেই অতৃপ্ত আত্মার ছায়াটাই চোখে ভাসছে। নেহাল এর পর থেকে আর কখনো ১০৩ নাম্বার রুমে আসতে সাহস পায়নি। রুম থেকে যাওয়ার আগে নেহাল মার্কার পেন দিয়ে লিখে যায়!

' এখানে অতৃপ্ত আত্মারা থাকে! এই রুমে কেউ উঠবেন না। কাউকে বাচঁতে দিবে না, কাউকে না! '



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 10 months ago 

গল্পটা শরীর শিউরে দেওয়া ছিল ভাই। সত্যি একা একা একটা বাড়িতে থাকা খুবই ভয়ের। কিন্তু নেহাল বিপদে পড়ে ছিল। এবং সে যা ভয় পাই সেটাই হয়ে গেল তার সঙ্গে। এইরকম অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকে আমাদের চারপাশে। বেশ চমৎকার লিখেছেন ভাই গল্পটা। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য আপনাকে।।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 10 months ago 

গল্পটি পড়ে বেশ ভালোই লেগেছে ভাইয়া।মেসে /হোস্টেলে ভুত থাকে প্রায় শোনা যায়।সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় নেহাল একা পড়ে গিয়েছিল।আর এজন্যই ভয় কাজ করছিল নেহালের।যারা ভুত বিশ্বাস করেনা তাদের ভূতেরা ভয় দেখায় এটা আমার জানা একটি বিষয়।অতৃপ্ত আত্মা কে দেখে নেহালের বেহাল অবস্থা হলো তারপর দোয়া পড়ে আর পরবর্তীতে কখনো ১০৩ নম্বর রুমে যায়নি।ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 10 months ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ে চমৎকার একটি মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য 🍀

 10 months ago 

ভূতের গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। এই গল্পটি পড়ার সময় মনের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছিল। একা থাকতে এমনিতেই ভয় লাগে। আর বাসার পাশে এমন ঘন জঙ্গল থাকলে তো ভয় আরো বেড়ে যায়। নেহাল যে ভয় পেয়ে মারা যায়নি এটাই অনেক। যাইহোক জ্বীন-ভূত অবশ্যই রয়েছে এবং এটা আমি বিশ্বাস করি। এমন ভয়ংকর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 10 months ago 

হুমম ভাই, জ্বীন অবশ্যই রয়েছে। তবে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য 🍀

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 54610.81
ETH 2293.78
USDT 1.00
SBD 2.35