আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ১৪ || মজার একটি ঘটনাঃ-মোল্লাবাড়ির গাছ থেকে আম চুরি
30-03-2022
১৬ চৈত্র ,১৪২৮ বঙ্গাব্দ
বুধবার
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করি আপনার সবাই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে ভালোই আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি। তো প্রথমেই আমি হাফিজুল্লাহ ভাইয়াকে ধন্যবাদ দিতে চাই এতো সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আজকে আমি আপনাদের সাথে শৈশবে আম চুরি করার একটি মজার ঘটনা শেয়ার করবো। শেষ পর্যন্ত সঙ্গেই থাকবেন।
From pixabey
পোস্টটি লিখার সময় দেয়ালের কোণে বসে চোখে যেন ভেসে উঠছিল ওইতো সেদিন কতো মজা করেছি বন্ধুদের সাথে। সারাদিন ছুটাছুটি আর দূরন্তপনার মধ্যেই যেন কেটে যেত। সকালটা তখন শুরু হতো মার্বেল খেলা দিয়ে। আর ছিল বাবার মার খাওয়ার ভয়। কারণ মার্বেল খেলায় দেখলেই যে মার খেতে হবে। কিন্তু সকালে পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে পাশের একটি মহল্লায় চলে যেতাম মার্বেল খেলার জন্য। আমাদের পাড়াটি ছিল নান্দাইল উপজেলার আচারগাও গ্রামে। এখানকার মানুষজন স্বভাবতই খুবই সহজ সরল প্রকৃতির ছিল। ছোটরা সারাদিন হৈহুল্লোড় করে সময় পার করে দিলেও বড়রা তেমন কিছু বলতো না। আমি ছোট বেলায় একটু অন্যরকম ছিলাম। গাছে উঠায় বলতে পারেন একদম দক্ষ। তবে এখন আর উঠতে পারিনা। যায়হোক তাহলে আমরা গল্পে চলে যায়।
২০১২ সালের দিককার ঘটনা। আমি তখন ৫ম শ্রেনিতে পড়ি। ছোট বেলা থেকেই পড়ার প্রতি আমার অনীহা কাজ করতো। এজন্য অবশ্য মা বাবা দুজনের হাতেই মার খেয়েছি। তো গ্রীষ্মের সময়কার কথা। আমাদের মহল্লা থেকে আমার স্কুলটি কাছেই ছিল। আর যাওয়ার পথে সবসময় চোখে পড়তে একটি বিশাল আম গাছের বটবৃক্ষ। প্রতিদিন স্কুলে যেতাম আর যাওয়ার সময় দেখতাম আমগুলো যেন আমার দিকে চেয়ে আছে। তখন কিন্তু পাকা আম থেকে কাচাঁ আম খাওয়ার মজাই অন্যরকম ছিল। স্কুলে যাওয়ার সময় আমার সাথে আরও তিনজন বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে যেতাম। সৌরভ,আসিফ,সালেহীন আর আমি। আমাদের মধ্যে সৌরভ আবার একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিল তবে সে অসাধ্যকে যেন খুব সহজেই সাধন করতে পারতো। এ যেমন কোনো কিছু করতে গেলে তাকে ছাড়া কোনো কাজই যেন শেষ হতো না। তো আমরা চারজন নদীর পাড় দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম তখন আমি আমার বন্ধুদেরকে বললাম যে এখানে একটা বিশাল আম গাছ আছে। পাতা থেকে যেন আমই বেশি। তাদেরকে দেখাতেই লোভ লেগে গেল। সৌরভ তখনই গাছে উঠে পড়তে চাইলো! আমি বললাম এখন অনেক মানুষ আশেপাশে দেখতে পারলে একদম দড়িঁ দিয়ে বেধে রাখবে। যাক এ কথা শুনার পর বেচারা আর উঠলো না। তবে আমরা প্লেন করলাম যে এ গাছের আম খাবোই।
From pixabey
সাধারণত বৃহস্পতিবার এ স্কুল হাফটাইম থাকতো। তো আমরা প্লেন করলাম যে দুপুরবেলা রোদ থাকে বেশি আর তখন গাছের আশে পাশে মানুষজনও থাকবেনা। আম গাছটি নরসুন্দা নদীর পাশেই ছিল। আর মোল্লা বাড়ির আম বিখ্যাতও ছিল খেতে ভীষণ মজার। তো বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে আমরা একটি ব্যাগ আর বিট লবণ সঙ্গে করে নিয়ে নিলাম। বিট লবণ আপনারা চিনেছেন হয়তো। লাল টাইপের হয়ে থাকে। বিট লবণ দিয়ে কাচা আম খেতে মজাই হবে। সালেহীনকে বললাম সে যেন একটি ব্যাগ নিয়ে আসে সঙ্গে করে। তো চার বন্ধু মিলে মনের খুশিতে স্কুলে এসে পড়ি। আসার সময় নদীর পাড় দিয়েই আসি আমগুলো দেখতে দেখতে। যাক ক্লাস শেষ করে তাড়াহুড়ো করে আমরা চারজন বেরিয়ে পড়লাম মুল্লা বাড়ির গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য। প্লেন মোতাবেক সৌরভ আর আমি গাছে উঠবো আর সালেহীন আর আসিফ নিচে থেকে একজন আম সংগ্রহ করবে আর একজন পাহাড়া দিবে কেউ আসে কিনা। এই মোল্লা বাড়ির আম খেতে গিয়ে অনেকেই ধরা খেয়েছে শুনেছিলাম। এজন্য ভয় লাগছিল অবশ্য আমার খুব। যাক আম গাছের কাছে এসে দেখি আশে পাশে কেউ নেই।
From pixabey
আর এই ভর দুপুরে কারো না থাকারই কথা। আসিফকে বললাম কেউ যখন আসে তখন শিস দেয়। শিস ছিল ইঙ্গিত যে কেউ আসছে কিনা। আর সালেহীনকে বললাম সে যেন আমগুলো সংগ্রহ করে। আমি আর সৌরভ উঠে পড়লাম গাছে। উঠে দেখি কি বড় বড় আম! নিচে থেকে অনেক ছোট দেখাচ্ছিল আমগুলো। একটা একটা করে আমের ডাল ছিঁড়ে নিচে ফালাতে লাগলাম। আর নিচে সালেহীন ব্যাগের ভিতরে জমাতে লাগলো। কয়েক মিনিটের ভিতরেই ব্যাগ ভরে গেল! তারপর আসিফ শিস দিলো যে এখন নেমে পরার জন্য। আমি আর সৌরভ গাছ থেকে নেমে পড়ি। তারপর আমগুলো সব নদীর পানিতে ধুয়ে নেই। অনেক আম হয়েছিল। ভাবলাম কিছু আম ভর্তা করলে ভালোই হয়। কিন্তু কিভাবে করবো বিট লবণ ছাড়া কিছুই তো সঙ্গে করে নিয়ে আসেনি। আমরা সবাই সালেহীনদের বাসার পাশে চলে যায়। সেখানে নিরাপদে খাওয়া যাবে আমগুলো। একে একে আমগুলো বিট লবণ দিয়ে খেতে লাগলাম। কিছু আম খেতেই দেখি দাতঁ একদম শিরশিরিয়ে উঠছে এজন্য আর বেশি খেতে পারেনি। তারপর আমরা বাকি আমগুলো সমানভাবে ভাগ করে নিলাম। তখন পকেটে করে আম বাড়িতে করে মনের খুশিতে নিয়ে এসে পড়ি। দিনটা ভালোভাবেই কেটে গেল।
তো এই ছিল আজকের মজার একটি ঘটনা। শৈশবে এমন আরও অনেক স্মৃতি আছে। অন্য একদিন আবারো আপনাদের সাথে শৈশবের মজার কোনো ঘটনা শেয়ার করবো। আমার বাংলা ব্লগকে বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই এমন একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শৈশবের মজার কোনো ঘটনা শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। যায়হোক, গল্পটি পড়ে কেমন লাগলো আশা করি জানাবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
১০% @shy-fox এর জন্য ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
বাহ বেশ চমৎকার একটি গল্প ছিল খুবই মজা পেলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে
হুম, বিট লবন দিয়ে আম সত্যি বেশ স্বাদের লাগে। তবে আপনার লেখার মাঝে কিছু বানান ভুল রয়েছে সেগুলোকে ঠিক করে নিয়েন। ধন্যবাদ
জি ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
মোল্লা বাড়ির আম চুরির ঘটনা শুনে অনেক মজা পেলাম। আপনিতো দেখছি আম চুরি করে ধরা পড়েননি। এর আগে অনেকগুলো গল্পতে সবাই দেখলাম চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এ প্রতিযোগিতায় গল্পগুলো শুনতে ভীষণ ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর ভাবে পুরো গল্পটা সাজিয়ে লিখেছেন। আমাদের মাঝে এত অসাধারন একটি গল্প নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ।
হাহাহা আপু চুরি করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ধরা খায়নি। আপনাকে ধন্যবাদ আপু
আপনার আম চুরির ঘটনা পড়ে বেশ মজাই পেলাম। নরসুন্দা নদীর পাশে মোল্লা বাড়ির গাছের আম খেতে ইচ্ছে করছে আমার ভাইয়া। বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজা করে আম চুরি করে বিট লবণ দিয়ে খেয়েছেন।আবার যা ছিলো ভাগ করে পকেট ভরে নিয়ে গিয়েছেন।বাহ্ খায় খায় আবার বস্তা ও বান্ধে। আপনার গল্পটু সেরা ছিল ভাইয়া। খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ ভাইয়া।
হাহাহা আপু যা বললেন আপনি 😄। আম এতো খাওয়া যায়না। ধন্যবাদ আপনাকে আপু
আপনার আম পাড়ার ও আম চুরির গল্প আমার খুব ভালো লেগেছে।আপনি খুব সুন্দর ভাবে আপনার আম চুরির গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন।আপনি যে বেশ পাকা চোর ছিলেন সেই বিষয়ে আর সন্দেহ করছিনা।হাহহা।তবে সেই পথ থেকে আলোর পথে এসেছেন দেখে ভালো লাগছে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি চুরির গল্প গর্বের সাথে তুলে ধরার জন্য ।
হাহাহা যা বললেন আপু। পাকা চুর হতে পারিনি 😇। ধন্যবাদ আপনাকে আপু
আম চুরির গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কারণ ছোটবেলা আমরা কমবেশি সবাই ফল চুরি করে খেয়েছি। সেই ছোটবেলার গল্পটি পড়ে সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল। শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া
সবারই ছোটবেলার কমবেশি অনেক মজার ঘটনা রয়েছে ।বেশিরভাগ ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ।কারণ তারা অনেকে মিলে অন্যের গাছের ফল চুরি করার ব্যস্ত থাকত ।কিন্তু আমরা তো আর বাইরে কোথাও যেতে পারতাম না ।বাড়ির মধ্যেই সব হত। যাহোক খুব ভালো লাগলো আপনার এই গল্পটি পড়ে।প্রতিযোগিতাটি সত্যিই অসাধারণ হল, যার মাধ্যমে কিছু মজার কাহিনী আমরা জানতে পারছি।
আপু আপনাকেও ধন্যবাদ। তবে মেয়েরাও কিন্তু ছোটবেলায় দেখতাম গাছে উঠতো
চুরি তো চুরি একদম মোল্লা বাড়ির গাছের ছাদের থেকে আম চুরি। আপনার সাহস আছে বলতে হয়। ভর্তা বানিয়ে খেলে বেশি মজা পাইতেন তাইলে আর দাঁতে লাগতোনা।
হাহাহা ভাই এটা অনেক আগের কথা। কত চুরি করেছি হিসেব নেই। ধন্যবাদ আপনাকে