প্রতিযোগিতাঃ শেয়ার করো তোমার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি
30-08-2022
১৫ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। তো চলে এলাম আপনাদের সাথে মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য। শুরুতেই ধন্যবাদ দিতে শুভ ভাইকে যিনি এই প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করেছেন। ইতিমধ্যে বেশ মজার মজার কিছু অনুভূতি পড়েছি মোবাইল হাতে পাওয়া নিয়ে। আমারও কিছু অনুভূতি আছে।
মোবাইলের প্রতি ছোট বেলা থেকেই একটা ভালো লাগা কাজ করতো। বাবার সেই এগারোশ মডেলের নোকিয়া। সাথে টুজি নেটওয়ার্ক। মাঝে মাঝে নেটওয়ার্ক আপডাউন। আমাদের বাড়িতে তখন বাবার একটি মাত্র ফোন নোকিয়া এগারোশ মডেলের। বাবা অবশ্য ফোন দিয়ে ফোনে রিচার্জের কাজ করতো। যেটাকে বলে ফ্লেক্সিলোড। খুব খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাবার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করেই সাপ খেলা শুরু করে দিতাম। সাপ খেলায় সাপ শুধু কয়েন খেতে খেতে বড় হতে থাকতো। এক পর্যায়ে যখন অনেক লম্বা সাপে পরিণত হতো তখন আর খেলা যেত না। সাপের শরীরেই কামড় লেগে গেম ওভার হয়ে যেত। আবার পুনরায় শুরু করে দিতাম। আমার ছোটবোনও সাপের গেম খেলতো। গেম খেলার সময় নির্ধারণ করে দিতাম যে ১০০০ করতে পারবে পয়েন্ট সে আবার খেলবে। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে গেম খেলতাম। মাঝে মাঝে ৮০০ পয়েন্ট এর কাছে গিয়ে আটকে যেতাম। শেষ হলে বোনকে দিতাম খেলার সময়। এতো গেলো গেমের কথা। নোকিয়া এগারোশ মডেলে আরেকটি মজার জিনিস ছিল সেটি হলো রিংটন। অনেকগুলো রিংটন থাকতো। তার মধ্যে আমার কাছে ব্যাঙের শব্দের রিংটন খুব প্রিয় ছিল। ব্যাঙের রিংটন বারবার শুনতাম। বারবার রিংটন পরিবর্তন করে আবার নতুন রিংটন সেট করতাম। বাবা তখন বাংলালিংক সিম ব্যবহার করতো। টুজি সাপোর্টেড সিম এজন্য নেটওয়ার্কও তেমন থাকতো না। মাঝে মাঝে কেউ ফোন দিলে পেতোই না। তবে ফোনোর একটি ভালো গুণ ছিল এক চার্জে সারাদিন চলে যেত। চিকন চার্জার দিয়ে চার্জ দেয়া হতো যেগুলো এখন পাওয়াই যায় না।
চার্জ হয়ে গেলে কম্প্লিট দেখাতো। আবার তখন শুরু করে দিতাম খেলা। ফোনে আরেকটি গেম ছিল পাজল মেলানো। এটা ব্রেইনের গেম বলায় যায়। প্রথম কয়েকটি স্টেপ সহজ ছিল পরে ধাপ যতো বাড়তে থাকে গেম তত কঠিন হতে থাকে। ১০ ধাপ পর্যন্ত গিয়েছিলাম মনে হয়। তারপর আর পারেনি। তবে এ ফোনগুলোতে মেমরির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই অডিও বা ভিডিও কোনো গানও শোনা যেত না। আমাদের গান শোনার ঔষধ ছিল হরেক রকমের রিংটন। রিংটন বাজিয়েই যেন গানের আনন্দ পেতাম। মজার ব্যাপার হলো বাবা ফোনে রিচার্জ করতো আর ভাবতাম ফোনের ভিতরে ফোনের কভার খুলে টাকা ভরে দেয় তাহলে টাকা রিচার্জ হয়ে যায় হাহাহা। ছোটবেলায় এটাই ভাবতাম আমি। বাবাকে অবশ্য জিজ্ঞেস করা হয়নি তবে আমার মনে হতো এমন। তবে প্রযুক্তির উন্নতি যত বাড়তেছিল নতুন নতুন স্মার্টফোনও বাজারে আসতেছিল। নোকিয়া ১১০০ মডেলের ফোনটি বাবা পরে বাজারে হারিয়ে ফেলেছিল। এটা নিয়ে আমার খুব মন খারাপ আর বাবারও। কারণ দীর্ঘ পাচঁটি বছর বাবার কাছে এই ফোনটি ছিল। তবে ফোনটি পাওয়ার জন্য অনেক খোজাঁখুজিঁ করেছে কিন্তু পরে অবশ্য পাওয়া যায়নি। সিমটা উঠিয়েছিল শুধু। যায়হোক, এতো গেলো আমার ছোটবেলার মোবাইল হাতে পাওয়ার কথা। এবার একটু বর্তমানে আসা যাক।
২০১৬ সালের দিকে কথা। আমি তখন নবম শ্রেণীতে পা রাখলাম। কিছুদিন হলো জেএসসি পাস করে নবমে পদার্পণ। আমার বন্ধুরা সবাই টেকনোলোজির সাথে ভালো সম্পৃক্ত। স্কুলে গেলেই দেখতাম ক্ল্যাশ অব ক্লেন খেলে। আমি এটা তেমন বুঝতাম না। জাস্ট ওদের খেলা দেখতাম শুধু। আমারও খেলতে ইচ্ছে হতো। কিন্তু কি আর করা আমাকে কে ফোন কিনে দিবে? আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে। ছোটবেলা থেকেই পরিবারকে কোনো বিষয়ে চাপ দেয় নি। সবসময় নিজের যা ছিল তাই দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতাম। বন্ধুরা ফেইসবুক চালায়। আমার বন্ধু দস্তগীর বলেছিল ফেইসবুক একাউন্ট খুলতে। কিন্তু কিভাবে খুলতে হয় তা জানিনা। বাড়িতে আপুর বাটনফোন সিম্পনি এল২৩। আমার দুলা ভাইয়ের সাথে এটা দিয়েই কথা বলতো। রাতে যখন আপু শুয়ে পরে আমি তখন ম্যাথ করতেছিলাম। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম ফেইসবুক একাউন্ট খোলার জন্য। নেটওয়ার্ক এর কারণে বারবার লোডিং দেখাতো। অপেরা মিনি ব্রাউজার দিয়ে ট্রাই করতাম। ফাইনালি ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আমি ফেইসবুক একাউন্ট খুলতে সমর্থ হয়।
দস্তগীর তখন রাজউক উত্তরা কলেজে চলে গেছ। যে বন্ধুর সাথ সেই ছোটবেলা থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। ফেইসবুক খুলে নাম দিয়েছিলাম হায়দার ইমতিয়াজ। একাউন্ট খুলে প্রথমেই দস্তগীরকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। তখন অবশ্য এতো ফেইসবুক চালতাম না। মাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পরে আর এক্টিভ থাকা হয়নি। তবে তার আগে অবশ্য একটা প্রেম জুটিয়েছিলাম বাটন ফোনের সাহায্যে। বাটন ফোন দিয়েই মেসেজিং এ কথা হতো। আপনাদের সাথে এ বিষয়ে একটি পোস্টে লিখেছিলাম মনে হয়। আপুর ফোন এজন্য রাত ছাড়া তেমন ব্যবহার করতে পারতাম না। আপু যখন শ্বশুর বাড়িতে চলে যায় আমার ফোন চালানোও বন্ধ । এখন কি করা! আপুকে খুব অনুরোধ করে বললাম ফোনটি দিয়ে যাওয়ার জন্য। বেশ কিছুদিন পর। ফোনটি হাতে পেলাম। এদিকে মাধ্যমিক পাস করে ফেললাম আর বাটন ফোনের প্রেমও ভালো চলছিল। চলে গেলাম ডিপ্লোমা লাইফে। মেস লাইফ ভালোই চলছিল। ৪জি একটি মেমরি ফোনে লাগিয়েছিলাম। আরেফিন রুমি, ইমরান, কনা, পড়শি আমার প্লে লিস্টে তখন ফেভরিট ছিল। গান শুনেই ঘুমিয়ে যেতাম। তবে কিছুদিন পর কয়েকটি টিউশনি এর ব্যবস্থা করে দেয় মামা। নিজের খরচটা তো চলবে। শুরুতে একটি মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতাম। মাসে দুই হাজার দিতো। কোনোমতে আমার মেসের খরচ চলে যেত। তার পরের মাসে মামা আরও দুটি প্রাইভেট ম্যনেজ করে দেয়। তিনটি মেয়ে একসাথে একটা ব্যাচ আকারে পড়াতাম। দুইমাসে আমার প্রায় ১৬০০০ টাকা হয়ে যায়। মা কে আগেই রেখেছিলাম এবার একটা ফোন কিনবো। তার পরের মাসে বাড়িতে গিয়ে মাকে সাথে নিয়ে অপ্পো এ১২ ফোনটা ক্রয় করি। আসলে এটা আমার জীবনের প্রথম স্মার্টফোন বলা যায়। নতুন জিনিস পেয়ে আমি তো বেশ খুশি। এখন পর্যন্ত ফোনটি ব্যবহার করছি। ভালোই সার্ভিস দিচ্ছে। স্টিমিটের কাজও এই ফোন দিয়েই শুরু করেছিলাম আর এখন পর্যন্ত এই ফোন দিয়েই করতেছি।
যায়হোক, মোবাইল হাতে পাওয়ার কিছু অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। নতুন যেকোনো জিনিস পাওয়ার অনুভূতিই অন্যরকম। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।