ছোটবেলার মজার একটি ঘটনা

09-07-2022

২৫ আষাঢ় ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছো। ঈদ বয়ে আনুক হাসি-আনন্দ আপনাদের জীবনে সেই কামনাই করি। যায়হোক, আজকে একটি মজার ঘটনা শেয়ার করতে চলে আসলাম। আজকে হঠাৎ দেখলাম কিছু ছোট বাচ্চারা খোলা মাঠে খেলা করতেছে। তখন ছোটবেলার একটি ঘটনা মন পড়ে গেল। শৈশবের সময়ে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে যা স্মরণীয় হয়ে থাকে। শৈশবে তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব না তবে স্মৃতিটুকু রয়ে যায় জীবনের ডায়রীতে।

children-1822704_1280.jpg

copyright free image from pixabey

বর্ষাকালের দিককার সময়ের কথা । তখন সম্ভবত চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। বর্ষার পানিতে চারিপাশ যেন ভরে গেছে। বাড়ির পাশে যে কয়টা জমি ছিল সব পানিতে ভরপুর। তারই মাঝে আমরা পাড়ার কিছু ছেলেরা মিলে ফুটবল খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফুটবল খেলাটা তখন প্রায় নেশা ছিল আমার। আমি গোলকিপার হিসেবেই দায়িত্ত্বরত থাকতাম। গোলকিপার হিসেবে অবশ্য তখনই আমার সুনাম ছিল ভালো। পাড়ার যত খেলা হতো আমাকে গোলকিপার হিসেবে নেয়া হতো। পাড়ার আমার সমবয়সী সবাই মিলে বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম ফুটবল খেলার জন্য। হাফপ্যান্ট পরেই বেরিয়ে যেতাম। ফুটবল খেলার সময় হাফপ্যান্ট পড়ে খেললে কম্পোর্টেবল ফিল হয়।

আমাদের বাড়ির পাশেই কিছু সমবয়সী ছেলে থাকতো তাদের নিয়েই আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা শুরু করতাম। সবাই মিলে চার ইঞ্চি একটি ফুটবল কিনেছিলাম। ফুটবলটির নাম ছিল ডিয়ার। ভিতরে বেশি হাওয়া থাকলে শট দিয়েও নেয়া যেত না তেমন। আমি আবার পায়ে শট দিতাম। এজন্য বা পায়ের জোরও ছিল বেশি। নতুন ফুটবল কিনে আজকে আমরা খেলা করবো। সবাই এক্সাইটেড ছিলাম। চলে গেলাম মাঠে। জমিতে হাটুঁ সমান পানি! তারই মাঝে খেলা শুরু। বল তো আর নেয়া যাচ্ছেনা শট দিয়ে। সবাই একসাথে জড়ো হয়ে যা তা অবস্থা। বলে শট না দিয়ে একেক জনের পায়ে শট হয়ে গেল। বল তো জায়গা থেকে সরে না। নতুন বল আবার হাওয়া বেশি। তবে অনেক কষ্টে আমরা একটি গোল দিয়ে দিলাম। আমাদের দলের রিয়াদ নামের একটি ছেলে ছিল। সে খুব ভালো ফুটবল খেলতো। দলের স্ট্রাইকার প্লেয়ার সে ছিল। ডান পায়ে কাটানোর দক্ষতাও ভালো ছিল। বৃষ্টির দিনে আনলিমিটেড খেলা হতো। আছর ঘনিয়ে কখন সন্ধ্যা হয়ে যেত টেরই পাওয়া যেত না।

boys-1283786__480.jpg

copyright free image from pixabey

খেলার এক পর্যায়ে বল উচুঁতে করে শট দেয়াতে বল একদম খুটির মতো কি যেন ছিল এটার উপরে পর বল ধপাস করে জোরে একটা শব্দ হয়ে ফুটে গেল। এখন কি করা!! এতো কষ্টের নতুন বল এভাবে ব্রাস্ট হয়ে যাবে কে জানতো। সবাই বলতেছে যে শট দিয়েছে সে বল কিনে দিবে। এতো উপরে তুলে শট দিলো কেন? সে তো আর ইচ্ছে করে দেয়নি। আমি বললাম দোষ দিলে লাভ নেই । অন্য উপায় বের করতে হবে। আমার মাথায় আইডিয়া চলে এলো। আমাদের গাছে জাম্বুরা ছিল। জাম্বুরা ফল নিশ্চয় চিনেন। আমাদের বাড়িতে তিনটা জাম্বুরা গাছ ছিল। এই সময়টাতে জাম্বুরা ভালোই বড় হয়ে যেত। জাম্বুরা যেহেতু গোল এজন্য ফুটবল হিসেবে খেললে মন্দ হবেনা। আমি বললাম আমাদের গাছ থেকে জাম্বুরা এনে খেলা যেতে পারে। আমান খুব ভালো গাছে উঠতে পারতো। তাকে নিয়ে চলে এলাম আমাদের বাড়ির ঠিক পিছন দিকে জাম্বুরা গাছের এখানে। জাম্বুরা লুকিয়ে পারতে হবে দেখলে আম্মার হাতের মাইর মিস নাই। খুব সাবধানে বললাম জাম্বুরা পারতে। জাম্বুরা পেরেই আমরা আবার চলে আসলাম মাঠে। সেই আগের মতোই ফুটবল খেলা শুরু করে দিলাম। তবে জাম্বুরা একটু শক্ত হওয়াতে শট দিয়ে নেয়াও যাচ্ছিলো না। কয়েকজনের অবশ্য নখে ব্যথাও পেয়ে যায়। কি আর করা এভাবেই খেলতে থাকলাম। আমরা শটাইতে জাম্বুরা অনেকটা নরম হয়ে গেল। এক পর্যায়ে জাম্বুরা গেলো ভেঙ্গে। হাহাহা! এখন আর কোনো উপায় নেই খেলার। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়।

গল্পটা লেখার সময় আমার অনেক হাসি পাচ্ছিল। ছোটবেলায় কতো মজা করেছি। আর এখন ফুটবল খেলা দেখা হয় কিন্তু ফুটবলের ধারে কাছেও যাওয়া হয়না। ছোটবেলায় সেই ফুটবল খেলার মুহূর্তটা আসলে ভুলার মতো নয়। আশা করি আপনাদের কাছেও গল্পটি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে কমেন্টে করে জানাবেন। সবাইকে আবারো পবিত্র ঈদুল-আযহার শুভেচ্ছাঈদ মোবারক



10% beneficary for @shyfox ❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

ভাইয়া, আপনার ছোটবেলার মজার ঘটনাটি বেশ হাস্যকর ছিল। কারণ ফুটবল ব্রাস্ট হয়ে যাওয়ার কারণে গাছের জাম্বুরা দিয়ে খেলার আইডিয়াটা কিন্তু দারুন ছিল। তবে জাম্বুরা শক্ত হওয়ার কারণে সকলের পায়ের যে কি অবস্থা হয়েছিল তা ভাবছি আর মনে মনে হাসছি। যাইহোক অবশেষে জাম্বুরাটি নরম হয়েছে এবং ভেঙেও গিয়েছে। খুবই মজার একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

জি ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই পোস্টটি পড়ার জন্য। ছোটবেলার ঘটনাগুলো সত্যি বলতে অন্যরকম ছিল 😍

 2 years ago 

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো স্মরণ করিয়ে দিলেন ভাই। ছোটবেলায় আমরা যে কি করতে যে কি করতাম তার কোন স্টেশন ছিল না। এভাবে আমরাও ফুটবল খেলেছি। মাঝেমধ্যে প্যাকেটের মধ্যে কাগজ পুরে ফুটবল বানিয়ে খেলা করেছি। উদ্দেশ্য যখন ছিল ফুটবল খেলব, ফুটবল বানিয়েই ছাড়তাম যে কোন জিনিস দিয়ে।

 2 years ago 

হাহহা ভাই সময়টা খুব উপভোগ করতাম তখন সত্যি বলতে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60935.93
ETH 2645.60
USDT 1.00
SBD 2.56