দুই টাকার আইসক্রিম
03-09-2022
১৯ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আবার খারাপ মিলিয়েই আছি। যায়হোক, চলে শৈশবের একটি ঘটনা শেয়ার করার জন্য। শৈশবের দিনগুলো যেন রঙিন কাগজে মোড়ানো। চাইলেই তো আর সেই রঙিন দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া যাবে না। বড়দের দেখে ভাবতাম কবে বড় হবো? আর এখন ভাবী কেন বড় হয়েছি, সেই দিনগুলোই তো ভালোছিল। এক টাকার চকলেট, দশ টাকার কসমস বিস্কুট, দুই টাকার আইসক্রিম কতো কি খেয়েছি অল্প পয়সায়। আর এখন দশ টাকার নিচে কিছু পাওয়ায় যায় না। আসলে এখন মানুষের সুখের মূল্যও বেড়ে গেছে। আগে যেখানে আটানা পয়সা পেয়েই কতো খুশি হতাম, এখন একশ টাকা থাকলেও সেই ফিলিংসটা আসে না। সময়ের সাথে তাহলে সুখের সিস্টেমটাও পরিবর্তন হয়! হয়তোবা তাই।
তবে সুখ হলো নিজের কাছে। কেউ কোটি টাকার মালিক হয়েও সুখী না, আবার কেউ রিকশা চালিয়ে দিব্যি সুখে সংসার করছে। কথায় থাকে না, "সুখ কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না।" সময়ের পরিক্রমায় মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। সামনে হয়তো আরও হবে। আমার মনে হয় আমি যে রঙিন শৈশবটা পার করে এসেছি এমন শৈশব হয়তো আগামী প্রজন্ম পাবে কি না তা বলায় মুশকিল হয়ে পরছে। ডিজিটাল যুগে এসে গ্রামের সেই চঞ্চল ছেলেটাও এখন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সারাক্ষণ ফ্রিফায়ার, পাবজি নিয়েই পরে থাকে। অথচ আমরা তখন স্মার্টফোন তো দূরে থাক বাটনফোনও ভালো করে চালাতে পারতাম না। কতো দূরন্তপনা ছিল ছোটবেলা থেকেই এখনকার ছেলে মেয়েগুলো যেন সে সুযোগটাই পায় না। যায়হোক, এসব প্রসঙ্গ বাদ দেয়। ঘটনায় আসা যাক।
আমাদের এলাকার পাশেই বাড়ি বাবলু কাকার। গরমের সময়। চারিদিকে খুব উত্তাপ। আর বাবলু কাকা এসেই আমাদের মন জুরিয়ে দিয়ে যেতেন। দুই টাকার আইসক্রিম খেয়েছেন আপনারাও নিশ্চয়। যেটা এখন পাওয়ায় যায় না বললেই চলে। মাথায় একটা আইসক্রিম এর বাক্স নিয়ে আমাদের পাড়ার সরু রাস্তা দিয়ে আসতো। পথে মাঝে মাঝে বাক্সে জুরে জুরে আওয়াজ দিতো। তখনকার সময় হাতে টাকা থাকা মানে অনেক কিছু। টাকার মূল্যটাও যেন ছিল অনেক। দোয়েল পাখি নোটের সেই দুই টাকা এখন যেন পুরাতন হয়ে গেছে। পাখিটাকেও যেন টাকায় দেখা যায় না। দুইটাকা নোটের আবিষ্কার লেখা থাকতো ২০১০ ।
একদম কচকচে নোট। কোনো স্পট নেই। দুই টাকা হাতে নিয়েই বেশ খুশি। মায়ের কাছে বায়না ধরে আইসক্রিম খাওয়া হতো। শাড়ির আঁচলের কোণায় টাকা গুজে রাখতো। আর সেটা চুরি করে আইসক্রিম কিনে খাওয়া। কি দিন ছিল! বাবলু কাকা চালের বিনিময়েও আইসক্রিম দিতো। সাথে ব্যাগ নিয়ে আসতো দেখতাম। গ্রামের ছেলেরা অনেকেই কৌটা ভরে চাল নিয়ে আসতো। আর উনি আন্দাজ করে দুই টাকা বা পাচঁ টাকা ধরে নিতো। পাচঁ টাকায় তিনটা আইসক্রিম পাওয়া যেত। বাবলু কাকা আসলেই আমি চলে যেতাম কাকার কাছ থেকে আইসক্রিম আনার জন্য। দুই টাকার আইসক্রিম এ ছিল অমৃত স্বাদ। নারিকেলে ভরপুর ছিল পুরো আইসক্রিম। খেতেও খুব মজা ছিল। তখন স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর এটা বুঝতাম কম, শুধু বুঝতাম স্বাদ হয়েছে। বাবলু কাকার কাছে শুনেছিলাম আইসক্রিম বানাতে সকাল সকাল বেরিয়ে পরতে হয় সেই শহরের উদ্দেশ্য। তারপর সেখান থেকে আইসক্রিম বানিয়ে এনে বিক্রি করতে হয়।
কাকার দুটি মেয়ে ছিল। আইসক্রিম বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলে যেত। এতেই সে অবশ্য খুশি থাকতো। আমাদের গ্রামে গরমকালে প্রতিদিন এসে আইসক্রিম বিক্রি করতো। ব্যাগ ভর্তি চাল আর কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতো। তবে বাবলু কাকার সেই আইসক্রিম এর স্বাদ যেন এখন আর কোনো আইসক্রিম এ পায়না। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের আইসক্রিমও বাজারে এসেছে, সেই সাথে দামটাও যেন বেড়েছে। কিন্তু দুই টাকা দামের সেই নারিকেলের আইসক্রিম এর মতো ফিলিংস হয়না। এ যুগের প্রজন্ম যারা আছে তারা নিশ্চয় দুই টাকার আইসক্রিম মিস করবে। কারণ এই দামে এখন বাজারে আইসক্রিম আছে কিনা আমারও জানাও নেই। নতুন প্রজন্মরা হয়তো আরও দামী দামী মূল্যের অনেক কিছুই পাবে। তবে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমাদের মতো রঙিন শৈশব হয়তো পাবে না। দিনগুলি আসলে কখনো ভুলার মতো নয়। সবাই একসাথে বসে তপ্ত দুপুরে আইসক্রিম খাওয়া, মা খালারা একদিকে ধান লারাচারা করছে। অন্যদিকে আমরা ছুটাছুটিতে ব্যস্ত।
আসলে হঠাৎ করেই শৈশবের সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল। ঘুম থেকে উঠেই বসে পড়ি লেখতে। আর সেটা আপনাদের সাথেও ভাগ করে নিলাম। আপনারাও হয়তো শৈশবে এমন সব রঙিন দিনগুলো পার করে এসেছেন। সময় চলে যায়, তবে কিছু স্মৃতি রয়ে যায় সবসময় স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আবারো হাজির হবো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
ভাইয়া আপনার গল্পটি পড়ে মনে হচ্ছিল যেন আমি আমার শৈশবে হারিয়ে গিয়েছি। আট আনা দিয়ে চকলেট আমিও খেয়েছি, এক টাকা দিয়ে আইসক্রিম আমিও খেয়েছি, আমরা তো মাঝে মাঝে এক টাকা আইসক্রিমের ভিতরে এক টাকা পয়সাও পেতাম। খুব উপভোগ করেছিলাম দিনগুলো। এখন হাজার চেষ্টা করলেও সেই দিনটি ফিরে পাবনা। এখনকার বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করলে কোন আর চকবার ছাড়া তো আইসক্রিম খাবেই না। একেক সময় চিন্তা করলে অবাক হই, কি ছিল আমাদের শৈশব কাল, আর কি হচ্ছে আমাদের বাচ্চাদের শৈশবকাল 🤔।
ঠিক বলেছেন আপু। এখনকার বাচ্চারা আমাদের মতো কাটানো শৈশব আর কখনো হয়তো উপভোগ করতে পারবেনা। প্রযুক্তির কল্যাণে বাচ্চারা সবাই স্মার্টফোন এর উপর ডিপেন্ড হয়ে পরেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।