ছোটবেলার মাছ ধরার মজার একটি ঘটনা
08-08-2022
২৪ শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। যখন পোস্টটি লিখছি তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাহিরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। মেসের বেলকনিতে দাড়িঁয়ে তখন বাহিরের ওয়েদারটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। এরকম ওয়েদার কারো কাছে রোমান্টিকতার জন্ম দেয় আবার কারো কাছে স্মরণ করিয়ে দেয় শৈশবে ফেলে আসা কিছু স্মৃতির কথা। সবারই শৈশব কেটেছে বেশ দূরন্তপনার মধ্যে। আমারও অবশ্য এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে শৈশবের একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে যায়। আর সেটা তখনই আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য লিখতে বসে পড়ি।
বর্ষার দিককার সময়ের ঘটনা। বৃষ্টির মধ্যে বেশ দূরন্তপনার মধ্যেই সময় চলে যেত। শহরের আট দশটা ছেলের থেকেও ভিন্ন জীবন গ্রামের ছেলেদের। আমার বয়স তখন নয় কি দশ হবে। হাফ প্যান্ট পরে এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় ছুটে যেতাম শুধুমাত্র ফুটবল খেলার দেখার জন্য। ঠিক এই সময়টাতে অনেক খেলা হলো পাড়ায় পাড়ায়। আমাদের দিকে দক্ষিণপাড়া আর উত্তরপাড়ার ফুটবল টুর্নামেন্ট বেশ জমে যেত। জমি তখন খালি। গ্রামের মাঠ বলতে খালি জমিগুলোই। বর্ষার দিকে পানিও তাকে বেশ। সেখানেই জমে যেত ফুটবল খেলা। দর্শক হিসেবে আমরা পাড়ার কিছু ছেলেরা দেখতাম। বৃষ্টির মধ্যেই খেলা হতো আর সেখানে আমরা ভিজে ভিজে খেলা উপভোগ করতাম। জমি পানিতে ভরে যেত। হাটুঁ সমান পানি হয়ে যেত একটু বেশি বৃষ্টি হলেই। আমাদের বাড়ির সামনেই পারাপারের রাস্তা। বেশি বৃষ্টি হলে রাস্তার পার সমান পানি হয়ে যেত। রাস্তার ঠিক মাঝে একটি পুলের ব্রিজ ছিল। যেখান দিয়ে এ পারের পানি ওপারে যেত। মাঝে ব্রিজের নিচে পানির বেগ থাকতো অনেক। ছোটবেলা থেকেই মাছ ধরার প্রতি আলাদা ভালো লাগা কাজ করতো। কখনো বড়শী, কখনো টাকি জাল কখনোবা কারেন্ট এর জাল নিয়েই বেরিয়ে পড়তাম মাছ ধরার জন্য। ব্রিজের নিচে যখন পানির বেগ বেশি থাকে তখন সেখানে মাছ ধরার ধুম পরে যেত। আমরা ছোট তাই সুযোগ পেতাম না তেমন।
সারাদিন যখন মুষলধারে বৃষ্টি হতো তখন সারাদিনই জাল দিয়ে মাছ ধরতো। আমরা পাড়ার কিছু ছেলেরা শুধু দেখতাম। টাক জাল দিয়ে মাছ ধরতো দেখতাম। বেশ কিছুক্ষণ এর জন্য পানির নিচে জাল ডুবিয়ে রাখতো। কিছুক্ষণ পরেই জাল উপরে তুলতো। ছোট ছোট অনেক মাছ ধরা দিতো জালে। আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। তবে খুব ইচ্ছে ছিল আমার জাল দিয়ে এই ব্রিজের নিচ থেকে মাছ ধরার। বাবার কাছে মিথ্যা বলে একটা জাল কেনা ব্যবস্থা করলাম। বাশঁ ঝাড় ছিল বাড়ির পাশেই। সেখান থেকে চিকন বরাগ বাশঁ কেটে জাল লাগনোর জন্য ফিটিংস করে নিলাম। যাক জাল বানানো হয়ে গেছে। এবার মাছ ধরার পালা। একটানা দুদিন বৃষ্টি। ব্রিজের নিচে এখন কাশেম চাচার ছেলে জাল নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে। তেমন অধিকার কাটানোও যাবেনা। কারণ জমিটা কাশেম চাচার ছিল। আর পানির প্রবাহ তার জমির উপর দিয়েই যেত। প্রথম দিন দেখলাম কাশেম চাচার ছেলে সারাদিন জাল নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সন্ধ্যার পর মাছ ধরবো। সবকিছু ঠিকঠাক করে ঘুছিয়ে নিলাম। দাদার ঐতিহ্যবাহী শংকর ছাতা নিয়ে সন্ধ্যা হতেই বেরিয়ে পরলাম। এখন রাস্তার পাশে তেমন লোকও নেই। ছোট একটি লাইট সঙ্গে করে নিয়ে নিছিলাম। পানির স্রোতের প্রবাহ এখন কিছুটা কমে গেছে। আর পানির উচ্চতাও। তবে হতাশ হয়নি। আমি পানিতে জাল ফেলে ছাতা মাথা দিয়ে দাড়িঁয়ে রইলাম। পাচঁ মিনিট পর পর জাল উপরে তুলি। প্রথমে কিছু ছোট ছোট মলা মাছ পেলাম। মাছ রাখার জন্য সঙ্গে আনলাম বদনা। বদনা নিশ্চয় চিনেছেন আপনারা। মাছ মেরে সব সেখানে রেখে দিতাম। গ্রামে সেসময় কারেন্টও তেমন থাকতো না। সন্ধ্যা হতেই মনে হতো রাত অনেক হয়ে গেছে। বৃষ্টির দিনে এমনিতে রাস্তার মধ্যে তেমন মানুষও নেই। ছোটবেলায় অনেক সাহসী ছিলাম আর এখন ভিতুর ডিম হয়েছি হাহাহা। আমি জাল পানিতে ফেলে রাস্তার পাড়ে বসে থাকতাম। পানির বেগ কমেছে কিছুটা। যখন জাল তুলি তখন জালে ধরা দিল কৈ আর টেংরা। কৈ মাছ টেংরা মাছ দেখেই খুব ভালো লেগেছিল। যেইনা টেংরা মাছকে ধরে রাখতে গেলাম দিলো হাতে বসিয়ে। যারা টেংরা মাছের গালা খেয়েছেন তারাই জানেন এর ব্যথার তীব্রতা কেমন। আজ আর মাছ মারা হবে না। কিছু মাছ নিয়েই বাড়িতে আসতে হলো। বাড়িতে এসেই মায়ের বকুনি। মা নিষেধ করার পরেও কেন যে মাছ ধরতে গেলাম। হাত ফুলে গিয়েছিল অনেকটা। তবে অবশ্য মায়ের হাতে মার খায়নি এজন্য। এর অবশ্য কারণও আছে। হাতের প্রচন্ড ব্যথা নিয়েই লক্ষী ছেলের মতো পড়তে বসে পড়লাম।
যায়হোক, আজ এই পর্যন্তই। আবারো হাজির হবো আপনাদের সাথে নতুন কোনো শৈশবে ফেলে আসা মজার গল্প নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficiary for @shyfox❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
আমার ও একই অবস্থা ভাইয়া।ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে কিছুতেই ভয় ছিল না এখন যেন একটু ভীতু হয়ে গেছি শহরে থাকার পর।তাছাড়া আমিও মাছ ধরতে খুব পটু ,কত যে টেংরা, কৈ ও টাকি মাছ হাত চেপে ধরেছি তার ইয়ত্তা নেই।আর বড়শি তো আছেই, আপনার মাছ ধরার মজার ঘটনা শুনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।
জি দিদি শৈশবের সেই সময়টাকে বেশ মিস করি। আপনার ও দেখছি আমার মতই শৈশবের দিনগুলি। জেনে ভালো লাগলো দিদি। ধন্যবাদ আপনাকে