"এখানেই শেষ নয়" নাটক রিভিউ ❤️🌼
22-07-2022
৭শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। ঈদের পরে নাটকটি মুক্তি পেয়েছিল তখনই দেখেছিলাম। নাটকটির নাম হচ্ছে এখানেই শেষ নয়। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মিজানুর রহমান আরিয়ান। চলে এলাম আপনাদের সাথে নাটকের রিভিউ শেয়ার করার জন্য।
নাটকের কিছু তথ্য
নাম | এখানেই শেষ নয় । |
---|---|
রচনা ও পরিচালনা | মিজানুর রহমান আরিয়ান । |
প্রধান সহকারী পরিচালক | পথিক সাধন । |
প্রযোজক | খোরশেদ আলম। |
অভিনয়ে | তৌসিফ মাহবুব, তাসনিয়া ফারিন, আজিজুল হাকিম, সাবেরী আলম, মাইন হাসান সহ আরও অনেকে। |
দৈর্ঘ্য | ৪৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ড । |
আবহ সংগীত | আপেল মাহমুদ এমিল । |
মুক্তির তারিখ | ১৩ই জলাই, ২০২২ ইং |
ধরন | কাল্পনিক , রোমান্টিক, সামাজিক । |
ভাষা | বাংলা। |
দেশ | বাংলাদেশ |
চরিত্রেঃ
শাওনঃ তৌসিফ মাহবুব
মিলিঃ তাসনিয়া ফারিন
কাহিনী সারসংক্ষেপ
নাটকের শুরুতে দেখা যায় মিলির মা শাওনকে ফোন দেয় হসপিটালে আসার জন্য। শাওন প্রথমে চিনতে পারেনি। যখন মিলির কথা বললো তখন চিনতে পারে। মিলি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। দিনকে দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এই নিয়ে মিলির মা বাবা দুশ্চিন্তায়। ঠিক পাচঁ মাস আগে শাওন আর মিলির সম্পর্ক মেনে নেয়নি । তারপর শাওন বাধ্য হয়ে চলে আসে মিলির কাছ থেকে। আজ মিলির মা ফোন দিয়েছে। শাওন শুনেছিল মিলির অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু মিলির ইচ্ছে শাওনের সাথে দেখা করার। মিলির মায়ের কথামতো শাওন রাজি হয় হসপিটালের যাওয়ার জন্য। মিলি শাওনকে সবুজ টিশার্ট এ দেখতে পছন্দ করতো। তাই আজ শাওন সবুজ রঙের টিশার্ট পরিধান করে হসপিটালে যাবে।
মিলি শাওনকে দেখতে চেয়েছিল সকাল বেলায়। শাওনের হসপিটালে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। শাওন গিয়ে দেখে মিলি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। ডাক্তার বলেছে ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু হলে নাকি মানুষ মারা যায়। মিলি বেডে শুয়ে মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পায়। এছাড়াও ডাক্তাররা বলাবলি করতেছিল যে মিলির ক্যান্সার হয়েছে। এই বয়সে নাকি খুব কম সংখ্যক মানুষের এই ক্যান্সার হয়ে থাকে। হয়তো মিলি বাচঁবেনা এজন্য শাওনকে শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছে। মিলি শাওনকে দেখে বলে যে শাওন শুকিয়ে গেছে। শাওন তখন বলে যে মিলি শুকিয়ে গেছে। শাওনের থেকেও বেশি। অধিক চিন্তায় মিলির মুখটা শুকিয়ে গেছে। মিলির ইচ্ছে করছিল তখন শাওনের হাত ধরা। শাওনের হাত মিলির কাছে এগিয়ে দেয়। মিলি শাওনের হাত শক্ত করে ধরে রাখে। তারপর মিলি ঘুমিয়ে যায়।
এবার একটু পিছন ফিরে তাকানো যাক। একদিন শাওন বিশেষ কোনো কাজের জন্য গ্রামে চলে যায়। গ্রামে গিয়ে শাওনের ফোন নষ্ট হয়ে যায়। আর সেখানে ঠিক করতে পারেনি। এদিকে মিলি হাজারবার কল করে শাওনকে ফোনে পাচ্ছিল না। মিলি শাওনকে খুব ভালোবাসে। কোনোভাবেই তার মন স্থির করতে পারতেছিল না। অবশেষে সে শাওন যে মেসে থাকে সেখানে চলে আসে। এসে দেখে মেসে শুধু বাদল ভাই আছে। বাদল শাওনের রুমমেট। মিলি মেসে এসে দেখে শাওন এখনও আসেনি। আর বাদল ভাই শাওনের খবরও জানেনা। তবে কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে মেসে এটাই বলে। এরই মাঝে শাওন এসে হাজির! মিলিকে দেখেই শাওন অবাক হয়ে যায়। কিন্তু মিলি যে শাওনের উপর রেগে আছে তা ঠিকই বুঝতে পারে শাওন। শাওন অবশ্য বলে যে কি কারণে এমন সমস্যা হয়েছিল। মিলি তখন বুঝতে পারে।
এদিকে মিলির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। মিলি সবসময় তার মা বাবাকে শাওনের কথা বলে। তাদের সম্পর্ক চলাকালীন কিভাবে সময় কাটিয়েছে সে কথাগুলো তার মা বাবাকে বলে। মিলির মা-বাবা শাওনকে হসপিটালে আসতে বলে আবার। মিলি বার বার শাওনের কথা বলতেছিল। শাওনের মনটাও ভালো নেই মিলির শরীরের অবস্থা দেখার পর থেকে। শাওন ঠিকমতো খেতে পারে না মিলির কথা মনে পড়ে। মিলির মা-বাবা শাওনকে সরি বলেছে কারণ সম্পর্ক চলাকালীন খারাপ ব্যবহার করেছে শাওনের সাথে। শাওনের অবশ্য এই নিয়ে মন খারাপ নেই। কারণ তার মতো ছেলের কাছে মিলিকে বিয়ে না দেয়ার কথা। শাওনের মা-বাবা কেউ নেই। ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে পড়ালেখা করে বড় হয়েছে। মিলি চাই শাওন প্রতিদিন একবার যেন হসপিটালে মিলিকে দেখতে আসে। শাওনের এতে কোনো আপত্তি নেই । ভালোবাসার মানুষটিকে হাসুখুশি রাখতে পারলেই তো সুখ। খারাপ সময়ে যে পাশে থাকে সেই প্রকৃত প্রেমিক।
আজ শাওন পাঞ্জাবী পরিধান করে হসপিটালে যাবে। কারণ শাওনের সাথে মিলির বিয়ে হবে। মিলির এই অবস্থায় শাওনকে খুব দরকার তাই শাওনের সাথে মিলির বিয়ে হবে। শাওন জানতো মিলির সাদা কাঠগোলাপ ভীষণ পছন্দের ফুল। যখন তাদের দেখা হতো তখন শাওন মিলির জন্য একটি করে কাঠগোলাপের মালা নিয়ে যেত। নির্দিষ্ট একটি দোকান থেকে শাওন কাঠগোলাপের মালাটা কিনে মিলিকে দিতো। দোকান মামার সাথে শাওনের ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু অনেকদিন পর আজ সেই মামার দোকান থেকে ফুল কিনতে যাচ্ছে। অনেকদিন পর শাওনকে দেখে বলে এখন আগের মতো আসে না, ফুল কি লাগে না! শাওন বলে আপনার আপার শরীরটা ভালো নেই। এখন হসপিটালের বেডে শুয়ে সময় কাটাই। একটি কাঠগোলাপের মালা নিয়ে শাওন হসপিটালে এসে পড়ে। মিলি আজ নীল শাড়ি পড়েছে। তার মনটাও আজ প্রফুল্ল। শুনেছে শাওনের সাথে নাকি তার বিয়ে। হাত কাঠগোলাপের ফুল দেখে মিলি বলে তার খোঁপায় পরিয়ে দেয়ার জন্য। ঠিক এভাবেই শাওন মিলির খোপায় কাঠগোলাপের মালা পরিয়ে দিতো।
এরই মাঝে মিলির অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। শাওন চা খাচ্ছিল ঠিক তখন মিলির মা ফোন দিয়ে বলে মিলির শরীরটা কেমন অস্থির লাগছে। শাওনের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। শাওন তাড়াতাড়ি চলে যায় হসপিটালে। হসপিটালে গিয়ে দেখে মিলি শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত নিচ্ছে। মিলির আজ বাড়ি যাবার কথা ছিল। আগামী শুক্রবার শাওনের সাথে বিয়ে। মিলি আজীবন শাওনের সাথে থাকার খুব ইচ্ছে ছিল। মিলি বলে শাওনকে সে চলে গেলেও তার ভালোবাসা কখনো কমবে না। তাদের গল্পটা এখানেই শেষ হবে না। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই শাওন জানতে পারে মিলি আর নেই! নাটকটি এখানেই সমাপ্ত হয়।
শিক্ষণীয় দিক
টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও সুখ কেনা যায় না। সুখ থাকে মানুষের অন্তরে। প্রিয় মানুষটার সাথে পান্তা ভাত খেয়ে বেচেঁ থাকার যে সুখ,আলো ঝলমলে ঘরে বিরিয়ানী খেয়ে অপ্রিয় মানুষের সাথে বেচেঁ থাকার মধ্যে সে সুখ নেই। কিন্তু আমরা জীবনে সঠিক মানুষটা চিনতেই আসলে দেরি করে ফেলি। মিলির মাবাবা ঠিক তাই করেছে। শুরুতে শাওন গরিব বলে মিলির সাথে সম্পর্কটা মেনে নেয় নি। অথচ মিলি শাওনের সাথেই ভালো থাকতো। আমাদের জীবনে এজন্য সঠিক মানুষটি নির্বাচন করা উচিত, হোক সে গরিব।
ব্যক্তিগত মতামত
এই নাটক নিয়ে মতামত দেয়ার মতো কিছু দেখছি না! নাটকটা এতোটাই বাস্তব মনে হয়েছে শেষে চোখ দিয়েই পানি ঝরেছে। শেষের স্কিনে এসে আপনিও কান্না থামিয়ে রাখতে পারবেননা। মিজানুর রহমান আরিয়ান স্যার যে বরাবরই সেরা এই নাটকটিই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। নাটকের কোরিওগ্রাফি, সাউন্ড, ডিজাইন সব যেন অসাধারণ ছিল। তৌসিফ আর তাসনিয়া ফারিনের অভিনয় একদম অসাধারণ ছিল। এতো সবালীলভাবে অভিনয়টি সম্পন্ন কি বলবো! সবশেষে বলবো নাটকটি এক কথায় অসাধারণ।
ব্যক্তিগত রেটিং
নাটকটির লিংক
আশা করি নাটকটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। নাটকটি দেখে না থাকলে লিংকে প্রবেশ করে দেখতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ নাটকের রিভিউটি পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficiary for @shyfox❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
অনেক সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ শেয়ার করেছেন আপনি দেখে অনেক ভালো লাগলো। অনেকদিন হয় নাটক দেখি না তবে আজকের নাটকটি পড়ে মনে হচ্ছে খুবই সুন্দর হবে সময় করে দেখে নেব।
জি আপু নাটকটি দেখলে উপভোগ করতে পারবেন। আপনাকে ধন্যবাদ
তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিন এর নাটকগুলো আমার কাছে খুব ভালো লাগে বিশেষ করে মহিলাটা খুব সুন্দর সুন্দর নাটক অভিনয় করে থাকে আর ও নাটক অভিনয় গুলো নিখুঁত হয়ে থাকে। আপনার নাটক রিভিউ টা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আপনার উপস্থাপনার ধরনটা বেশ মনোমুগ্ধকর।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
খুব চমৎকার একটি নাটকের রিভিউ করেছেন এবং আপনার রিভিউ এর মাধ্যমে নাটকটি দেখার ইচ্ছে পোষণ করছি। ধন্যবাদ আপনাকে রিভিউ এর মাধ্যমে নাটকটি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
নাটকের শেষ পরিণতি খুবই খারাপ লেগেছে।যাইহোক বাংলাদেশের নাটকগুলো খুবই ভালো লাগে আমার কাছে।খুবই শিক্ষণীয় ও মজার ও আবেগের হয়।সুন্দর করে রিভিউ করেছেন ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।
জি দিদি আপনাদের অনেকেই বাংলাদেশেের নাটক পছন্দ করে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনি বরাবরই আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর সুন্দর নাটক রিভিউ শেয়ার করে থাকেন আপনার নাটক রিভিউ গুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আপনার মাধ্যমে আমি অনেকগুলো নাটক দেখেছি ।ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।