সময় চলে যায়

16-08-2022

০১ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। ছোট বেলা থেকেই পড়ে আসছি সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। এটা শুধু আমরা মুখস্থ করেই আসছি সেই ছোটবেলা থেকে। কিন্তু এটার বাস্তব প্রয়োগ আমাদের জীবনে কয়জনই বা প্রয়োগ করতে পেরেছে। সময়ের সাথে আমাদের জীবনও বহমান। এ বহমান জীবনে নানা ধরনের প্রতিকূলতা পাড় হয়ে আসতে হয়। কেউ সেই প্রতিকূলতা পার হয়ে আসতে পারে। আবার কেউ মাঝ পথেই হেরে যায়।

pocket-watch-3156771_1280.jpg

copyright free image from pixabay

যায়হোক, যখন লেখাটা লিখছি ঘড়িতে তখন চারটা বাজে। বাহিরে প্রবল বৃষ্টি। কলেজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেল। একটা সময় বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগতো। আর এখন সে দিনগুলো যেন অতীত। বৃষ্টি আসলে আমাদের মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা সেই দিনগুলির কথা। বৃষ্টি কখনো বা প্রেমিকার মনে রোমান্টিকতার ছোঁয়া দিয়ে যায়। আমি অবশ্য এসব ভাবছি না। ভাবছি কিভাবে সময়গুলো কেটে গেল। ডিপ্লোমা লাইফের ইতি ঘটবে কাল। এরই মাঝে কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

এইতো মনে হচ্ছিল কিছুদিন আগেই ডিপ্লোমাতে ভর্তি হয়েছিলাম। এই লাইফে কতো বন্ধুর সাথে পরিচয়। পথে অনেককে হারিয়েছে। অনেককেই দেখেছি জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে। তাইজুল নামের একজন ছেলে ছিল। আমি তাকে মামা বলেই ডাকতাম। দুজন সেইম ব্যাচ।। নতুন নতুন কলেজে আসা যাওয়া। ডিপ্লোমার শুরুতে তাইজুল ছিল আমার ভালো একজন বন্ধু। খুব সহজেই আমার সাথে ছেলেটা মানিয়ে নিয়েছিল। বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল বৃষ্টির দিনের মধ্যে দিয়েই। তাইজুলের ভাঙারীর একটা দোকান আছে। বাবার দোকানে তাইজুল পড়াশোনার পাশাপাশি সেও মাঝে মাঝে দেখাশোনা করে। বৃষ্টির দিনে অটো করে আসার পথে একদম ভিজে যায়। কলেজের পাশেই তাইজুল মামার দোকান। আমি আসলে প্রথম সেভাবে চিনেনি। আমাকে দোকানের ভিতরে আসতে বলে। আর তখন কথা বলার মাধ্যমেই তার সাথে পরিচয়। কিশোরগঞ্জ থাকতে সবকিছু ভালোই চলছিল। বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করা হতো। রেগুলার ক্লাস করতে হতো। তবুও সেই ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে চলে আসতাম কলেজে ক্লাস করার জন্য। আসলে ডিপ্লোমা লাইফটা বেশ উপভোগ করতাম তখন। স্যারেদের সাথেও ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এরই মাঝে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বছর খানিকের জন্য বন্ধ।

field-6558125_1280.jpg

copyright free image from pixabay

বেশ কিছুদিন পর জানতে পারি আমাদের টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পলিটেকনিক ট্রান্সফার করা হবে। অবশ্য বেশ খুশি হয়েছিলাম। কারণ টেকনিক্যাল কলেজ থেকে নাকি পলিটেকনিক পড়ালেখার মান ভালো, মোটামোটি ইন্সট্রুমেন্ট এর ব্যাবস্থাও ভালো রয়েছে। তাইজুল মামা সবসময় বলতো আমার সাথেই থাকবে। দুজনে একসাথে আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু হলো তার বিপরীত। আসলো ফেনী পলিটেকনিক। তাইজুল মামার আসলো সিলেট পলিটেকনিক। আমার অবশ্য বেশ মন খারাপ হয়েছিল। এতোদূরে কিভাবে গিয়ে পড়বো। অথচ এখন ফেনী পলিটেকনিক ভালো লাগে। আসলে মানুষ মানিয়ে নিতে শিখে যায়। কিন্তু তাইজুল মামাকে পথে হারিয়ে ফেলি। বাবার একমাত্র দোকান এখন দেখাশোনা করে। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় পড়াশোনার জন্য এতোদূরে যেতে দেয়নি। তাইজুল মামার ইচ্ছেও ছিল আসলে এতোদূরে গিয়ে পড়াশোনা না করার।

কাল কলেজে বিদায়ী সংবর্ধনা। দীর্ঘ চারটি বছর চলে গেল কিভাবে টেরও পেলাম না মনে হচ্ছে। অথচ প্রথম সেমিস্টারে যখন ভর্তি হয়েছিলাম তখন মনে হতো কবে এই ডিপ্লোমা লাইফ শেষ হবে। সময় আসলে চলে যায়। কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আর সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয় নিজেকেও। ফেনীতে এসেও বেশ কয়েকজন বন্ধু পেয়েছি। এখানেও তাদের সাথে ভালো সখ্যতা তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসটা আমার যেন পরিচিত খুব। বছর খানেক হবে এখানো পড়ালেখা করছি। আজ শেষের পথে। একটিমাত্র সেমিস্টার বাকি। কয়েকদিন পর পরীক্ষা। তারই মধ্যে দিয়েই ইতি ঘটবে ডিপ্লোমা লাইফের। ডিপ্লোমা লাইফে আসলে অনেক কিছুই শিখেছি আবার অনেককেই হারিয়েছি। ক্যাম্পাসের সেই শাহীন চত্বরে হয়তো কখনো আর বন্ধুদের সাথে একসাথে বসা হবে না। সবাই কর্মস্থল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তবে সোস্যাল মিডিয়ার এ যুগে হয়তো কথা হতে পারে।

যায়হোক, অনেক কথাই বলে ফেললাম। এদিকে কখন যে বৃষ্টি থেমে গেল খেয়ালও নেই। কাল বিদায়ী সংবর্ধনা হবে। কলেজে প্রোগ্রাম হবে সকাল থেকেই। ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করা হবে। আগামীকাল বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়টুকু আপনাদের সাথেও শেয়ার করার চেষ্টা করবো। আপনাদের সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।



10% beneficiary for @shyfox❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

হ্যাঁ ভাই সময় যাচ্ছে চলে। সময়ের মূল্য বুঝে করে যারা কাজ তারা আজ জগতের স্মরণীয় মাঝ। জীবনে সফল হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে। ফিরে যাওয়ার সময় আর কখনো পাওয়া যায় না। তাই আপনার সাথে একমত পোষণ করছি আমাদের সকলকে সময়ের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59605.49
ETH 2607.69
USDT 1.00
SBD 2.42