ক্ষমতা | শেষ পার্ট

16-08-2022

১ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


ink-5067880_1280.webp

copyright free image from pixabay

মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে যাবার পালা। পরিবারের সাথে ঈদ করতে হবে। খালা আগেরদিন সকাল সকাল এসে রান্নার কাজ করার সময় নাইমু মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। আমি অবশ্য বাচ্চাদের কান্না সহ্য করতে পারিনা। আমার ফোন থেকে মটু-পাতলু করে নাইমুকে দিলাম। যাক এবার তাহলে কান্না থেমেছে। তারপর খালা কাজ করতে থাকে। বাড়িতে চলে যাবো এজন্য সবকিছু ঘুছিয়ে নিলাম আগেই। কাল ট্রেন। মাসের শেষের দিকে হয়ে গেল। খালার খাওয়ার টাকাটা দিতে হবে। আমাদের মেসের সবার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিলাম। নরমালি সবাই ২৫০ টাকা করে দিয়ে থাকে। সামনে যেহেতু ঈদ তাই আমরা প্লেন করেছিলাম আর ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করে দিবো। আমাদের মেসে মোট এগারো জন সদস্য। সবাই তিনশ টাকা করে দিলো।। খালাকে রাতের রান্নার পর ৩৩০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিলাম। খালা টাকা পেয়ে মুসকি হেসে সাদরে গ্রহণ করলো। রহিমা খালা অবশ্য আমাদের বলতেছিল যে ঈদের পরে কখন আসবো? কলেজ খোলা হলে চলে আসবো এটা বলেছিলাম। বাড়িতে বেশি থাকাও যাবেনা। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।

পরদিন আমরা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম। ট্রেন সকাল নয়টায় তাই আগেভাগেই স্টেশনে গিয়ে বসে রইলাম। যায়হোক, কিছুক্ষণ পরেই আমাদের ট্রেন চলে আসে। ট্রেন উঠে পড়ি সবাই। যায়হোক, বাড়িতে এসে পৌঁছালাম দুপুরের একটু পরেই। ছয়দিন পরে ঈদ। মোটামোটি ভালো ব্যস্ততার মাঝেই সময় কাটতেছিল। বাড়িতে অবশ্য তেমন পড়া হয়না। তাই বেশিদিন বাড়িতে থাকতেও ভালো লাগে না। যায়হোক, আমরা যে মেসে থাকি মোটামোটি শৃঙ্খলার মধ্যে চলতে হয়। কারণটা হলো পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল এসব মালিকের উপর। এজন্য অবশ্য বাসার মালিক সবসময় আমাদের সতর্ক করে থাকে। তবে বাসার আন্টি একটু বেশি বলানলি করে ফেলে আসলে। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি অপচয় না হয়।

তো ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। ঈদের দিন। সকাল সকাল রহিমা খালাকে আমাদের বাসার আন্টি বলেছিল যেন সকালে বাসায় এসে রুটি বানিয়ে দেয়। কিন্তু রহিমা খালার শরীরটাও ভালো নেই। রহিমা খালা বলেছিল যে শরীরটা ভালো হলে আসবে। বাসার আন্টি রহিমা খালার অসুস্থতার ব্যাপারটি গ্রাহ্য করলো না।। রহিমা খালা আর আসেনি রুটি বানিয়ে দিতে। আন্টি রেগে একদম ফায়ার। ঈদের দিন রুটি বানাতে হবে কিন্তু রহিমা খালা আসলোনা। বাসার আন্টি রহিমা খালার বাড়িতে গিয়ে অনেক কথা শুনাইলো। ফাইনালি বললো যে তাদের বাসায় আর রান্না করার জন্য আসতে হবে না। অন্য লোক দেখে নেবে।। রহিমা খালাও মুখের উপর কোনো কথা বলেনি। কারণ এলাকার স্থানীয় লোকের বিরুদ্ধে কি আর বলবে। বেশি কিছু বললে নাকি এখানে থাকতেও দিবে না।

এদিকে কলেজ খোলা হয়ে গেল। আমি মেসে চলে আসলাম। এসে দেখি রহিমা খালা নাই। পরে জানতে পারি রান্নার জন্য অন্য লোক খোজাঁ হয়েছে। কিন্তু আমি পুরো ঘটনাটি জানতাম না। কেন রহিমা খালা আমাদের এখানে রান্না করতে আসবে না? দুদিন হয়ে গেল মেসে কোনো রান্না হয় না। আমি অবশ্য বাহিরে খেয়েছি। তবে এভাবে আর কতোদিন? আমি সোজা রহিমা খালার বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে শুনি এসব ঘটনা। খালার মুখে অনেকটা চিন্তার চাপ।। সংসারের অনেকটা দায়িত্ব যে রহিমা খালা নিয়েছিল। আমাদের রান্না না করে দিলে সংসার চলতেও হিমশিম খাবে। রহিমা খালা আমাকে পুরো ঘটনা ভয়ে ভয়ে বলেছিল।। কারণ বাসার মালিক জানতে পারলে তাদেরকে এখানেও থাকতে দিবে না। আমি অবশ্য খালাকে বললাম যে বলবো না। তবে এটা বুঝতে পারছিলাম যে খালা আর আমাদের মেসে আর রান্না করতে পারবে না। আসলে এখনকার সময়ে যার ক্ষমতা বেশি তারই প্রতিপত্তি বেশি। সমাজের নিচু স্তরের মানুষদের তারা হেয় চোখে দেখে।। ফলে সমাজে তৈরি হয় বৈষম্য। রহিমা খালার মতো অনেকেই আছে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পেরে এভাবেই মার খেয়ে যাচ্ছে। রহিমা খালাদের অধিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই কাম্য।

শেষ



10% beneficiary for @shyfox❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59452.12
ETH 2603.11
USDT 1.00
SBD 2.39