ট্রেন ভ্রমণ [ কমলাপুর টু ফেণী ] || শেষ পর্ব
1-08-2022
১৭ শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ট্রেন ভ্রমনের ঢাকা থেকে ফেণী পর্যন্ত পর্ব আকারে এরই মাঝে আপনাদের মাঝে দুটি পর্ব শেয়ার করেছি। আজকে আপনাদের সাথে শেষ পর্ব শেয়ার করবো।
২য় পর্বের পর
কিছুটা হতাশ হয়ে গেলাম কলা কিনতে না পেরে। ঢাকা থেকেই প্লেন করে আসছিলাম এবার ফেণীতে যাওয়ার সময় ভৈরব থেকে কয়েক হালি কলা কিনে নিয়ে যাবো। কিন্তু তা আর হলো কই? এরই মাঝে ট্রেন ছাড়া শুরু করে দেয়। বাহিরের আকাশটাও ভালো নেই, বৃষ্টি হবে। জানালার পাশে বসে থাকলে ওয়েদারটা আরও এনজয় করা যেত। পাশে বসেছে চাচা তাকে তো আর না করা যায় না। খানিকটা পথ যেতেই বৃষ্টি শুরু হলো। কিন্তু কোনোভাবেই বৃষ্টির ফিলিংস পাচ্ছিলাম না। কারণ বৃষ্টির টপটপ শব্দ কানে না আসলে কেমন জানি ছন্নছাড়া লাগে। গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টির ফোটাঁ যখন টিনের চাল বেয়ে পড়তো তখন আলাদা একটা ফিলিংস কাজ করতো। জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের ওয়েদার দেখার চেষ্টা করলাম। দূর থেকে ধোয়া বের হচ্ছে লক্ষ্য করলাম। এটা মেঘনা গ্যাস থেকে ধোয়াঁ বের হচ্ছে। বাংলাদেশের এই জায়গা থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় তেল সাপ্লাই দেয়া হয়। প্রতিবার ট্রেন দিয়ে যাওয়ার পথে এ দৃশ্যটা চোখে পড়ে। বিশেষ করে রাতে এ দৃশ্যটা চমৎকার লাগে। লাল নীল বাতি দূর থেকে চোখে ঝলমল করে উঠে। দিনের বেলায় শুধু ধোয়া দেখা যায়।
ট্রেন চলতে থাকে তার আপন গতিতে। পাশের সিটে বসা চাচা দেখি ঘুমিয়ে গেছে। আমি একবার ঘুমিয়েছি, এখন চাইলেই আর ঘুম পাবে না। ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা অন করে ম্যাপে লোকেশন দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু নেটওয়ার্ক এর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। লোকেশন দেখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এরই মাঝে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে চলে আসছে ট্রেন। এবার নেট পেলো ভালো করেই। বাহিরে তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। এদিকে আমার ক্ষুধাও লেগে গেল খুব। আপুর বাসা থেকে না খেয়েই বের হয়েছিলাম। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, নামাও সম্ভব না। বগীর ভিতরে অনেক যাত্রী গাদাগাদি করে দাড়িঁয়ে আছে। তাদের কারো গন্তব্য ফেণী আবার কারো চট্রগ্রাম। টিকেট ছাড়াই অনেকে এসেছে। তবে এবার যে আসলাম ট্রেনের টিটি টিকেট চেক করলো না! কিছুটা অবাক হলাম আমি। প্রতিবার যখন ট্রেন দিয়ে আসি তখন টিটি এসে টিকেট চেক করে। এবার অনেক যাত্রী দাড়িঁয়েছিল, কারো কাছেই টিকেট নেই। বিনা ভাড়ায় বাড়ি চলে যাচ্ছে। আমি মনে মনে অবশ্য ভাবতেছিলাম টিকেট কেটে তাহলে ভুল করেছি! বিনা ভাড়ায় ফেণী আসা যেত। কিন্তু তখন তো আবার দাড়িঁয়ে আসা লাগতো। একদিকে আরামছে বসে আসতেছি এটাই কম কিসের। ট্রেনের ভিতরে কিছু কর্মাচারী খাবার বিক্রি করে। যারা ট্রেনে চড়েছেন তারা নিশ্চয় দেখেছেন। একটা চিকেন বিরিয়ানীর প্যাকেট বিক্রি করছে দেখলাম। প্রতি প্যাকেট এর মূল্য ১০০ টাকা করে। আমার খুব ক্ষধা লাগছিল আর ভাংতিরও দরকার। তাই এক প্যাকেট চিকেন নিয়ে নিলাম। প্যাকের ভিতরে ছিল একটা চিকেন ফ্রাই, একটি বার্গার আর পাউরুটি দিয়ে জেলী। আমি চিকেন ফ্রাই আর পাউরুটি খেয়ে নিলাম। বোতলে অল্প পরিমাণ পানি ছিল পান করে নিলাম। যাক পেট তো ঠান্ডা হলো। মুরব্বীদের কাছ থেকে শুনেছি, পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। যাক এবার রেস্ট নেয়া যাক।
ঠিক কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো। আমার পাশের সিটে দাড়িঁয়েছিল। ভদ্রলোক ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবে। এসেছে রাজশাহী থেকে। কোনো টিকেট না পাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে দাড়িঁয়েই আসতে হলো। ভদ্রলোক বলতেছিল যে কোথায় যাবো? আমি বললাম ফেণী অবধি যাবো। তারপর বললো তাহলে তুমি নেমে গেলে আমাকে সিটটি দিও। আমি বললাম জি বসতে পারবেন সমস্যা নেই। সামনে কুমিল্লা স্টেশন। এখান থেকে ফেণী আর বেশিদূর না। আমি সিট থেকে উঠে ভদ্রলোককে বসতে দিলাম। বাবার বয়সী লোক এতোদূর পর্যন্ত দাড়িঁয়ে এসেছে! আমি বললাম আংকেল আপনি বসেন, আমি অনেক্ষণ তো বসেছিলাম এবার দাড়িঁয়ে যায়। ভদ্রলোক বসতে রাজি হয়না। উনি নাকি দাড়িঁয়ে ডিউটিই করেছেন ১৬ বছর পর্যন্ত। শুনে আমি অবাক হলাম আসলে। ভদ্রলোকের পরিচয় জানতে পারলাম। উনি আসলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ৩০ বছরের মতো। দুই বছর হলো চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। এখন একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। তারপর অবশ্য ভদ্রলোক সিটে বসলো। আমি ফোনে আবার লোকেশন দেখার চেষ্টা করলাম। এদিকে বিকেল ঘরিয়ে সন্ধ্যা হলো। সন্ধ্যা ৬:৪০ মিনিটের দিকে ফেণী পৌঁছানোর কথা ট্রেনের।
আমর পাশে এক বড় ভাই বলতেছিল যে আর কতক্ষণ লাগবে? ম্যাপে দেখাচ্ছে আর এক ঘন্টার মতো লাগতে পারে। ধীরে ধীরে বগী খালি হতে থাকে। অনেকেই নেমে পরেছে কুমিল্লায়। লাকসাম এসে আরও কিছুক্ষণ ট্রেণ এসে দাঁড়াল । আর বেশিক্ষণ তাহলে নেই। সন্ধা হয়ে গেল। বাহিরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আর কয়েকটা স্টেশন পরেই ফেণী রেলওয়ে স্টেশন। ম্যাপে লোকেশন সেট করে দিলাম। ফেণী আসলেই যেন আমাকে মনে করিয়ে দেয়। আর মাত্র ২০ মিনিটের মতো দেখাচ্ছে। তাহলে কাছেই চলে এসেছে। ঘড়িতে তখন ৬টা বেজে ২৫ মিনিট। আমার পাশে বসা ভাইয়াকে বললাম সামনের স্টেশনই ফেণী। আমি ব্যাগ নামিয়ে নিলাম। ট্রেনের স্পিড আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আলোর দেখা পেলাম। দোকানপাট দেখে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে ফেণী এসে পরেছি। যায়হোক, ফেণী স্টেশনে আসতেই ট্রেন দাঁড়ালো। ব্যাগ নিয়ে তারপর নেমে পড়লাম আর বাসার দিকে রওনা দিলাম।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 25 july, 2022 |
আশা করি কমলাপুর থেকে ফেণী ট্রেন জার্নির পর্বগুলো আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। সকলের সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আবারো হাজির হবো নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ
10% beneficiary for @shyfox❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
আপনি দেখছি অনেক সুন্দর একটা ট্রেন জার্নির কথা লিখেছেন। আসলে আমি এখনো পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু আপনার ট্রেন ভ্রমণের কথা শুনে আমারও ট্রেন ভ্রমণ করতে ইচ্ছে করছে। দেখছি আবার ট্রেনের ভিতরে অনেকগুলো খাবারও খেয়েছেন। আপনার আজকের পোস্ট পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।
আহা! আপু ট্রেন ভ্রমনটাই মিস করলেন তাহলে। একবার ট্রেনে করে কোথাও গিয়ে দেখতেন, ভালোই লাগবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
অনেকদিন হয়ে গেল ট্রেন ভবন করা হয় না। আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে ট্রেন ভ্রমণ।
ট্রেন ভ্রমণ একটা সময় শুধু স্বপ্ন ছিল। আর এখন এখানে আসলে প্রতিবার ট্রেনে করে আসতে হয়।
এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন আমি একবার হয়েছিলাম আলমডাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম আমি।
ট্রেন ভ্রমণের চমৎকার কিছু মুহূর্ত আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন ভাইয়া। আসলে আমাদের জেলাতে ট্রেন লাইন না থাকার কারণে ট্রেন ভ্রমণ করার ইচ্ছাটা আমাদের থেকেই যায়। খুব ঘুম ট্রেন ভ্রমন করা হয়ে থাকে আমাদের তাই বারবার ইচ্ছা হয় ট্রেন ভ্রমণ করতে।
আপনাদের এখানে তাহলে এখনও রেলসেবা চালু হয়নি! তাহলে ট্রেন ভ্রমন মিস করলেন ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে