জুগের হাওড়ে বন্ধুর সাথে কিছুসময়
31-05-2022
১৭ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমি আপনাদের দোয়াই ভালো আছি। প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুব কম আছে। প্রকৃতির উদারতায় মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। গিয়েছিলাম এমনই একটি জায়গাই যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়েছি অনেকটা সময়।
২০১৮ সালের শেষের দিককার কথা। সবেমাত্র এসএসসি পাস করে বেরিয়েছি। পরীক্ষা শেষ করে সবাই ঘুরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে। অথচ আমি বসে আছি। পরীক্ষা শেষ করি আমার বন্ধু মেহেদীকে বলি কোথাও ঘুরতে যাওয়া যায় কিনা। তখন সে এই জায়গাটির নাম বললো। এটা তাড়াইল রোডের পাশে অবস্থিত জুগের হাওড়। বর্ষার সময় পানিতে ভরে থাকে। তবে এই হাওড়ের বিশেষত্ব হচ্ছে খুব সময়ই পানি শূন্য থাকে। বলা যায় সারাবছরই পানি থাকে এই হাওড়ে। সেবার ঘুরতে এসেছিলাম এখানে। জায়গাটা তখন থেকেই আমার কাছে প্রিয় একটি জায়গা।
ঈদের আগে বাড়িতে আসছিলাম। আর তখন থেকেই মেহেদী বলেছিল দেখা করার জন্য। মেহেদী আমার প্রিয় একজন বন্ধু। প্রিয় কেন বললাম? ওর কাছে আমি সব শেয়ার করি। স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে এখনও বন্ধুত্বটা ঠিকে আছে। অনেকটা সময় একসাথে পড়াশোনা করেছি। জীবনে এমন কিছু বন্ধু থাকে যার সাথে আপনি নির্দ্বিধায় সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন। মেহেদী আমার সেরকম একজন বন্ধু। স্কুল লাইফ শেষে দুজন দুই কলেজে পড়াশোনা করতাম। এইসএসসি পাস করার পর ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়াই অনেক দিন ধরে ওর মনটাও খারাপ। কোথাও বেরও হয়না। আর মেহেদীর সাথে অনেকদিন হলো দেখাও হয়না। তাই ভাবলাম দেখা করি। আসলে আজকে গিয়েছিলাম কিশোরগঞ্জ এ কলেজে মার্কশিট তোলার জন্য। মার্কশিট তুলতে গিয়ে যে ভোগান্তির শিকার হয়েছি তা আপনাদের সাথে অন্যদিন শেয়ার করবো।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসার পথে বাসে থেকেই মেহেদীকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য। ঘড়িতে তখন তিনটা বেজে ত্রিশ মিনিটের কাছাকাছি । মেহেদীদের বাসা নান্দাইল চৌরাস্তা। কিশোরগঞ্জ থেকে আসতে বেশি সময়ও লাগেনা। চারটার দিকে এসে পৌছাঁলাম সেখানে। এসে আবার ফোন দিয়ে আসতে বলি। বাসা যেহেতু কাছে আসতেও বেশি সময় লাগেনি। অনেকদিন পর মেহেদীর সাথে দেখা হয়ে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে নিলাম। আর রওয়ানা দিলাম প্রিয় সেই জায়গাটির এখানে গিয়ে আড্ডা দিবো। নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে সেখানে গেলে বেশিক্ষণ লাগেনা। অটো দিয়ে গেলে পনেরো মিনিটের মতো লাগে। আর ভাড়া প্রতি দশ টাকা করে।
অটো থেকে নামতেই দেখি রাস্তা একদম ফাকাঁ। আশেপাশে তেমন মানুষজনও নেই। মৃদু করে বাতাস বইছে। কানের কাছে যেন ফিসফিস করছে বাতাস। আকাশটা তখনও মেঘলা। বৃষ্টি নামবে হয়তো। আর নামলেও বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে ছিল। সেই কবে বৃষ্টিতে ভিজেছি মনেও নেই। হাওড়ে দেখলাম কয়েেকটা ছোট ছোট নৌকা। তবে নৌকার কোনো মাঝি নেই। ঘাটে পরে আছে। মাছ ধরার জন্য নৌকা করে হাওড়ের মাঝে চলেযায়। বর্ষার মৌসুমে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এই হাওড়ে। এখনও লক্ষ্য কিছু লোক খেয়াঘাটের নৌকা দিয়ে হাওড়ের মাঝে মাছ ধরছে। তবে সেটা বড়শি দিয়ে। বড়শি দিয়ে হয়তো মাছ ধরেছেন। গ্রামের পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার মজাই অন্যরকম। অনেকদিন পরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে দেখে ভালোই লাগছিল।
ঈদে মেহেদীর কাছে যতদূর শুনেছি এখানে মানুষ আসে ঘুরতে। ধীরে ধীরে একটা পর্যটন কেন্দ্র হয়ে যেতে পারে। কারণ এরকম নিবিড়-নিস্তব্ধ জায়গা যে কারো কাছে ভালো লাগবে। কিছুক্ষণ এর জন্য হলেও মানসিক শান্তি খোজেঁ পাওয়া যাবে। মেহেদী বলছিল সে নাকি কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। আসলে আমরা যেভাবে শারীরিক সমস্যাটাকে গুরুত্ব দেয়, ঠিক সেরকমভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে ততটাও গুরুত্ব দেয় না। এখনকার সময়ে মানুষজন প্রতিনিয়ত মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে এমনকি শেষ পর্যন্ত আত্নহত্যা পর্যন্ত করছে। তাই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া দরকার। এইচএসসি পাস করার সবার পরিবার মোটামোটি একটা প্রেসার দিয়ে থাকে চাকরি বা ভার্সিটি নিয়ে। ভার্সিটিতে চান্স না হওয়ার কারণে মোটামোটি ভালোই প্রেসার যাচ্ছে মেহেদীর উপর দিয়ে। কিছু জায়গায় চাকরির ইন্টার্ভিউও দিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। এজন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইলে কিছু পরামর্শ দেয় চাকরির এবং পড়াশোনার ব্যাপারে। যদিও এসব ব্যাপারে আমি এতটাও এক্সপার্ট নয়।
হাওড়ের সৌন্দর্য দেখতে অনেক কিছুই শেয়ার করলাম। কতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি একসাথে এখন বন্ধুদের খোজেঁ পাওয়া মুশকিল। ওর কাছ থেকে শুনতে পারলাম অনেকেই ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়াই পড়ালেখা পর্যন্ত বাদ দিয়ে দিছে। এটা শুনে অবশ্য খারাপ লাগলো। নদীর মতোই তো বহমান এই জীবন। ভালো ও খারাপ সময় দুটিই আসে মানুষের জীবনে। তবুও জীবন সুন্দর। সময়ের সাথে সাথে নিজকেও যে পরিবর্তন করতে হয়।
এদিকে আকাশটাও মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। মোটামোটি ভালো বেগেই বাতাস বইছে। বাতাসের মাঝে কিছুক্ষণ এর জন্য শান্তি খোজেঁ পেলাম। সকালে না খেয়ে বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে তারপরে আর কিছু খাইনি এজন্য আর সেখানে বেশিক্ষণ বসেনি। রাস্তার মাঝে কিছুক্ষণ হাটাঁর পর পা একদম চলছিল না। পরে অবশ্য অটো করে চলে এলাম চৌরাস্তা। অল্প খাওয়া-দাওয়া করে চলে এলাম নিজ বাড়িতে।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 30 May, 2022 |
ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। কিছু কথা ও কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালোই লাগছে। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
খুব ভালো একটি লোকেশনের কথা আপনাকে বলেছে। জুগের হাওয়া নামটা যে রকম সুন্দর এর সৌন্দর্য ঠিক তেমনি সুন্দর। জুগের হাওরের বেশকিছু সুন্দর ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। দেখেই বুঝতে পারছি বন্ধুর সঙ্গে বেশ আমাদের কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন। আনন্দঘন মুহুর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
জুগের হাওড়ের জায়গাটা নিরিবিলি, পরিবেশটাও শান্ত। উপভোগ করার মতো একটি জায়গা। ধন্যবাদ আপনাকে
আমার নদী হাওরাঞ্চলে যেতে মন চায়। আপনার দেখানো লোকেশন খুব ভালো লাগলো। আসলে এমন জায়গায় সময় কাটানোর মজাই আলাদা। আর হাওরের নামটাও বেশ অদ্ভুত। আপনি অনেক সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
আসলেই ভাই নামটি একদম অদ্ভুত আর জায়গাটিও অনেক সুন্দর। ধন্যবাদ আপনাকে
হাওর এলাকায় ঘুরতে আমার অনেক ভালো লাগে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বড় হাওরে যাওয়া হয়নি। ইচ্ছা আছে আপনাদের কিশোরগঞ্জের নিকলীতে যাব এক মাস পর। ধন্যবাদ সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
নিকলী খুব সুন্দর একটি জায়গা ভাইয়া, যেতে পারেন। এছাড়াও মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এই জায়গাগুলোতেও যেতে পারেন। অনেক সুন্দর একটি ট্যুরিস্ট স্পট।
আপনার এই পোস্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্ধুর সঙ্গে অনেক চমৎকার একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন ।মাঝে মাঝে এরকম হাওরের সামনে বসে থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে অনেক বেশি ভালো লাগে। আমরা মাঝে মাঝে এরকম সময় অতিবাহিত করি আপনার এই সময় অতিবাহিত করার মুহূর্ত দেখে সেই সব দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য
ঠিকই বলেছেন ভাই মাঝে মাঝে এরকম জায়গায় ঘুরতেও ভালো। অনেকদিন পরে জায়গাটাই গিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে
জুগের হাওড়ে বন্ধুর সাথে কিছুসময় কাটানো মুহূর্ত টা অসাধারন ছিল। এইরকম মুহূর্ত উপভোগ করতে সবাই পছন্দ করে। এত সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
হাওর ঘুরে খুবই সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিশেষ করে মাছ ধরা খরা অনেকদিন পরে দেখলাম আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে
আমিও মাছ খরা অনেকদিন পরে দেখেছিলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে
জায়গাটা আসলে খুবই সুন্দর। এরকম নিরিবিলি জায়গায় সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে। আপনি আপনার বন্ধুর সাথে এ জায়গায় ভালো সময় কাটিয়েছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এরকম জায়গা প্রিয় হবে সেটাই স্বাভাবিক। আর আপনি ঠিক বলেছেন একজন ভালো বন্ধু থাকা দরকার যার কাছে নির্দ্বিধায় সব কিছু শেয়ার করা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে এই মুহূর্তগুলো এবং ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করার জন্য।
জি ভাইয়া জীবনে এরকম বন্ধু আসলে থাকা দরকার। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
জুগের হাওড় নামটা অনেক সুন্দর। আর নামটার মত জায়গাটাও অনেক সুন্দর। হাওড় অঞ্চলে কখনো যায়নি তবে যাওয়ার খুব ইচ্ছা আছে। এরকম নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ এর মাঝে কিছু সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে। জুগের হাওড় এর বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
জি আপু একদম ঠিক বলেছেন জুগের হাওড় নামের সাথে জায়গাটিও অনেক সুন্দর। ধন্যবাদ আপনাকে
হাওড়ে এরকম সময় কাটাতে অনেক ভাল লাগে। তবে চারদিকে যদি বাতাস থাকে তবে পরিবেশটি আরও আনন্দময় হয়ে উঠে। আপনার বন্ধুর সাথে ভাল টাইম স্পেন্ড করেছেন দেখে বুঝলাম। সেই সাথে আপনাদের জুগের হাওড় দেখতে পেলাম আপনার মাধ্যমে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য