গ্রামের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার মূহুর্ত
22-05-2022
৮ জৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন তাহলে আপনারা? আশা করছি ভালোই আছেন। আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। টাইটেল দেখেই হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন কি নিয়ে কথা বলবো। গ্রামের মুরুব্বিরা বলে থাকে যে বিয়েতে সব থেকে বেশি খেতে পারবে তারই বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়া উচিত। যদিও আমি সেরকম খাদক নই। খাদক ভাবিয়েন না আবার আমাকে! আমাদের বাড়ির পাশেই বিয়ে।
আমাদের প্রতিবেশী চাচাতো বোনের বিয়ে। বিয়ের জন্য অবশ্য পাচঁদিন আগেই কার্ড দিয়েছিল। তো বর্তমানে যে অবস্থা বিয়েতে গেলে পাচঁশত টাকা না দিলেই ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। আমি নরমালি এসবের পক্ষে নেই। কারণ বিয়ে দাওয়াত রক্ষা করাই মূল কথা। কিন্তু বর্তমানে তা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। বিয়ের দাওয়াত খেলেই আগের টাকার হিসাব করে নিতে হয়। এজন্য অবশ্য মাঝে মাঝে দাওয়াত খেতেই মন চায়না।
যায়হোক, সেটা বড় কথা নয় আত্নীয়স্বজনের দাওয়াত রক্ষা করা সুন্নত। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি আমাদের উচিত দাওয়াত রক্ষা করা। চাচাতো বোন যেহেতু এজন্য একটু দায়িত্বও বটে। ছোট বেলা থেকে অবশ্য আমাকে অনেক আদর করতো। মাঝে মাঝে যখন উনাদের বাসায় যেতাম তখন আপ্যায়ন করতো। যায়হোক, আজকে সকাল থেকেই রোদ ছিল বেশি। আর গ্রামে একটু রোদ পেতেই যেন এখন ধান শুকানোর ধুম পড়ে যায়। আমাদের ধান অবশ্য আগে তুলা হয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির উঠানটা বড় এজন্য প্রতিবেশীরা আমাদের এখানে প্রতিবছরই ধান শুকাতে নিয়ে আসে।
যায়হোক, বিয়ের দাওয়াত এর ভুড়িভোজন শুরু হয় নরমালি দুপুর ২ টা থেকে। তো আমাদের ফ্যামিলি থেকে আমি আর আব্বা যাবো ভেবেই রেখেছিলাম। এজন্য কিছু আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে গোসল করে ফেলি। তারপর আমি পাঞ্জাবী আর পায়জামা পড়ে রেডি হয়ে পড়ি। আর আব্বা এদিকে রেডি হয়ে পড়ে।
বিয়েতে বরের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করার জন্য বাড়ির সামনে বিশাল গেইট তৈরি করা হয়েছে। গিয়ে দেখি অনেকেরই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফেলেছে। আর আমাদের উপজেলার মেয়র মহোদয় উপস্থিত ছিলেন বিয়ের দাওয়াতে। আমার আব্বা তখন উনার সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি এদিকে কিছু বিয়ের ফটোগ্রাফি করে ফেলি। বরের পক্ষ তখনও আসেনি। তাই ভাবলাম কিছুক্ষণ বসে বসে ফোন ব্যবহার করলাম। ডিস্কর্ডে তখন ডিজেতে গান শুনতে লাগলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই দেখি জামাই এসে পরেছে। তবে এদিকে খাওয়ার জন্য টেবিলও ফাকাঁ হয়ে গেছে। তাই গিয়ে চুপ করে বসে পড়ি।
যারা গ্রামের বিয়ের দাওয়াত খেয়েছেন তারা হয়তো জানেন যে গ্রামে টেবিল প্রতি দায়িত্ব বণ্টন করা থাকে। একেক জন একেক টেবিলের দায়িত্বটা পালন করে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাটা বাড়ির ছাদে করা হয়েছিল। এজন্য অবশ্য প্রচন্ড রোদ ছিল। তার মধ্যে আবার কারেন্টও ছিল না। গরম খাবার কিভাবে খাবো বুঝতেই পারতেছিলাম না। অনেক মানুষ প্রবেশ করে এবং সিটে বসে পরে খাওয়ার জন্য। গরমের জন্য অসুবিধা হচ্ছিল খুব।
তারপর লক্ষ্য করলাম আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষক আসছে বিয়ে খেতে। আমার প্রিয় একজন শিক্ষক । মাধ্যমিকে পড়ার সময় স্যার আমাদের বাংলা পড়াতো। বাংলা কবিতার চরণগুলো খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে। স্যারের নাম হচ্ছে রউফ স্যার। অনেকদিন পর স্যারকে পেয়ে ভালো লাগছিল। স্যার অবশ্য এসেছিল বরের পক্ষ হয়ে দাওয়াত খেতে। বর উনার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে হয় আবার। টেবিলে আমি আর শ্রদ্ধেয় স্যার একসাথে বসে পড়লাম। স্যারের অনুমতি নিয়েই একটি সেলফি তুলে নিলাম 😊। যাক, এবার খাওয়ার পর্ব শুরু হবে।
বিয়ে বাড়িতে আসছি খাবারের ছবি না দিলে কি হয়! হাহাহা। প্রথমেই খাবারের প্লেট ভালো করে ধুয়ে নিলাম। তারপর আমাদের টেবিলে খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে যিনি ছিলেন সবার প্লেটে তখন ভাত পরিবেশন করা শুরু করে। আর এদিকে সালাদ দিয়ে দেয় আরেক লোক। প্রথমেই খাবারের শুরুটা হয় সবজি দিয়ে। যেহেতো বাবুর্চি রান্না করেছে খাবারের মান ভালো ছিল। তারপর মুরগীর রোস্ট পরিবেশন করা হলো। আমার যেহেতু এলার্জিজনিত সমস্যা এজন্য গরুর গোশত আমি সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপর ডাল দেয়া হলো। ডাল খেতে আমার কাছে ভালো লাগলো খুব । ফাইনালি পায়েসের মাধ্যমে খাবারের পর্বটা শেষ হলো। খাবার খেয়ে হাত ধুয়ার ব্যবস্থা ছিল নিচে। তো নিচে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেই। তারপর অনেকদিন পর বিয়েতে আসছি হালকা পান সুপারি খেয়ে নিলাম।
এদিকে বরের পার্টি নিচে এসে পড়েছে লক্ষ্য করলাম। গাড়িটি দেখে ঘোড়ার গাড়ির মতো মনে হচ্ছিল তবে খেয়াল করলাম সেখানে ঘোড়া নেই। বিয়েটা যেহেতু কাছেই হয়েছিল এজন্য বর ঘোড়ার গাড়ি করে এসেছে। এরকম ঘোড়ায় গাড়ি করে বরের বিয়ে করতে যেতে দেখেছি। আজকে কাছাকাছি দেখতে পেলাম। বর নামার পরেই বাচ্চারা গাড়িতে উঠে বসে আছে। উঠে অবশ্য তারা খেলা করতেছে। তাদের কাছে গাড়িটা স্বপ্নের মতোই।
বর বা জামাই সাহেব আমার পরিচিত। আমি তাকে বড় ভাই হিসেবে চিনি। মাঝে মাঝে আড্ডা দেয়ার সময় উনার সাথে দেখা হয়। অসম্ভব ভালো কবিতা লিখতে পারেন। আমাদের আরমান ভাই একই এলাকার হওয়ায় পরিচয়টা আগে থেকেই ছিল। জামাই দেখি গরমের মধ্যে বসে আছে। তাই আমি ভাবলামা কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করা যাক। আমি বসে তখন একটি সেলফি তুলে নিলাম জামাইয়ের সাথে। আলাপচারিতা শেষ জামাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিলাম। তবে মজার ব্যাপার হলো আরমান ভাইদের বাড়িতে কাল আবার দাওয়াত!
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | Nandail, Achaegaon |
যায়হোক, আজ এই পর্যন্তই । ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
অসাধারণ ছিল আপনার চাচাতো বোনের বিয়ে খাওয়ার অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। তবে আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায় সেটা হয়তো জানি না। তবে আমাদের অঞ্চলের সাথে কিছুটা মিল আছে, সম্পূর্ন নয়। তবে দারুন ছিল আপনার অনুভূতি গুলো এবং ঘোড়ার গাড়ি দেখে আপনি উচ্ছ্বাসিত। এবং কি বর আপনার পূর্ব পরিচিত বড় ভাই। সব মিলিয়ে অসাধারণ ছিল আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
হুমম ভাই আসলেই অনেকদিন পরে একটি বিয়ে খেলাম সবমিলিয়ে ভালই লেগেছিল।
আপনি আজকে আমাদের সাথে গ্রামের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার মূহুর্ত শেয়ার করেছেন, সত্যি বলতে গ্রামের বাড়িতে অনেকদিন আগে কোন বিবাহের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বর্তমানে যেহেতু ঢাকায় থাকি তাই ঢাকাতে কয়েকটি বিয়ে খাওয়া হয়েছিল। তবে গ্রামের পরিবেশ দেখতে খুবই ভালো লাগছে এবং আমার অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল আপনার পোস্ট দেখে।
গ্রামের বিয়ে মানেই অন্যরকম। অনেকদিন পরে একটি বিয়ে খেলাম। 😊 ধন্যবাদ ভাইয়া
গ্রামের বিয়ের দাওয়াত গুলো খেতে খুবই ভালো লাগে। ঠিক যেনো আলাদা একটা পরিবেশ। শহরে তো কমিউনিটি সেন্টার এ অনুষ্টান হয়। তবে আমার কাছে গ্রামের বিয়ের আয়জন বেশি ভালো লাগে। খাওয়া গুলো ভালোই উপভোগ করেছেন দেখা যায়। শুভেচ্ছা রইলো।
শহরে কমিউনিটি সেন্টারে হয় আর তেমন ভালো লাগেনা। গ্রামে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে 😊
বর কনে সবাই দেখছি আপনার পরিচিত,ঘটনা কি😃।
যাইহোক এসব দাওয়াতে একটু বেশি খাওয়ায় চেষ্টা করবেন😆,যদিও আমি নিজেও পারি না আপনার মত😁।আর আসলেই এখোকার বিয়েতে যেভাবে ভিক্ষুকের মত সামনের থালা নিয়ে বসে টাকা না দিয়ে আশা টাও টাফ ব্যাপার।দোষ টা আমাদের না দোষ টা তাদের যারা আয়োজন করে।
হাহাহা! এলাকার ভিতরেই বিয়েটা হয়ছে এজন্য আগেই পূর্বপরিচিত দুজনেই 😃। দাওয়াতে ভাই খেতে পারিনা 😁। কিছু করার নেই ভাই সংস্কৃতি হয়ে গেছে এটা।
বিয়ে খেতে ইচ্ছে করতেছে আপনার এই পোস্ট দেখার পর থেকে। আহা বিয়ে বাড়ির খাবার অনেক মজার হয়। বিয়ে বাড়িতে সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন তা বুঝতে পারছি। আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
খাবার মজা হলেই হবে নাকি ভাই 😃। আপনিও যেন একটি বিয়ে খেতে পারেন সেই কামনা করি।
ঘোড়া ছাড়া ঘোড়ার গাড়ি বিষয়টি শুনে বেশ ভালো লাগলো। তাছাড়া গ্রামের বিয়ে দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। হ্যাঁ ঠিক বলেছেন খাবার টেবিলে একেকজন একেক টেবিলের দায়িত্ব পালন করে। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপু এরকম ঘোড়া গাড়ি করে জামাই আসার বিয়ে এই প্রথম কাছ থেকে দেখছিলাম। 🥰
অনেকদিন থেকেই বিয়ে খাওয়া হয় না। বিয়ে বাড়িতে আসলে অনেক মজা হয়। আর গ্রামের বিয়েতে একটু বেশিই মজা হয়। ঘোড়ার গাড়িতে বরং আসার ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। আপনার চাচাতো বোনের বিয়েতে আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
হুম আমি অনেকদিন পর খেলাম বিয়ে আর সেটা আপনাদের সাথেও ভাগ করে নিলাম 😊
কি দারুন ব্যাপার 😋
গ্রামের বিয়ে অসম্ভব মজার হয়।
খাবারটা বেশ স্বাদের মনে হচ্ছে 😋
ভালো পোস্ট ছিলো 🤗
বেশ ভালো উপভোগ করলাম ।
হাহাহা ভাইয়া অনেকদিন পর খেলাম গ্রামের বাড়িতে বিয়ে। উপভোগও করেছি 🥰
গ্রামের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার মুহূর্তের গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালোই খাওয়া দাওয়া করলেন বিয়ে বাড়ি খেতে অনেক ভালো লাগে এবং মজা হয়। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।