সংস্কৃতি ও শেকড়ের কথা || জীবনের গল্প
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ্য আছেন। শীতের সুন্দর প্রকৃতির সাথে নিজেকে আরো বেশী কর্ম চঞ্চল ও সতেজ রাখার চেষ্টা করছেন। যদিও গতিশীল সময়ের সাথে সকল কিছুর গতিই দারুণভাবে পরিবতর্ন হয়ে যাচ্ছে। অতীতের স্মৃতিগুলো যেন আরো বেশী দ্রুত অতীত হয়ে যাচ্ছে আর বর্তমানটা যেন অনাকাংখিতভাবে আড়ালে চলে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কি একটু অন্য রকম লাগলো কথাটা। মোটেও না, কারন একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। সময় যতটা দ্রুত পরিতর্বন হচ্ছে, বর্তমানের দৃশ্যগুলো যেন ততো দ্রুত আড়ালে চলে যাচ্ছে। এইতো সেদিন যে বিষয়গুলোকে দারুণভাবে উপভোগ করেছেন তাজ হয়তো তা একদমই অচেনা সকলের নিকট।
এটাই হলো পরিবর্তনের নমুনা, মানুষ যেমন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে ঠিক তেমনি খুব দ্রুত পূর্বের বিষয়গুলোকেও অতীত করে দিচ্ছে। আমরা চাইলেও সেটা হচ্ছে আবার না চাইলেও সেটা হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতে আরো বেশী হবে, মানুষগুলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মানসিকতাও দারুনভাবে পরিবর্তন হবে। যদিও আমরা বর্তমান সময়ে সেটা দারুণ বাস্তবায়ন দেখেছি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সকল ক্ষেত্রে আমরা বিশাল একটা পরিবর্তন দেখছি। এইতো সেদিন কমিউনিটির মডারেটর একটা উৎসবের কথা বলতে গিয়ে বললেন কয়েক বছর আগেও সেটা খুব ছোট পরিসরে সেটা আয়োজন হতো। কিন্তু এখন সেটা এতো বেশী এবং বড় পরিসরে আয়োজন হচ্ছে এবং মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারনে মুল থিমটাই অচেনা হয়ে গেছে।
এখানে একটা বিষয় লুকিয়ে আছে যেটা আমি আজকে উপস্থাপন করতে চাইছি। উৎসব দিন দিন বড় হবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু যদি মুল থিমটা আড়ালে চলে যায় তাহলে সেটা আর উৎসব থাকে না বরং অন্য কিছু হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই এমন হয়ে গেছে আমরা দিন দিন সকল কিছুর ক্ষেত্রে মুল বিষয় বা থিম হতে সরে যাচ্ছি এবং অন্য দিকে ধাবিত হচ্ছি। এটা অবশ্যই চিন্তার দাবি রাখে এবং আমাদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার বিষয়টি সম্মুখে আসে। একটু চিন্তা করে দেখুন অন্তত পাঁচ বছর পূর্বে আমি কত কিছু কত সুন্দরভাবে উপভোগ করতেন। কিন্তু সেগুলো এখন আর সেই ভাবে উপভোগ করতে পারছেন না, কারন সময়ের সাথে সাথে আমাদের মানসিকতায় দারুণ পরিবর্তন হয়েছে।
অতীতের স্মৃতিগুলো আজ আরো বেশী অচেনা হয়ে গেছে। আমরা কত সুন্দর শৈশব কাটিয়েছি। কত আয়োজন এবং উৎসব মুখর পরিবেশ ছিলো আমাদের সময়। সেটা যেমন ছিলো বর্ষায় ঠিক তেমনি ছিলো শীতকালে। একটা উৎসব যেতে না যেতে আরো একটা উৎসব চলে আসতো, আমরা দারুণ পরিবেশে সেগুলো দারুণভাবে উপভোগ করতাম। কিন্তু কখনো এটা চিন্তা করি নাই সময়ের গতিশীল ভূমিকার কারনে একটা সময়ে আমরা এই বিষয়গুলোকেও হারিয়ে ফেলবো। ভুলে যাবো কোন একটা সময় আমরা এসব দারুনভাবে উপভোগ করতাম এবং সুন্দর সময় ব্যয় করতাম।
যাত্রাপালা এখন আর চিন্তা করা যায় না অথচ আমরা দারুণভাবে এগুলো উপভোগ করেছি। বাইস্কোপ, .... আরে আরে রাজার দরবারে মুখোশ পরে ঢুকে গেলেন ডাকাত ...... এসব মিষ্টি সুরের কথা এখন নিদারুণভাবে অতীত। বৈশাখের সেই মেলাগুলোর কথা নাই বা বললাম, স্কুলের পাশে চরকি, নগরদোলা, সেগুলো তো এখন অতীত ইতিহাসের অংশ। চিন্তু করে দেখুন কত কত আয়োজন ছিলো আমাদের সময়, কত দারুণভাবে আমরা কত কিছু উপভোগ করতাম ক্রমাগতভাবে। কিন্তু এখন সব কিছুই বাড়ির চার দেয়ালে আটকে গেছে, কেমন জানি সব কিছু এখন জেলখানার মতো হয়ে গেছে। মানুষ চাইলেও এখন আর বন্দিখানা হতে বের হতে পারছে না।
শেষ করার আগে ফিরে আসছি মুল প্রসঙ্গে, ক্রমাগত পরিবর্তনের কারনে আমরা এক প্রকার প্রযুক্তি জেলখানায় আটকে গেছি নিদারুণভাবে। না আমি ভালো কিংবা খারাপ সেই ব্যাখ্যায় যেতে রাজি নই। বরং এই বিষয়টিকে সম্মুখে আনার চেষ্টা করেছি, সময়ের সাথে সাথে কতটা নিদারুণভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি উন্নত প্রযুক্তির জেলখানায়। অতীতের সেই অতীত সংস্কৃতির ঐতিহ্যগুলোকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে। প্রযুক্তি ব্যবহার নিঃসন্দেহে ভালো কিন্তু অতীত সংস্কৃতিকে ভুলে ভিন্ন কিছুর দিকে এগিয়ে যাওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ না, বিষযটি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন। আমরা দিন দিন শিকড় ছাড়া হয়ে যাচ্ছি আর খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যাচ্ছি নিজেদের অবস্থান হতে।
Image taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<
Posted using SteemPro Mobile
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দাদা স্কুলের পাশে চরকি, নগরদোলা,বাইস্কোপ এগুলো সব অনলাইনের মারফতে ডুবে গেছে। আর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন যেটা ভালো লাগলো। সে হলো আমরা যে কোন বিষয়ের বা অনুষ্ঠানের মুল থিমটা আড়ালে নিয়ে যায় বা আমাদের আচরনে সেটা আড়ালে যে বাধ্য হয়। মানুষ দিনকে দিন নতুন জিনিষের দিকে ধাবিত হচ্ছে আর সুখ শান্তি ভুলে যাচ্ছে। ব্লগটা দারুন ছিল, ধন্যবাদ।
সবটাই এখন অতীত স্মৃতি মাত্র, বর্তমান প্রজন্মকে এসব বিষয়ে বলতে গেলে তারা শুধুমাত্র মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে , খুব সুন্দর একটি ব্লগ লিখেছেন ভাইয়া। ব্লগটি অনেক ভাল লেগেছে।লেখাটিতে চিন্তার খোরাক আছে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শেকড় নিয়ে অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন।আপনি একদম ঠিক বলেছেন,"ক্রমাগত পরিবর্তনের কারনে আমরা এক প্রকার প্রযুক্তি জেলখানায় আটকে গেছি নিদারুণভাবে"। আরার এটাও সত্য সংস্কৃতি কিন্তু সময়ের সাথে চলমান। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়ায় অপসংস্কৃতির দখলদারিত্ব। এই অপসংস্কৃতি রোধ ও প্রতিরোধের শক্তি জোগায় আমাদের শেকড়।শেকড়েই আমাদের মূল ভরসা- বারে বারে নাড়া দেয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, পোস্টটি শেয়ার দিয়ে পড়বার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
আমাদের সময় আবেগ ছিলো তার সাথে সাথে সংস্কৃতিও ছিলো, আমরা আবেগ নিয়ে সংস্কৃতির সকল কিছু দারুণভাবে উপভোগ করতাম। ধন্যবাদ
আসলেই আমরা উন্নত প্রযুক্তির সাথে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছি যে,অতীত সংস্কৃতিকে একেবারে ভুলে যাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ একজন লোক একসময় অনেক গরীব ছিলো, কিন্তু সেই লোকটা একসময় বিরাট ধনী হয়ে যায়। সেই লোকটা পুরনো অতীত ভুলে যেতে পারে, আবার ভুলতে না ও পারে। কিন্তু আমরা সত্যি সত্যিই আমাদের অতীত সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি এবং সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথাও নেই। একসময় আমরা কতো আনন্দ,উল্লাস করতাম। একেকটা ঋতু একেক ভাবে উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন বিশেষ দিনগুলোতেও তেমন আনন্দ লাগে না। রূপক ভাইয়ের ঘুড়ি উৎসবের সেই পোস্টটি আমি পড়েছিলাম। আসলেই দিনদিন আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। সেজন্যই লোকে বলে যে, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। যাইহোক এতো চমৎকার একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।