আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [খাবার]

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

খাবারে তৃপ্তি, শরীরে জোগায় শক্তি
তাইতো সবাই, খাবারের পিছনে দিন-রাত্রী।
কেউ খুঁজে বিলাসিতা- অপচয় খাবারে সব সময়
কেউ বলে জীবন বৃথা- জুটেনা না ভালো কিছু খাবারে।
কষ্ট ছাড়া বুঝে না কেউ কি যন্ত্রণা ক্ষুধার মাঝে-
নিজেকে ডুবিওনা খাবার অপচয়ের মাঝে।
আমাদের নিয়তি রয়েছে আমাদের হাতে-
অপচয়ের মাধ্যমে পতিত হচ্ছি আরো নিচে।

শুভ দুপুর বন্ধুরা, আজকের শুরুটা কবিতা দিয়ে করলাম, যদিও কবিতা আমার দ্বারা অসম্ভব একটি কাজ, যা মনে আইছে লিখে দিয়েছি, হি হি হি।

খাবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যদিও নানান মানুষের নানান মতবেত রয়েছে, কেউ কেউ যেমন বলে আমরা বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাই, আবার কেউ কেউ বলেন শারীরিক সামর্থ বৃদ্ধি করার জন্য খাবার খাই, অন্যরা বলেন আমাদের শরীরের যাবতীয় চাহিদা পূর্ণ করা এবং শারীরিক সামর্থ ঠিক রাখার জন্য আমরা খাবার খাই।

IMG_20211008_180950.jpg

তবে ব্যাখ্যা যাইহোক না কেন, এটা অন্তত্য স্পষ্ট যে, আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি, সুস্থ্যতা নিশ্চিত এবং বেঁচে থাকার জন্য খাবার আবশ্যক একটি উপাদান। যার কারনে আমরা জীবনে নাান ধরনের কার্যাবলীর সাথে নিজেদের সংযুক্ত করি এবং খাদ্য খাওয়ার সুযোগটি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করি। কারন আমাদের ইনকাম না থাকলে খাবার আসার পথটি সুন্দর ও সহজ হবে না। ছোট থেকে উচ্চ শ্রেণীর সবাই নানা ভাবে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। কেউ যেমন তা সহজভাবেই করে ফেলে, আবার কেউ তার জন্য দিন-রাত সমানে পরিশ্রম করে যায়।

আমি অনেক মানুষকে খুব কাছ হতে দেখেছি, যারা সকালের খাবার ঠিক মতো খেতে পারতেন না, সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার পর দিনের এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারতেন। আবার অনেক সময় সারাদিনই উপোষ থাকতেন। ঠিক তার উল্টো চিত্রটা ছিলো খুবই নির্মম, সমাজের উচ্চাসনে বসে দশ জনের খাবার একাই নষ্ট করতেন অনেকেই, তারপর সেগুলোকে ডাষ্টবিনে ফেলতেন। আবার অনেকেই সেখানে হুমরি খেয়ে পড়তেন, খাবার ভাগাভাগি করার জন্য। কি নির্মম সমীকরণ ছিলো!

IMG_20211008_181255.jpg

IMG_20211008_181300.jpg

তবে খাবার নিয়ে আমি খুব বেশী বাড়াবাড়ি করতে পারি নাই, কারন আমার বাবা তুলনামূলকভাবে খুব বেশী কঠোর ছিলেন। যার কারনে কখনো তার পছন্দের বাহিরে যেতে পারি নাই। অপছন্দের খাবারগুলোও হাসিমুখে খেয়েছিলাম বাধ্য হয়ে। আবার বাবার অনুপস্থিতিতে আম্মুর উপর রাগ ঝেড়েছি, না খেয়ে থেকেছি। সত্যি বলতে বায়না করার সুযোগ পেয়েছি। যার কারনে আম্মু সর্বদা চেষ্টা করতেন আমাদের পছন্দের খাবারগুলো বেশী বেশী তৈরী করার।

তবে কঠোর হলেও একটা জায়গায় বেশ কোমল ছিলেন বাবা, তখনতো খুব বেশী মেলার প্রচলন ছিলো। বাবা মেলা হতে আমাদের পছন্দের নানা জিনিষ নিয়ে আসতো, সাথে অনেক ধরনের খাবার থাকতো। তখন সব বেশী প্রচলন ছিলো খই, বিন্নির খই, মোয়া, লাড্ডু, বাতাসা, নানা জাতীয় মিষ্টি খাবার সবগুলোর নাম এখন মনেও করতে পারছি না। সেই খাবারগুলোর স্বাদ অসাধারণ ছিলো। আজ মেলা নেই, নেই সেই খাবারগুলোর আসল স্বাদ।

IMG_20211008_181302.jpg

এখনতো সময় পাল্টে গেছে, আধুনিক ও স্পাইসি নানা খাবার জায়গা দখল করে নিয়েছে। আগের সেই খাবারগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে কুখাদ্য বলে বিবেচিত হয়। আমার ছেলেও বলে ওসব খাবার তুমিই খাও, আমার বার্গার ছাড়া চলবে না। বউ বলে ফুচকা, কফি এগুলো ছাড়া এখন চলে নাকি, মেয়ে তো এখনই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই চিনে গেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমার আর তাদের মাঝে কতটা পার্থক্য বিড়াজ করছে। সময়ের সাথে সকলের রুচির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু আমি পারি নাই নিজেকে পাল্টাতে!

আমি জীবনের অতীতগুলোকে ফেলে দেই নাই, ভুলে যাই নাই খাবার নিয়ে চারপাশের মানুষের কষ্টগুলোকে। চেষ্টা করি এখনো সাধারণভাবে জীবন যাপন করার। এখনো তিন বেলা ভাত না খেলে প্রশান্তি পাই না। কারন এই সব আধুনিক খাদ্যের মাঝে আমি তৃপ্তি নামক বিষয়টির উপস্থিতি কখনো খুঁজে পাই নাই। তবে তাই বলে বউ, ছেলে এবং মেয়ে তাদের খাবারের মাঝে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াই নাই।

IMG_20211008_180810.jpg

সবশেষে, কেউ খাদ্য নিয়ে বিলাসিতার মাধ্যমে নিজের উচ্চাবস্থান প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের পিছনে ছুটে চলেন দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে। আপনার অবস্থান যেখানেই হোক, অন্তত খাবার কখনো অপচয় করবেন না দয়া করে।

W3W Code: https://what3words.com/reclaimed.goad.promoting
Device: Device: Redmi 9, Xiaomi

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break.png
Leader Banner-Final.pngbreak.png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break.png



Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 3 years ago 

খাবার অপচয় করা উচিত নয়। অনেকের কাছে এই খাবারের মূল্য অনেক বেশি আবার অনেকের কাছে খুবই তুচ্ছ। যারা দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে তারাই শুধু অনুভব করতে পারে ক্ষুধার কষ্ট কতটুকু। অনেক সুন্দর ভাবে লিখেছেন আপনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার কবিতাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।কবিতাটিতে অনেক মর্ম নিহিত আছে।বিলাসিতা যাদের জীবন,তারা না খেয়ে থাকার কি কষ্ট বা যন্ত্রণা তা বুঝবে না। কবিতা ও গল্প মিলে অনেক সুন্দর পোস্টটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।🌹🌹🌹

 3 years ago (edited)

কেউ খাদ্য নিয়ে বিলাসিতার মাধ্যমে নিজের উচ্চাবস্থান প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য।
ভাইয়া আপনার এই লাইনটির সাথে আমি একদম ১০০% একমত।
নিজের চোখের চারপাশের কত মানুষকে দেখেছি সামান্য খাবারের জন্য কতটা কষ্ট করে রোজগার করছে। আর সেখানে অনেকে খাবার রেখে দেওয়াকে ভদ্রতা ভাবে।

 3 years ago 

সেটাই, আমরা নিজেদের অবস্থান দেখানোর জন্য প্রতিনিয়ত খাবারের অপচয় করে যাচ্ছি, খুবই দুঃখজনক এটা। ধন্যবাদ

 3 years ago 

সমাজের উচ্চাসনে বসে দশ জনের খাবার একাই নষ্ট করতেন অনেকেই, তারপর সেগুলোকে ডাষ্টবিনে ফেলতেন।

সমজে এখন ও এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রচুর খাবার নষ্ট করে। তাদের কাছে যেন এই খাবারের কোন দাই নেই

অপর দিকে কি এক আজব ব্যাপার, এমন অনেক মানুষ আছে যাদের এই খাবারের জোগান দিতে গিয়ে সারা দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়। এক এক জনের কাছে খাবারের চাহিদা এক এক রকম

  • আপনার পোষ্ট টা সব মিলিয়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে,চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন ভাই।
 3 years ago 

সেটাই ভাই, কেউ আনন্দে খাবার নষ্ট করে, আবার কেউ কান্না নিয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। সত্যি কি অমানবিক সমিকরণ! ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 3 years ago 

খাবারে তৃপ্তি, শরীরে জোয়াগ শক্তি
তাইতো সবাই, খাবারের পিছনে দিন-রাত্রী।
কেউ খুঁজে বিলাসিতা- অপচয় খাবারে সব সময়
কেউ বলে জীবন বৃথা- জুটেনা না ভালো কিছু খাবারে।
কষ্ট ছাড়া বুঝে না কেউ কি যন্ত্রণা ক্ষুধার মাঝে-
নিজেকে ডুবিওনা খাবার অপচয়ের মাঝে।
আমাদের নিয়তি রয়েছে আমাদের হাতে-
অপচয়ের মাধ্যমে পতিত হচ্ছি আরো নিচে।

আপনার উপরোক্ত কবিতার অনেক মর্ম নিহিত আছে।বিলাসিতা যাদের জীবন,তারা না খেয়ে থাকার কি কষ্ট বা যন্ত্রণা তা বুঝবে না।

গরীবের না খেয়ে থাকার কষ্ট ধনীদের মাঝে শেয়ার করার জন্যই তো ইসলামে আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে একমাস রোজা ফরজ করে দিয়েছেন।
যাইহোক কবিতা ও গল্প মিলে অনেক সুন্দর পোস্টটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা দুবেলা-দুমুঠো খাবার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। একমুঠো ভাতের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্বারে দ্বারে। হায়রে জীবন! খাবারের অভাবে নিভে যায় হাজারো জীবন প্রদীপ। তাদের ক্ষুধা ও মনের না বলা কথাগুলো অপ্রকাশিতই রয়ে যায়। কারো কাছে খাবার অপচয় করা বিলাসিতা আর কেউবা একমুঠো খাবারের আশায় চালিয়ে যায় জীবন সংগ্রাম। আপনার পোষ্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আগের পোস্টে আপনি আপনার বাবার খাবার কঠোরতার সম্পর্কে কিছুটা বলেছিলেন। আজও কিছুটা বললেন। এবং বর্তমান যুগের খাবারগুলো একটু বেশিই স্পাইসি এবং মজাদার। কিন্তু আপনাদের সময়ের খাবারগুলোর মধ্যে আলাদা একটা স্বাদ ছিল। যা এখনকার খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় না।

কেউ খাওয়ার জন্য বাঁচে
কেউ বাঁচার জন্য খাই

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

 3 years ago 

ভাইয়া ঠিক বলেছেন আমাদের সমাজে ১০% মানুষ ৯০% মানুষের সম্পদ ভোগ করছে ।অথচ পাশের বাসায় রান্না হয়না ,শিশুরা খাবার পায় আর আমরা হোটেলে গিয়ে হাজার টাকার অর্ডার দিয়ে এক চামস খেয়ে চলে আসি । মানবতা নাই ভাইয়া ।সমাজ চলে গেছে নিকৃষ্টতের দখলে ।

 3 years ago 

ভাই আপনার শেষের লাইনটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আমি বুফে খেতে গিয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। মানুষ প্রচুর খাবার নষ্ট করছে। এটা খুবই জঘন্য একটা কাজ। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা এক মুঠো খাবার আশায় দিনের পর দিন বসে আছে। সেখানে যদি আমরা খাবার নষ্ট করি তাহলে এটা হবে চূড়ান্ত অমানবিকতা। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

 3 years ago 

সত্যি ভাই, মাঝে মাঝে আমি খুবই হতবাক হয়ে যাই, খাবারের অপচয় দেখে। মানবিক দিক হতে আমরা শুধু নিম্নমুখী হচ্ছি দিন দিন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64544.47
ETH 3417.27
USDT 1.00
SBD 2.48