সম্পর্কের জায়গাটা ঠিক থাকুক
শুভ বিকেল সবাইকে,
সম্পর্ক, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং জীবনের সময়গুলোকে উপভোগ্য রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু দিন দিন আমরা কেন জানি সম্পর্কগুলোকে অবমূল্যায়ন করছি এবং নিজের জায়গাটা হালকা করে তুলছি। সত্যি বলতে আমরা আসলে প্রযুক্তির ব্যবহার এতো বেশী করছি মানে আসক্তি এতো বৃদ্ধি করেছি, জীবনের আসল জায়গাটা যে নষ্ট হচ্ছে সেটার প্রতি লক্ষ্য করার সুযোগই পাচ্ছি না। আমরা বাস্তবতাকে এড়িয়ে ভার্চুয়াল কিছুর মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু এটা আমাদের জন্য কতটা সুখকর হচ্ছে কিংবা মঙ্গলজনক অবস্থার সৃষ্টি করছে, সেটা ভেবে দেখার সময় চলে এসেছে।
কারন আপনি যাই করুন না কেন, দিন শেষে আপনাকে নিজের জায়গায় ফিরে আসতে হবে। আর সেই জায়গাটা যদি সম্পর্ক শূণ্য হয়, তাহলে সেটা হবে নিঃসঙ্গ জীবন, যে জীবনের মাঝে কোন রস নেই, ভালোবাসা নেই, কোন প্রতি আবেগ কিংবা মায়া নেই। তবে কি আমরা ধীরে ধীরে সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছি? আমরা কি জীবনের অস্তিত্বকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছি? সম্পর্কের জায়গটা কি আমাদের আলগা হয়ে যাচ্ছে, আমরা তবে শূন্যের মাঝে মিথ্যে কিছু নিয়ে ভেসে চলছি?
আমি জানি আপনার চিন্তা শক্তি আপনাকে কতটা ভালো রেসপন্স করবে কিংবা আপনার অবস্থান কতটা সুন্দরভাবে চিত্রায়ন করছে। আমি তো আমার অবস্থান হতে সব কিছু অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কারন অতীতের দৃশ্যগুলো আর বর্তমান দৃশ্যগুলো পার্থক্য আমাকে খুব ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিতে পারছে না। আমিতো আমার জায়গা হতে খুবই চিন্তিত আছি। কারন সম্পর্কগুলো দিন দিন হালকা হয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা বুঝতে চাইছি না, প্রযুক্তির জায়গায় শুধুই প্রযুক্তি চলে, কিন্তু হৃদয়ের আবেগ কিংবা উষ্ণতায় তা খুবই অকার্যকর। আসলে বাস্তবতায় প্রযুক্তির আবেগ যতটা অকার্যকর, ভাচুয়াল জীবনে ঠিক ততোটাই কার্যকর। কিন্তু আমরাতো বাস্তবতার মাঝেই বসবাস করি। সুতরাং ভার্চুয়াল না বাস্তবতাকে বেশী প্রধান্য দেয়া উচিত আমাদের।
একটা সময়, আমরা পরিবারের সকল সদস্যরা বিভিন্ন আয়োজন উপলক্ষ্যে একত্রে মিলিত হতাম। সারাদিন নানা বিষয় নিয়ে হৈ চৈ করতাম, আড্ডা দিতাম, ছোটদের নিয়ে মজা করতাম। সম্পর্কগুলো তখন খুবই তাজা এবং উপভোগ্য মনে হতো। একে অন্যের প্রতি অন্য রকম একটা টান অনুভব করতাম। কারো কোন সমস্যা হলে ছুটে যেতাম এবং শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতাম। সম্পর্কগুলোর দারুন একটা প্রভাব সতেজ ছিলো তখন। কিন্তু এখন, একটু চিন্তা করে দেখুন কতটা অসামঞ্জস্য খুজেঁ পান?
আয়োজনগুলো হয়তো এখনো হয়, কিন্তু আগের সেই আমেজ কিংবা উপভোগ্য বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায় না। কারন এখন বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে সবাই ভার্চুয়াল জীবন নিয়ে বেশী ব্যস্ত। হয়তো পরিবারের সবাই ঠিক উপস্থিত হন, কিন্তু আগের সেই হৈ চৈ হয় না, জমজমাট আড্ডাগুলো তৈরী হয় না, সম্পর্কগুলোর মাঝে কোন অনুভুতি কাজ করে না। কারন সবাই যার যারা স্থানে মোবাইল কিংবা ট্যাবের স্ক্রিনে ব্যস্ত থাকেন। তাই খুব কাছে উপস্থিত থাকার পরও মনে হয় অনেক দূরে অবস্থান করছে। সম্পর্কগুলোর মায়া হারিয়ে যাচ্ছে কাছে থাকার পরও পরস্পরের মাঝে বেশ দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। পারিবারিক কিংবা সামাজিক যেটাই বলেন সম্পর্কগুলো শুধু হালকা হচ্ছে না বরং ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
হয়তো আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা উদাসহীনতার পরিচয় দিচ্ছি অথবা প্রযুক্তি আমাদেরকে সম্পর্কের বিপরিতমুখী অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে দ্বিতীয় বিষয়টির প্রাধান্য বেশী এই ক্ষেত্রে। হ্যা, প্রযুক্তি আমাদের জন্য কল্যানকর এবং আশীর্বাদস্বরূপ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু অত্যাধিক আসক্তি আমাদের ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। আমাদের কারনেই প্রযুক্তি আজ অভিশাপে রূপান্তরিত হচ্ছে। অতি প্রেয়োজনীয় প্রযুক্তির জিনিষটিকে আমরা যন্ত্রণাতে রূপান্তরিত করছি। সমস্যা যেমন আমরা তৈরী করছি ঠিক তেমনি সমস্যার সমাধানও আমাদের করতে হবে। নিজের অবস্থান এবং সম্পর্কগুলো নিয়ে একটু পর্যালোচনা করুন, দিন দিন সেটা কোন দিকে যাচ্ছে?
আমি শুধু মোবাইলে কথা বলে কিংবা অনলাইনে টাকা পাঠিয়েই সম্পর্কগুলোর দায়িত্ব শেষ করার পক্ষপাতিত্ব করি না, বরং হৃদয়ের টান, অনুভূতি ও আবেগগুলোকে বাস্তবতার স্বাদ দিয়ে সতেজ রাখার পক্ষপাতিত্ব করি। অন্তত্য মাসে একবার হলেও প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সাক্ষাত করার চেষ্টা করি, তাদের সম্মুখে গিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে বুদ হয়ে থাকি না। বরং যটতা সম্ভব সম্পর্কের জায়গাটিকে শক্ত ও মজবুত করার চেষ্টা করি। ভালোবাসার জায়গাটা কখনো প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্ণতা দেয়া সম্ভব না।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
Support @amarbanglablog by Delegation your Steem Power
100 SP | 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP |
|| Community Page || Discord Group ||
আপনি যেই টপিক গুলো নিয়ে লিখেন সেই টপিকগুলো নিয়ে কথা বলা খুব দরকার। তবে সেসব নিয়ে খুব একটা কথা কেও কথা বলেনা।কিন্তু আপনি খুব সুন্দরভাবে লিখেন।পড়েই ভালো লাগে।
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া আপনি,প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে তবে কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
প্রযুক্তির যুগে আমরা বসবাসরত।প্রযুক্তি যেমন আমাদের প্রতিদিন উপকারে আসছে তেমনি অপকারও ঘটাচ্ছে।প্রযুক্তির এই যুগে দিন দিন আমরা হারিয়ে যাচ্ছি আমাদের উদ্দেশ্য থেকে।তেমনি যার ভালো দিক যেমন আছে খারাপ দিক ও রয়েছে।
আপনি অনেক ভালো একটা বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন।আমরা অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবো এই পোস্ট থেকে আপনার জন্য অভিন্দন ভাইয়া।
সত্যি ভাইয়া আপনি বাস্তব কে এমন ভাবে তুলে ধরেছেন অসাধারণ।
সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য আমি আমার সমস্ত পরিবার ভাই বোনদেরকে নিয়ে প্রতিমাসে আমরা ১ বার মিলিত হই। অনেক সময় ২/৩ বার ও হয়ে যাই।
এ সময়টায় আমরা অনেক আনন্দ করি অনেক খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। জ্বি ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন সম্পর্কের এই মুহূর্তগুলো আসলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আমার সেই সাথে সবকিছু কেমন জানি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। কি যে অবস্থা এখন ভাইয়া ছোট ছেলেমেয়েরা মোবাইল, ট্যাপ ছাড়া কিছু খাওয়া দাওয়া করবে না লেখাপড়া করবে না কি যে একটা বায়না ধরে। অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম বাস্তবসম্মত একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
চেষ্টা করেছি মাত্র। এটা খুবই ভালো খবর ভাই, আমাদের সবার উচিত এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা এবং যত্নশীল হওয়া। ধন্যবাদ
আপনি একদম ঠিক বলেছেন প্রযুক্তি আমাদের সম্পর্কের জায়গাটিতে ফাটল ধরাতে শুরু করে দিয়েছে, কিন্তু আধুনিক জীবন প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। এর ব্যবহারের একটি লিমিট থাকা দরকার, কোন কোন সময় এর আসক্তি ভয়াবহ ভাবে আমাদের পেয়ে বসে।এ থেকে উত্তরণ হতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।
হ্যা, আমরা যদি এখনো সতর্ক না হই তবে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আরো বড় আকার ধারন করবে। ধন্যবাদ
আসলে প্রযুক্তির ব্যবহার এমন ভাবে হচ্ছে যেন পৃথিবীতে সবকিছু শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।আপনার মতানৈক্য আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া।
আসলেই ভাইয়া আগের মতো উৎসব মুখর দিন এখন আর দেখা যায় না। আগের আনন্দ মুহূর্ত দিনের গল্প কখনো ভুলবার নয়।
ধন্যবাদ ভাই, লেখাটি পড়ে আপনার সুন্দর মন্তব্য উপস্থাপন করার জন্য।
😍😍😍
আপনি অনেক সুন্দর এবং অনুধবন মূলক পোস্টটি করেছেন।
এটা সম্পূর্ণ সত্যিই কথা ভাই।আসলে প্রযুক্তি আমাদের যেমন উপকার করেছে তেমনি অপকার ও করে।কোনটায় অস্বীকার করা যাবে না।
শুভ কামনা রইলো ভাই।
জ্বী, মাঝে মাঝে অতীতের স্মৃতিগুলো বড্ড বেশী খোচা দেয়, বর্তমানে আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি, সম্পর্কগুলো খুব হালকা হয়ে যাচ্ছে আমাদের। ধন্যবাদ
ভাই আপনি একদম সমসাময়িক একটা বিষয় তুলে ধরেছেন। আমরা এখন বাস্তব জীবনের চেয়ে ভারচুয়াল জগত নিয়ে পড়ে থাকি।যার পরিণাম কখনো মঙ্গলজনক নয়।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য।
আপনার প্রত্যেকটি লেখা পোস্টগুলো, প্রত্যেকটি লেখার লাইনগুলি যুক্তিতে ভরপুর ।যা বাস্তবতাকে দারুণভাবে উপলব্ধি করতে শেখায়।সত্যিই আধুনিক যুগে আমরা কাছের সম্পর্কের মানুষকে ভুলে যন্ত্রকে বেশি প্রাধান্য দিই।ধন্যবাদ ভাইয়া।
একটি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হলে যত্ন করতে হয়। কিন্ত আমরা প্রযুক্তির কারনে অনেক দূরে সরে এসেছি। এখন কেন জানি সম্পর্কগুলো ফেইক মনে হয়। অনুভূতিহীন সম্পর্কগুলো পানশে লাগে। সম্পর্ক নিয়ে অনেক যৌক্তিক বিষয় আলোচনা করেছেন। ধন্যবাদ
সম্পর্কের রংগুলো দিনদিন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। কেন জানি চিরচেনা সেই সম্পর্ক গুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে শত আবেগ ও অনুভূতি। আপনার লেখার জাদুতে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনার লেখার প্রতিটি কথাই যেন বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই সুন্দর একটি লেখনি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।