আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ লেভেল বা ব্র্যান্ড ]
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছো। আমি আজকে চিল চিল আছি কারন আজ শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির। আর এখন তো শুক্রবার আসলে আরো বেশী চিল চিল থাকি, কারন শুক্রবারের পরের দিনটিও ছুটির দিন। আহ! লোডশেডিং তুমি কত্ত ভালো এই ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ সমস্যার অতিরিক্ত চাপ দূর করার জন্য সরকার সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন কার্যকর করার ঘোষণা দেয়ার পর, সবচেয়ে বেশী খুশি বোধহয় আমিই হয়েছিলাম। কারন বাসা পরিবর্তন করার পর হতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ঘন্টা জ্যামে বসে থেকে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। আর এই ক্ষেত্রে একদিন বেশী ছুটি পাওয়া মানে বাড়িতে বসে আরাম করার বাড়তি সুযোগ, আহ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, ধুর কি বলি? আহ! কি আনন্দে মনের ভিতরে, হি হি হি।
না থাক বাদ দেই, আজ একটু সিরিয়াস কথা বলি যেহেতু শুক্রবার হাতে প্রচুর সময় আছে, তাই চাপ না নিয়ে ফ্রি মনে কিছু সিরিয়াস কথা বলে ফেলি। দেখুন ছোট বেলায় বাস্তবতা হতে কিছু বিষয় বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম সে সকল বিষয় নিয়ে মোটেও কিছু চিন্তা করে না বা করার সুযোগ পায় না। কারন হলো তারা বাস্তবতা না বরং ভার্চুয়াল জগত নিয়ে বেশী পরে থাকতে পছন্দ করে। ফলশ্রুতি বাস্তবতা হতে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়। ছাত্রজীবন শেষে যখন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়, তখন কেবল অনুধাবন করতে সমর্থ হয় বাস্তবতা আসলে কি জিনিষ? বাস্তব জীবনে ভার্চুয়াল জীবনের কোন কিছুই তেমন কাজে আসে না বা আসার কথাও না। বাস্তবতা এক জিনিষ আর ভার্চুয়াল ভিন্ন জিনিষ, দুটো অনেকটা রাত আর দিনের মতো।
ভার্চুয়াল জীবন আপনাকে রঙিন হতে শেখাবে সব কিছু একটা বেশী কল্পনা প্রবন হয়ে চিন্তা করার পথ তৈরী করে দিবে, সিরিয়াসলি কিছু চিন্তা করার সুযোগ দিবে না। কিন্তু বাস্তবতা আপনাকে যেমন রঙিন স্বপ্ন দেখাবে ঠিক তেমনি কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে সেটা আবার সাদা কালো হিসেবে চিন্তা করার সুযোগ করে দিবে। আপনি বুঝতে পারবে জীবনের স্বপ্নগুলো কখন রঙিন হতে পারে আর কখন সেগুলো সাদা কালো থাকে। এই উপলব্ধিটা আপনি কখনো ভার্চুয়াল জীবন হতে পাবেন না বা বুঝতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে ভার্চুয়াল জীবনের বাহিরে আসতে হবে, বাস্তবতাকে স্বীকার করে তার থেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এর বিকল্প কোন উপায় বা পথ নেই আপনার সম্মুখে।
যে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, স্কুল জীবনে প্রথমে দেখেছি, মাথায় বাক্স নিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করতে। আমাদের স্কুলের সম্মুখে পঞ্চাস পয়সা এবং এক টাকা মূল্যের আইসক্রিম পাওয়া যেতো। সেগুলোর কোন ব্র্যান্ড ছিলো না। আচ্ছা ব্র্যান্ড বুঝেন তো নাকি? একটা পন্যকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা কিংবা বাজারে প্রচলিত পন্যগুলো হতে একটু নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। তো আমরা ছোট বেলায় যে আইসক্রিম গুলো খেতাম সেগুলো ছিলো স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নিয়মে তৈরী, সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী সস্তা ছিলো। বিক্রেতা নিজেই তার প্রচার করতেন, সারাদিন এক এলাকা হতে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন এবং দিন শেষে সব বিক্রি করে আবার ফিরে আসতেন। এভাবেই বেঁচাকেনা চলতো, বরফের লেভেল দেয়া আইসক্রিমগুলো, সেগুলোর স্বাদ কিন্তু খারাপ ছিলো না কিংবা অস্বাস্থ্যকর ছিলো না, কারন সেগুলো তৈরীর পদ্ধতি ছিলো উন্মুক্ত, সকলের সামনেই তৈরী করা হতো।
কিন্তু সময়ের প্রভাবে পাল্টে যেতে থাকে সব, খোলা আইসক্রিমগুলো মোড়ে দেয়া হয় মোড়কে। নতুন নাম দিয়ে, একটু নতুন আঙ্গিকে সেই আইসক্রিমগুলো পরবর্তীতে বিক্রি করা হয় ডাবল দামে এবং তার উৎপাদন পদ্ধতিটি চলে যায় আড়ালে। সেখানে নতুনভাবে অনেক কিছুই জুড়ে দেয়া হয় প্রচারণার স্বার্থে। মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধির সকল পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং মানুষও তুলনামূলকভাবে সেগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়ে অধিকাহারে। সকলের সামনে একটা বিষয় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়, কি খাচ্ছেন? খোলা জিনিষ-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী সস্তা জিনিষ, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর উপস্থাপন করা হয় মোড়কে ঢাকা ভালো জিনিষ, উন্মুক্তভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী করা হয় না এগুলো। তাতে মানুষও কিছুটা আশস্তবোধ করে এবং সেগুলোর প্রতি বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে।
দেখুন একই প্রোডাক্ট, মোড়কে মোড়ানো আর গোপনে তৈরী দাম কিন্তু বেশী, আবার খোলা প্রোডাক্ট মোড়কে মোড়ানো না সকলের সম্মুখে তৈরী করা হয় দাম কিন্তু সস্তা। ঐ যে মোড়কে মোড়ানো এবং প্রচারের ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা যোগ করার ফলে সেটার দাম দ্বিগুন হয়ে গেলো। এই হলো ব্র্যান্ডিং এর সুফল। এখন আসুন বাস্তবতা, আমাদের সকলের মাঝে বেশ ভালো মেধা আছে, কিন্তু আমরা সেটা সঠিকভাবে সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে পারি না বলে সেটা হয়ে যাচ্ছে ননব্র্যান্ডিং আর তুলনামুলকভাবে কম মেধাবী অনেক মানুষ সেই একই আইডিয়া ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার ফলে তারা হয়ে যাচ্ছেন লেভেলযুক্ত ব্র্যান্ডিং, ফলশ্রুতিতে একই আইডিয়া প্রকাশ করে আমরা থাকছি মূল্যহীন আর একই আইডিয়া কপি করে লেভেলযুক্ত করে তারা পেয়ে যাচ্ছেন ব্র্যান্ডের ডাবল মূল্য।
সুতরাং আমি বলতে যাচ্ছি, আমার বাংলা ব্লগে যারা নতুন ভেরিফাইড হয়েছেন, অথবা নতুন যারা ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করার চিন্তা করতেছেন। আপনাদের এই বিষয়টি বুঝতে হবে, যদি এবিবি স্কুলের মাধ্যমে নিজের মেধার সৃজনশীলতা ঘটাতে পারেন, কাংখিত বিষয়গুলোর উপর সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, তাহলে আপনার যোগ্যতা একটা লেভেল তৈরী হবে। আর নিজের লেভেল মানে নিজের ব্র্যান্ডিং, আর নিজের ব্র্যান্ডিং মানে যোগ্যতার ডাবল মূল্য। দেখুন চিন্তা করে, কি করবেন এখন আপনি? এবিবি স্কুলের মাধ্যমে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের একটা লেভেল তৈরী করবেন নাকি, সারাদিন কঠোর প্ররিশ্রম করে মূল্যহীন থেকে যাবেন? বিষয়টি আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম, যদি বুঝতে সক্ষম হন তাহলে আমি স্বার্থক আর আপনি সফল, আর যদি বুঝতে অক্ষম হন তাহলেও আমি স্বার্থক কিন্তু আপনি ব্যর্থ। কারন আমার কথা প্রচার করে আমি ঠিকই ইনকাম করে নিচ্ছি।
Image Taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বুঝতে পেরেছি আপনার কথার সারমর্ম।অনেক ধন্যবাদ এত মূল্যবান পরামর্শ দেওয়ার জন্য।আমাদের নতুন যাত্রা তে এগুলো খুব কাজে লাগবে।আপনার পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করব।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। আপনি দুইদিন ছুটি হওয়াই খুশি আর দেখেন কত মানুষকে একদিন বেশি বাড়িতে থেকে বউয়ের হুকুম শোনা লাগে হি হি।।
স্যোসাল মিডিয়া বা ভার্চুয়াল জগত আমাকে সহ অনেককে বেশ ডিপ্রেশনে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু বাস্তব সবসময়ই আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে। ব্রান্ডিং বিষয়টি ভালো বলেছেন। সবমিলিয়ে দারুণ ছিল।।
ভাইয়া উপরের কথা গুলো যেমনই বলছেন শেষের কথা গুলো অনেক দামি। আর আইসক্রিম দিয়ে সুন্দর একটি উদাহরন দিলেন। কথা গুলো আমার অনেক ভাল লাগছে। নিজেকে ব্যান্ড হিসাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে যাবো ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।
পাচঁ ঘন্টা জামে বসে অফিস করতে কিভাবে যান 🙆♂️। খুবই কঠিন কাজ। যায়হোক, আজকের দিনটাই তো আরামে কাঠাতে পারলেন 😊। ছোটবেলার ২ টাকার আইসক্রিম এর স্বাদ কি এখন আর পাওয়া যায়। কাগজে মোড়ানে সেই সাথে দামও বেশি সাথে যুক্ত হয়েছে ব্র্যান্ডিং। মোরাল অব দা স্টরি হচ্ছে নতুন ইউজার যারা এসেছেন সবাইকে নিজের ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করতে হবে একমাত্র সৃজনশীলতা প্রকাশের মাধ্যমে। তাহলেই ব্লগিং জার্নিটা উজ্জল হবে। বাস্তবভিত্তিক কথা বলেছেন ভাইয়া ❤️
ভাইয়া, আমরা আইসক্রিমের মতো মোড়কে জড়ানো ব্র্যান্ডিংয়ের পণ্য হতে চাই না। এবিবি স্কুলের মাধ্যমে যে শিক্ষাটা গ্রহণ করেছি তারই যথার্থ প্রয়োগ করে একজন বেস্ট ব্লগার না হতে পারলেও ভালো ব্লগার হওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ। আর শুক্রবারের পর শনিবারের ছুটি পেয়ে আমারও খুব ভালো হয়েছে ভাইয়া। আমার মাছ চাষে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারছি।
অত্যন্ত মননীল আলোচনা করেছেন ভাই। আসলে আমরা বাঙালি জাতি এমনই। চোখের আড়ালে অন্ধকারে তৈরি হচ্ছে শুধু লেভেলিং হলেই উচ্চমূল্যে তা ক্রয় করছি। গুণগতমান বিচার করছি না। প্রকাশ্যে তৈরি গুণগত মান ভালো হলেও তা আবার খাচ্ছি না। সর্বোপরি নতুনদের উদ্দেশ্যে যথেষ্ট জ্ঞানগর্ভ মূলক উপদেশ দিয়েছেন আপনি। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
Hi, @hafizullah,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP
ইশ,লোডশেডিং টা যদি আরো সম্যাসা করতো,তাহলে সপ্তাহে আরো কিছুদিন বন্ধ পাওয়া যেত😜😜।আমি ছোট বেলায় বাক্সের আইসক্রিম খেয়েছিলাম।যাই হোক সঠিক শিক্ষা এবং মেধা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য। ধন্যবাদ