শৈশবের বাজার স্মৃতি- অন্য রকম একটা মজার স্মৃতিsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ্য আছেন। টানা বৃষ্টিপাতের পর আজ বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে, প্রকৃতির এই খেলায় হয়তো সুস্থ্য থাকাটা আমাদের জন্য আরো বেশী চ্যালেঞ্জময় হয়ে উঠছে। অফিসে কাজে একটু বাহিরে গিয়েছিলাম, গরমে মনে হলো সিদ্ধ হয়ে গেছি। অথচ দুদিন আগের কথা চিন্তা করুন, বৃষ্টিতে একদম ভেজা ভেজা হয়ে গিয়েছিলাম। আর আমাদের সড়কের অবস্থানতো নির্ণয় করাই কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। বিশেষ করে নিউমার্কেট এলাকার দোকানদারদের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের অফিসের কলিগের এক বন্ধ নিউমার্কেটের বাহিরে বাইক রেখেছিলেন কিন্তু রাত্রে এসে দেখেন চারদিকে শুধু পানি আর পানি, বেঁঁচারা পানিতে নেমে হাতিয়ে হাতিয়ে তার বাইক খুঁজে পেয়েছিলেন, একটু কল্পনা করুন এই দৃশ্যটা!

যাইহোক, আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা দাদা কর্তৃক শৈশবের স্মৃতি উদ্যোগে আমিও আজ একটু অন্য রকম একটা স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিবো। আসলে শৈশব স্মৃতি মানেই অন্য রকম কিছু অনুভূতি, মাঝে মাঝে সেগুলো স্মরণ করে নিজেই একা একা হাসি এবং সময়গুলোকে আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করি। কারন সেই দিনগুলো এবং স্মৃতিগুলো সত্যি বেশ আনন্দের ছিলো। হয়তো জীবনের বাকি সময়টাও আমরা সেগুলোকে স্মরণ করে কাটিয়ে দিবো, কিন্তু এটা সত্য যে সেই রকম সময় আর ফিরে আসবে না কিংবা পাবো না। এই জন্যই মানুষ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত শৈশবের স্মৃতিগুলোকে হৃদয়ের মাঝে আগলে রাখে।

আমি তখন যথাসম্ভব ক্লাস থ্রিতে পড়ি, আব্বার সাথে প্রথমবার বাজারে যাচ্ছি। যদিও সব সময় আমার বড় ভাই আব্বার সাথে বাহিরে যেতেন, যে কোন কিছু কেনাকাটায় কিংবা বেড়াতে গেলেও। এছাড়াও, কাকারাও মানে আমার চারজন কাকা ছিলেন। বাবার ছোট ভাইদের আমরা কাকা বলি আর বড় ভাইদের জেঠা। যেহেতু আমার বাবা সবার বড় ছিলেন তাই আমার কোন জেঠা ছিলো না। যেটা বলতেছিলাম কাকারাও যদি কোথায় যেতো তাহলে বড় ভাইকে সাথে নিয়ে যেতো। এটা অন্য রকম একটা অন্যায় ছিলো আমার সাথে, আমি বিষয়টি খুব একটা সহ্য করতে পারতাম না। ছোট বলে আমাকে সবাই অবহেলা করবে সেটা আমি একদমই মেনে নিতে পারতাম না। তো যাইহোক, সেদিন কিভাবে জানি বাবা রাজি হয়ে গেলেন আমাকে তার সাথে বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

ai-generated-8189060_1280.jpg

যদিও তখনকার সব কিছু তেমন একটা স্মরণে নেই তবে এটা স্মরণে আছে যে, তখন আলুর কেজি ছিলো তিন টাকা, আর লাল আটার কেজি ছিলো সাত টাকা। তখন অবশ্য এখনকার মতো এতো চকচকে সাদা আটা ছিলো না, সেগুলো ছিলো গমের লাল আটা, অবশ্য বাড়িতে এনে আবার ভূষি চেলে নিতে হতো, কিন্তু খেতে ভীষণ স্বাদের ছিলো। তো বাবা প্রথমে সবজির বাজারে ঢুকলেন এবং একটা একটা করে মানে একেক পদের সবজি কেনা শুরু করলেন। কিন্তু মজার বিষয় ছিলো দোকানদার সবজির দাম রেখে যে ভাংতি টাকা ফেরত দিতো সেটা বাবা নিজে না নিয়ে আমাকে নিতে বলতেন। আমিতো ভীষণ খুশি এবং মনে মনে দারুণ মিষ্টি লাড্ডু ফুটতে শুরু করেছে। সবজি শেষ করে বাবা পান সুপারি কিনলেন এবং তারপর মাছের বাজারে ঢুকলেন। আমিতো ভদ্র ছেলের মতো খুশি খুশি বাবার পিছু পিছু যাচ্ছি।

মনে মনে একটা হিসেব কষতে শুরু করেছি কত টাকা হতে পারে আমার পকেটে, অবশ্য বেশ কিছু পয়সাও ছিলো তার সাথে। কারণ তখন জিনিষ পত্রের দাম খুবই কম ছিলো এবং পয়সার বেশ মূল্য ছিলো। আমার মনে আছে বাড়িতে একটা কৌটা ছিলো, যেখানে বাবা দশ পয়সার কয়েনগুলো রাখতেন এবং বাড়িতে কোন ভিক্ষুক আসলে সেখান হতে একটা কয়েন দিতেন, ভিক্ষুক বেশ খুশি হয়ে যেতো। আর এখন দশ টাকা দিলেও ভিক্ষুক এতোটা খুশি হন না। যাইহোক, আমি খুশিতে গদগদ এবং আন্দাজে হিসেব কষতে শুরু করে দিয়েছি। বাবা তারপর বাজার হতে বের হয়ে বাহিরে গুড়ের দোকানের সামনে আসলেন এবং আমাকে বললেন বাবা টাকাগুলো বের করে গুনে দেখোতো কত আছে? এটা শুনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হলো। তারপর বাবা বললেন দুই টাকা রেখে বাকিগুলো ফেরত দাও।

ব্যস টাকাগুলো বাবাকে দিয়ে আমি একদম চুপসে গেলাম, সম্ভবত সাড়ে এগারো টাকার মতো হয়েছিলো যদিও সঠিকভাবে মনে নেই টাকার হিসেবটা। আমি বাড়িতে এসে আম্মুর সাথে শেয়ার করলাম প্রথমে, আম্মুতো হাসতে হাসতে শেষ। তারপর আমাকে শান্তনা দিলেন বাবা দুইটাকা দিয়েছে সেটাও বা কম কিসে। তুমি কি টাকার জন্য বাবার সাথে গিয়েছো? এসব বলে আমাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেন আর বড় ভাইতো শুনে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো, তারপর বললো বাবা সবদিনই বড় ভাইয়ের সাথে এই রকম করেন। বিষয়টি সত্যি আমাকে অনেক দিন চুপসে রেখেছিলো, আমি টাকাগুলোর শোক খুব সহজেই বুঝলে পারছিলাম না। এখন অবশ্য মনে হলে নিজে নিজে একাই হেসে দেই।

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Sort:  
 11 months ago 

আসলে আমাদের এখানে কিছুক্ষণ আগেও বেশি জোরে জোরে বৃষ্টি হলো। তবে এটা ভালো যে আমাদের এখানে কখনোই অমন পরিস্থিতি শিকার হতে হয় না। যাই হোক আপনার ছোটবেলার স্মৃতিটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। যখন প্রথমবার পড়লাম যে আপনার বাবা খুচরা টাকাগুলো আপনার হাতে দিচ্ছিল। তখন ভাবলাম হয়তো বা সেদিন আপনার মেলাগুলো টাকাই হয়েছিল। কিন্তু এই একই কথা যখন আপনি দুই তিনবার রিপিট করলেন তখনই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম যে শেষে কিছু হতে চলেছে। তারপর শেষে যখন পড়লাম দুই টাকা রেখে বাকি টাকা গুলো আপনাকে দিয়ে দিতে হলো তখন সত্যি নিজের অজান্তে বেশ হেঁসে উঠেছিলাম।হা হা হা যাইহোক তখন হয়তোবা এটা আপনার কাছে খুবই দুঃখের বিষয় ছিল কিন্তু এখন এই কথাগুলো ভাবলেও বেশ আনন্দ কাজ করে। যাইহোক পোস্টটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাই আপনাকে সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

হ্যা, এটা একদম সত্য বলেছেন এই কথাগুলো মনে হলে এখনো আমার হাসি পায়। তিক্ত হলেও এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিলো আমার জন্য। ধন্যবাদ

 11 months ago 

বাইরে খুব কটকটে রোদ আজ।আপনার ছেলেবেলার গল্প পড়ে বেশ হাসি পেলো।টাকা পেয়ে আসলে মনে মনে আমরা কতো কি স্বপ্ন দেখি। আবার না পেলে চুপসে যাই।কিন্তু সবকিছুর দাম এতো কম ছিল অবাক লাগে। এখন এই জিনিসপত্রের দাম শুনলে অবাক হওয়ার ই কথা।সুন্দর এই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

আসলেই আপু, অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে অনেক বেশী অবাক হয়ে যাই, বিশেষ করে জিনিষপত্রের দাম শুনলে। আমি চার টাকা দিয়ে এক ভাগা চিংড়ি কিনতাম যা দিয়ে দুই পদের তরকারি রান্না হয়ে যেতো খুব সহজেই।

 11 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া,আগে তো জিনিসপত্রের দাম কম ছিল।তাই অল্প টাকায় অনেক কিছুই হয়ে যেত।আর ভিক্ষুকরাও অল্প টাকায় খুশি থাকতো।এখন সময়ের সাথে টাকার মান কমে যাওয়ার জন্য ভিক্ষুকরা ৫/১০ টাকা নিয়েও খুশি হন না। তাও তো আপনার আব্বু দুই টাকা দিয়েছিল।সেই সময়ে দুই টাকার মান ছিল।আর আপনার আম্মু তো ঠিকই বলছেন শুধু টাকার জন্য বাবার সাথে বাজারে গিয়েছিলেন নাকি আপনি।ভালো লেগেছে আপনার শৈশবের স্মৃতিমূলক গল্পটি পড়ে ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

হা হা ভাই বিষয়টি কিন্তু আসলেই হাস‍্যকর ছিল। কিন্তু তখন ব‍্যাপার টা আপনাকে বেশ অনেক কষ্ট দিয়েছিল। আপনার ছোটবেলার এই ঘটনা টা শুনে আমার বেশ ভালো লাগল। এবং তখনকার বাজার অবস্থা সম্পর্কে বেশ অনেক কিছু জানতেও পারলাম। তবে আমার বেশি খারাপ লেগেছে আপনার পোস্টের শুরুতে আপনার ঐ বন্ধুর ব‍্যাপারটা শুনে। বেচারার বাইকটা পানির মধ্যে কী একটা অবস্থায় যে ছিল।।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আগে আম্মার জন্য জর্দ্দার কৌটা কিনতাম দুই টাকা দিয়ে আর সেটা এখন পচিঁশ টাকা হয়ে গেছে। টাকা অল্প হলেও সেটার ভেল্যু অনেক ছিল। আমি ভাবছি আপনি একটু বুদ্ধি করে টাকাটা ভুলভাল গণে দিয়ে দিতেন। দুই টাকার জায়গায় বেশি পেতেন 😂

 11 months ago 

গত দুদিন আগে আমিও ঢাকা গিয়েছিলাম ভাই, নিউমার্কেট যাবার উদ্দ্যেশে।শাহবাগে একটু কাজের জন্য নামি এবং একটু দেরি হওয়ায় আর যাওয়া হয়নি।যাওয়া হলে কি না বিপদেই পরতাম।যাইহোক আপনার শৈশবের বাজার স্মৃতি- অন্য রকম একটা মজার স্মৃতির ঘটনাটি পড়ে বেশ মজা পেলাম ভাই।আসলে শৈশবে বাবা বা বড়দের থেকে টাকা পেলে খুবই ভালো লাগতো।কিন্তু নিয়ে গেলে তো মন একেবারেই খারাপ হয়ে যেত।অবশ্য সে সময় দুই টাকা দিয়েও অনেক কিছু পাওয়া যেত।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ,এত সুন্দর করে শৈশবের বাজার স্মৃতির মজার অনুভুতিটুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

গত দুদিন আগের বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। আমার তো মনে হচ্ছে আপনার বন্ধুর ঘটনাটি তেমনি একটড ঘটনা। শুধু নিউজ হয়নি এই আর কি। তবে আপনার শৈশবকালের স্মৃতি গুলো পড়ে কিছুটা সময় কিটকিট করে হাসলাম। সত্য বলতে আগের দিনের দ্রব্যমূল্যের দাম এত কম ছিল যে অল্প টাকায় অনেক বাজার করা যেত। আর এরকম দু চার টাকা পেলে তো খুশিতে নাচাটা কোন ব্যাপার না।

 11 months ago 

বাহ্! শৈশবের দারুণ একটি স্মৃতি শেয়ার করেছেন তো ভাই। আমি তো আপনার পোস্ট পড়ে হাসতে হাসতে শেষ। সাড়ে এগারো টাকা আপনার পকেটে ছিলো এবং মনে মনে না জানি কতো জল্পনা কল্পনা করেছিলেন। টাকা গুলো দিয়ে এটা সেটা করবেন। কিন্তু অবশেষে ২ টাকা পেলেন 😂। তবে আন্টি কিন্তু খারাপ বলেনি,২ টাকা কিন্তু কম ছিলো না। যাইহোক এতো চমৎকার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

পানির নিচ থেকে মোটরসাইকেলটি খুঁজে পাচ্ছিল না জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো। এরকম পরিস্থিতি ভাবতেই অবাক লাগছে ভাইয়া। যাই হোক শেষমেষ তার বাইকটি পেয়েছেন জেনে একটু ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার ছোটবেলায় বাজারে যাওয়ার স্মৃতি জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে অনেক সময় বড়রা সবকিছুতে প্রাধান্য পায়। আর আপনি সেদিন প্রথম বাজারে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো। শেষ পর্যন্ত দুই টাকা পেয়েছিলেন এটাই বা কম কিসের। সেই সময় দুই টাকা দিয়ে অনেক কিছু কেনা যেত। 😍😍

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59834.01
ETH 2665.66
USDT 1.00
SBD 2.46