আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ হিসেবে গরমিল ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আশা করছি সবাই ভালো আছেন, হয়তো চারপাশের পরিস্থিতি ভালো নেই কিন্তু তবুও সেটাকে মেনে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারন পরিস্থিতি যেভাবে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাতে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা নিজে না করতে পারলে হয়তো অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। না আমি মোটেও আপনাদের ভয় দেখাচ্ছি না বরং সতর্ক করার চেষ্টা করছি। কারন আপনার মতো একই পরিস্থিতিতে আমিও ভালো থাকার প্রচেষ্টায় নিজেকে গতিশীল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানিনা কতটা সফল কিংবা ব্যর্থ হবো কিন্তু দিন শেষে নিজেকে একটা শান্তনাতো দিতে পারবো, আমি চেষ্টা করেছি। বলুন এটাই বা কম কিসে?

আবোল তাবোল জীবনের গল্প নিয়ে আজও কিছু অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। যদিও খুব বেশী সময় করে উঠতে পারি না, জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে কিছু লেখার। কারন আজকাল প্রায় ৫ ঘন্টা বাসে বসে কাটাতে হয় আমাকে। যদিও মোটে ১ ঘন্টার পথটা কিন্তু বাস্তবতা আমাদের ভিন্নভাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে চলতে শেখাচ্ছে আর আমরা বাধ্যগত ছেলের মতো সেটাতে সায় দিয়ে নিশ্চুপ থাকার চেষ্টা করছি। কারন গণতান্ত্রিক দেশ হলেও গণতন্ত্র খুঁজে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। সে যাইহোক, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা যাবে না, এটা বড় অন্যায়, না শুধু বড় অন্যায় না বরং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, তাই ভুলেও এটা করা যাবে না, তবে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছু অনুভূতি শেয়ার করা যাবে আর আমি আবোল তাবোল কথা বলে সর্বদা সেটাই চেষ্টা করি।

ডিম নিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কিছু কথা বলেছি, হয়তো তাতে আমাদের কোন পরিবর্তন হয় নাই বা হবেও না কিন্তু আমিও আমরা কাজটা করে যাবো আমার মতো করে, এতেই আমার শান্তি মিলে, ভেতরের কথাগুলোকে বাহিরে প্রকাশ করতে পারছি সেটা কম কিসে? কিন্তু বিষয়টি কি শুধুমাত্র ডিমের মাঝে সীমাবদ্ধ রয়েছে? না সব কিছুতেই ডিমের ছোঁয়া লেগেছে। আসলে আমরা ছোটবেলায় সহপাঠীদের কোন সমস্যা কিংবা রোগ হলে অনেকেই ছোঁয়াছে রোগ বলে সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। তারপর অন্যদেরকে একই কথা বলে ভয় দেখাতাম যাতে সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। দামের ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে সেই ছোঁয়াছে রোগটা আবার কার্যকর হচ্ছে, তাই একটা নির্দিষ্ট জিনিষের দাম বাড়ার সাথে সাথে কেমন জানি ছোঁয়াছে রোগের মতো বাকি সকল পন্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু আশ্চার্যজনকভাবে সত্য যে, দাম করার সময় এই ছোঁয়াছে রোগটি তার কার্যক্ষমতা কিভাবে যেন হারিয়ে ফেলে, সেটা বোধগম্য না।

poverty-g73fe605c2_1920.jpg

সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে, ১২.৫ নাকি ১৩ কেজির সিলিন্ডার ১৩৫০/- টাকা নিলো, বাড়ীতে আমরা মাত্র দুইজন মানুষ, খুব বেশী রান্না-বান্নাও হয় না। তাও আবার ছুটির দিনে বাড়ীতে লাড়কির চুলায় রান্না করা হয়। তবুও সিলিন্ডার মানে গ্যাসের ডিব্বা ১৫ দিন না যেতে শেষ! বউতো একচোট জারি দিলেন সিলিন্ডারের স্থানীয় ডিলারকে। বেচারা কাচুমাচু হয়ে বললেন আপা এটাতো কোম্পানী দেয়, আমরা শুধুমাত্র সেগুলো এনে আপনাদের নিকট পৌঁছাই, এখানে আমাদের কোন হাত নেই, কোন কারসারি করার সুযোগ নেই। বউতো হিসেব করে মাথায় হাত দিয়েছে মাসে যদি দুটো সিডিন্ডার লাগে, তাহলেতো দেউলিয়া হয়ে যাবো। বুঝেন এবার আমার অবস্থা কি রকম? উপায় না দেখে আরো পাঁচ হাজার টাকা খরচা করে ছোট আরো একটা রুম তৈরী করে সেখানে লাড়কি দিয়ে রান্না করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

না এটা মোটেও ইচ্ছায় না বরং আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনিচ্ছায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই করেছি। কারন মোটা অংকের টাকার ঋণের চাপ রয়েছে মাথায়, যার কারনে বাড়তি খরচ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করতে হচ্ছে। এটাতো আমার বর্তমান অবস্থা কিন্তু আমার থেকে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কথা একটু চিন্তা করুন, তারা কতটা চাপের মুখে আছে এবং থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আসলে ছোট বেলায় আরো একটা কথা শুনিছিলাম, বিপদ অনেকটা তজবির দানার মতো, তজবির সুতা ছিড়ে গেলে যেমন একটা পর একটা ক্রমাগতভাবে পড়তে থাকে বিপদও ঠিক তেমন। একবার আসা শুরু করলে একটার পর একটা আসতে থাকে। হ্যা, এখানে হয়তো দেশের রাজনীতির একটা প্রভাব আছে কিন্তু সে বিষয়ে তো কথা বলার কোন সুযোগ নেই।

desperate-gb51bb5dc4_1920.jpg

অগ্যতা নিজের ভালোর চিন্তা নিজেকেই করতে হচ্ছে এবং হবে। হয়তো আমার মতো অন্যরাও নানাভাবে হিসেব কষতে শুরু করেছে, মাসিক বাজেট কাটছাট করে কিছুটা হলেও খরচ নিয়ন্ত্রনের মাঝে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানেও একটা ভয় রয়েগেছে, সেটা কতদিন ধরে রাখতে পারবে সে বিষয়ে। সেদিন চিংড়ি মাছ কেনার জন্য বাজারে গিয়েছিলাম । পুঁই শাক রান্না করা হবে, বাড়ীর বাগানের পুঁই শাক, তাই চিন্তা করলাম চিংড়ি দিয়ে একটু পাতলা ঝোল করে রান্না করা হলে বেশ ভালই লাগবে খেতে, যদিও আমি ঝোল খুবই কম খাই তবুও বাগানের পুঁইশাক বলে কথা। কিন্তু বিশ্বেস করে বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি, কারন একদম ছোট ছোট চিংড়ি যেগুলোকে আমরা বলি গুড়া চিংড়ি সেগুলোর কেজি চাইলো ৬০০ টাকা কেজি, দাম শুনেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, পরে বহু কষ্টে চোখ দুটোকে আবার টেনে জায়গা মতো নিয়ে আসলাম তারপর চিংড়ি কেনার স্বপ্ন বাদ দিয়ে খালি হাতে বাড়ীতে ফিরে আসলাম।

এই সময়ে পকেটের কথা চিন্তা করে শুধু চিংড়ি মাছ না হয়তো আরো অনেক স্বাদই অপূর্ণ রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বা চেষ্টা করতে হবে। শান্তনা হয়তো এখানে একটাই থাকবে, ভবিষ্যতে যদি একটু পরিবর্তন হয়, পরিস্থিতি যদি একটু উন্নত হয়, তাহলে হয়তো আমরা পুনরায় স্বাদের পূর্ণতা দিতে সক্ষম হবো। কিন্তু সেই ভবিষ্যতের পথ কবে শেষ হবে, সেটা হয়তো আমরা কেউ বলতে পারছি না। কিন্তু তবুও ঐ যে একটা কথা আছে না, দুঃখের সাগরে আশাই একমাত্র ভেলা, যদি তাতে প্রাণটা রক্ষা পায়। ভালো থাকবেন সবাই, বস্তবতার লড়াইয়ে টিকে থেকে।

Image Taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  
 2 years ago 

১৩৫০ টাকা করে গ্যাস সিলিন্ডার বহুদিন ধরেই কিনছি। কিন্তু করোনার সময় ৮০০ টাকা করে কিনতাম। তারপর তেল ও চাল কি আর বলবো। তবে সেদিন বেশ কিছু চিংড়ি কিনেছিলাম ৩০০ টাকা দিয়ে । দারুন ছিল চিংড়ি গুলো। এবার বর্ষা কম হওয়ায় ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কি আর করার পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

কারন গণতান্ত্রিক দেশ হলেও গণতন্ত্র খুঁজে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়।

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমরা নামে মাত্র গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। এখানে গণতন্ত্র খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি। একদিকে গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ছে অন্যদিকে দ্রব্যমূলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে শখের খাবারগুলো কেনার মত পয়সা পকেটে থাকে না সেখানে মাসে দুইবার গ্যাস কেন সত্যি কষ্টের ব্যাপার। জানিনা এভাবে আমাদেরকে আর কতদিন চলতে হবে। আমাদের মত মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন দিনে দিনে আরও বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক ভাইয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো এবং নিজের অনুভূতিগুলো তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️

 2 years ago 

জি ভাইয়া আমাদের সকলের উচিত পারিবারিক বিভিন্ন খরচ খুবই হিসেব করে করা। গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের গ্রামাঞ্চলেও অনেকেই একটু নড়েচড়ে বসেছে এবং রান্না করার ক্ষেত্রেও খড়কুটো এবং অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। খারাপ লাগলো ভাইয়া গুড়ো চিংড়ির মূল্য ৬০০ টাকা কেজি অথচ আমরা মাছ চাষ করি কিন্তু পুকুর থেকে মাছ বিক্রয়ের সময় আমরা মাছের প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হই। কি আর করার ভাইয়া পুঁই শাক ভালোভাবে চচ্চড়ি করেন দেখবেন খেতে অনেক সুস্বাদু লাগবে।

 2 years ago 

কী একটা সময় এসে গেছে না ভাই যে নিজের মৌলিক চাহিদার সঙ্গেও কম্প্রোমাইস করতে হচ্ছে। তবুও এই খারাপ সময়েও ভালো থাকতে হবে যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। আপনার এই কথাটা আমার দারুণ লেগেছে।

 2 years ago 

আমাদের জীবনটা কেন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে ভাই। একদম বাস্তবতার গুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। গতকাল আমি চালের বস্তা কিনেছি প্রায় ৩৬০০ টাকা দিয়ে, যে বস্তা গত মাসে হছিল ২৬০০ টাকা। আবার গতকাল রাতে শুনলাম প্রতি লিটার তেলের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই একটি পণ্যের দাম বাড়লে ছোঁয়াচে রোগের মতো অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তাছাড়া দিনশেষে কিছু বলা মানে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা। এটাই হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
default.jpg

 2 years ago 

জি ভাই ঠিক বলেছেন বর্তমান সময়টা ছোঁয়াছে এর মতো হয়ে গেছে ৷ দ্রব্যমূল্যের দাম নির্ধারিত করতে না করতে হু হু করে সবকিছুর দাম বেরে দিচ্ছে দোকান দাররা এই হলো বর্তমান অবস্থা ৷বলতে ছোঁয়াছে রোগের চেয়েও ভয়ংকর ৷শুধু গ্যাস সিলিন্ডার নয় সবকিছুর দাম আজ দিনে দিনে বাড়তেছে ৷
যদিও চাকরি জীবিদের জন্য কোনো সমস্যা নাই ৷কিন্তু যারা দিন এনে দিন খায় তাদের পরিস্থিতি টা একটা বার চিন্তা করলে সত্যি অনেক খারাপ লাগে ৷

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাই, বর্তমানে দেশে দ্রব্যমূলের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে সাধারণ মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা। বলা কওয়ার কিছু নেই। সত্যি সত্যি এদেশে সকল রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু কেউ গণতন্ত্রের চর্চা করে না। এটা শুধু রাজনৈতিক মঞ্চের বক্তব্য। বর্তমান বাজারে পরিস্থিতি এবং সমশাহিক দ্রব্যমূলের উদ্যোগ গতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59325.16
ETH 2609.11
USDT 1.00
SBD 2.41