লেইস ফিতা লেইস- কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সব
শুভ সন্ধ্যা বন্ধুরা,
ছোট বেলার অনেক স্মৃতির মাঝে এই অন্যতম একটি বলা যায় নিঃসন্দেহে। কারন আমাদের সময় সামাজিক রীতিগুলো কিছুটা ভিন্ন ছিলো কিন্তু সেগুলোর মাঝে মাঝে মানুষের আন্তরিকতা ছিলো অনেক। সামাজিক সংস্কৃতি কিংরা রীতি নীতির ব্যাপারে মানুষের মাঝে আগ্রহের কোন কমতি ছিলো না তখন। যে কোন ব্যাপারে সবাই সবাইকে সম্মান করতো এবং যে কোন মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতো। যদিও তখন সমাজে শিক্ষিত মানুষের হার ছিলো অনেক কম।
হ্যা, এটা সত্য শিক্ষিত মানুষের হার খুবই কম ছিলো তখন , কিন্তু তখন শিক্ষার একটা মূল্য ছিলো। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিদের সবাই যথেষ্ট মূল্যায়ন করতো। আমার এখনো মনে আছে আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়তাম, তখন ক্লাশ ফোর এর একজন ছাত্রকে প্রাইভেট পড়াতাম, যদিও সেটা হয়েছিলো আমার বড় ভাইয়ের কঠোর অনুরোধ এর কারনে, কারন তখন কিছু রীতি প্রচলিত ছিলো যেগুলো আমি একদম পছন্দ করতাম না। যেমন শিক্ষকদের প্রতিদিন নাস্তা খাওয়াতো এবং বিশেষ দিনগুলোকে ভালো রান্না হলে রাতের খাবার খেয়ে আসতে হতো আর এগুলো আমি মোটেও পছন্দ করতাম না।
কিন্তু সেই সময় মানুষ যতই গরীব থাকুক এগুলোকে দারুনভাবে মেনে চলতো এবং প্রাইভেট শিক্ষকদের যথেষ্ট সম্মান দেখাতো। কিন্তু দুঃখের কথা হলো সমাজ উন্নত হয়েছে, সমাজের মানুষগুলো শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু পাল্টে গেলে প্রচলিত সেই রীতি ও নীতিগুলো, হারিয়ে গেছে সমাজ হতে মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ। কারো প্রতি কারো আন্তরিকতা কিংবা সমবেদনা নেই, বরং বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো নিজের স্বার্থ।
যাইহোক, এগুলো বলা আমার লেখার উদ্দেশ্য না, কথা প্রসঙ্গে অন্য দিকে চলে গিয়েছিলাম। অতীতের সংস্কৃতির একটি বিষয় নিয়ে আজ কিছু কথা ভাগ করে নিতে চাচ্ছি। আর সেই বিষয়টি হলো লেইস ফিতা। আমি জানি না এই শব্দটির সাথে আপনারা পরিচিত আছেন কিনা? তবে আমি পরিচিত আছি কারন আমার দুই দুইটি দুষ্ট বড় বোন আছে। যারা প্রায় সময় লেইস ফিতা লেইস নামে হাঁক ছারা ব্যক্তিদের ডেকে বাড়ীতে নিয়ে আসতো।
বর্তমান সময়ের মতো তখন এতো বেশী ব্যান্ড ছিলো না, নামি দামি কসমেটিকস খুব কম সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতে পারতো। বরং সমাজের অধিকাংশ মানুষ তখন এই ধরনের হকার লেইস ফিতা লেইস এদের কাছ হতে আলতা, স্নু, পাউডার, লেইস, ফিতা, চুড়ি, নেইল পালিশ ও অন্যান্য কসমেটিকস ক্রয় করতো। তখন এক বাড়ীতে এই সকল হকারদের উপস্থিত হওয়ার সাথে সাতে আসে পাশের সকল বাড়ীর মেয়েরা এসে হাজির হতো।
একজন কোন একটা জিনিষ ক্রয় করলে বাকী সবাই মিলে সেটা ব্যবহার করতো, বর্তমান সময়ের মতো মানুষের মাঝে এতো বেশী অহংকার ছিলো না তখন। আমি দেখেছি আমার বোনের লিপস্টিক, নেইল পালিশ এবং ফিতা প্রায় সময় পাশের বাড়ীর মেয়েরা এসে নিয়ে যেত এবং তা ব্যবহার করতো। আমি কখনো আম্মুকে দেখি নাই এসব বিষয়ে নিষেধ করতে।
তবে কালের বিবর্তনে এই সকল লেইস ফিতা লেইস ব্যক্তিদের যেমন দেখা যায় না, ঠিক তেমনি মানুষের আন্তরিকতাও দেখা যায় না। বরং আধুনিকতার নামে, ফ্যাশনের নামে মানুষ কত নামি দামি ব্যান্ড ব্যবহার করে এবং নিজেকে অহংকারের উচ্চসীমায় নিয়ে যায়। সত্যি অতীতের সামাজিক রীতি নীতিগুলোর সাথে শুধু এই সকল হকার না, বরং সকল কিছুই আজ বিলীন হয়ে গেছে সভ্যতা নামক আগ্রাসি চাকচিক্যের কাছে।
ফটোগুলো আমি নিজে ক্যাপচার করেছি আমার এমআই স্মার্টফোন দ্বারা।
ধন্যবাদ সবাইকে আমার অনুভূতিগুলো বুঝতে পারার জন্য।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
ভাইয়া যখন ছোট ছিলাম তখন আমি নিজেই এই রকম ফেরিওয়ালা গুলোকে আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখতাম এবং তাদের কাছ থেকে আমি অনেক জিনিস কিনেছি৷ ধন্যবাদ আপনার অতীত সম্পর্কে লেখার জন্য।
অতিত নিয়ে সুন্দর একটি কথা বলেছেন। আসলে দিন দিন সমাজের উন্নতির ফলে এইসব জিনিসের কদরও কমে গেছে।
গ্রামগঞ্জের এ এক দৃশ্য বটে।ধন্যবাদ এমন একটি বিষয় আলোকপাত করার জন্য।
সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। দিলেন তো অতীত মনে করিয়ে। সময় গুলো বড্ড রঙিন ছিল। এখন তো সব ফিকে হয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
Steem Sri Lanka Discord Channel
✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵
একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। দারুন।