আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [শৈশব]

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

শুভ দুপুর বন্ধুরা,

আজ আবোল-তাবোল জীবনের গল্পে শৈশব স্মৃতি নিয়ে কিছু অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় এবং ভাবনাহীন সময়গুলো ছিলো শৈশবের এই সময়টায়। কারন নিজের ইচ্ছে মতো সময়কে উপভোগ করা কিংবা দুষ্টুমিতে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দুরন্তপনা, সব সবকিছুই ছিলো এই সময়টায়। তাই জীবনের শেষ সময় অব্দি স্মৃতিতে ভেসে বেড়ায় শৈশবের এই দিনগুলোর অনুভূতি।

আমাদের সময়টা পর্যন্ত আমরা সময়টি আনন্দময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান সময়ের শিশুরা সত্যি দারুনভাবে মিস করছে এই রকম বাধহীন উচ্ছাসে সময়গুলোকে উপভোগ করার বিষয়টি। কি করি নাই আমরা? চঞ্চলতায় কত ধরনের খেলাধূলা, একে অন্যের সাথে মারামারি, দল পাকানো, দুষ্টুমিতে সেরা হওয়া, অন্যের গাছে ঢিল ছোড়া, পুকুরের জলে সাঁতার কাটা, বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা, সহপাঠীদের জোর করে বৃষ্টিতে ভেজানো, অন্যের টিফিন জোর করে খেয়ে ফেলা। আহা! কতনা রঙীন ছিলো সেই দিনগুলো।

IMG_20210930_171514.jpg

তারপরও সকলের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিষয়গুলো দেখা। আব্বুকে শান্ত রাখার জন্য মার অভিনয় সুলভ শাসন করা। শিক্ষকদের বেতের ভয় দেখানো। যদিও কোন কিছুরই অতোটা প্রভাব পড়তো না আমাদের চঞ্চলতায়। আমাদের স্কুলে একটি শিউলী ফুলের গাছ ছিলো, আর সেটা নিয়ে আমাদের মাঝে প্রতিযোগিতা হতো কে বেশী শিউলী ফুল কুড়াতে পারতো সকালে। বইয়ের প্রতিটি পাতা রঙীন করার চেষ্টা করতাম শিউলী ফুল দিয়ে। কতো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম, শিউলী ফুল দিয়ে তার হিসেব নেই, হি হি হি হি।

আমার স্কুলটি ছিলো সংরক্ষিত এলাকার ভিতর, তথাপিও স্কুলে যাওয়ার পথটি ছিলো দুই ধানক্ষেত্রের মাঝ দিয়ে। একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ধানক্ষেতের পানিতে একটি শিং মাছ দেখে, বই সেখানেই ফেলে শিং মাছ ধরে সোজা বাড়ীতে চলে আসি। তারপর আম্মুর কি যে বকা। বকা খেয়ে আবার দৌড়ে সেখানে আসা এবং বইগুলো নিয়ে পুনরায় স্কুলে প্রবেশ করা। এসব হয়তো অনেকটা গল্পের মতো লাগবে, কিন্তু পুরোটাই বাস্তব এবং জ্বলন্ত সত্য।

IMG_20210930_171521.jpgIMG_20210930_171524.jpg
আমার মাঝে অবশ্য লিডার হওয়ার একটা ভাব ছিলো, দুষ্টমির সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্বটা আমি দেয়ার চেষ্টা করতাম। শিউলী ফুল যদি অন্যরা কেউ কোন মেয়ে দিয়েছে, আর এটা যদি আমি জানতে পারতাম, তাহলে সে ছেলের খবর ছিলো। একবার স্কুলের এক গাছের রক্তজবা ফুল পাড়া নিয়ে মারামারি বেধে যায়, এক ছেলেকে ঘুসি মেরে তার নাক ফাটিয়ে দেই এবং আমার হাতের আঙ্গুলগুলোও ফুলে যায়। পুরো একটি ক্লাসের সময় স্যার মুরগি বানিয়ে রেখেছিলেন আমাকে, এই রকম এক-আধটু শাস্তি তখন ব্যাপার ছিলো না, হি হি হি।

তবে সবচেয়ে বেশী মজার ছিলো, লাটিম খেলা, গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁ এবং বরফ পানি, এইসব নিয়ে। তখন অবশ্য আমরা ছেলে-মেয়েরা একসাথে খেলা করতাম, এখন অবশ্য এটা হয় না, নানা কারনে। তবে খেলার সময় পুরো এলাকায় হৈ চৈ শুরু হয়ে যেতো। আর যাইহোক পরাজয় আমি কখনো স্বীকার করে নিতাম না। অন্তত এই একটা বিষয়ে নিজের অবস্থান সব সময় পাকা থাকতো, শেষে না পেরে অনেকেই বাড়ীতে গিয়ে নালিস দিতো। আমি অবশ্য এইসব একদমই পাত্তা দিতাম না, যা হবার হবে বিজয়ী আমি এটাই চুড়ান্ত, হে হে হে হে।

IMG_20210930_171526.jpgIMG_20210930_171530.jpg
হ্যা, যত যাইহোক আমাদের মাঝে একটা বন্ধন ছিলো, বন্ধুত্বের টান ছিলো। দিনশেষে সবাই একে অন্যের সাথে মিশে যেতাম এবং মিলেমিশে সবকিছু উপভোগ করতাম। পেছনের কথাগুলো ভুলে যেতাম, মা-বাবাও এসব নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করতেন না। কিন্তু এখন দৃশ্যগুলো সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে, আমি দেখেছি এই সব বিষয় নিয়ে অনেক বাবা-মা স্কুলে গিয়ে ঝগড়া করেন। নিজের সন্তানকে উস্কানিমূলক কথা বলেন, মেরে ফাটিয়ে দিবি-একদম ছাড়বি না। অমুকের সাথে কথা বলবি না, ওদের সাথে একদম মিশবি না, ইত্যাদি। বর্তমান প্রজন্মের শৈশবটা অর্ধেক নষ্ট করে দেয় তার বাবা-মা। এ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আরো কিছু কথা শেয়ার করবো, যদি বেঁচে থাকি।

IMG_20210930_171533.jpg

সত্যি আমাদের সময়ের স্মৃতিগুলোর কথা মনে হলে এখনো পেছনে ফিরে যেতে মন চায়, সেই ‍দিনগুলোর চঞ্চলতা এখনো আকর্ষণ করে। যদিও সেই সহপাঠীগুলোর হদিস নেই, কারন সেটা ছিলো সংরক্ষিত এলাকার স্কুল। সরকারী চাকুরীজীবীদের সন্তানরা সেখানে পড়তো, যার কারনে কেউ খুব বেশী দিন থাকতে পারতো না। বাবার চাকুরীর সুবাদে তাদেরও ঘন ঘন স্কুল পরিবর্তন করতে হতো। তখন অবশ্য এখনকার মতো টাকা দিয়ে ট্রান্সফার আটকানোর চেষ্টা বা তদবির কেউ করতো না। যার কারনে প্রাইমারী সেকশনের সেই সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাটা সম্ভব হয় নাই। তবে তাদের স্মৃতিগুলো এখনো ভেসে বেড়ায় হৃদয়ের আকাশে।

W3W Code: https://what3words.com/dining.puppets.coconuts
Device: Device: Redmi 9, Xiaomi

ধন্যবাদ শৈশবের স্মৃতিময় অনুভূতিগুলো পড়ার জন্য, নিজেদের মন্তব্য ভাগ করে নিতে ভুলবেন না কিন্তু।
@hafizullah

break.png
Leader Banner-Final.pngbreak.png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break.png



Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 3 years ago 

আসলেই ভাইয়া শৈশব জীবন হলো মুক্ত জীবন। শৈশবের স্মৃতি মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে কারণ এই জীবন আর কোন দিন পাবো নাহ।প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর অন্য ধরনের অনুভূতি কাজ করতো। এখন আর সেই রকম অনুভূতির দেখা পাই না।আপনি শৈশব নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।

 3 years ago 

হ্যা, এখন পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাই, সেই সুযোগ আর ফিরে আসবে না। ধন্যবাদ

 3 years ago 

আসলেই ভাই এই ব্যাপারটা চমৎকার লেগেছে। পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই

 3 years ago 

আসলেই ভাই এই ব্যাপারটা আমি চিন্তা করি। বর্তমান সময়ের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে আমার খুব আফসোস হয়। বিশেষ করে যারা শহরে থাকে। কি চমৎকার শৈশব আমরা কাটিয়েছি। পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

আসলেই ভাই মাঝে মাঝে চিন্তা করি আর ভাবি আমরা কতটা ভাগ্যবান ছিলাম এই ক্ষেত্রে, কতটা সুন্দর কেটেছে আমাদের শৈশব। ধন্যবাদ

 3 years ago 

আমার শৈশব স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল ভাইয়া।সত্যিই সেই দিনগুলো শুধু কল্পনায় ভাসে।আপনার শিং মাছ ধরা ,শিউলি ফুল দিয়ে মেয়ে বন্ধু,অন্যের নাক ফাটিয়ে দেওয়া মজার ব্যাপার।আগে শৈশবে আমাদের অন্যায় না থাকলেও মা বাবা আমাদেরকেই উল্টে মারতেন কিন্তু এখন তার উল্টো।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

এখনো কল্পনায় ভাসে সেই দিনগুলোর স্মৃতি, সত্যি আপু সেগুলো কখনো ভুলার না। আসলেই সময় অনেক পাল্টে গেছে। ধন্যবাদ

 3 years ago 

আপনার শৈশবের ঘটনাগুলো অনেক মধুর ছিল। আমার। আপনার শৈশবের ঘটনা গুলো পড়তে পড়তে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেবেলায় বন্ধুদের সাথে জলে নেমে শাপলা তোলা শাপলা তোলা, শিউলি ফুল দিয়ে মালা গেঁথে গলায় পরা, ইত্যাদি ঘটনাগুলো আর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কত রকম দুষ্টুমিতে মেতে থাকতাম। গ্রামের ছেলেবেলা কাটানোর মজাই আলাদা। শহরের বাচ্চারা তার কিছুই করতে পারে না। আমি খুব মিস করছি সেই শৈশবের দিনগুলো। আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন শৈশব নিয়ে ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

সত্যি বৌদি, সেই দিনগুলো অনেক ভিন্ন ছিলো, মানুষের আবেগ ভালোবাসাও তখন ভিন্ন ছিলো। যার কারনে আমরা ইচ্ছে মতো খেলাধূলা এবং সময় উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখনতো সবাই ঘরের মাঝে বন্দি থাকতে বেশী পছন্দ করেন, বাহিরের আনন্দ তারা বুঝতেই পারেন না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 3 years ago 

এবারের শৈশবের পর্বটি অনেক সুন্দরভাবে লিখেছেন এবং আপনার বাস্তব জীবনের গল্প লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই মন্তব্য ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 3 years ago 

ভাইয়া আমাদের শৈশব জীবনটা কখনো ভোলার নয়। মনে হয় যেন সেদিনের কথা খেলাধুলা, মারামারি, দৌড়াদৌড়ি, ফুল কুড়ানি, মাছ ধরা ধরি, বরই গাছে ডিল ছোড়া,গোল্লা ছুট। আপনার জীবনটা যেমন কেটেছে আমারও ব্যতিক্রম নয়। তাবে আপনার সৃতি গুলো একটু ভিন্ন আপনার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিল। আপনি বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করছেন। আমার এমনটা নয়, আমি গ্রামে বেড়ে ওঠা। ভাইয়া আপনি আপনার শৈশব অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। আপনি আমার চোখে বরাবরই একটু ভিন্ন আপনি খুবই জ্ঞানী এবং গুনি মানুষ। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া

 3 years ago 

হ্যা, সেটা একদম সত্য বলেছেন। সবকিছুই আজ স্মৃতি হয়ে আছে। ধন্যবাদ আপনাকেও।

 3 years ago 

আমাদের মাঝে প্রতিযোগিতা হতো কে বেশী শিউলী ফুল কুড়াতে পারতো সকালে। বইয়ের প্রতিটি পাতা রঙীন করার চেষ্টা করতাম শিউলী ফুল দিয়ে।

এই কাজটি আমিও করতাম ভাইয়া।
আহা, শৈশব মনে পড়ে গেলো।
তা ই যেনো ভালো ছিলো।
কথায় আছেনা অতীত সবসময় সুন্দর। ❤️

 3 years ago 

বাহ! মিলে গেলে, ভালো তো ভালো না, হি হি হি
প্রায় শিশুরাই এই কাজটি করতো তখন। কিন্তু এখন তো শিউলি ফুলই চিনে না অনেক শিশু।

 3 years ago 

ফুলই ভালো করে চিনে না এখনকার গুলো।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনি শৈশবে খুবই দুষ্ট ছিলেন মনে হয়। তবে আপনি আপনার শৈশব জীবনটা দুষ্টুমির মধ্য দিয়েও খুবই উপভোগ করেছেন। আসলে সবার শৈশবের স্মৃতি গুলো প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলার স্কুলে কাটানো হাজারো স্মৃতি গুলো। তবে আমি কিন্তু আপনার মত কাউকে মারিনি ভাইয়া।😄😄😄

 3 years ago 

সত্যি ভাই আপনার ছোটবেলার ঘটনাগুলো খুবই মজাদার। আমি নিজেও ছোটবেলা আপনার উল্লেখিত অনেক কাজই করেছি। তবে বৃষ্টিতে একটু বেশিই ভিজতাম। এবং আমার ছোট বেলার একটি অভ‍্যাস ছিল প্রতিদিন বকুল ফুলের মালা তৈরি করতাম।

 3 years ago 

বৃষ্টিতে ভিতে ফুটবল খেলায় বেশী আনন্দ পেয়েছিলাম। আহ! কি দারুণ ছিলো সেই দিনগুলো। ধন্যবাদ

 3 years ago 

🙂💖💖💖💖

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57034.02
ETH 3084.35
USDT 1.00
SBD 2.41