হ-য-ব-র-ল কাহিনী (দ্বিতীয় পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছেন, আমিও মোটামোটি ভালো আছি। প্রথম পর্বের হ-য-ব-র-ল কাহিনী লেখার পর দ্বিতীয় পর্ব লেখার সুযোগ করে উঠতে পারছিলাম না। আসলে গল্প লেখাটা মোটেও সহজ বিষয় না, সময় দিতে হয়, পর্বগুলো নিয়ে কল্পনা করতে হয় এবং তারপর সেটাকে প্রকাশের অবস্থায় নিয়ে আসতে হয়। যাইহোক আজকে হ-য-ব-র-ল কাহিনীর পরের পর্ব শেয়ার করার ইচ্ছা প্রকাশ করছি।
মিলন বুঝতে পারছেন যে তার প্রিয় বন্ধুরা তার উপর রেগে আছে কিন্তু এখানেতো তার কোন দোষ নেই, সে তো তাদের বিপক্ষে কিছুই করে নাই আবার পুরো বিষয়টি তাদের বুঝাতেও পারছে না। মনে মনে একটা চিন্তা করলো বিষয়টির সম্পর্কে কিছু একটা করা উচিত কিন্তু কাকে বলবেন সেটা বুঝতে পারছেন না। অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলো যে আজকে তার মা’কে বিষয়টি জানাবে। তারপর তার মা’র রুমে গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বললো এবং মিলনের মা মোটামোটি নিশ্চিত হলো যে, এটা অবশ্যই কোন দুষ্টু জ্বীনের কাজ। কারন মানুষের মাঝে যেমন দুষ্টু প্রকৃতির লোক রয়েছে ঠিক তেমনি জ্বীনদের মাঝেও এই রকম দুষ্টু প্রকৃতির জ্বীন রয়েছে। কিন্তু তার মা’র একটাই চিন্তা ছেলের পিছনে কেন দুষ্টু জ্বীন লেগেছে। আবার অন্য দিকে একটু খুশিও কারন এতে করে তার ছেলের দুষ্টুমি যদি একটু হ্রাস পায়। তারপরও ছেলে বলে কথা, মায়ের মন কখনো চিন্তামুক্ত থাকে না। তাই ছেলেকে পরামর্শ দিলেন আজকে বিকেলে মসজিদের হুজুরের কাছে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানাতে এবং তিনি যা যা বলবেন সে অনুযায়ী কাজ করতে।
মিলন ভদ্র ছেলের মতো বিকেলে মসজিদের হুজুরের কাছে গিয়ে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন, তারপর মসজিদের হুজুর কিছু বিষয় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন এটা জ্বীনেরই কাজ। তারপর মিলনকে কিছু বিষয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলেন এবং তাকে দুষ্টুমি ছেড়ে ভালো হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। তারপর জ্বীন হতে মুক্ত হতে হলে কিছু তদবির করতে হবে এবং সে বিষয়ে মিলনকে একটু ধারনা দেয়া হলো, যদি এগুলো ঠিক ঠাক করা হয় তাহলে হয়তো জ্বীন হতে মুক্ত থাকা যাবে। মিলন বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো, কি করবে? জ্বীনকে বিদায় জানাবে নাকি এভাবে কবিতার মাধ্যমে অন্যদের প্রিয় হয়ে থাকবে। রাতে বাড়ীতে গিয়ে বেশ চিন্তায় মগ্ন থাকলেন কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। মাঝ রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো কিন্তু তার চিৎকারে কেউ সারা দিলো না। চোখ মেলে দেখে সে বাড়ীর ছাদে, কিন্তু চারপাশে অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে, কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে। সবাই কিছুটা মানুষ আকৃতির তবে হাত, পা, মাথা, চেহারা কিছুই স্পষ্ট না, মিলনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলো, এগুলো দেখে ভয়ে নিজের প্যান্ট ইতিমধ্যে ভিজিয়ে ফেলেছে, অতিরিক্ত ভয় পেলে অনেকেই এটা করে থাকে।
জ্ঞান ফিরে আসার পর মিলন তাকে নিজের মা’য়ের রুমে দেখতে পেলো। মা তার মুখে পানির ছিটা দিচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে বাবা কি হয়েছে? অতো রাতে ছাদে কি জন্য গিয়েছিলে? মিলন সকলের চেহারার দিকে তাকাচ্ছে, হাত পায়ের দিকে তাকাচ্ছে, না সবইতো ঠিক আছে কিন্তু রাতে যারা আসছিলো তারা কি তাহলে জ্বীন ছিলো? মিলন এটা চিন্তা করতেই আবার জ্ঞান হারালেন। তারপর প্রায় দুদিন মিলন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ডাক্তাররা তার কোন সমস্যাই চিহ্নিত করতে পারে নাই, বরং তাকে শুধুমাত্র স্যালাইন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। দুদিন পর মিলন কিছুটা সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে আসলেন কিন্তু মাথা হতে সেই জ্বীনদের অস্পষ্ট চেহারাটা ভুলতে পারছেন না। একটা অন্য রকম ভয় তার হৃদয়ে ঢুকে গেছে, সে চেষ্টা করছে সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করতে আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো জীবনে কারো সাথে কোনদিন আর বেয়াদবি করবে না। প্রয়োজনে স্কুলের সকল শিক্ষকদের নিকট ক্ষমা চাইবে, একদমই ভালো হয়ে যাবে।
আসলে ভয়কে বলা হয় সবচেয়ে কার্যকর একটা ঔষধ। মানুষকে দুইভাবে পরিবর্তন করা যায়, এক ভয় দেখিয়ে আর দুই হলো সাহস যুগিয়ে, একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা কার্যকর হয়। তবে এটা সত্য যে, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ভয়টা বেশী ক্রিয়াশীল থাকে, ভয়ের কারনে মানুষ অনেক কিছুই করতে বাধ্য হয়। মিলনের মাঝে আরো বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো, সে স্কুলে যায় নিয়মিত, সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করে। শিক্ষকদের কাছে গিয়ে মাথা নত করে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে। তার পরিবর্তন দেখে অনেক শিক্ষকদের মনে কিছুটা সাহস ফিরে এসেছে। মিলন চেষ্টা করছে ক্লাসের পড়াগুলো যথাযথভাবে পড়ার এবং কবিতাগুলোকে নিজের মতো করে সাজিয়ে আরো সুন্দর করার। বেশ দারুণ একটা কবিতার ভাব তার মাঝে চলে আসছে কিন্তু সে নিজে কোন কবিতা লিখতে পারছে না বরং জ্বীনের লেখা কবিতাগুলো এখনো নিজের নামে চালিয়ে যাচ্ছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো মিলন স্কুলের শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর হতে জ্বীন তাকে আর কখনো ভয় দেখায় নাই এবং তাকে ডিস্টার্বও করে নাই, নিয়মিত কবিতা লিখে দিচ্ছে।
এদিকে মিলনের দুই বন্ধু ফন্দি পাকানোর চেষ্টা করছে, মিলনের ভালো হয়ে যাওয়াটাকে মোটেও ভালোভাবে গ্রহন করতে পারছে না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো মিলনের ভালো হওয়াটা ঠেকাতে হবে না হলে তাদের অবস্থাও একই রকম হতে পারে। তারা প্রথমে চিন্তা করলো মিলনের কবিতা খাতাগুলো চুরি করবে, তাহলে তার কবিতার প্রসার আটকানো যাবে। বিষয়টি চেক করার জন্য প্রথমে মিলনের একটা বই চুরি করলো, মিলন সেটা বুঝতে পেরেও চুপ থাকলো কোন প্রতিবাদ করলো না। তারা ভাবলো হয়তো মিলন বিষয়টি বুঝতেই পারে নাই, তাই পরের দিন একই ভাবে তার কবিতার খাতা চুরি করতে গেলো, কিন্তু একি এবার তো রাফি পুরাই ফেঁসে গেলো। মিলনের স্কুল ব্যাগের সাথে রাফির হাত আটকে গেছে একদম সুপার গ্লু লাগালে যেভাবে আটকে যায় ঠিক সেভাবে, যতই চেষ্টা করছে কিন্তু হাত ছাড়াতে পারছে না। এর মাঝে শিক্ষক ক্লাসে চলে আসছেন, মিলন শিক্ষককে বিষয়টি দেখালেন। শিক্ষক বললেন রাফি ফাইজলামি ছেড়ে ব্যাগটি ফেরত দাও এবং তোমার হাত সরিয়ে নাও। কিন্তু রাফি কিছুতেই এটা বুঝাতে পারছে না যে সে ব্যাগটি ধরে রাখে নাই বরং মিলনের ব্যাগ তার হাতটি ধরে রেখেছে।
রাফি যখন চিৎকার করে বললেন আমি ব্যাগ ধরে রাখি নাই বরং মিলনের ব্যাগ আমার হাত ধরে রেখেছে, এই কথা শুনার পর পুরো ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো, কেউ সেটা বিশ্বাস করতে চাইলো না। এবার শিক্ষক উঠে এসে রাফির হাতে বেত্রাঘাত করলেন, একবার দুইবার, তিনবার কিন্তু রাফি ব্যাগ ছাড়ছে না। এরপর রাফি কাঁদতে কাঁদতে বললেন স্যার আমি ব্যাগ ধরে রাখি নাই ব্যাগ আমার হাত ধরে রাখছে। শিক্ষক কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখলেন সত্যিই রাফি ব্যাগ ধরে রেখেছে এই রকম কোন লক্ষণ বুঝা যাচ্ছে না, তাহলে? এবার শিক্ষক চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং রানার দিকে তাকালেন, রানা আরো জোরে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো....... আর বলতে লাগলো স্যার আমার কোন দোষ নেই রাফিই মিলনের খাতা চুরি করতে গিয়েছিলো, আমি কিছু করি নাই । ............... (চলতে থাকবে)
কমিউনিটিতে এটাই আমার প্রথম গল্প লেখা, হয়তো কাহিনী কিংবা বানান সংক্রান্ত অনেক কিছুই ঠিক ঠাক নাও থাকতে পারে, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে এ সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করা হবে।
Image taken from Pixabay
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
![Banner.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmV44ipDFZ9PNUMtyufYoaoMvPW4QZqAZUvWi9TkCh9NWx/Banner.png)
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
![default.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmNwBDPMPvL1yaKWTYF4wxyUmxWiEJgAy1WZWTJyCha5wE/jswit_comment_initial.w320.jpg)
ইশ,,আমার যদি এমন একটা জ্বিন থাকতো,কবিতা লিখে দিতো।তাহলে আমার, পোস্ট করার জন্য ভাবতে হত না🤪🤪।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ
ভাইয়া আপনার লেখা এই গল্পটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। গত পর্ব যেমন ভালো লেগেছিল এবারের পর্বও অনেক ভালো লেগেছে। যারা সৎ তারা সবসময় ভালো কিছু পায়। মিলন তার ভুল বুঝতে পেরে ভালোর পথে ফিরে এসেছে জেনে ভালো লাগলো। তার বন্ধুরা তাদের দুষ্টুমির শাস্তি পেয়েছে। আবারো নতুন কোন গল্প লিখে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করবেন এই কামনাই করছি। দারুন একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন এজন্যই আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। ♥️♥️♥️
আসলেই কি জিনের কাজ এগুলো নাকি অন্য কিছু। একদিকে দিয়ে ভালোই হয়েছে মিলন ভালো হয়ে গিয়েছে। এখন বাকি দুজনের পালা। ব্যাগের ঘটনার পর থেকে তো রাফিরও ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। দেখা যাক কি হয়। খুব রহস্যময় গল্প লিখছেন ভাইয়া। পড়তে বেশ ভালো লাগছে।
ভাই প্রথম গল্প হিসেবে অসাধারণ লিখেছেন এটা আগের পর্বেও বলেছি। মোটামুটি বেশ জমিয়ে তুলেছেন গল্পটা। আসলে আমাদের মুসলিম সমাজে জিন এর কাজ কর্ম নিয়ে নিয়ে এমন অসংখ্য গল্প প্রচলিত আছে। আর একটি বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি একমত। মানুষকে পথে আনার জন্য ভয় দেখানোর কোন বিকল্প নেই। ভয়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে দাঁড় করান মিলন আর তার বন্ধুদের। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
কাজের মধ্যে কাজ একটা হয়েছে মিলন ভালো হয়ে গিয়েছে কিন্তু এটা তো আবার মিলনের ক্ষতিরও কারণ হচ্ছে ভয়টা ওর ভিতরে পুরোপুরি ঢুকে গিয়েছে। আবার ঘুমের ভিতর ছাদে চলে যাচ্ছে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এটা কি সত্যি জিন না অন্য কিছু বুঝতে পারছি না ।ভালোই তো জমে উঠেছে গল্পটি এবার রাফির কি অবস্থা হবে তাই দেখার বিষয় ।মিলন তো দেখছি পুরোপুরি ভালো হয়ে গিয়েছে এখন রাফির পালা।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
ভাইয়া আপনার লেখা এই গল্পটির গত পর্ব যখন পড়েছিলাম তখন এই পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে এই পর্বটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে আমরা। আমরা জিন বিশ্বাস করি। বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে হয়তো অনেক কিছুই বা কাল্পনিক কিছু ঘটে যেতে পারে। আমাদের চলার পথে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। যেগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তবে যাই হোক এবার মনে হয় ছেলেগুলো নিজেকে শুধরে নিবে এবং ভালো হওয়ার চেষ্টা করবে। ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই গল্পটি লিখে উপস্থাপন করার জন্য।