যা হয় ভালোর জন্যই হয়, বিশ্বাস রাখুন

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আমরা মানুষরা যে কোন বিষয় কিংবা পরিস্থিতি নিয়ে খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ি, কারন অধিকাংশ পরিস্থিতিতে আমাদের বুদ্ধি কাজ করে না বরং আমাদের আবেগটা তখন বেশী মাত্রায় কাজ করে। যার ফলশ্রুতিতে সমস্যা কিংবা পরিস্থিতিকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। এটা আমাদের জন্য সত্যি একটা কঠিন সমস্যা। একটা বিষয় আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, কোন কিছুই চিরস্থায়ী না, এটার পরিবর্তন অবশ্যই হবে। সব কিছুরই সঠিক সমাধান রয়েছে, তবে তার জন্য সঠিক প্রচেষ্টা এবং পরিস্থিতি বুঝতে পারাটা বেশী জরুরী। সুতরাং আমার সম্মুখে যে সমস্যাটা রয়েছে সেটাও স্থায়ী না। তাহলে আমি কেন অধৈর্য ও অস্থিরতা প্রকাশ করছি? আমি কেন বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত আবেগিত হয়ে পরছি?

আমরা যখনই কোন পরিস্থিতি নিয়ে ঘাবড়ে যাই এবং অতিরিক্ত অস্থিরতা প্রকাশ করি, তখনই আমরা ভুল করি এবং ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেলি। কারন পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি অনেক কিছুর বিষয়ে চিন্তা করার সুযোগটি গ্রহন না করেই, নিজের উত্তেজনা বশতঃ একটি সিদ্ধান্ত ঠিক নিয়ে নিলাম। যেটা মোটেও ঠিক হয় নাই এবং নেয়াটাও উচিত ছিলো না। কিন্তু কি আর করার আমরা মানুষ বড্ড বেশী অধৈর্যশীল, তাই সকল ক্ষেত্রে এই বিষয়টির প্রমান দেয়ার চেষ্টা করি। তাতে পরিস্থিতি আরো বেশী জটিল হয়ে উঠে।

IMG_20210830_121325.jpg

আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা একটি বিষয়ে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করতো। পরীক্ষার হলে কখনো অস্থিরতা কিংবা অধৈর্য হবা না, কারন এই অবস্থায় তুমি ভালো কিছু লিখতে পারবে না। ‍সুতরাং পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো এবং ঠান্ডা মাথায় কাজ করার অভ্যেস তৈরী করো। এটা শুধুমাত্র পরীক্ষার হলেরও জন্য না বরং বাস্তব জীবনের যে কোন বিষয়ে তোমার জন্য জরুরী। সুতরাং এটা এখান হতে আয়ত্ব করে নাও। জীবনের ক্ষেত্রে সহজই উতরে যেতে সক্ষম হতে পারবে।

আমরা কিন্তু তখন স্কুল জীবনের স্যারদের সেই উপদেশ এবং মূল্যবান কথাগুলোর প্রতি মোটেও গুরুত্ব দেই নাই কিন্তু বাস্তব জীবনে পদাপর্ণ করে বুঝতে পারছি সেগুলো কতটা মূল্যবান এবং আমাদের জন্য জরুরী ছিলো। আজ বাস্তব জীবনে হঠাৎ করে কিংবা অনাকাংখিত কোন সমস্যার মাঝে পতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফসুস করা শুরু করি এবং চিন্তা করতে শুরু করি কেন এটা আমার সাথে হলো, কেন এই রকম হলো, আমি সবচেয়ে দামী জিনিষটি ক্রয় করেছি, এটা বাজারের সেটা, এটা ওটা ...... ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন শুরু করে দেই এবং বিষয়টিকে মেনে না নেয়ার মানসিকতাকে বৃদ্ধি করতে থাকি।

IMG_20210830_121328.jpg

এই পৃথিবীতে কোন কিছুরই লাইসেন্স নেই, অনাকাংখিতভাবে কিংবা নিয়মের বিপরীতে গিয়ে যে কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং সেই বিষয়টির একটি সঠিক ব্যাখ্যা কিংবা যুক্তি পরবর্তীতে সামনে আসতে পারে কিন্তু আপাতত দৃষ্টিতে কোন কারন নাও থাকতে পারে। তাই বিষয়টিকে মেনে নেয়া এবং উত্তেজিত না হয়ে বিকল্প উপায় চিন্তা করা কিংবা পরিস্থিতি হতে বের হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়ে আমাদের বেশী মনোযোগি হওয়া উচিত। অন্যত্থায় পরিস্থিতি আরো বেশী জটিল এবং ঘোলাটে হবে, যা পরবর্তীতে আমাদের আরো বেশী সমস্যায় ফেলবে।

এই প্রসঙ্গে স্কুল জীবনে আমাদের শিক্ষকরা একটি ছোট গল্প বার বার বলতেন, যেন আমরা বিষয়টির গভীরতা বুঝতে পারি। গল্পটি এই রকম ছিলো-


এক রাজা বনে শিকারে গেলেন, অনাকাংখিতভাবে তিনি তার সৈন্যদের হারিয়ে ফেললেন এবং একটি গভীর খাদে পড়ে গেলেন। খাদে পড়ার সময় নিজের হাতের একটি আঙ্গুল কেটে গেল। এখন সেই রাজা বার বার এই কথা বলছেন, আমি একজন রাজা, এতো বড় মানী/দামী ব্যক্তি, আমার সাথে এই রকম ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না, ঈশ্বর কাজটি মোটেও ভালো করেন নাই.... ইত্যাদি ইত্যাদি বলা শুরু করলেন। বনের একদল আদিবাসী তাকে উদ্ধার করলেন এবং তাদের দেবতাকে খুশি করার জন্য তাকে বলি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। কিন্ত বলি দিতে গিয়ে দেখেন তার হাতের একটু আঙ্গুল কাটা। যেহেতু তার শরীরের একটি অঙ্গ হানী রয়েছে, সেহেতু তাকে বলি দেয়া যাবে না। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে তার সৈন্যদলকে খুঁজে পান এবং রাজ্যে ফিরে আসেন। তারপর সব কল্পনা করে এটা স্বীকার করেন যে, ঈশ্বর যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। পরিস্থিতি যাইহোক, আমাদের অধৈর্য হওয়া চলবে না বরং সব কিছু স্বীকার করে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

IMG_20210830_121333.jpg

এটা শুধু একটা গল্প না, বরং আমাদের জীবনে শিক্ষা নেয়ার নানা বিষয় এখানে লুকায়িত রয়েছে, আমরা গল্পটি যতটা ভালোভাবে পড়বো, ততো বেশী এর মাঝে নতুন নতুন বিষয় উদঘাটন করতে সক্ষম হবো। আপাদত দৃষ্টিতে আমাদের সম্মুখে আসা কোন সমস্যার কারন হয়তো দেখতে পারছি না কিন্তু পরবর্তীতে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবো তার মর্মকথা কিংবা অন্তর্নিহিত গভীরতার বিষয়টি। কারন যা ঘটে তার অনেক কিছুই আমরা দেখি না, আবার যা দেখি তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না। সুতরাং মাঝখানে একটা কিন্তু সব সময় থেকেই যায়।

IMG_20210830_121339.jpg

তাই পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, কিংবা বিপদজনক হোক না কেন, নিজেকে শান্ত রাখা এবং সেখান হতে বের হওয়ার জন্য কি কি বিকল্প উপায় রয়েছে, সে বিষয়ে চিন্তা করাটা আমাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পরিস্থিতি দেখে ঘাবরে যাওয়া কিংবা অধৈর্য হওয়াটা মোটেও ভালো লক্ষণ না। কেন হলো? কিভাবে হলো? এসব বিষয় শুরুতেই চিন্তা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করাটা ঠিক হবে না বরং আপতকালীন পরিস্থিতি হতে বের হওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি শান্ত মাথায় চিন্তা করেন, যদি একটু ভিন্নভাবে দেখেন, এর চেয়ে বড় কোন সমস্যা তৈরী হতে পারতো কিংবা পরিস্থিতি আরো বেশী জটিল হতে পারতো। সুতরাং যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে, এই রকম মানসিকতা থাকাও জরুরী।

W3W Code: https://what3words.com/corrupted.acrobat.pays
Device: Redmi 9, Xiaomi

ধন্যবাদ সবাইকে বিষয়টি বুঝতে পারার জন্য।
@hafizullah

break.png
Leader Banner-Final.pngbreak.png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break.png


Support @amarbanglablog by Delegation your Steem Power

100 SP250 SP500 SP1000 SP2000 SP

-cover copy.png

Sort:  
 3 years ago 

অনেক সুন্দর কিছু কথা বলেছেন। বিশেষ করে রাজার গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে। সত্যি আমাদের প্রতিটা মানুষের জীবনে যা হয় সব ভালোই হয়। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 3 years ago 

আসলেই ভাইয়া ঠিক বলেছেন। যাই হোক পোস্টের ফটোগ্রাফি অনেক সুন্দর হয়েছে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

অনেক সুন্দর হইছে,,,

মানুষের ভিতরে যে ক'টি গুন আছে তার ভিতরে ধৈর্য হচ্ছে সবচাইতে দামি। ধৈর্য ধারণকারীকে কোন বিপদই বিচলিত করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের সমস্যাই এটা যে আমরা বিপদে পড়লে অধৈর্য হয়ে পড়ি এবং সব কিছুকে দোষারোপ করতে শুরু করি। পরিস্থিতি মেনে নেয়ার মানসিকতা আর ধৈর্য এদুটো যার আছে তার আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। অনেক দামী কথা লিখেছেন। গল্পটাও সুন্দর হয়েছে।

 3 years ago 

জ্বী ভাই খুবই সত্য কথা বলেছেন, আসলে আমাদের কারনেই আমরা সমস্যায় গভীরতায় ঢুকে যাই। ধন্যবাদ

 3 years ago 

মানুষ ভুলের উর্ধে নয়।মানুষ মাত্রই ভুল করে সেটা বিষয় নয়।এই ভুল থেকে অনেক শিক্ষা হয় যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভাই আপনার কিছুটা ক্ষতি হলেও উপকারের দিকটা বেশি।

 3 years ago 

হ্যা, তবে সেই ভুলের থেকে যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের অবস্থা আরো খারাপ হয়।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

 3 years ago 

সত্যিই দাদা। পরিস্থিতি যতই কঠিন প্রতিকূল হোক শান্ত ভাবে সেটাকে মোকাবিলা করাই আমাদের জন্য শ্রেয়

 3 years ago 

বাস্তবতা সত্যি আমাদের অনেক কঠিন শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমরা সেই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগাতে পারি না ভুল মানসিকতার কারনে। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 3 years ago 

আপনার লিখাগুলা অনেক মন ছুয়ে গেছে। কোনকিছুই চিরস্থায়ি নয়! যেটা হয় ভালর জন্যই হয়!

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

হতাশা থেকে কাটিয়ে উঠতে আপনার আজকের করা পোস্টটি খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।আপনার মূল্যবান পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

ধন্যবাদ লেখাগুলো পড়ার জন্য।

 3 years ago 

ধৈর্য্যধারণকারী শুধু এখন না,পরকালেও পুরস্কার পাবে।আর আপনার এই পোস্টটি অন্যান্যদের জন্য না হলেও আমার জন্য উপকারী।গত কয়দিন ধরে যে সময় পার করতেছি তা বলার মতো না।😢

 3 years ago 

খুশি হলাম শুনে, এটা আপনার উপকারে আসবে। ধন্যবাদ

 3 years ago 

খুব সুন্দর একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন ভাই। সত্যি সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান যে বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখে। এবং সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন‍্যই করেন। আমি নিজেই একাধিক বার এর প্রমাণ পেয়েছে। আমার সৃষ্টিকর্তা আমার থেকে ভালো জানেন কীসে আমার ভালো হবে এবং কীসে আমার খারাপ হবে। সুতরাং জীবনে ব‍্যর্থ হলে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.17
JST 0.028
BTC 69086.63
ETH 2471.20
USDT 1.00
SBD 2.39