আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [সঙ্গতি-অসঙ্গতি]

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ যেমন রয়েছে যারা শত সমস্যায় নিজেদের সঠিক অবস্থান ধরে রাখে বা রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে, ঠিক তেমনি কিছু মানুষ রয়েছে যারা কখনো কোন কিছু বা কাজ সঠিক নিয়মে করতে চায় না বরং তারা সর্বদা চেষ্টা করে ভিন্নভাবে ও শর্টকাটে কিছু করার। আবোল তাবোল জীবনের গল্পে আজ আমি কিছু অনুভূতি ভাগ করে নেব এই সকল সঙ্গতি-অসঙ্গতি নিয়ে। চলুন প্রথমে সঙ্গতি আর অসঙ্গতির বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি।

কোন একটা বিষয় বা কাজকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কিংবা কোন একটা বিষয়কে নিয়মের মাঝে থেকে যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ করে সম্পন্ন করাটাকে আমরা সহজভাবে বলতে পারি সঙ্গতিপূর্ণ । আরো সহজভাবে বলতে গেলে নিয়ম এবং নির্দেশনার মাঝে থাকাটাই সঙ্গতিপূর্ণ। আর এর বাহিরে কিছু করার চেষ্টাটাকে আমরা বলতে পারি অসঙ্গতিপূর্ণ। আরো একটু লক্ষ্য করুন, সঠিকভাবে সঙ্গতির সাথে কাজটি করার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা বিদ্যমান থাকে আর বেঠিকভাবে বা অসঙ্গতির সাথে কাজটি করার ক্ষেত্রে কখনো যথার্থ দৃঢ়তা বিদ্যমান থাকে না। সঙ্গতির বিপরীত অবস্থানই হলো অসঙ্গতি।

এখন আমাদের সমাজের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন চারপাশে প্রচুর অসঙ্গতি বিদ্যমান রয়েছে, তবে এসব অসঙ্গতির মাঝেও কিছু চমৎকার দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবেন যেখানে সঙ্গতির অবস্থান উজ্জ্বল অবস্থায় রয়েছে। আমি বাস্তবতার আলোকে সহজ ও বোধগম্য একটি উদাহরণ ভাগ করে নিচ্ছি। ব্যস্ত একটি সড়ক, যেখানে প্রচুর গাড়ি চলমান রয়েছে কিন্তু একটু দূরত্বেই সড়ক পারাপার হওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এখন আপনি সড়কের মাঝ খান দিয়ে গাড়িগুলোকে থামিয়ে পারাপার হওয়ার চেষ্টা করছেন, এটা হলো অসঙ্গতি। কিন্তু আপনি যদি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে সড়ক পারাপার হতেন তাহলে সেটা হতো সঙ্গতিপূর্ণ কাজ।

1.png

আমার মনে হয় বিষয়টি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন, অন্তত এরপর এই বিষয়ে আর কোন সমস্যা থাকার কথা না। আসলে আমরা মানুষ অনেক কিছুই দেখে দেখে করার চেষ্টা করি, অন্যদের অনুসরণ করি। বিশেষ করে এই অসঙ্গতিগুলোকে আজকাল আমরা খুব বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশী পিছিয়ে যাচ্ছি। এর অন্যতম কারন হলো আমাদের কাজের ক্ষেত্রে এই অসঙ্গতিগুলো, যা বড্ড বেশী অমানানসই আমাদের সঙ্গে। কারন যখন কোন কিছু অসাভাবিক উপায়ে করার চেষ্টা করা হবে তখনই কাজের পরিবেশ নষ্ট হবে।

এই ক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে না পারি, আমরা যদি আমাদের এই বদ অভ্যেসগুলোর পরিবর্তন আনতে না পারি, তাহলে অসঙ্গতিগুলোই আমাদের নিকট সঙ্গতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। যেখানে নিয়ম বলে কিছু থাকবে না বরং অনিয়মই নিয়মে পরিনত হয়ে যাবে। অবশ্য এখন হচ্ছেও তাই। আপনি চাকুরী খুঁজতে যাবেন কেউ আপনার যোগ্যতার মূল্যায়ন করবে না যদি সঠিকভাবে ঘুষের অংকটা না মেলাতে পারেন।

2.jpg

সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ অসঙ্গতিগুলোর শেকড় ছড়িয়ে পড়েছে আর আমরা মাকড়সার জালের মতো সেগুলোতে আটকে যাচ্ছি, ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক। জানি না এই পরিস্থিতি হতে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো কিনা? নাকি ভেজালের এই পরিবেশে সঙ্গতিগুলোর বিস্তার আরো বাড়বে? জানি না আমাদের পর আগামী প্রজন্ম কোন পথে হাঁটবে, সঙ্গতি না অসঙ্গতির দিকে?

সময় তো ঠিক গতিতেই চলবে, হয়তো আমরা আমাদের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হবো। কারন শুরুতেই বলে দিয়েছি বিপরীতমুখী অবস্থানে থেকে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে হয়তো সাময়িক ফায়দা লুটা যাবে কিন্তু কাংখিত অবস্থানে পৌছানোটা সব সময়ই অসম্ভব হিসেবে থেকে যাবে। স্রোতের বিপরীতের অবস্থান যেমন স্থায়ীত্বলাভ করতে পারে না, ঠিক তেমনি অসঙ্গতির মাধ্যমে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা যায় না। আসুন কিছু ভালো চিন্তা করি, সঙ্গতি কিংবা সঠিক নিয়মটিকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করি।

Image from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break.png
Leader Banner-Final.pngbreak.png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break.png

banner-abb3.png

Sort:  

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

 3 years ago 

সঙ্গতি আর অসঙ্গতি নিয়ে আপনার যুক্তিগুলো শতভাগ সঠিক হয়েছে। বিশেষ করে, অসঙ্গতির মাধ্যমে মানুষ হয়তো সাময়িক সুবিধা পেতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উন্নতি করতে ব্যার্থই হয়।মানে নদীর স্রোতের বিপরীতে যেমন কোনোকিছুরই স্থায়ীত্ব হয় না।
আর মানুষ অনুকরণপ্রিয়।যেহেতু, আমাদের সমাজে সঙ্গতির চেয়ে অসঙ্গতি বেশি তাই পরবর্তী প্রজন্ম এগুলিই গ্রহণ করবে সহজেই। আসলে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটি আলোচনা করেছেন আজকে। যা একটি বোঝার বিষয়। একটি শিক্ষণীয় লেখনী। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই লেখাটি পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 3 years ago (edited)

আপনি চাকুরী খুঁজতে যাবেন কেউ আপনার যোগ্যতার মূল্যায়ন করবে না যদি সঠিকভাবে ঘুষের অংকটা না মেলাতে পারেন।

ভাইয়া আপনার এই লাইনটির সাথে আমি একমত না হয়ে পারলাম না। আমার কয়েকটা ভাইকেই দেখছি। অনেক ট্যালেন্ট,রেজাল্ট ভালো বাট চাকরি পায়না। পেলেও আগে টাকা এরপর চাকরি।

 3 years ago 

বাস্তবতা সত্যি খুবই নির্মম হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ধন্যবাদ আপু

 3 years ago 

ভাই আমার সবাই এখন শর্টকাটের দিকে ঢুকছি। কেউই সঠিকভাবে কাজ সম্পূর্ণ করতে চায় না। চার দিকে তাকালেই শুধু বিশৃংখলা। আমরা নিয়মের মধ্যে থাকলেই এসব রোধ করা যায়। ধন্যবাদ ভাই ভালো একটি বিষয় আমাদের মাঝে উপহার দিলেন।

 3 years ago 

হ্যা, কারন সবাই ভালো কিছু প্রত্যাশা করে কিন্তু তার জন্য সময় ব্যয় করতে রাজী না। যার কারনে সহজ ও শর্টকাট উপায়ে সব কিছু অর্জন করতে চায়। ধন্যবাদ

 3 years ago 

অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যকলাপ সমাজে এত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এখন সবাই অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যকলাপই সঙ্গতিপূর্ণ মনে করে। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। তারা যে পরিবেশে বড় হবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে ব্যতিক্রম। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 3 years ago 

ভাই সত্যি আগামী প্রজন্মের অবস্থানটা যে কোথায় দাঁড়াবে সেটা নিয়ে ভাববার সময় চলে এসেছে, এভাবে আর কত? ধন্যবাদ

 3 years ago 

সমাজে অনিয়ম একসময় নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে আর এটাই হল বাস্তব কথা। তবে আমাদের এই বিষয়ে অবশ্য সর্তকতা এবং সচেতনভাবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজ থেকে এগুলো দূরে রাখতে সর্বপ্রথম নিজেকে এবং নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সকলের সহযোগিতা নিয়ে এসকল অসঙ্গতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা সম্ভব

 3 years ago 

জ্বী ভাই আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি, এটাই বাস্তব। ধন্যবাদ

 3 years ago 

তবে সব সময় আপনার পোস্টগুলো অন্যান্য ব্যক্তি গুলো থেকে একটু সচেতন মূলক এবং শিক্ষনীয় হয়ে থাকে। আনন্দ সহ কিছু শিক্ষামূলক পোস্ট শেয়ার করেন আপনি।

সে জন্য আবারো ধন্যবাদ

 3 years ago 

আপনি আবোল- তাবোল গল্পের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন ভাইয়া।আসলে বর্তমান সমাজে মানুষের ধৈর্য্য ও চিন্তাশক্তি অনেকাংশেই কমে গেছে।ফলে অসঙ্গতিপূর্ন কাজকেই সবাই সহজে গ্রহণ করছে।কিন্তু এভাবে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না।তাই আমাদের বেশি বেশি ধৈর্য্যশীল হয়ে কাজের প্রতি মনযোগ দিতে হবে এবং নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

চেষ্টা করছি আপু হাস্যরসের মাধ্যমে নির্মম সত্যগুলোকে প্রকাশ করার। ধন্যবাদ

 3 years ago 

অনিয়মেই যেন আমাদের এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমরা যে কোন কিছু শর্টকাটে শেষ করতে চাই। কোন কাজের সময় দিতে চাইনা ধৈর্য নাই আমাদের। এতে করে সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। খুব ভালো একটি টপিক নিয়ে লিখেছেন ভাই। আমাদের সকলকে একটি নিয়মের মধ্যে, শৃংখল এর মধ্যে চলা উচিত।

 3 years ago 

জ্বী ভাই, আমাদের কাছে এখন অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের চারপাশের অবস্থা এখন এমন যে, অনিয়মটাই নিয়ম।আর নিয়মের চলতে গেলেই ব্যাপারটি কেমন বেখাপ্পা!আমাদের শর্টকার্টে কাজ শেষ করতে চাওয়াই আমাদের কাজের জন্য সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়ায় যা আমরা টের ও পাইনা।

 3 years ago 

সঙ্গতি ও অসঙ্গতি নিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের সমাজটা অসঙ্গতিতে ভরে গেছে। আমরা আমাদের চারপাশে অসঙ্গতিপূর্ণ কাজ গুলো দেখেও চোখে রুমাল বেধে বসে থাকি। অন্যায় গুলো দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকি আমরা। আমাদের সমাজের মানুষগুলোর ভুলগুলোকে শুধরে নেওয়ার দায়িত্ব শুধু আমাদের। কিন্তু আমরা কি কখনো সেই দায়িত্ব নিয়েছি? আমরা তো কখনো ভেবেই দেখি নি আমরা যে সমাজে বসবাস করি তার চারপাশের ভেসে বেড়াচ্ছে হাজার অন্যায় অবিচার। হয়তো আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সকলে মিলে সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব। অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। শুভকামনা আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 57307.38
ETH 2434.94
USDT 1.00
SBD 2.32