কোন ওষুধ কখন খাবেন এবং কখন খাবেন না!

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

না না, আমি পৃথিবীর সমস্ত ওষুধের খাওয়ার সময়ের লম্বা লিস্ট আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছি না। একজন রুগীর ভোগান্তির গল্পের আলোকে আমি কয়েকটা ওষুধের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। চলুন আগে আমরা ঐ রুগীর ভোগান্তির গল্পটা একটু শুনে আসি।

pills.jpg
এই ছবিটি পিক্সাবে থেকে নেয়া হয়েছে

দুই-তিন দিন আগে একজন বাংলাদেশী রুগী এসেছিলেন আমার চেম্বারে। তার আগেরদিন বিকালে বা সন্ধ্যায় তিনি একটা ফার্মেসীতে গিয়েছিলেন মাথা ঘুরার সমস্যার জন্যে। এখানে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে সহজে ডাক্তারের দেখা মেলে না। তাই অগত্যা অনেকেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খায়। যাহোক, ফার্মাসিস্ট রুগীর প্রেশার চেক করে বেশী পায় এবং প্রেশারের জন্যেই মাথা ঘুরছে এই ডায়াগনসিস করে তার প্রেশার কমানোর জন্যে একটা ওষুধ লিখে দেয়। বাসায় গিয়ে রুগী একটা ট্যাবলেট খেয়ে নেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই লক্ষ্য করেন যে উনার বারবার প্রশ্রাব লাগছে এবং বাতরুমে দৌড়ানো লাগছে। পুরো রাতেই তিনি বারবার ঘর-বাতরুম-ঘর ট্যুর দিয়েছেন এবং ঠিকমত ঘুমাতেই পারেন নাই। সকালে আমার কাছে এসেছে বারবার প্রশ্রাবের সমস্যার কারণে। মাশআল্লাহ, ফার্মাসিস্টের ওষুধের বদৌলতে উনার মাথা ঘুরার সমস্যা দূর হয়েছে ততক্ষণে কিন্তু হয়েছে নতুন একটা সমস্যার আমদানি!

উনি ওষুধের প্যাকেট সাথে করেই এনেছিলেন। সেটা দেখার সাথে সাথেই বুঝে গেলাম উনার নতুন সমস্যার কারণ। উনি যে ওষুধটা গত রাতে খেয়েছিলেন সেটা ছিল ল্যাসিক্স (Laxis 40mg) ট্যাবলেট। এই ওষুধের কাজ করার ধরনই হচ্ছে যে প্রশ্রাবের মাধ্যমে বেশী বেশী পানি এবং লবণ শরীর থেকে বের করে দেয়া। পানি এবং লবণ বের করার মাধ্যমেই এটা প্রেশার কমায় কিংবা শরীরের ফোলা কমায়। ওষুধের কাজ ওষুধ ঠিকমতই করছে। শুধু সমস্যাটা হয়েছে টাইমিং নিয়ে। আমরা (স্পেশাল কিছু ক্ষেত্র ছাড়া) এই জাতীয় ওষুধ সাধারণত সকালে দিয়ে থাকি, রাতে বা সন্ধ্যায় না।

এরকম আরো কিছু ওষুধ আছে যেটার ক্ষেত্রেও সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তি যদি ঘুমের ওষুধ সকালে খেয়ে ফেলে, তাহলে কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু ঘুমাতেই থাকবে। এজন্যে ঘুমের ওষুধ সাধারণত দেয়া হয়ে সন্ধ্যায় কিংবা রাতের প্রথমভাগে। স্পেশাল ক্ষেত্র হলে অনেকসময় সকালেও দেয়া লাগে, কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম।

আবার কিছু ওষুধ আছে যেটার সঠিক কার্যকারিতা পাওয়ার জন্যেই বিশেষ সময়ে খাওয়া লাগে। যেমন কলেস্টেরলের ওষুধ। স্ট্যাটিন গ্রুপের (এটভা, রসুভা ইত্যাদি) কলেস্টেরলের ওষুধ রাতে ঘুমানোর আগে খেলে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। উচ্চরক্তচাপের ওষুধের ব্যাপারেও নতুন কিছু তথ্য আসছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সকালের তুলনায় রাতে খেলে রুগীর উপকার বেশী।

এরকম উদাহরণ খুজলে হয়ত আরো পাওয়া যাবে। পোষ্ট আর লম্বা করছি না। একজন রুগী যখন ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধের প্রেশক্রিপশান নিবেন কিংবা ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনবেন, তখন জেনে নিবেন কোন ওষুধ কখন খাবেন। এটা ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব হচ্ছে কোন স্পেশাল টাইমে কোন ওষুধ খাওয়া লাগবে বা ঐ সময়ে ঐ ওষুধ খাওয়া যাবে না - এটা রুগীকে বুঝিয়ে দেয়া।

আজকে তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি এই পোষ্টটা পড়ে কিছুটা হলেও উপকার হবে আপনার। কিছু জানার থাকলে বা জানানোর থাকলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

ভাল থাকুন
আবারও ধন্যবাদ।
হাফিজ
ওমান।

Sort:  
 3 years ago 

একজন ফার্মাসিস্টের এতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দেওয়া উচিতই হয়নি। সময় মতো আপনার কাছে না এলে একটা অঘটন ঘটে যেতো। এমনকি প্রেশার আরো ফল করলে জীবনসংশয় দেখা দিত।

ফার্মাসিস্ট ওষুধ লেখার সময় খেয়াল করেছেন কিনা বলা মুশকিল। তবে আপনার কারণে আজ একটা অঘটন এড়িয়ে গেলো। ❤️🙏🏾

 3 years ago 

হ্যা, এটা সত্য। এখানে ঐ ফার্মাসিস্টের একটা ভুল আছে।
আলহামদুলিল্লাহ, ঐ রোগী দেরী না করে এসেছে। সেজন্যে কারণটা ধরা পরেছে।

ধন্যবাদ, আপনার কমেন্টের জন্যে।

 3 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা। একজন মানুষের প্রাণ বাঁচালেন।

আমাদের দেশে গ্রামে-গঞ্জের ফার্মাসিস্টরা একটু জ্বর হলেই এনটিবেটিক দিয়ে দেয় কোনরকম প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। আর ওই ওষুধ ১ কি ২ ডোজ খেয়ে জ্বর ভালো হয়ে গেলে, রোগী সেটা আর কন্টিনিউ করে না। কিন্তু এটা যে ভবিষ্যতের জন্য কতটুকু ভয়াবহ সেটাও জানে না। মুখস্ত ঔষধ না খেয়ে আমাদের সকলের উচিত অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া।

 3 years ago 

জ্বী, একদম সত্য কথা বলেছেন। এই অভ্যাস পরিবর্তণ করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে খারাপ কিছু হবে আমাদের চিকিৎসা সেক্টরে।

ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্যে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66982.11
ETH 2591.90
USDT 1.00
SBD 2.67