আমাদের হাত-পা কেন ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ লাগে?
আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে এমন কেউই নাই, যার জীবনের কোন না কোন সময়, হাত বা পা ঝিন ঝিন করা বা অবশ অবশ হওয়ার অভিজ্ঞতা হয় নাই। বিশেষ করে দীর্যক্ষণ একই অবস্থায় বসে থেকে উঠতে গেলেই মনে হয় যেন পা অবশ হয়ে গেছে বা ঝিন ঝিন করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই আবার ঠিক হয়ে যায়। এটা সমস্যার কোন বিষয় না। কিন্তু কিছু কিছু রোগের কারণেও অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকে এবং অনেকেই ডাক্তারের সরানপন্ন হন। তো চলুন, আমরা দেখে নেই কি কি রোগের কারণে আমরা এই লক্ষণটা (Symptom) পেতে পারি।
এখান থেকে এই ছবিটি নেয়া হয়েছে
ডায়াবেটিসঃ
যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে (Diabetes Mellitus) আক্রান্ত এবং যথাযথ নিয়মে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন না তাদের অনেকগুলো জটিলতার একটা জটিলতা হচ্ছে পা এবং হাত অবশ হয়ে যাওয়া কিংবা ঝিন ঝিন করা। রক্তের মাত্রাতিরিক্ত সুগার (high blood sugar) হাত এবং পায়ের নার্ভ (Nerve) কে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেয় যার ফলশ্রুতিতে এই লক্ষণ দেখা যায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের বিপদজনক যে একটা জটিলতা, যেখানে একপর্যায়ে গিয়ে পা কেটেও ফেলা লাগতে পারে তা হচ্ছে Diabetic foot। ডায়াবেটিসের কারণে “পা অবশ হয়ে যাওয়া” হচ্ছে এই ডায়াবেটিক ফুট এর পুর্বাবস্থা।
অতিরিক্ত মধ্যপানঃ
দীর্ঘসময়ব্যাপী এবং অতিরিক্ত মদ্যপানের (Long standing and excessive alcohol drinking) কারণে আমাদের শরীরের কিছু ক্ষতিসাধন হয়। আবার এই মদের কারণে শরীরের ভিটামিন বি১২ এবং ফলেট নামক ভিটামিনের ঘাটতি দেখা যায়। এই দুই উপায়ে (সরাসরি ক্ষতি এবং ভিটামিনের সল্পতা ঘটানোর মাধ্যমে; নিচে দেখুন) শরীরে যে যে জিনিস আক্রান্ত হতে পারে নার্ভ তার মধ্যে একটা। এরই ফলশ্রুতিতে হাত, পা বা শরীরে কোথাও কোথাও ঝিন ঝিন বা অবশ ভাব লাগতে পারে।
প্রেগনেন্সিঃ
পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় (Pregnancy) অনেকেই হাত ঝিন ঝিন করা বা অবশের সমস্যায় ভুগেন। প্রেগনেন্সিতে স্বভাবিক ভাবেই রক্তে অতিরিক্ত পানি জমে ( increased blood volume) যা কিনা নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে। একটা বর্ধণশীল বাচ্চাও তার চারপাশের জিনিসের উপর চাপ দেয় যার মধ্যে নার্ভও থাকে। এই উভয় কারনে হাতে, পেটে বা কোমর থেকে নিচে ঝিন ঝিন বা অবশ লাগতে পারে। ডেলিভারীর পর এই সমস্যা সাধারণত ঠিক হয়ে যায়।
মেরুদন্ডের হাড়ের বা ডিস্কের সমস্যাঃ
অনেক সময় মেরুদন্ডের হাড় (Vertebra) ডানে কিংবা নামে স্লিপ করে সরে গিয়ে পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া রগের উপর (nerve) চাপ দিতে পারে। অথবা দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্ক ফুলে গিয়ে বা একই রকমভাবে স্লিপ করে সরে গিয়ে রগের উপর চাপ দিতে পারে। কোমরের হাড়ে এরকম হলে পায়ে ঝিন ঝিন বা অবশ হতে পারে। ঘাড়ে হলে, হাত ঝিন ঝিন করতে পারে।
একক কোন রগের উপর চাপ লাগাঃ
আমাদের শরীরের কিছু রগ (Nerve) থাকে অনেক লম্বা এবং তাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। এই যাত্রা পথে কখনো তাকে হাড়ের খাজের মধ্য দিয়ে, কখনো টানেলের নিচ দিয়ে, কখনো দুই মাংসপেশীর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোন কারণে কোন একটা জায়গায় যদি রগের উপর চাপ লেগে থাকে তাহলে তার পরের অংশটুকু শরীরের যেখানে যেখানে বোধশক্তির (sensation) কাজ করে সেখানে সেখানে ঝিন ঝিন বা অবশ হতে পারে।
আত্মঘাতী রোগঃ
কিছু কিছু আত্মঘাতী রোগ (Autoimmune disease) হতে পারে আমাদের শরীরে যেখানে আমাদের শরীরের সৈনিকেরা (WBC or White blood cell) ভুল করে শরীরের নিজস্ব কিছু জিনিসকেই আক্রমণ করে বসে। কোন নার্ভ এই আক্রমণে শিকার হলে সেই নার্ভ যেসব জায়গায় ছড়িয়ে থাকে সেসব জায়গা ঝিন ঝিন করতে বা অবশ হতে পারে। এই রকম কিছু রোগের উদাহরন হচ্ছে লুপাস (SLE or systemic Lupus erythematosus) , বাত ব্যাথা (Rheumatoid arthritis) ইত্যাদি।
কিছু ভিটামিনের সল্পতাঃ
ভিটামিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন রিয়াকশানে (metabolic reactions) নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন ভিটামিনের সল্পতাজনিত লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন। ভিটামিন বি এবং ই (Vitamin B and E) এর সল্পতা থাকলে আমাদের শরীরের নার্ভ আক্রান্ত হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে শরীর কোন কোন জায়গা, বিশেষ করে হাত এবং পা ঝিন ঝিন করতে পারে।
কিছু ঔষুধের প্রতিক্রিয়াজনিত কারণঃ
কোন ঔষুধই প্রতিক্রিয়ামুক্ত নয়, হয়ত কম বা বেশী। এরকমই কিছু ঔষুধের প্রতিক্রিয়ায় আমরা হাত বা পায়ে ঝিন ঝিন বা অবশ ভাব অনুভব করতে পারি। যে ঔষুধগুলো এক্ষেত্র বেশী প্রতিক্রিয়া দেখায় তা হলোঃ কেমো থেরাপী ড্রাগস (Drugs for cancer chemotherapy), এইডসের ড্রাগ (medicines for HIV//AIDS), যক্ষার ঔষুধ (medicine for tuberculosis), উচ্চরক্তচাপের ঔষুধ (medicine for HTN) এবং কিছু ইনফেকশানের ঔষুধ (Some antibiotics)। এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, হাত বা পা ঝিন ঝিন করতে পারে এই ভয়ে এই ঔষুধ সেবন বাদ দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আবার ডাক্তার দেখান। হয়ত ঔষুদ বদলিয়ে দিবেন।
কিডনী ঠিকমত কাজ না করাঃ
আমরা জানি যে কিডনীর কাজ হচ্ছে আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানগুলো সেকে বের করে দেয়া। যদি কিডনী ফেইল করে তার এই কাজ ঠিকমত করতে না পারে (Due to kidney failure), তাহলে রক্তে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো বেশী পরিমাণে জমে যায়। যার ফলে অনেক রকমেরই লক্ষণ দেখা যায় যার মধ্যে একটা হচ্ছে হাত, পা বা শরীরের কোন কোন জায়গা ঝিন ঝিন করা বা অবশ লাগা।
বংশগত কিছু রোগঃ
কিছু কিছু বংশগত রোগ (Genetic diseases) আছে যেটাতে শরীরের নার্ভ বা মাংশ আক্রান্ত হয়ে এই রকম ঝিন ঝিন বা অবশ লাগতে পারে। এরকম দুইটা কমন বংশগত রোগ হচ্ছে চারকোট ম্যারী টুথ ডিজিস (Charcot-Marie-Tooth disease) এবং হেরেডিটারী নিউরোপেথি উইথ প্রেশার পালসি (HNPP)।
কিছু টিউমারঃ
কোন টিউমার (Tumor) এর অবস্থান যদি কোন নার্ভ এর কাছাকাছি হয় অথবা অন্যভাবে বলা যায়, কোন নার্ভের যাত্রাপথের কোথাও যদি কোন টিউমার শুরু হয় এবং নার্ভকেও জড়িয়ে ফেলে টিউমার এর মধ্যে (tumor involves the nerve), তাহলে ঐ নার্ভ যেখানে যেখানে সাপ্লাই দিবে সেখানে সেখানে অবশ বা ঝিন ঝিন করতে পারে।
থাইরয়েড এর সমস্যাঃ
আমাদের শরীরের যদি থাইরয়েড হরমোন কমে যায় (low thyroid hormone or hypothyroidism) তাহলেও হাত কিংবা পায়ে এরকম অবশ ভাব বা ঝিন ঝিন লাগতে পারে।
আজকে তাহলে এপর্যন্তই। মোটামুটি কমন কারণগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে পোষ্টটা বেশ বড় হয়ে গেল। কষ্ট করে এবং ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। কোন কিছু জানার থাকলে বা কিছু যোগ-বিয়োগ করার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।
ভাল থাকুন।
আবারো ধন্যবাদ।
হাফিজ
ওমান।
কেউ চাইলে নিচের এই সাইটে ঘুরে আসতে পারেন বা জয়েন করতে পারেন। এটা TRON based program এবং এখানকার পেমেন্ট কারেন্সি হচ্ছে TRX। যদি জয়েন করতে চান তাহলে আমার লিঙ্ক দিয়ে করলে কৃতজ্ঞ থাকব। join here
![](https://steemitimages.com/0x0/http://rapidcrypto.net/images/300x250-1.gif)
অনেক সুন্দরভাবে তথ্যগুলো শেয়ার করেছেন, তথ্যবহুল পোষ্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমিও বিষয়টি ভালোভাবে জানতাম না আগে।
এটা জেনে ভাল লাগলো যে এই পোষ্ট থেকে আপনি নতুন কিছু জানতে পেরেছেন।
ধন্যবাদ পোষ্টখানি পড়ার জন্যে এবং একটা কমেন্ট করার জন্যে।
jঅনেক তথ্যবহুল তথ্য নিয়ে যে পোস্টটি করেছেন অসাধারণ হয়েছে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাচ্ছি সেই সাথে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ ভাল থাকবেন♥
ধন্যবাদ আপু, আপনার উৎসাহ মুলক কমেন্টের জন্যে।
আসলে আমাদের সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। অবশ্যই আমাদেরকে বদঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে এবং সুস্থ থাকার জন্য পরিমিত ব্যায়াম করতে হবে।
এবং সাথে সৃষ্টিকর্তার ওপর অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে
জি ভাই। আমাদের এই বদ অভ্যাস গুলো পরিত্যাগ করা খুবই জরুরী।
ধন্যবাদ ভাই।
ফটো ইউজ এর ব্যাপারে আপনার কিছু জানানোর আছে । আপনি ডিসকর্ড এ আমার সাথে যোগাযোগ করুন।
জি ওখানে নক দিয়েছি।
খুব ভালো তর্থ দিয়ে দারুন ভাবে উপস্থাপনার সাথে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক পোস্ট করেছেন। ধন্যবাদ অনেক
আপনাকেও ধন্যবাদ পোষ্ট টা পড়ে কমেন্ট করার জন্যে।
ভাই, আপনার পোস্ট পড়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক কিছু জানতে পারি। মাঝে মাঝে আমারও ঝিনঝিন এর সমস্যা হয়। আশা করছি গুরুতর কিছু না এটা।
ধন্যবাদ আপনাকে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আশা করি আপনার ঝিন ঝিনের সমস্যা গুরুত্বর কিছু না। সমস্যা বেশী মনে হলে একবার কোন একজন ডাক্তারকে দেখান।
ধন্যবাদ।
বাহ খুব সুন্দর। আপনার মতো একজন ডাক্তার কমিউনিটিতে খুবই প্রয়োজন। অনেক বিষয়ে বিস্তারিত শেয়ার করেছেন। এবং হাত পা ঝিন ঝিন করার সমস্যা টা আমরাও আছে।
আশা করছি আপনার সমস্যাটা সিরিয়াস কিছু না। তারপরও সমস্যা বেশী হলে একজন ডাক্তার দেখিয়ে ফেলেন।
ধন্যবাদ ভাই।
ঠিক আছে। আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ 💖।
স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যবহুল পোস্ট। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাবী আপনাকেও।ভাল থাকুন।
ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি একটি সুন্দর তথ্যবহুল পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যা আমাদের প্রতিটি মানুষেরই জানা প্রয়োজন।
আপনাকে ধন্যবাদ ভাই, আপনার এই উৎসাহ মূলক কমেন্টের জন্যে।
হাত পা অবশ কিংবা ঝিনঝিন করার বিষয়টি নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন। বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ মুল্যবান মতামত দেয়ার জন্যে।