|"আমার বাংলা ব্লগ"প্রতিযোগিতা-০৮ |"পাকা তালের আটির শাস দিয়ে ইলিশ মাছের রেসিপি"
নমস্কার
বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন?
আশা করি, ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলেই ভালো ও সুস্থ আছেন।আজ আমি আবারো "আমার বাংলা ব্লগ" কর্তৃক আয়োজিত "ইলিশ মাছের রেসিপি" প্রতিযোগিতা -০৮ এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য কমিউনিটির শ্রদ্ধেয় ফাউন্ডার, এডমিন ও সকল মডারেটর দাদাদেরকে জানাই আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ।আসলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আমি কি পেলাম ,কি পেলাম না সেটি মুখ্য বিষয় নয়,মুখ্য বিষয় হলো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।তাইতো আমি বারেবারে চলে আসি সকল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে।আমার খুবই ভালো লাগে যখন আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।আমি সব সময় চেষ্টা করি ভিন্ন কিছু করার।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।আমি নিজেকে নতুনভাবে নতুন কিছু করতে ও নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে সবসময় পছন্দ করি।আজ ও আমি নতুন ধরনের একটি ইলিশ মাছের রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে।আর সেটি হলো "পাকা তালের আটির শাস দিয়ে ইলিশ মাছের রেসিপি"।আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।
(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)
★পাকা তাল সংগ্রহ ও তালের আটির শাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা:
আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে মেঠো রাস্তাটি মিশে গিয়েছে 3 কিলোমিটার দূরের গ্রামটিতে।রাস্তার একপাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেতের মাঠ এবং অন্যপাশে একটি বড়ো ক্যানেল।মেঠো আঁকাবাঁকা পথের পাশে মাঠের মধ্যে সারি সারি সরকারি তাল গাছ রয়েছে।সবাই সেখান থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে।আমরা ও মাঝে মাঝে সংগ্রহ করি।তাই আমরা ভাদ্র মাসে কিছু পাকা তাল সংগ্রহ করেছিলাম এবং তা একজায়গায় জড়ো করে রেখে দিয়েছিলাম।আমরা কাঁচা তালের শাস খেতে বেশি পছন্দ করি ।কিন্তু পাকা তাল খেতে বেশি পছন্দ না করলে ও পাকা তালের আটির শাস খেতে বেশ পছন্দ করি।আর সঙ্গে জ্বালানি ও হয়ে যায়।পূর্বে জড়ো করে রাখা তালের আটিতে এইসময় বেশ বড়ো বড়ো শিকড় জন্মায় ফলে ভিতরে শাসও হয় বড়ো।তবে এই তালের আটি কাটা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়,বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।তাই আমি আমার বাবার সাহায্য নিয়েছিলাম এগুলো কাটতে। এটিকে ফোপরা ও বলেন অনেকে ।আমরা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় তালের আটির শাসকে ফামরা বলতাম।যাইহোক পাকা তালের আটির শাস কাঁচা খাওয়া যায় আর মিষ্টি জাতীয় রেসিপি করেও।তাই আমি আজ তালের আটির শাস দিয়ে ইলিশ মাছের রেসিপি শেয়ার করবো।যদি ও এটি একটু মিষ্ট টাইপের খেতে।তবে ভীষণ স্বাদের।আমি জানি না কেউ কখনো এটি মাছ দিয়ে রেসিপি বানিয়ে খেয়েছে কিনা!তবে আমি আমার চিন্তাধারা দিয়ে নতুন আঙ্গিকে কিছু তৈরি করার চেষ্টা করেছি।এককথায় আমি আবিষ্কার করেছি বলতে পারেন। 😃😄কারণ এটি আমি আগেও একবার চেকে দেখেছিলাম বেশ মজার খেতে।ইলিশ মাছ পছন্দ করে না এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দায়।স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয় ইলিশ মাছ বাঙালির ঘরে ঘরে ম-ম করে ।মাছে ভাতে বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে ইলিশ মাছ। তাই আপনারা ও এই রেসিপিটি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
★উপকরণ:
1.(800 গ্রাম) ইলিশ মাছ - 5 পিচ
2.পাকা তালের আটির শাস - 15 পিচ
3.গোটা সরিষা বাটা - 2 টেবিল চামচ
4.কাঁচা লঙ্কা - 5 টি
5.শুকনো লঙ্কা বাটা - 4 টি
6.গোলমরিচ বাটা - 5 টি
7.গোটা জিরা বাটা - 1 টেবিল চামচ
8.তেজপাতা - 3 টি
9.লবণ - 2 টেবিল চামচ
10.হলুদ - 1 টেবিল চামচ
11.জিরা ও শুকনা লঙ্কা গুঁড়ো-1 টেবিল চামচ
12.সরিষার তেল - 80 গ্রাম
13.পরিমাণ মতো জল
(আমি যেহেতু রেসিপিতে সরিষা বাটা ব্যবহার করেছি তাই ইলিশ মাছের স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রাখার জন্য পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করিনি)
★প্রস্তুত প্রনালী:
ধাপঃ 1
●প্রথমে আমি বাজারে গিয়ে অনেকগুলি ইলিশ মাছের মধ্যে 800 গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ মাছ কিনলাম।তারপর মাছটি বাড়ি নিয়ে আসলাম।
ধাপঃ 2
● এবার ঝিনুকের সাহায্যে মাছের গাঁয়ের আশ ছাড়িয়ে নিলাম।তারপর মাছটির আশ ছাড়ানো হয়ে গেলে পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোভাবে গোটা মাছটি ধুয়ে নিলাম 2-3বার।
ধাপঃ 3
●এরপর মাছটি বটির সাহায্যে কেটে নিলাম মিডিয়াম সাইজে পিচ পিচ করে।
ধাপঃ 4
●কেটে নেওয়া মাছের মধ্যে আমি রেসিপির জন্য 5 পিচ মাছ নিয়ে হালকা করে ধুয়ে নিলাম।
ধাপঃ 5
●এবার আমি শীল-নোরার সাহায্যে মসলার উপকরণগুলি বেঁটে নিলাম।যেমন- গোটা সরিষা,কাঁচা লঙ্কা, শুকনো লঙ্কা, গোটাজিরা ও গোলমরিচ।
ধাপঃ6
●এরপর শিকড় জন্মানো কিছু পাকা তালের আটি নিয়ে দা দিয়ে কেটে নেব।
●এক্ষেত্রে আমি বাবার সাহায্য নিয়েছিলাম।কারণ একটি কাটতে কাটতে আমার সারাদিন লেগে যাবে এবং ছিটকে বেরিয়ে যাবে তালের আটি।
ধাপঃ 7
●এরপর আমি 1 মগ জল ও একটি চামচের সাহায্যে কেটে নেওয়া তালের আটির মধ্য দিয়ে শাস বের করে নেব পরিষ্কারভাবে।
●তো আমার তালের আটির শাসগুলি বের করে নেওয়া হয়ে গেছে।
ধাপঃ 8
●আমি এটি পরিষ্কারভাবে আটি থেকে বের করে নেব এবং হালকা হাতে জল লাগিয়ে মুছে নেব শাসগুলি।এটি যেহেতু একটু জলা জাতীয় তাই এটি জল দিয়ে ডুবিয়ে ধুয়ে নেওয়া যাবে না।
ধাপঃ 9
●এবার আমি রেসিপির সকল উপকরণ পরিমাণ মতো একত্রে একটি প্লেটে নিয়ে নেব সাজিয়ে।
ধাপঃ 10
●এরপর আমার কেটে রাখা মাছগুলোতে পরিমাণ মতো লবণ ও হলুদ মিশিয়ে নেব।এরপর ভেঁজে নেওয়ার পালা।
ধাপঃ 11
●এবার একটি কড়াই ধুয়ে চুলায় মিডিয়াম আঁচে বসিয়ে দেব।কড়াইতে তেল দিয়ে একটু গরম করে নেব।কড়াই হালকা গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে হলুদ ও লবণ মেশানো মাছগুলো দিয়ে দেব।
ধাপঃ 12
●তারপর উল্টেপাল্টে আমি মাছগুলো হালকা করে ভেজে নিলাম।
ধাপঃ 13
●এরপর পুনরায় কড়াইটি আবার চুলার মিডিয়াম আঁচে বসিয়ে দেব।তাতে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে দেব।তারপর তেলের মধ্যে বেঁটে রাখা মসলার উপকরণগুলি দিয়ে কষিয়ে নেব 5 মিনিট। এছাড়া লবণ ,হলুদ ,তেজপাতা, জিরা গুঁড়া ও একে একে দিয়ে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নেব।
ধাপঃ 14
●মসলা নেড়েচেড়ে কষানো হয়ে গেলে তার মধ্যে তালের আটির শাসগুলি দিয়ে দেব এবং পরিমাণ মতো জল দিয়ে দেব কড়াইতে।এবারে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দেব 10 মিনিট মতো।
ধাপঃ 15
●10 মিনিট পর ঢাকনা খুলে রেসিপিটি নেড়েচেড়ে নেব।তারপর ভেঁজে রাখা মাছগুলো দিয়ে দেব।এই পর্যায়ে আমি তরকারিটি আবারো 10 মিনিট মতো ফুটিয়ে নেব।
ধাপঃ 16
●10 মিনিট পর রেসিপিটি একটি পাত্রে নামিয়ে নেব। তো আমার রেসিপিটি তৈরি করা হয়ে গেছে।এবার গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।এটি ভীষণ স্বাদের একটি রেসিপি।
আশা করি, আমার আজকের রেসিপিটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। এবং রেসিপিটি আমার খুব ভালো লেগেছে। তালের শাস আমি খুব পছন্দ করি। কিন্তু গ্রামে ছাড়া পাওয়া যায় না। একটি নতুন একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন বৌদি ,তালের শাস গ্রামে ছাড়া পাওয়া যায় না।কারণ গ্রামেই বেশি মাটি থাকে। আপনার মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা পেলাম বৌদি।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,এবং আমি কৃতজ্ঞ।
আপু আপনার রেসিপিটি দেখে মনে হচ্ছে অনেক সুস্বাদু হয়েছে আর আমি কখনোই তালের সাস দিয়ে ইলিশ মাছের রেসিপির নাম শুনিনি। শুভ কামনা রইলো আপু।
হ্যাঁ,আপু অনেক স্বাদের হয়েছিল।আপনি ও একদিন ট্রাই করে দেখতে পারেন।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
😊
অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আপনার রেসিপিটি লোভনীয় করে তুলেছেন। তাই দেখে জিভে জল এসে গেল। আর যাই হোক সব মিলিয়ে আপনার পোস্টটি অনেক সুন্দর ছিল। তাই আমার পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ধন্যবাদ আপু।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সুন্দর মতামত ব্যক্ত করার জন্য।
অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার রেসিপিট।মুখে জল চলে আসলো আপনার রেসিপি দেখে। ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এতো সুন্দর করে আপনি ইলিশ রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন কি বলব আপু। এটি সম্পূর্ণ ইউনিক একটি রেসিপি। তালের শাস দিয়ে আমি প্রথম দেখালাম এই রেসিপি। ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ আপু,আবিষ্কার করলাম আমি।আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনি ইলিশ রেসিপি সবার থেকে ইউনিক ভাবে রান্না করেছেন। আমি তালের আটি দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না করতে দেখিনি।এই প্রথম এই রকম রেসিপি দেখতে পেলাম। শুভকামনা রইল আপনার জন্য আপু।
হ্যাঁ ভাইয়া, নতুন তৈরি করলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য।
পাকা তালের আটির শাস দিয়ে ইলিশ মাছের রেসিপি খুবই ইউনিক একটি রেসিপি যেটা আমি কখনোই দেখি নাই। খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপু। শুভ কামনা আপনার জন্য♥♥
হ্যাঁ, আপু নতুনভাবে করার চেষ্টা করলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করার জন্য।
ইলিশ মাছ আমার খুব প্রিয়। আপনার রেসিপিটি অসাধারণ হয়েছে। ধাপগুলো খুব সুন্দর ভাবে মাঝে উপস্থাপন করেছেন। নিশ্চয় অনেক সুস্বাদু হয়েছে ।শুভকামনা আপনার জন্য।
হ্যাঁ, ভাইয়া অনেক স্বাদের হয়েছিল।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
আপু এই প্রতিযোগিতার কারণে যে কতো নতুন নতুন ইলিশ আইটেম দেখতে পারছি। সত্যিই অনেক ভাল লাগছে। তালের আটি দিয়ে যে এতো সুন্দর ইলিশ রেসিপি হয় তা আগে জানা ছিল না।
আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে এই রেসিপিটি। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল আপু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন আপু,নতুন নতুন রেসিপি দেখতে সত্যিই ভালো লাগে।আপু আমি আবিষ্কার করলাম এটি 😃।আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই আনন্দ হচ্ছে।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
দুর্দান্ত একটা রেসিপি। তালের শাস দিয়ে একটু মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ লাগে। ভালোই লেগেছিল। ইলিশ মাছের ভিন্ন স্বাদ পেতে রেসিপিটি দারুন। ধন্যবাদ সকলের কাছে ভাগ করার জন্য।
একদম ঠিক বলেছো দাদা।ভিন্ন ধরনের স্বাদ।অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।