"অত্যন্ত স্বাদের চিংড়ি দিয়ে তেলাকুচা শাকের ফল ভাজি রেসিপি"(10%বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)
নমস্কার
বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছেন।আজ আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন একটি রেসিপি শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে।সেটি হলো- "চিংড়ি দিয়ে তেলাকুচা শাকের ফল ভাজি রেসিপি"।
তেলাকুচা শাক ও ফল সম্পর্কে কিছু তথ্য:
বন্ধুরা , তেলাকুচা শাক একটি ঔষধি লতানো গাছ।এটি গ্রামের বিভিন্ন ঝোপ -ঝাড়ে কিংবা রাস্তার পাশে দেখতে পাওয়া যায়।এই গাছের পাতা, ডাটা ,শিকড় এবং ফল সবকিছুই শাক সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।আমাদের বাড়িতে যখনই কারো মাথা ব্যথা করে আমার মা এই তেলাকুচা শাকের ডাটা রান্না করে খেতে দেন।তেলাকুচা শাকের ফলের কয়েকটি বিশেষ উপকারী গুন---
1.কোষ্ঠকাঠিন্য ও কুষ্ঠ রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
2.ঘুম হতে সাহায্য করে।
3.হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করে।
4.ডায়াবেটিস রোগের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
5.জন্ডিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই তেলাকুচা ফল।
সুতরাং এই ফল দেখে কেউ একে ছোট কিংবা তুচ্ছ ভাববেন না।
তেলাকুচা ফল সম্পর্কে আমার অভিমত:
অনেকেই এই ফলকে বিষাক্ত ফল বলে অভিহিত করেন।কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো এটি মোটেও বিষাক্ত নয় বরং অত্যন্ত ঔষুধি একটি ফল।এছাড়া অনেকের গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করেন কিন্তু বাড়িতে এই ফল থাকা সত্ত্বেও এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন নাই।কারণ আনেকেই এই ফলটি রান্নার সঠিক পদ্ধতি বা নিয়ম জানেন না।এটি ঠিকভাবে রান্নার পদ্ধতি জানলে পটল কিংবা কুদরির থেকে ১০ গুন বেশি স্বাদের।এছাড়া এটি অনেক রান্না করলে ও সল্প হয়ে যায়।এই তেলাকুচা ফল পাকলে পাখিরা আনন্দের সঙ্গে খেয়ে থাকে ।আবার রান্নার সঠিক নিয়ম না জানলে এটি অত্যন্ত তেঁতো লাগবে খেতে।কিন্তু আমি আপনাদের যে পদ্ধতি দেখাবো তাতে কোনো প্রকার তেঁতো লাগবে না বরং একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে।
ছোট্ট একটি উদাহরণ:
যখন আমার পরিবারের সবাই শহরে থাকতাম,তখন আমাদের খাওয়ার জন্য এই ফলটি বাবা একদিন সংগ্রহ করে এনেছিলেন ।আমরা মাঝে মাঝেই এই ফল এবং এই ফলের গাছ রেসিপি করে খেয়ে থাকি।তো সেটি দেখে আমাদের পাশের একজন প্রতিবেশী বৌদি প্রশ্ন করেছিলেন ,এটি তেঁতো লাগে কিনা?কিন্তু উত্তরে আমরা বললাম - না ।কিন্তু কিছু কথা বলার পর জানতে পারলাম যে ওই বৌদিটি তেলাকুচা ফল সরু করে কেটে বেগুন ভাজির মতো অনেক তেলে চুবিয়ে ভেঁজে ছিলেন কিন্তু খাওয়ার সময় অত্যন্ত তেঁতো হয়েছিল বলে তেলসহ পুরো ভাজিটিই ফেলে দিয়েছিলেন।এক্ষেত্রে আমি বলবো সে তেলাকুচা ফল রান্নার পদ্ধতিটিই জানতেন না।তো চলুন ধাপে ধাপে আপনাদেরকে রান্নার পদ্ধতিটি দেখিয়ে দিই আমি এবং কেন তেঁতো হয়েছিল সেটাও বলে দেব।
উপকরণ:
1.তেলাকুচা ফল - 450 গ্রাম
2.চিংড়ি - 100 গ্রাম
3.পেঁয়াজ কুচি - 2 টি
4.কাঁচা মরিচ - 5 টি
5.লবণ - 1টেবিল চামচ
6.হলুদ - 1/2 টেবিল চামচ
7.পাঁচফোড়ন-1/2 টেবিল চামচ
8.সরিষার তেল -60 গ্রাম
রান্নার পদ্ধতি:
ধাপঃ 1
●আমাদের বাড়ির ঘেরা-বেড়ার গায়ে জিওল গাছে এবং পাশের একটি ঝোপে প্রচুর তেলাকুচা গাছ হয়েছে ।ফলে তাতে অনেক ফল ও ধরেছে।এটি আপনাদের অনেকেরই পরিচিত ফল।
ধাপঃ 2
●তো আমি সেগুলো সংগ্রহ করেছি।এছাড়া এই ঝোপের মধ্যে অর্থাৎ আমার হাতের পাশে প্রচুর পরিমানে বিষাক্ত বিছুটি গাছ রয়েছে।বিছুটি গাছের পাতার কিনারায় হুল রয়েছে ।এটি হাতে ফুটে গেলে চুলকানি ও জ্বর ও হতে পারে।আমার হাতে ও এই বিষাক্ত কয়েকটি হুল ফুটে গিয়েছিল ।ফলে একদিন মতো জ্বর ছিল।তাই এগুলো সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়।
ধাপঃ 3
●তো এভাবে আমি তেলাকুচা ফলগুলো সংগ্রহ করে নিলাম।
●এরপর আমি বটির সাহায্যে ফলগুলো সরু করে কুচিয়ে নেব।পাকা ফলগুলি সুন্দর দেখতে কিন্তু কুচানো যায় না।
ধাপঃ 4
●তো সব তেলাকুচা ফল সরু করে কুচিয়ে নেওয়া হয়ে গেছে আমার।
ধাপঃ 5
●এরপর আমি এটিকে পরিষ্কার জল দিয়ে 4-5 বার কসলিয়ে ধুয়ে নেব।কারণ তেঁতো লাগার উপাদানটি অর্থাৎ তেলাকুচা ফলের দানা ফেলে দেব।যতক্ষণ না পর্যন্ত দানা বের হতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ধুতে থাকতে হবে।তো আমি একটি একটি করে দানা ফেলে দিয়ে নেব।আমার উদাহরনের বৌদি তেলাকুচা ফলের দানাসহ রান্না করেছিলেন ফলে তেঁতো লেগেছিল।সুতরাং কোনোভাবেই এর দানা থাকলে চলবে না।
ধাপঃ 6
●এইভাবে একটি একটি নিয়ে টুকরো নিয়ে দানা পরিষ্কার করে নেব।
ধাপঃ 7
●বন্ধুরা, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কতটা দানা বের করে নিয়েছি আমি ।এগুলো দেখতে সুন্দর কিন্তু এগুলো ফেলে দেব ।কারণ এতেই তেঁতো ।
ধাপঃ 8
●তো আমার ধুয়ে নেওয়া হয়ে গেছে ।আমি সব দানা একটি একটি করে পরিষ্কার করে ফেলে নিয়েছি।
ধাপঃ 9
●এবার আমি বটির সাহায্যে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নেব।তারপর চুলায় একটি পরিষ্কার কড়া ধুয়ে বসিয়ে দেব মিডিয়াম আঁচে।কড়াতে তেল দিয়ে চিংড়ি ভেঁজে নেব।চিংড়ি মাছ ভাজা হয়ে গেলে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি ও পাঁচফোড়ন দিয়ে হালকা করে ভেঁজে নেব।তারপর তেলাকুচার কুচানো ফল দিয়ে দেব কড়াইতে এবং খুন্তি দিয়ে নেড়েচেড়ে নেব।
ধাপঃ 10
●এরপর পরিমাণ মতো লবণ ,হলুদ দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে কেটে রাখা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দেব ভাজিতে।তারপর নেড়েচেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দেব 20 মিনিট ধরে।মাঝে মাঝে নেড়েচেড়ে দেব ঢাকনা খুলে।এতে আলাদা করে কোনো জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ধাপঃ 11
●20 মিনিট পর ভাজিটি সেদ্ধ হয়ে গেলে আর ও 5 মিনিট রেখে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নেব একটি পাত্রে।এবার এটি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।এটি কিন্তু খেতে খুবই ভালো লাগে।একবার খেলে মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ।আপনাদের বাড়ির পাশে ঝোপে- ঝাড়ে এই ফল বা এই ফলের গাছ থাকলে এভাবে রেসিপি করে আপনারা কিন্তু খেতে পারেন।
ধাপঃ 12
তো তৈরি হয়ে গেল আমার আজকের অত্যন্ত সুস্বাদু রেসিপি "চিংড়ি দিয়ে তেলাকুচা শাকের ফল ভাজি "।আশা করি আপনাদের কাছে আমার আজকের রেসিপিটি ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সকলেই ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।
এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটি রেসিপি, যদিও এগুলোকে আমি দেখেছি কিন্তু খাওয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনি খুব সুন্দর ও স্বাদের একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আজ। স্বাদের এই জন্য বললাম কারন এগুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে স্বাদের পরিমানটা কি রকম হবে। ধন্যবাদ
হ্যাঁ ভাইয়া ,এটি যেমন স্বাদের তেমনি শরীরের জন্য উপকারী।আপনি একবার স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন এভাবে।আশা করি খুবই ভালো লাগবে।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
চিংড়ি দিয়ে তেলাকুচা শাকের ফল ভাজি রেসিপি অনেক সুন্দর হয়েছে আপু তবে আমি এটা কখনো খাইনি। আপনার রেসিপি দেখে খাওয়া ইচ্ছা হলো। ধন্যবাদ আপনাকে আপু আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
একদিন অবশ্যই খেয়ে দেখবেন ভাইয়া।ভালো লাগবে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
Thank you.
প্রথম শুনলাম এই সবজির কথা। আর রান্নার ধারণা ইউনিক। যেহেতু অনেক সুস্বাদু খেতে বাংলাদেশে খোঁজ করব পাওয়া যায় কিনা। ধন্যবাদ আপু
অবশ্যই খুঁজলে এটি আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন আপু।কারণ এটি ঝোপ -ঝাড় ও রাস্তার পাশে পাওয়া যায়।এছাড়া গ্রাম অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু,আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
তেলা কচুর ফল তো আমি আমার টিয়া কে খাওয়াই কিন্তু এটা যে রান্না করে রেসিপি করে খাওয়া যায় সেটা আমি জানতাম না আপনার থেকে এই প্রথম জানলাম আপনি খুবই সুন্দর রেসিপি তৈরি করেছেন যে ভাবে ফটো তোলে বর্ণনা করেছেন মনে হচ্ছে খেতে অনেক টেস্ট হয়েছে আপনার জন্য শুভকামনা রইল
হ্যাঁ, ভাইয়া এটি খুবই টেস্ট খেতে।আপনি একদিন খেয়ে দেখবেন, পটলের থেকে ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
এই ফল আমি আগে কখনো দেখিছি বলে মনে হচ্ছে না। তবে আপনার রেসিপিটি দেখে খুবই ভালো লাগছে। আর এর দারুন কিছু উপকারিতাও রয়েছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমি খুশি হলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সুচিন্তিত মতামত জানানোর জন্য।
আপু আজকে আমি নতুন রেসিপি শিখলাম। এটি যে খাওয়া যায় আমি কখনো জানতামই না।আপনাকে ধন্যবাদ এই সুন্দর রেসিপিটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনি ও খুব সুন্দর রেসিপি তৈরি করেন।অনেক ধন্যবাদ আপু,আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
আমি এই ফলটি খাই তো নি,দেখিও নি।হয়তো আমাদের এদিকটায় হয়না।
তবে ফলটি দেখতে ছোট খাটো আর সুন্দর ও।আপনার রান্না দেখে মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে খেতে।
আপনি খুব সুন্দর ভাবে রান্না করেন।
হ্যাঁ আপু ,ফলটি পাকলে খুব সুন্দর দেখতে লাগে।এটি খুবই স্বাদের হয়েছিল।অনেক ধন্যবাদ আপু,আপনার সুন্দর মতামত ব্যক্ত করার জন্য।
কখনো খাওয়া হয়নি দিদি। তবে আপনার রেসিপি দেখে সুস্বাদু মনে হচ্ছে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দিদি।
হ্যাঁ ,ভাইয়া এটি খুবই সুস্বাদু।একদিন সম্ভব হলে খেয়ে দেখবেন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
😱 আমি আপনার আজকের রেসিপিটা দেখে বেশ অবাক হলাম। আমি জানতাম না তেলাকুচির ফলও রান্না করে খাওয়া যায়। আজকেই প্রথম দেখলাম তাও আপনার রেসিপিটা দেখে। আমি জানতাম এগুলো আসাধারণত পাখিরা খাই। কিন্তু আজকে রেসিপি হিসেবে দেখে আমি বেশ অবাক।
দেখেতো মনে হচ্ছে বেশ সুস্বাদু হয়েছে।
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। নতুন একটা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
হ্যাঁ ভাইয়া, এটি পটলের থেকে ও বেশি স্বাদের খেতে।সম্ভব হলে আপনি ও একদিন খেয়ে দেখবেন।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।