গল্পের মিশেলে: "এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন"(শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।আমিও মোটামুটি ভালোই আছি।আজ আমি কোনো রেসিপি, diy ,কবিতা কিংবা অঙ্কন নিয়ে আসিনি।আজ আমি হাজির হয়েছি নতুন একটি বিষয় নিয়ে।মাঝে মাঝেই নিজের সঙ্গে ঘটা অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে আমার ভালোই লাগে।আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে।

এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন শেষ পর্ব:

IMG_20221102_172631.jpg
সোর্স

আগের পর্বে বলেছিলাম আমাদের বাড়ি থেকে কোনো সাপুড়েকে সাপ ধরতে দেওয়া হয় না।তো এইবার বাবা কেন সাপ ধরতে বললেন বাড়ির মধ্যে থেকে সেটাই বলবো।তো চলুন শুরু করা যাক-----

এমনিতেই কেউটে সাপ খুবই বিষাক্ত ও রাগী।সুযোগ পেলেই ছোবল মারে।তবুও মাকে জিজ্ঞাসা করলাম ---- মা বাড়ির মধ্যে থেকে কেন সাপ ধরতে দিচ্ছ?
উত্তরে মা বললেন--- কেউটে সাপ বলে কথা।কখন কি করে বসবে রাত -বিরাতে।
সাপুড়ে লোকটি আমার কাছ থেকে সাপের বর্ননা নিয়ে কেউটে সাপের কথা বললেন।এমনকি ঘাস সরিয়ে একটি ঝিনুক নিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে দেখে নিল কি যেন।তারপর সাপুড়ে বললো ---একটি সাপের চিহ্ন আছে এখানে।
লোকটি কোনো গাছ ব্যবহার করেন না এটাও জানালো।কিন্তু আদতে তারা গাছ ব্যবহার করেন।তারপর বাবার কাছ থেকে শাবল চেয়ে ও লাঠি নিয়ে গর্ত খোঁড়া শুরু করলো।মাটিতে অনেক ইঁদুরের উৎপাত ছিল তাই টয়লেটের পাকা স্লাবের গা বেয়ে অনেক দূর অবধি গর্ত চলে গেছে।মাটির ভিতরে শুধুই ফাঁপা।বাবা ও সাহায্য করলো লোকটিকে,লোকটি অনেকটা দূর অবধি মাটি খুঁড়লো।কিন্তু গর্তের মুখ অনেক ভিতরে তাই হাল ছেড়ে দিল।তারপর আমাদের কাছ থেকে চিনি ও এক বোতল জল চেয়ে তৃষ্ণা মেটালো।

মূলত এরা সাপ ধরে চিড়িয়াখানায় দিয়ে আসে,বিনিময়ে 600-700 টাকা উপার্জন করে এক একটি সাপ প্রতি।এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে এরা।কিন্তু বেদেরা আলাদা গোষ্ঠী, যারা সাপ ধরে সাপ খেলা দেখানোর কাজে ব্যবহার করেন।কিন্তু এই সাপুড়ে এই পেশায় নিয়োজিত।সাপ ধরে চিড়িয়াখানাতে দেওয়ার ফলে সেখানকার কর্মকর্তারা সাপের বিষ সংগ্রহ করতে পারে।তারপর তা ঔষুধ তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা হয়।সাপুড়ে অনেক চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হলো ।যদিও তার আগেই সে একটি ইয়া বড়ো চন্দ্রবোরা সাপ ধরে এনেছে।সাপটি ব্যাগে ভরে তাদের বাঁশের ঝুড়ির মধ্যে রেখেছিল।যেইনা ব্যাগটি আমাদের দেখানোর জন্য বের করেছিল ঝুড়ির বাইরে।ওমনি সাপটি শোঁ শোঁ শব্দ করে ফুফাতে শুরু করলো।এতটাই জোরে জোরে আওয়াজ করছিল যে মুখ বাঁধা সাপের ব্যাগটি বেলুনের মতো ফুলে ফুলে উঠছিল।প্রায় আধঘণ্টা ধরে সাপটি জোরে জোরে আওয়াজ করতে লাগলো ভয়ঙ্করভাবে ।যেটি শোনার অনুভূতি এই প্রথমবার হলো আমার।এরপর লোকটি পরিচয় দিল পাশের স্টেশনেই বাড়ি।তাই আমাদের কাছে কিছু মানকচুর চারা ও 2 টি বেগুনের চারা চাইলো।আমরা লোকটিকে 5 টি বেগুনের চারা ও কয়েকটি মানকচুর চারা দিলাম।ভারী খুশি মনে লোকটি আমাদের বাড়ির চারিপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর পরামর্শ দিয়ে চলে গেলেন।
মা শুধু থেকে থেকেই বলছিল----- এইজন্য হয়তো শনতু ও মিনি টয়লেটের পিছনে গিয়ে মাঝে মাঝেই বসে থাকে।কিন্তু গল্পের রহস্য তো অন্য কিছু।

বিকেলের দিকে গল্প অন্যদিকে মোড় নিল।শনতু টয়লেটের পিছন সাইড থেকে মুখে পুরে নিয়ে আসলো এক গুয়ে শালিকের মৃত বাচ্চাকে।বাচ্চাটি কয়েক দিন পরেই উড়তে শিখতো।খুবই খারাপ লাগলো আমার।টয়লেটের পিছনে কলার একটি ঝাড় রয়েছে আর তাতে পাখিরা সারাক্ষন কিচিরমিচির করে।শনতু ও মিনি আমাদের অজান্তেই তাক করে মাঝে মাঝেই।কি আর করা যাবে!মা শনতুর মুখ থেকে সেটা লাঠি দিয়ে ছাড়িয়ে নিল।তারপর ফেলে দিয়ে আসলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে।আমরাও বুঝলাম --- শনতু ও মিনি সাপের জন্য টয়লেটের পিছনে গিয়ে বসে থাকতো ঠিকই।এই কথাটি পুরোপুরি সঠিক না হলেও পাখি তাড়ানোর জন্য ঠিক বসে থাকে মাঝে মাঝেই।তো এটাই ছিল আমার নতুন অভিজ্ঞতা।

আশা করি আমার আজকের লেখা গল্পের অভিজ্ঞতাটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।পরের দিন আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো, ততক্ষণ সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 2 years ago 
আপনার প্রথম পর্ব পড়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কি সাপ বেড় হয় জানার জন্য। কিন্তু সাপুড়ে ত ধরতেই পারল না। তবে শনতু আর মিনি কেন টয়লেটের পিছনে বসে থাকত তা জানা গেল। ধন্যবাদ দিদি।
 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া, সাপুড়ের ব্যর্থতা।ধন্যবাদ আপনাকে পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 
আপনার আগের পর্বটি আমার পড়া হয়নি। এরপর প্রথমটুক পড়ে বুঝতে পারলাম সাপ নিয়ে কাহিনী। যদিও আপনি সাপ ধরতে মানা করেছেন তারপরও আপনার আব্বা সাপ ধরার জন্য লোক নিয়ে এসেছে। আপনি ঠিকই বলেছেন কেউটে কুলিম বিষধর একটি সাপ। কোন জায়গায় ইঁদুরে গর্ত থাকলে সেখানে সাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সাপের বিষ দিয়ে অমেক দামি ওষুধ তৈরি করা যায়।
 2 years ago 

যদিও আপনি সাপ ধরতে মানা করেছেন তারপরও আপনার আব্বা সাপ ধরার জন্য লোক নিয়ে এসেছে।

না ভাইয়া, এইরকম কিছু নয়।আসলে কোনো গল্পের শেষ পড়লে সেই গল্পের বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু গল্প সম্পর্কে নয়।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

দিদি আপনার লেখা আগের পোষ্টটি ও দেখেছিলাম ৷ যা হোক পরে তাহলে সাপুরে মাটি খুড়েও সাপটি পায় নি ৷
তবে দিদি এখন ওই দিকে গেলে সর্তক থাকবেন ৷ আর হ্যা বাড়ির চার পাশে ব্লিচিং পাউডার দিবেন ৷
আর আমার কাছে একটা জিনিস অনেক ভালো লাগলো যে সাপ মারে না শুনে৷

 2 years ago 

হ্যাঁ দাদা,ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আজকে।ধন্যবাদ আপনাকে সতর্কমূলক মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64349.87
ETH 2775.11
USDT 1.00
SBD 2.65