ABB Contest-45 ||"ছোলা ও বাদামের সংমিশ্রনে পাঁচমিশালী শাকের নাগেটস রেসিপি"
নমস্কার
ছোলা ও বাদামের সংমিশ্রনে পাঁচমিশালী শাকের নাগেটস রেসিপি:
আমরা বাঙালি জাতি যেমন মাছে-ভাতে জনপ্রিয় তেমনি শাকান্নেও।পৃথিবীতে যে কয়েক প্রকারের শাক রয়েছে তা হয়তো আজও আমাদের অজানা।তবে এই অসংখ্য শাকের সমাহারের মধ্যে যেকোনো একটি পছন্দের শাককে বেছে নেওয়াটা খুবই কঠিন।তাই আমি আমার পছন্দের পাঁচটি রকমারি শাককে বেছে নিয়েছি।অধিকাংশ শাকই মেঠো অর্থাৎ মাঠে জন্মায়।যদিও এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে।তাই অপেক্ষা করছিলাম কবে বৃষ্টি থামবে,কারন বৃষ্টির দিনে মাঠে শাক তুলতে যাওয়া মানেই জোঁকের সম্মুখীন হওয়া।যাইহোক আজ জোঁককে উপেক্ষা করে আমি আমার প্রিয় কয়েক প্রকার শাক তুলেই ফেললাম।তার মধ্যে রয়েছে--শুষনি শাক/ঘুম শাক,কুলেখাড়া শাক,সাঞ্চি শাক,কলমি শাক এবং পুঁইশাক।প্রত্যেকটি শাকেই রয়েছে আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ।যেটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।আর এই শাকগুলির স্বাদও দারুণ।তাই আমি এই শাক একত্রে ছোলা ও বাদামের সঙ্গে মুসুর ডাল দিয়ে নাগেটস তৈরি করেছি।আমি এতে কোনোরকম বেসন,আটা,ময়দা কিংবা পেঁয়াজ কুচি ব্যবহার করিনি।তবুও এটা খেতে খুবই স্বাদের হয়েছিল।তো চলুন রেসিপিটি শুরু করা যাক---
■সংক্ষেপে শাকগুলির উপকারীতা:-
আমি আমার রেসিপিতে পাঁচ প্রকার শাক ব্যবহার করেছি।প্রত্যেকটি শাকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা রয়েছে।তাই সংক্ষেপে নীচে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম---
◆শুষনি শাক/ঘুম শাক
●শুষনি শাক খেলে ভালো ঘুম হয় বলে এর আরেক নাম ঘুম শাক।এছাড়া চোখের রোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়ারিয়া নিরাময়ে শুষনি পাতার রস কার্যকর।
◆কুলেখাড়া শাক
●কুলেখাড়া শাকের পাতার রস ক্ষতস্থান নিরাময়ে সাহায্য করে।এছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে কুলেখাড়া পাতার রস খেলে তা দূর হয়।
◆সাঞ্চি শাক
●এই শাকগুলি খাল-বিলের জলাশয়ে জন্মায়।তাই এই শাকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও আয়রন বিদ্যমান। নিয়মিত খেলে শারীরিক স্ফুর্তি বৃদ্ধি পায়।
◆কলমি শাক
●কলমি শাকের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।এছাড়া রক্তাল্পতা, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিসের মতো রোগ প্রতিরোধে কলমি শাক সাহায্য করে।
◆পুঁইশাক
●পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।পুঁইশাকে থাকা ভিটামিন এ এবং সি ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এছাড়া পুঁইশাক খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়।
উপকরণসমূহ:
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
শুষনি শাক/ঘুম শাক | 1/2 মুঠি |
কুলেখাড়া শাক | 1/2 মুঠি |
সাঞ্চি শাক | 1 মুঠি |
কলমি শাক | 1 মুঠি |
পুঁইশাক | 5-6 টি |
মুসুরি ডাল | 1.5 কাপ |
ছোলা ও বাদাম | 1/2 কাপ |
রসুন কুচি | 3 কোয়া |
চালের গুঁড়া | 3 টেবিল চামচ |
কাঁচা মরিচ কুচি | 3 টি |
লবন | 1 টেবিল চামচ |
হলুদ | 1/2 টেবিল চামচ |
পাঁচফোড়ন | 1/3 টেবিল চামচ |
শুকনো মরিচ গুঁড়া | 1/2 টেবিল চামচ |
গরম মসলা গুঁড়া | 1/3 টেবিল চামচ |
কর্নফ্লাওয়ার | 3 টেবিল চামচ |
বিস্কুট গুঁড়া | 1 কাপ |
সরিষার তেল | 2 টেবিল চামচ |
সাদা তেল | 100 গ্রাম |
টমেটো সস | |
জল |
প্রস্তুত প্রণালী:
ধাপঃ 1
প্রথমে আমি শাকগুলি বেছে নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলাম জল দিয়ে।তারপর বটির সাহায্যে কুচিয়ে কেটে নিলাম।
ধাপঃ 2
এবারে মুসুর ডাল ধুয়ে নিলাম জল দিয়ে ভালোভাবে।
ধাপঃ 3
এখন চুলায় একটি পরিষ্কার কড়াই বসিয়ে দিলাম মিডিয়াম আঁচে।কড়াইতে সামান্য পরিমাণ সরিষার তেল দিয়ে গরম করে নিলাম।
ধাপঃ 4
এরপর ডালগুলি কড়াইতে দিয়ে হালকা নেড়েচেড়ে ভেজে নিতে হবে।
ধাপঃ 5
এখন ভেজে নেওয়া ডালের মধ্যে জল দিয়ে দিলাম অল্প পরিমাণে।এখন এর মধ্যে ছোলা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দেব যাতে দ্রুত সেদ্ধ হয়ে যায়।
ধাপঃ 6
তো আমার ডাল সেদ্ধ করা হয়ে গেছে।এখন এটা গলিয়ে জল শুকিয়ে নেব নেড়েচেড়ে।
ধাপঃ 7
এরপর একটি পাত্রে সেদ্ধ ডাল তুলে নিলাম কড়াই থেকে।
ধাপঃ 8
আবারো পুনরায় সামান্য তেল দিয়ে কুচিয়ে নেওয়া শাকগুলি কড়াইয়ে দিয়ে দিলাম।
ধাপঃ 9
এরপর নেড়েচেড়ে শাকগুলি কমিয়ে নেব।
ধাপঃ10
শাক কিছুটা কমে গেলে একটি প্লেটে তুলে নিলাম।
ধাপঃ 11
সেদ্ধ ডালের মধ্যে ভেজে নেওয়া শাকগুলি দিয়ে দিলাম।
ধাপঃ12
এরপর সমস্ত গুঁড়া মসলা,বাদাম,কুচিয়ে রাখা উপকরণ একত্রে দিয়ে দিলাম শাকের মধ্যে।
ধাপঃ 13
এখন ভালোভাবে হাত দিয়ে মেখে নিলাম সমস্ত উপকরণগুলো।
ধাপঃ 14
মেখে নেওয়া হয়ে গেলে এইভাবে সেপ দিয়ে নিলাম মাখাটি।
ধাপঃ 15
এখন অল্প অল্প মিশ্রণ নিয়ে চারকোনা করে সেপ দিয়ে নেব।
ধাপঃ 16
তো আমার সমস্ত নাগেটসের সেপ দেওয়া হয়ে গেছে।
ধাপঃ 17
এরপর আমি কর্নফ্লাওয়ার নিয়ে নেব।
ধাপঃ 18
সামান্য জল ও লবণ দিয়ে একটি চামচের সাহায্যে কর্নফ্লাওয়ারের মিশ্রণ ভালোভাবে তৈরি করে নেব।
ধাপঃ 19
আমি বিস্কুটগুলি একটি নুড়ির সাহায্যে গুঁড়া করে নিলাম।
ধাপঃ 20
এখন একটি করে নাগেটস কর্নফ্লাওয়ারে চুবিয়ে নিয়ে বিস্কুট গুঁড়ার মধ্যে দিয়ে কোট করে নেব।
ধাপঃ 21
তো আমার সমস্ত নাগেটস কোট করে নেওয়া হয়ে গেছে।
ধাপঃ 22
এখন কড়াইতে পরিমাণ মতো সাদা তেল দিয়ে গরম করে নেব।
ধাপঃ 23
তেল গরম হয়ে গেলে কয়েকটি নাগেটস দিয়ে দেব কড়াইতে।
ধাপঃ 24
এরপর উল্টেপাল্টে বাদামি রঙের করে ভেজে নেব নাগেটসগুলি।
ধাপঃ 25
এবারে একটি প্লেটে টিস্যু পেপার নিয়ে তার উপরে ভেজে নেওয়া নাগেটসগুলি তুলে নিলাম।
শেষ ধাপঃ
এরপর প্লেটের উপরে পেঁয়াজ,শসা ও টমেটোর সস দিয়ে নাগেটসের প্লেটটি ডেকোরেশন করে নেব সুন্দরভাবে।তারপর কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম ফোনে।
পরিবেশন:
এবারে এটি গরম গরম শসা,পেঁয়াজ কিংবা টমেটোর সস দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।এছাড়াও চা,কফি অথবা গরম ভাতের সঙ্গেও পরিবেশন করা যাবে রেসিপিটি।এটি খুবই সুস্বাদু ও মজার হয়েছিল খেতে।এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে আমার খুবই ভালো লেগেছে।
আশা করি আপনাদের কাছেও অনেক ভালো লাগবে আমার আজকের রেসিপিটি।সকলে ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | রেসিপি |
---|---|
বিষয় | "ছোলা ও বাদামের সংমিশ্রনে পাঁচমিশালী শাকের নাগেটস" |
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
ছোলা এবং বাদামের সংমিশ্রণে আপনি খুব দারুন লোভনীয় একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। অনেক সুন্দর হয়েছে ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
দিদি আপনি এই রেসিপিটি করতে অনেক অনেক উপকরণ ব্যবহার করলেন।এটা বেশ স্বাস্থ্য সম্মত বটে।খুব ভালো লাগলো রেসিপিটি দেখে।মজার হবে খেতে আশাকরি।তবে প্রথম দুই শাক তো আমি চিনতেই পারলাম না।যাই হোক ভালো ছিল রেসিপিটি। ধন্যবাদ দিদি শেয়ার করার জন্য।
আপু,ছবি দেখলে হয়তো চিনতে পারবেন।তাছাড়া একেক জায়গায় আবার একেক নাম থাকে শাকের, যাইহোক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোলা ও বাদামের সংমিশ্রনে পাঁচমিশালী শাকের নাগেটস রেসিপি দেখে সুস্বাদু মনে হচ্ছে তাই খেতে ইচ্ছা করছে। আপনার রেসিপি পরিবেশন অসাধারণ হয়েছে।
আসলেই অনেক সুস্বাদু এটি খেতে ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রতিবারের মতো এবারেও খুবই সুন্দর একটি কনটেস্ট নিয়ে চলে এসেছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি৷ আর সকলেই খুবই সুন্দর সুন্দর রেসিপি শেয়ার করছে। আপনিও খুবই সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
আপনার সুমন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
অসাধারন একটি রেসিপি। আসলে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে চাই শেয়ানে শেয়ানে লড়াই। আর আপনি কিন্তু লড়াই করার মত একটি পোস্ট নিয়ে আজ উপস্থিত হয়েছে। দারুন ইউনিক এবং ডেলিসিয়াস পোস্ট ছিল আজকের পোস্টটি। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
জানি না আপু কী হবে!তবে শেষমেশ অংশগ্রহণ করতে পেরেছি বৃষ্টির মধ্যে এটাই আমার জন্য আনন্দের।ধন্যবাদ আপনাকে।
অসাধারণ একটি শাকের রেসিপি ছিল আপু। এই রেসিপি আমার কাছে অনেক ইউনিক মনে হয়েছে। তাছাড়া আপনি শাকের খুব সুন্দর বর্ণণা দিলেন উপকারিতা নিয়ে। এমন মজাদার নাগেট খেতে খুবই ভালো লাগবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
চেষ্টা করলাম ইউনিকভাবে রেসিপি তৈরি করার জন্য আপু,ধন্যবাদ আপনাকেও।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমে আপনাকে জানাই আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ছোলা ও বাদামের সংমিশ্রনে পাঁচমিশালী শাকের নাগেটস রেসিপি। আপনার তৈরি রেসিপি দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে খেতে বেশ সুস্বাদু হবে আপু। আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু আসলে গরম গরম শসা পেঁয়াজ খেতে প্রতিটা মানুষের কাছেই বেশ ভালো লাগে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আসলেই অনেক সুস্বাদু হয়েছিল খেতে ভাইয়া,ধন্যবাদ আপনাকেও।
পুঁইশাক আর কলমি শাকটা চিনেছি দিদি তবে বাকিগুলা চিনতে পারিনি। যেহেতু শাকগুলো মাঠে জন্মায়। আর শাক আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। আপনার রেসিপিটিও বেশ ইউনিক ছিল দিদি। হরেক রকমের শাক দিয়ে নাগেটস বানিয়েছেন। খেতেও মজা হয়েছে নিশ্চয়
হ্যাঁ ভাইয়া, মাঠের শাকগুলি অনেক মজার খেতে।আর এটি খুবই সুস্বাদু হয়েছিল খেতে,ধন্যবাদ আপনাকে।
শাক আমাদের সবার শরীরের যেন অনেক ভালো আর এই শাক দিয়ে এত সুন্দর একটি মুখরোচক রেসিপি তৈরি করেছেন যা আসলে অনেক প্রশংসার দাবি রাখে।এত সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দিদি।
আপনার প্রশংসাভরা মন্তব্যের জন্য,ধন্যবাদ আপু।