শৈশবের গল্প: "ল্যাম্প দুর্ঘটনা"
নমস্কার
শৈশবের গল্প: "ল্যাম্প দুর্ঘটনা"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এতটাই আচমকা ঘটে যায় যেটি খুবই বেদনাজনক হয়ে পড়ে।সুতরাং সেই মুহূর্তগুলি কখনোই ফিরে পেতে চাই না।তেমনি শৈশবে আমার হাতে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে।প্রথমেই বলে রাখি এটি ইচ্ছেকৃত নয় হঠাৎ ঘটে গিয়েছিল। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক----
সময়টা ছিল ফাল্গুনের মাঝামাঝি।সেই সময় আমাদের বাড়ি থেকে একটি গ্রাম পেরিয়ে 7 দিন টানা চলে বিশাল হরি সংকীর্তন।দিন-রাত যজ্ঞ হওয়ার জন্য দূর-দুরান্তের মানুষ এসে ভিড় জমায় সেখানে।নতুন বিয়ে হয়েছে আমার বড় মাসির মেয়ে সিবানীর।তাই সবসময় আসতে বলা হয় আমাদের বাড়িতে।ওরা ঠিক করলো যজ্ঞের সময় আসবে।
সন্ধ্যার ঠিক আগে আমার বড় মাসি,মাসির মেয়ে সিবানী এবং তার স্বামী অর্থাৎ আমার জামাইবাবু এসে হাজির হলেন আমাদের বাড়ি।আমি তখন খুব একটা বড় নই,গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি।ওরা আসার আগেই একদিন মায়ের সঙ্গে আমি যজ্ঞ ও তার বড় মেলা ঘুরে দেখে এসেছি।কিছু জিনিসও কিনেছি মেলা থেকে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ঘুমে যেন চোখের পাতায় মেলে না আমার।তো মা আমাকে ডেকে তুলেছে ঘুম থেকে।আমি উঠে বসলাম--- ছোটবেলার মন তাই আহ্লাদে আতখানা এত আপন মানুষ কাছে দেখে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে কারেন্ট ছিল না।প্রতিদিন রোজ সন্ধ্যায় আমাদের কাজ ছিল হ্যারিকেনের কাচ পরিষ্কার করে আলো জ্বেলে সন্ধ্যা-প্রদীপ দিয়ে বাবু হয়ে পড়তে বসা।আর ছিল ছোট্ট ল্যাম্পের বাতি ,সবই কেরোসিন মারফত জ্বলতো।তো আহ্লাদে গদগদ হয়ে আমি হাতে ল্যাম্প নিয়ে এগিয়ে গেলাম ঘরে। আর সেই সময় ঘটলো আসল ঘটনা---
সেই সময় খড়ের চালার ছাউনিতে বাঁশের ঘর ছিল আমাদের।তো ঘরে মাচানের এককোনে ট্যাংকের উপর রাখা পুরু কাগজের একটি বাক্স।তাতে রাখা ছিল অনেক খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় জিনিস।আর রাখা ছিল আমার মেলা থেকে কিনে নিয়ে আসা এক কৌটো কাজল, চুড়ি এবং মাথায় দেওয়া হেয়ার ব্যান্ড।চোখে শত ঘুম নিয়ে হাতে ল্যাম্প নিয়ে জিনিসগুলো বের করে এনে মাসির মেয়েকে দেখালাম।ততক্ষনে কাগজের বাক্সে ল্যাম্পের আগুন পড়ে ঘটে গেল ঘটনা।তবে ভাগ্যক্রমে একটি বড় ফিটকিরির টুকরো ছিল ওই কাগজের বাক্সে বলে রক্ষা। হালকা পোড়া গন্ধ লাগে তবে কেউ টের-ই পায় না।পরদিন সকালে মা কাগজের বাক্সে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতে গিয়ে দেখে সবই ছাই।আর কিছু জিনিস পুড়ে বাঁকা হয়ে গেছে কাজলের কৌটোর মতো ।নিচু খড়ের ছাউনি ঘরে বাঁশের গায়ে হালকা তাপে পুড়ে গেছে।আর রয়েছে অবশিষ্ট সেই উপকারী জিনিস ফিটকিরি।এমন ছাইয়ের বাক্স দেখে সবারই মন খারাপ হয়ে যায় তারপর মা কষিয়ে দিয়েছিল আমার পিঠে কয়েক ঘা।যদি ফিটকিরির টুকরোটি না থাকতো ঘটে যেত আরো বড় কোনো ঘটনা।তাছাড়া আরো বড় বিষয় হলো দিদিদের বেড়াতে নিয়ে আসা বড় ব্যাগটি ওই কাগজের বাক্সের পাশেই রাখা ছিল।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা যে তেমন কিছুই হয়নি।তো এটাই ছিল আমার শৈশবের গল্প ল্যাম্প দুর্ঘটনা।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং: শৈশবের গল্প |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
শৈশবের দারুন একটি স্মৃতি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সত্যিই আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে তেমন কোনো ক্ষতি আপনাদের হয়নি। তবে অনেকের জীবনে শৈশবের মুহূর্তে এরকম ঘটনা রয়েছে। আর এরকম ঘটনার জন্য মায়ের হাতে মার খাওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক। যাহোক, অনেক সুন্দর একটি স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাইয়া,গল্পটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
আসলে আমাদের শৈশবে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এতটাই মধুর ছিলো যে,বারবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেসব স্মৃতিতে। আবার পাশাপাশি কিছু কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে, যেগুলোর কথা মনে পরলে ভীষণ খারাপ লাগে। যাইহোক সেদিন কিন্তু অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন আপনারা। ফিটকিরি না থাকলে হয়তো বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। যাইহোক আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। শৈশবের স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আসলেই ভাইয়া, ফিটকিরি গলে গিয়ে আগুন থেকে রক্ষা করেছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।