শারদীয়া কনটেস্ট ১৪২৯|আমার নবমী পূজা দেখার কিছু ফোটোগ্রাফি|(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার

বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি সকলেই ভালো আছেন।আজ আমি @rme দাদার আয়োজিত শারদীয়া ১৪২৯ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।আসলে ঘন ঘন বৃষ্টির জন্য এই বছর দুর্গাপূজা দেখবার অতটা ইচ্ছে ছিল না আমার।তবে দাদার প্রতিযোগিতার জন্য একটু আগ্রহ জন্মেছিল মনে।কারণ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমার বেশ ভালো লাগে।এইজন্য দাদাকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ।

IMG-20221005-WA0065.jpg
লোকেশন

★নবমী দুর্গাপূজা দেখার জন্য যাত্রা:

আমি টার্গেট করেছিলাম যে যদি দুর্গাপূজা দেখতে হয় তাহলে একটু দূরে অর্থাৎ আমাদের বর্ধমান শহরে দেখতে যাবো।বর্ধমান শহর আমাদের বাড়ি থেকে 20 কিলোমিটারের পথ।আসলে আমি ও দাদা বের হবো বলে সাজুগুজু করতে করতেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি।কিন্তু যাবো মনঃস্থির করেছি যেতে তো হবেই।তাই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর বাড়ি থেকে কাঁদা ঠেলে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুইজন। তারপর টোটো ধরে স্টেশনে পৌঁছে টিকিট কেটে 1.30 টার সময় ট্রেনে চেপে বর্ধমানের দিকে যাত্রা করলাম।

★বর্ধমানের পূজা প্যান্ডেল ,ক্লাব ও থিমের নামসহ কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :(তারিখ ও সময়সহ)

বর্ধমান স্টেশনে নেমে আমরা বাস ধরে জিডি রোড দিয়ে পূজা মন্ডপে পৌছালাম।কারন গতবছর আমাদের সেই ঠকিয়ে দিয়েছিল টোটোওয়ালা,তাই টোটো ধরলাম না।যাইহোক পৌঁছে গেলাম প্রথম দুর্গাপূজা মন্ডপে। তারপর আমরা মোট 3 টি দুর্গামায়ের প্রতিমা দর্শন করেছিলাম ।

1.পুলিশ লাইন আবাসিক বৃন্দ দুর্গোৎসব কমিটির দুর্গামা দর্শন

◆থিমের নাম: (বাঙালিয়ানায় ঘরোয়া জীবনযাপন)

IMG-20221005-WA0064.jpg
লোকেশন

IMG-20221005-WA0066.jpg

IMG-20221005-WA0051.jpg
লোকেশন

প্রথমেই আমরা জিডি রোড পার হয়ে গেলাম পুলিশ লাইন আবাসিক বৃন্দ দুর্গোৎসব কমিটির দুর্গাপূজা দেখতে।এই থিমটি বাঙালিয়ানার সাধারণ ঘরোয়া সংস্কৃতি বা জীবনযাত্রাকে অনেকগুলো পেইন্টিং এর আদলে তুলে ধরা হয়েছে।এখানে বাঁশের চটা ও কাঠ দিয়ে প্রতিমার গঠন তৈরি করা হয়েছিল প্রবেশ পথ থেকে ভিতরে ঢুকেই।

IMG-20221005-WA0067.jpg

IMG-20221005-WA0058.jpg
লোকেশন

প্যান্ডেলের অন্তরসজ্জা খুবই সুন্দর এবং জলরঙে পেইন্টিং করা নানা দৃশ্য এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।অনেক ছবি ক্যামেরাবন্দি করে ও একটি পোস্টে দেওয়া সম্ভব নয় তাই কয়েকটি ছবি দিলাম।এছাড়া ছোট ছোট মাটির হাড়ির মধ্যে লাইট রাখা হয়েছিল যেগুলো রাত্রে দারুণ আলোকসজ্জার সৃষ্টি করবে।

IMG-20221005-WA0062.jpg

IMG-20221005-WA0059.jpg

IMG-20221005-WA0060.jpg
লোকেশন

এখানে বাঙালি নারীদের খুবই সাধারণ জীবনযাপনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং নারী পুরুষের অর্ধাঙ্গী রূপ চিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

IMG-20221005-WA0053.jpg

IMG-20221005-WA0046.jpg

IMG-20221005-WA0055.jpg
লোকেশন
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)

এই পূজা মন্ডপের বিশেষ আকর্ষণ হলো দেবী মায়ের আকৃতি ও গঠন।যেটি এককথায় অসাধারণ,অনবদ্য এবং অপরূপ।এখানে মূলত মায়ের প্রতিমাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

IMG-20221005-WA0070.jpg

IMG-20221005-WA0073.jpg
লোকেশন

2.সবুজ সংঘ ক্লাবের দুর্গামা দর্শন

◆থিমের নাম: (আরতি)

IMG-20221005-WA0049.jpg
লোকেশন

IMG-20221005-WA0052.jpg

IMG-20221005-WA0039.jpg

IMG-20221005-WA0035.jpg
লোকেশন

এই ক্লাবটি দিয়া অর্থাৎ আলোর রশ্মির আদলে করা হয়েছে।এছাড়া পুরো কারুকাজ তেলের টিন কেটে তৈরি করা হয়েছে।যার প্রবেশ পথ খুবই সুসজ্জিত এবং প্যান্ডেলের পাশেই কাঠ দিয়ে তিনটি নৌকা বানিয়ে ছোট্ট জলাশয়ে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে।পূজা মন্ডপের ভিতর শুধুই আলোর ঝলকানি।আর এই প্যান্ডেল রাত্রে অনেক সুন্দর দেখাবে ।কারণ আমাদের দেশে রাতের আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

IMG-20221005-WA0068.jpg

IMG-20221005-WA0048.jpg
লোকেশন

এখানে মন্ডপের মধ্যে তালপাতার পাখা জুড়ে গোল করে ঘুরিয়ে অনেক উপরে তৈরি করা হয়েছে এবং *কাগজের ফুল তৈরি করে বিশাল আকারের মালার মতো তৈরি করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উপরের দিকে সাজানো হয়েছে।আসলে এর বিশেষত্ব রাতেই কাগজের ফুলের গায়ে ইলেকট্রিক আলো রয়েছে যেগুলো রাত্রে দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখাবে।আমরা অবশ্য দিনে গিয়েছিলাম।

IMG-20221005-WA0042.jpg

IMG-20221005-WA0036.jpg
লোকেশন

এখানে বোঝানো হয়েছে কোনো মেয়ে সাধারণ নয়,সব মেয়েরাই দুর্গামায়ের রূপ।এছাড়া ভিতরটা প্রকান্ড বটবৃক্ষ তৈরি করা হয়েছে।সাজানো গাছের ডাল ,পাতা ও শিকড়ে মন্ডপের উপরটা সাজানো ।

IMG-20221005-WA0044.jpg

IMG-20221005-WA0040.jpg
লোকেশন
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)

এরপর মায়ের দর্শন করলাম।এখানে মায়ের প্রতিমা খুবই বড়ো করে তৈরি করা হয়েছে।মায়ের প্রতিমার ঠিক নীচে অনেকগুলো বড়ো ঘন্টা সাজানো রয়েছে থরে থরে।বড়ো মায়ের মূর্তিকে প্রণাম করে প্যান্ডেল ছেড়ে বের হলাম।কিন্তু দেখলাম সেখানে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছিল।তাই ফিরে আসার সময় মায়ের খিচুড়ি প্রসাদ নিয়ে খেলাম।

IMG-20221005-WA0034.jpg
লোকেশন

3.পদ্মশ্রী সংঘের দুর্গামা দর্শন

◆থিমের নাম: (ব্রেকিং নিউজ)

IMG-20221005-WA0041.jpg
লোকেশন

IMG-20221005-WA0043.jpg
লোকেশন

এই থিমটি ভারতে 2022 সালের সাম্প্রতিক মৃত্যুবরণ করা জনপ্রিয় শিল্পীদের আদলে তৈরি করা হয়েছে।যেমন-সন্ধ্যা মুখার্জি,বাপ্পি লাহিড়ী,লতা মঙ্গেশকরসহবিভিন্ন শিল্পীদেরকে তুলে ধরা হয়েছে।এখানে পুরো কারুকাজ খবরের কাগজ ও বাঁশের শলাকা ,ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।এই প্যান্ডেলটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।

IMG-20221005-WA0047.jpg
লোকেশন

IMG-20221005-WA0054.jpg

IMG-20221005-WA0056.jpg

IMG-20221005-WA0050.jpg
লোকেশন

বিভিন্ন ঝুড়ির গায়ে অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ ও রং করা হয়েছে ,অসংখ্য খবরের কাগজ দিয়ে উপরের ডিজাইন গুলি করা হয়েছে।মায়ের মূর্তিগুলিও শলাকা ও কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একপাশে।

4.বর্ধমানের বাজে প্রতাপপুর

◆থিমের নাম:(বৃন্দাবনের প্রেম মন্দির)

IMG-20221005-WA0032.jpg
লোকেশন

বর্ধমান বাজে প্রতাপপুরের থিম হচ্ছে বৃন্দাবন।এখানে ভারতবর্ষের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক যে বিভাজন তার প্রতিকার বা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার উপায় হচ্ছে প্রেম সেই আদলেই এই থিমটি তৈরি করা হয়েছে।এখানে প্রতিটি মানুষের মুখে একটিই শব্দ রাঁধে রাঁধে।বাংলার বুকে শ্রীকৃষ্ণের বাণী,রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী ও শ্রী চৈতন্যের প্রেমের বাণী সংস্কৃতি ও ঐক্যের সম্প্রীতিকে তুলে ধরার জন্য এই থিমটি তৈরি করা হয়েছে।এখানে হিন্দু,খ্রিস্টান, মুসলিম ও শিখ সকল ধর্ম মিলে সম্মিলিতভাবে পূজা করেন।প্রেমই হিংসা ,ভেদাভেদ ও বিদ্বেষকে দূর করতে পারে এমন চিন্তা নিয়েই গঠিত প্যান্ডেলটি।

IMG-20221005-WA0033.jpg

সবশেষে আমরা চলে গেলাম বর্ধমান স্টেশন থেকে কিছুটা পথ হেঁটে গিয়ে বাজে প্রতাপপুরে।গিয়েই অবাক হলাম মানুষের ভিড় এবং এক প্রকান্ড লাইন,যে লাইনটা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ঘুরে চলে গেছে।যে লাইন টানতে টানতে রাত প্রায় ১২ টা বেজে যাবে আমাদের ।তাই আমরা ভারতবর্ষের সবথেকে বড় রেলব্রীজের উপর উঠলাম দাদা আর আমি।ব্রিজটি একেবেঁকে চলে গিয়েছে আর ব্রীজের উপর দিয়ে চোখের নিমিষেই গাড়ি চলাচল করছে।অনেক কষ্টে আমি আর দাদা ব্রিজের অপর পাশে গিয়ে বৃন্দাবন মন্দিরটির ছবি তুলেছিলাম।আমাদের মতো মাত্র হাতে গনা কয়েকজন ছিল রেলব্রীজের উপর।

IMG-20221005-WA0029.jpg
লোকেশন

আমাদের পূজা দেখতে দেখতে গোধূলি হয়ে গিয়েছিল।আর পূজা দেখতে দেখতে আমরা ট্রেন স্টেশনের ওপোজিট সাইডে চলে গিয়েছিলাম।দাদা আর আমি স্টেশনে ফিরে এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ট্রেন আসার।কিছুক্ষণ পরে হাওড়া যাওয়ার ট্রেনে অর্থাৎ ৭ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে বাড়ি ফেরার জন্য উঠে বসলাম।কিন্তু সেখানে ও আধ ঘন্টা দেরি করে ট্রেন ছাড়লো।সবমিলিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল।অবশেষে ট্রেন ছেড়ে দিলে আমাদের স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।তারপর টোটো ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।বাড়ির সামনে ২ মিনিটের মেঠো রাস্তায় তখন হাটুসমান কাঁদা হয়েছে বৃষ্টিতে।আস্তে আস্তে অনেক কষ্টে ২ মিনিটের রাস্তা ৮ মিনিট ধরে কাঁদা মেখে বাড়িতে ঢুকলাম।এটিই ছিল আমার এই বছরের নবমীর দিনে দুর্গাপূজা দেখার অভিজ্ঞতা।

আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমার ফোটোগ্রাফিগুলি ভালো লাগবে।সকলেই ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।

(দুর্গামা সকলের মঙ্গল করুক এই প্রার্থনাই করি)

ক্যামেরা: redmi note 10 pro max

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 2 years ago 

দিদি আপনার নবমী দেখার ফটোগ্রাফিগুলোর প্রশংসা কিভাবে করব বুঝে উঠতে পারছি না। প্রত্যেকটা থিম নজর কাড়ার মত ছিল এবং আপনি এত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন যা সত্যি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। না জানা অনেক কিছুই জানা হলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার প্রশংসাভরা মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

নবমী পূজার অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। সত্যি ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত সুন্দর ফটোগ্রাফি অসাধারণ ছিল।

 2 years ago 

ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

দিদি আপনার নবমী পূজার ফটোগ্রাফি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যা দেখে অনেক ভালো লাগলো। আসলে পূজার অনেক কিছুইঅজানা সেই অজানা জিনিসগুলো আপনার কাছ থেকে শিখে নেওয়া হল এবং প্রত্যেকটি ফটোগ্রাফি এত সুন্দরভাবে করেছেন ও বিস্তারিত লিখেছেন তা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ আপু,সময় নিয়ে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.032
BTC 60648.94
ETH 2906.35
USDT 1.00
SBD 3.60