শারদীয়া কনটেস্ট ১৪২৯|আমার অষ্টমী পূজা দেখার কিছু ফোটোগ্রাফি|(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)
নমস্কার
বন্ধুরা,আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি সকলেই ভালো আছেন।আজ আমি দাদার আয়োজিত শারদীয়া ১৪২৯ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।আসলে ঘন ঘন বৃষ্টির জন্য এই বছর দুর্গাপূজা দেখবার অতটা ইচ্ছে ছিল না আমার।তবে দাদার প্রতিযোগিতার জন্য একটু আগ্রহ জন্মেছিল মনে।কারণ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমার বেশ ভালো লাগে।এইজন্য দাদাকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ।
■পৃথিবীতে দেবী মা দূর্গার আবির্ভাব নিয়ে কিছু অভিমত:
পৃথিবীতে যখন অরাজকতা,অধর্ম,অশান্তি ও হিংসা বিরাজ করে এবং চারিদিকে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে হাহাকার ধ্বনি হয় তখনই মা দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয় মর্ত্যলোকে।পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মাত্র কয়েকটি দিনের জন্য তিনি মর্ত্যলোকে আবির্ভূত হন শত্রুদের বিনাশ করতে।দেবীদুর্গা তার বাহন সিংহ, দুই কন্যা -লক্ষ্মী ও সরস্বতী এবং দুই পুত্র কার্তিক ও গণেশ তাদের নিজ নিজ বাহনসহ ধরাধামে আসেন।ধনসম্পদ সমৃদ্ধি, বিদ্যাবুদ্ধির উন্নতি ও বানিজ্যের অগ্রগতি ও পৃথিবীর শান্তি রক্ষা করে দেবী দুর্গা আবার কৈলাশে তার স্বামী শিবের নিকট ফিরে যান সন্তানদেরকে নিয়ে।
■মহা অষ্টমী দুর্গাপূজা দেখার জন্য যাত্রা:
আমার ইচ্ছা পূজা দেখতে হলে কিছুটা দূরে অর্থাৎ আমাদের শক্তিগড় ও বর্ধমান শহরে দেখতে যাবো।কারন আমার বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লোকাল পূজা হচ্ছে তাই সেটাও কাছে না হওয়ার দরুন আমি একটু শহরের দিকে অষ্টমী পূজার দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।অবশ্য আমার সঙ্গে আমার দাদা ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন সঙ্গে একজন দাদু ও ছিলেন ।যাইহোক আমরা একটি টোটো ধরে আমাদের স্টেশনে পৌছালাম হাইওয়ে থেকে বাস ধরবো বলে।কিন্তু গিয়েই মুশকিল অধিকাংশ বাস চলাচল দশমী অব্দি বন্ধ মাত্র দুই একটা বাস চলাচল করছে।তাই 1/2 ঘন্টা হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু না পেয়ে একটি হাইওয়ের রাস্তা সবে পার হতেই ভাগ্যক্রমে একটি বাসের দেখা পেলাম আবার ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় ব্যাক করে বাসে উঠে শক্তিগড় হাইওয়ের দিকে যাত্রা করলাম।
■শক্তিগড়ের পূজা প্যান্ডেল ,ক্লাব ও থিমের নামসহ কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :(তারিখ ও সময়সহ)
শক্তিগড় হাইওয়ে থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম শক্তিগড়ের বড়শুল বাজারের দিকে।আমরা তিনটি লোকাল পূজাসহ মোট 7 টি দুর্গামায়ের প্রতিমা দর্শন করেছিলাম।কিন্তু আমি এখানে মোট চারটি প্রতিমা ও বিস্তারিত প্যান্ডেলসহ উল্লেখ করছি।
1.জমিদার বাড়ির পূজা
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)
ছবির লোকেশন
প্রথমেই আমরা শক্তিগড়ের বড়শুলের জমিদার বাড়িতে গিয়ে পূজা দেখলাম।এখানের মায়ের মূর্তি সব বছর একই থাকে, তাছাড়া এটা বাড়ির মধ্যে হয়ে থাকে।এখানে শিবের মূর্তি অনেকটাই বড়ো করে তৈরি করা রয়েছে।আমরা যাওয়ার পরেই বৃষ্টি শুরু হলো তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর চলে গেলাম অন্য প্রতিমা দর্শনে।
2.বড় শুল ইয়ং মেনস এসোসিয়েশন
◆থিমের নাম:("অমৃৎস্বরের স্বর্ণমন্দির")
এই মন্দিরটি অমৃৎস্বরের স্বর্ণমন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে।মন্দিরের চারিপাশে রয়েছে সুন্দর জলাশয় অর্থাৎ সরোবর ,যেখানে নানা ধরনের মাছ রয়েছে।জলের ঠিক মাঝবরাবর স্বর্নমন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে।স্বর্ণমন্দিরের উপরের অংশ স্বর্ণের রং আনতে পিতলের কাজ করা হয়েছে।এছাড়া জল দিয়ে সরোবরটি পূর্ন করা হয়েছে।
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)
স্বর্ণমন্দিরের ভিতরটা পুরো পিতলের দ্বারাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ,সমস্ত দেওয়ালের গায়েও সোনার মতো আবরণ তৈরি করা হয়েছে পিতল দিয়েই।দেবী মাকে প্রণাম করেই দেখতে পেলাম কিছু চায়না মানুষকে ।যারা হিন্দুদের বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছেন ,দেখলাম অনেকেই ছবি তুলছে।আমিও একটি ছবি চায়না আন্টির সঙ্গে তুললাম।যাইহোক এরপর মন্দিরের চারপাশ ঘুরলাম।
মন্দিরের চারপাশে ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে ঘেরা হয়েছে এবং জলাশয়ের মধ্যে নানা ধরনের মাছ চড়ে বেড়াচ্ছিল।যেমন বেশির ভাগই পাঙ্গাস মাছ,ফলি মাছ ছিল ,এছাড়া ও গোল্ডেন ফিশ,হেলিকপ্টার মাছ,চিতল মাছ ও ঘোরাফেরা করছিল যেটা দেখতে খুবই ভালো লেগেছে আমার।
3.বড়শুল জাগরণী সংঘ
◆থিমের নাম: ("নহে সামান্ন্যা,ছোও অনন্যা")
[এই প্যান্ডেলকে 3 টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।]
//প্রথম ভাগ:(লোকসংস্কৃতি ছোও নৃত্য)
বাংলার লোকসংস্কৃতি ছোও নৃত্য ইউনেস্কোতে স্বীকৃতি পায় 2010 সালে।মহিলা ছোও শিল্পী মৌসুমী চৌধুরী 2019 সালে ইউনেস্কোর আওয়ার্ড পান।তিনিই ছোও শিল্পীর প্রথম মহিলা ছিলেন অর্থাৎ একজন মডেল।তাছাড়া প্রতিদিন তিনি 7 কিলোমিটার দূরে বাস ধরতে আসতেন সাইকেল নিয়ে। তো সেটাই এই প্রবেশ পথে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং তার জীবন কাহিনী 10 টি ধামসের উপর লিখে তুলে ধরা হয়েছে।
//দ্বিতীয় ভাগ:(রামায়ণের পালার দৃশ্য)
এখানে পুরুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও তার নানারকম বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।যেমন-কাশফুল ও অফুরন্ত তালগাছ ,পাথরে ভরা ইত্যাদি বিষয়।তাছাড়া যেমন বিভিন্ন সোমরাজের পালা থাকে তো এখানে রামায়ণের পালা তুলে ধরা হয়েছে।কখনো কাশফুল তো কখনো তালপাতায় ঘেরা সুন্দর দৃশ্য।এই পালায় দশ মস্তকধারী রাজা রাবণ,মহাবীর হনুমান,বানর ইত্যাদির ভাস্কর্য তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় গেট,যেখানে ছোও এর মুখোশ রয়েছে এবং দুইপাশে দুটি মডেল রয়েছে । আর যেকোনো প্যান্ডেল রাত্রে অনেক সুন্দর দেখাবে ।কারণ আমাদের দেশে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।যাইহোক আমি অবশ্য দিনের বেলা পূজা দেখেছি বৃষ্টির জন্য।
//তৃতীয় ভাগ:(রাধা-কৃষ্ণের পালার দৃশ্য )
মন্ডপের বাকি অংশেও আরেকটি পালাগান ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।বাসকী নাগ,অষ্টসখী,রাধা-শ্রীকৃষজ্ঞ ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।মেয়েদের চুলের রঙিন ফিতা ও খড়ের বিচুলি দিয়ে অনেকগুলো বাসকী নাগ তৈরি করা হয়েছে।মাঝেই রয়েছে রাধা-কৃষ্ণ এর অপূর্ব মূর্তি।এছাড়া কাছেই দামোদর নদ থাকায় সেখান থেকে প্রচুর বেনা গাছ সংগ্রহ করে এই কাজগুলো নিপুণভাবে করা হয়েছে।
//তৃতীয় ভাগ:(রাঙামাটির দেশ )
এবার আবারো পরের অংশে প্রবেশ করলেই দেখা যায় সারি সারি রক্ষী দাঁড়িয়ে আছে।যারা মণ্ডপকে পাহারা
দিচ্ছেন। এছাড়া কাগজ ও শুকনো ডাল গেঁথে তৈরি করা হয়েছে গাছপালা ও পুরুলিয়ার শিমুল ফুল।
একেবারে মন্ডপের শেষ অংশে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে সারি সারি তালগাছ।আর তালগাছের মাথায় ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা।এছাড়া চায়ের ভার ভেঙে এবং নারিকেল গাছের ছোবড়া দিয়ে লাল রঙের মাটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যেটা পুরুলিয়ার একটি বৈশিষ্ট্য।তাছাড়া সেই সময়ে মেয়ে হয়ে ও মৌসুমী চৌধুরী যে ধামসের শব্দ মাথায় রেখে ঘরে দরজা বন্ধ করে নৃত্য প্র্যাকটিস করতেন সেটাই ফুটিয়ে তুলেছেন এখানে।
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)
ধামসেগুলি তৈরি করা হয়েছিল ভুট্টার খোসা দিয়ে এছাড়া তালের ছোবড়া দিয়ে তালগাছগুলি ও মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে তালগাছের পাতাগুলো তৈরি করা হয়েছে ,যেটা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর ছিল।এমনকি এখানে মায়ের মূর্তিসহ বাকিগুলো ও ভুট্টার খোসা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।সবশেষে দেবী দুর্গামাকে প্রণাম করে ছবি তুলে চলে আসলাম।
4.শক্তিগড় সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি
◆থিমের নাম: ("বৌদ্ধধর্ম")
সবশেষে আমরা যখন বাড়ি যাবো বলে টোটো করে শক্তিগড় হাইওয়েতে পৌছালাম তখন খুবই বৃষ্টি শুরু হলো।কোনরকমে একটি স্থানে বসে বাসের জন্য ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করলাম কিন্তু বাস না আসায় ট্রেন স্টেশনে আসলাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে।পথেই দেখতে পেলাম এই মন্দিরটি তাই দেখতে গেলাম।
ভিতরে প্রবেশ করেই দেখলাম বেশ বড়ো বুদ্ধদেবের মাথার মূর্তি।আর তার পিছনের অনেকগুলো ড্রাগনের কারুকাজ।এখানে মূলত কাগজ ও বাঁশ দিয়ে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।এছাড়া বুদ্ধদেবের চারিপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে সুসজ্জিত করা রয়েছে।
(দেবী দুর্গামায়ের প্রতিমা)
অনেকগুলো ড্রাগন এখানে দেখানো হয়েছে কোনটা বসে আছে, কোনটা বাচ্চা আবার কোনটা শুন্যে কারুকাজ করা রয়েছে।আর ড্রাগনের মুখে লাল আলো দেওয়াতে মনে হচ্ছে তাদের চোখ ও মুখ থেকে আগুনের হল্কা বের হচ্ছে।এখানে ড্রাগনের বিলুপ্ত হওয়ার কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া বড়ো একটি তালগাছ ও পুরো বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ,কাগজ কেটে উপরটা তৈরি করা হয়েছে।ছোটোর মধ্যে প্রতিমাসহ কারুকাজগুলি বেশ ভালো হয়েছিল।এরপর আমরা বৃষ্টির মধ্যে ভিজে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে,টোটো করে বাড়ি ফিরে আসলাম।
আশা করি আপনাদের সকলের কাছে আমার ফোটোগ্রাফিগুলি ভালো লাগবে।সকলেই ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।
টুইটার লিংক
প্রথমে আপনাকে বিজয় দশমির অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। সত্যিই আপনার পোস্ট দেখে বেশ ভালো লাগলো। ফটোগ্রাফি গুলো অত্যন্ত দুর্দান্ত হয়েছে। পূজাতে খুব সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। এবং আমাদের মাঝে কিছু দুর্দান্ত ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।।
আপনাকে ও শারদীয়ার শুভেচ্ছা ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অন্যদের পোস্টে তো বেশ অনেকরকম থিম দেখলাম। তবে বৌদ্ধ ধর্মের যে থিমটা সম্পর্কে আপনি শেষে লিখেছেন ওটা বেশ চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। অনেক সুন্দর ছিল দিদি আপনার প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি। এবং দারুণ ঘোরাঘুরি করছেন।
হ্যাঁ ভাইয়া,এখানে বুদ্ধদেব ও চৈনিক সভ্যতার কিছু বিলুপ্ত নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
পূজার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর আর এত সুন্দর সুন্দর পূজার ফটোগ্রাফি করেছেন যা দেখে মনে হচ্ছে যে আপনাদের ইন্ডিয়ায় পূজা অনেক সুন্দরভাবে যাপিত হয় আর এই জিনিসগুলো আসলে আমরা খুব মিস করি বাংলাদেশ থেকে তাই আপনি সেই জিনিস গুলো দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।
ঠিক বলেছেন আপু, দুর্গাপূজা এখানে অনেক সুন্দরভাবে ও জনপ্রিয়ভাবে লাভ করে তুলে ধরা হয় ।আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
এই সময় যেখানে চোখ পড়ে সেখানে দেখি শুধু পূজার পূজা। অষ্টমীর দিনে আপনার কাঠানো পূজার সময়টুকু ও তার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
পূজার সময় পূজা চোখে পড়বে এটাই স্বাভাবিক ভাইয়া।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।