প্রতিযোগিতা -২৩|| আমার স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
নমস্কার
বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন?
আশা করি, ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলেই ভালো ও সুস্থ আছেন।অনেকদিন হলো কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা হয় না।তাই ভাবলাম নতুন চিন্তাধারার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।প্রত্যেক মানুষের স্কুল জীবনে নানান ঘটনা থাকে।সেটার সামান্য ব্যক্ত করছি একটি কবিতার মাধ্যমে----
কয়েক বছর পর কখনো কাউকে
না বলা কথাগুলি উজাড় করে প্রকাশ করলাম
আজ স্মৃতির এক টুকরো পাতা থেকে
হয়তো হৃদয়ের এককোণে অব্যক্ত হয়ে জমেছিল
ডুগরে কাঁদা বেদনায় সিক্ত অনুভবে
আজ তার উদঘাটন হলো মানুষের মাঝে
পুনরায়ের জন্য মিশে গেলাম সেই তিক্ত সাগরে
স্ফুটিকের মতো হৃদয়ে বিদ্ধ হয় বারে বারে তার স্মরণে।।
কোথা হতে শুরু করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।স্কুল জীবনের ভালো -মন্দের মিশেলে ঘটা ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে ভেসে ওঠে যা কখনোই ফিরে পাওয়া যাবে না।কিন্তু তিক্ত ঘটনাগুলি মনে পড়লে মনে হয়- না থাক, জীবনে এমন মুহূর্তগুলি না ফিরে আসাই ভালো।
আমার স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি:
আমাদের ঘরের পিছনে ছোট্ট ক্যানেল পার হলেই স্কুল।স্কুলের নাম না হয় অজানায় থাক,তবে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আমারই মেজো জ্যাঠা।তিনি সুযোগ্য চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে অনেকগুলি স্কুল এবং একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।কিন্তু আমাদের বাড়ির পাশের স্কুলটি সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন তাই অধিকারটা একটু বেশিই ছিল আমাদের।কিন্তু অধিকার ফলানোর চেষ্টা কখনো করা হয়নি,যদিও ছোটবেলা থেকে রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার।সেই স্কুলে আমাদের কিছু কিছু জমিও দান করা রয়েছে তাই স্কুলটা নিজেদের বলতে গেলে।সেই হিসেবে স্কুলের শিক্ষকরাসহ অনেকেই আমাদের ভালোভাবেই চিনতেন ও ভালোবাসতেন।
কয়েকদিন পরেই আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা ।পড়ার তোড়জোড় চলছে।অনেক দিন আগে থেকেই আমাদের গ্রামে একজন দাদা থাকতেন যিনি চাকরি না পাওয়া সত্ত্বেও স্কুলে অঙ্ক ক্লাস নিতেন।এখন অবশ্য চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।তবে আমরা তাকে ছোটবেলা থেকেই দাদা বলেই ডাকতাম।তিনি রাত্রে আমাদের স্কুলে পড়াতেন।সেটাকে আমরা নাইট স্কুল বলতাম,কারন গ্রামে শুধুমাত্র স্কুলেই কারেন্ট ছিল।আমাদের স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েরা দূর-দূরান্ত গ্রাম থেকে পড়তে আসতো সেই নাইট স্কুলে।প্রায় 3-4 কিলোমিটার দূর থেকে যারা সাইকেলে করে পড়তে আসতো (বিশেষ করে ছেলেরা) তারা রাতের জন্য ভাত নিয়ে আসতো আর বই,হ্যারিকেন, কাঁথা ইত্যাদি।কারন তারা স্কুলেই রাতে থাকতো।পড়ার সময় ছিল সন্ধ্যা থেকে রাত 10 টা পর্যন্ত।আমরা সন্ধ্যার আগে বাড়ি থেকে হ্যারিকেনে তেল ভরে ,কাঁচ পরিষ্কার করে নিতাম।তারপর এক হাতে বই ও এক হাতে হ্যারিকেন ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়তাম স্কুলে, এমন অনেকেই লাইন ধরে আসতো পড়তে।
আমার বড় জ্যাঠার ছোট মেয়ে ছিল আমার ক্লাসেই তাই কম্পিটিশন লেগেই থাকতো।স্বভাবতই একই বাড়ির একই ক্লাসে হলে যেটি হয়ে থাকে আরকি!পরীক্ষার আগে আমার বাবা আমাকে একটি ক্যালকুলেটর কিনে দিয়েছিলেন।ওটাই আমার জীবনের একটি কাল হয়েছিল।কয়েক দিন ব্যবহারের পরেই একদিন নাইট স্কুলে নিয়ে গেলাম ক্যালকুলেটরটি খুশি মনে।স্কুলের নাইটগার্ডের বাড়ি স্কুলের পাশেই তার নিজের মেয়ে তমালিকাও তার শালীর ছেলে জয়দেব আমাদের ক্লাসেই পড়তো।তো তমালিকার খুব দুস্টু এক ভাই ছিল, যার তার জিনিস নিয়ে নষ্ট করতো।দিন দিন তার অত্যাচার বেড়েই যাচ্ছিল,একদিন যখন আমরা বই পড়ছিলাম তখন পাশেই আমার ক্যালকুলেটর রাখা ছিল, কারন গ্রামে আমরা হাতে করেই বই নিয়ে যেতাম।ক্লাস ফাইভের পর থেকে কেউ ব্যাগ ব্যবহার করত না।তমালিকার ভাই হুট করে কোথা থেকে দৌড়ে এসে আমার ক্যালকুলেটর নিয়ে দিল সজোরে এক আছার স্কুলের বারান্দায়।মুহূর্তেই আমি অবাক হয়ে গেলাম তারপর পাকা জায়গা থেকে চলন্ত ক্যালকুলেটরটি হাতে তুলেই দেখলাম একটি জায়গায় চির কেড়েছে আর বন্ধ হয়ে গেছে ।কোনো কিছুতেই অন হচ্ছে না।আমি তো কাঁদতে শুরু করে দিলাম সেখানে তার দিদি,দাদা ছিল।আমি পড়ার দাদাকেও জানালাম কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না।কারন পড়ার দাদা নাইটগার্ডের শালী অর্থাৎ জয়দেবদের বাড়িতে থাকতেন।আমি কান্না করে শুধু এটা বললাম যে আমার ক্যালকুলেটর যেমন আগে চলছিল তেমনটা চালিয়ে দিলেই হবে।সেটা ভাঙা চির থাকলেও সমস্যা নেই,কারণ নতুন ক্যালকুলেটরের অবস্থা বাবা দেখলেই আমাকে ধরে পেটাবে।তারা কিছুতেই কিছু করতে রাজি হলো না তারপরও আমি ওদের কাছে রাতে ক্যালকুলেটর দিয়ে বাড়ি চলে গেলাম।পরদিন স্কুলের ক্লাস অব্দি এইকথা ছড়িয়ে গেছে আমার অজান্তেই,আবার রাতে ক্যালকুলেটর চাইতেই নাইটগার্ডের বউ কিছু কথা শুনিয়ে দিল আমায়।সেই থেকে কয়েকদিন কেটে গেল ,প্রতিনিয়ত রাতে পড়তে গেলেই তমালিকা উল্টাপাল্টা টন-টিটকারী কাটা শুরু করলো গা বাড়িয়ে বাড়িয়ে সঙ্গে যোগ দিল আমার বড় জ্যাঠার মেয়েও।রীতিমতো মানসিক যন্ত্রনা শুরু হলো আমার মধ্যে। কাঁদতে কাঁদতে বিরক্ত হয়ে আমি পড়ানোর দাদাকে পুনরায় জানালাম সবকিছু,উনি ওদের সঙ্গে তালমিলিয়ে কিছুই বললেন না।শেষমেশ চির ভাঙা বন্ধ ক্যালকুলেটর নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নাইট স্কুল ছাড়তে বাধ্য হলাম আমি।পরদিন নাইট স্কুল ছাড়ার কথাও স্কুলে ছড়িয়ে পড়লো আমার অজান্তেই এবং ইংরেজি বিষয়ের স্যার ক্লাস নিতে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-রিপা নাইট স্কুল কেন ছেড়ে দিয়েছো,সামনেই তো তোমার পরীক্ষা? ভরা ক্লাসে আমি মনের দুঃখে নীরবতায় কাটিয়ে দিলাম।কারন নাইট স্কুল ছাড়তে খুবই কষ্ট হয়েছিল আমার সেইদিন।তো এটাই ছিল আমার স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা।
আজ এই ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতাটি যখন শেয়ার করছিলাম তখন সেই দৃশ্যপট চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছিল আর মন ভরাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল।যাইহোক আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে আমার আজকের তিক্ত অভিজ্ঞতাটি।সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
টুইটার লিংক
আপনার অনুভূতি জেনে মন খারাপ হয়ে গেল।প্রথমত আপনি আপনার নতুন ক্যালকুলেটর হারালেন,তারপর আবার যারা সেই কাজ করেছে তারাই টিটকারি করল।আর নিজের মানুষের টিটিকারি তো সহ্যই করা যায়না।ধন্যবাদ দিদি আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
এটাই হয় দাদা,চেনা মানুষরা বেশি আঘাতের পর আঘাত দেয়।অনুভূতিটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এটা ঠিক বলেছেন,দু'চারটা ছ্যাচরা সবজায়গায় থাকে।আসলে নাইট স্কুল ছেড়েছিলাম এমনি স্কুল নয়।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
নাইট স্কুল এই বিষয়টি একেবারেই নতুন আমার কাছে। তবে আপনার অভিজ্ঞতা টা মোটেও ভালো ছিল না। এবং তমালিকা ও আপনার ঐ জ্যাঠাতো বোনের টিটকারি যে কারো কাছেই ঐসময় অসহ্য লাগবে।।
ভাইয়া, আমরা দিনে যেমন স্কুল করতাম ঐরকম রাতেও আবার নাইট স্কুলে টিউশন পড়তাম ক্লাসের মতোই ।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নাইট স্কুলে কখনো পড়া হয়নি তবে অনেক শুনেছি নাইট স্কুলের কথা।।
কোন কিছু হারিয়ে গেলে লস হলে বা নষ্ট হয়ে গেলে যতটা না খারাপ লাগে তার থেকে বেশি কষ্ট এবং খারাপ লাগে যখন ওই বিষয় নিয়ে অন্য কেউ টিটকারি মারে।।
তারাই জিনিসটা নিল আবার ঘুরে ফিরে তারাই এসে যখন টিটকিরি মারছিল আসলে এই বিষয়টি অনেক দৃষ্টিকটু।।
আমি হলে তো সবগুলারে ধরে এমন মাইর দিতাম আপনার মত এত ধৈর্য হয়তো আমার মধ্যে থাকতো না।।।
একদম ঠিক👍 ভাইয়া।আসলে আমরা দিনে যেমন স্কুল করতাম ঐরকম রাতেও আবার নাইট স্কুলে টিউশন পড়তাম ক্লাসের মতো করে ।অনেক ধন্যবাদ আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।
তবে এখন কিন্তু স্কুল লাইফের জীবনগুলো অনেক মিস করি তখনকার কথা তখনকার সময় তখনকার কাজ এবং তখনকার বন্ধুগুলোকে বেশি করে মিস করি।।।
👍👍
বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত খারাপ লাগলো শুনে। দেখুন না প্রথমে আপনি নিজের নতুন ক্যালকুলেটরটি নিজের চোখের সামনে এইভাবে ভাঙতে দেখলেন। তার সাথে সবাই মিলে আপনাকেই আবার মানসিক যন্ত্রণা দিতে শুরু করল। অনেক কষ্ট নিয়ে নাইট স্কুল টা ছেড়েছেন। সত্যি অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
সত্যিই আপু,যন্ত্রণাদায়ক ছিল এটা আমার জন্য।অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপু আপনার এই কথাটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিছুক্ষণ ভাবলাম, সবার মন মানসিকতা যদি এমন হতো। কাঁদতে কাঁদতে বিরক্ত হয়ে আপনি পড়ানোর দাদাকে পুনরায় জানালেন, সবকিছুই দেখে উনিও ওদের সঙ্গে তালমিলিয়ে কিছুই বললেন না, এটাই স্বাভাবিক। কারন এটাই পৃথিবী। আমার ভাবনা, ভাবনাই থেকে যাবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এত্ত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
সত্যিই ভাইয়া, এটাই পৃথিবীর বাস্তবতা।অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
বেশ ভালো লাগলো আপনার লেখা টা পড়ে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমি মানছি আপনার সাথে অন্যায় হয়েছিল, আপনার শখের ক্যালকুলেটর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল এবং তারপরও আপনাকে অনেক টিটকিরি শুনতে হয় নিজের কাছের মানুষের থেকেও। তাই বলে আপনি স্কুল ছেড়ে দেবেন। এটা কেমন একটা ছিল না.... যাইহোক পরবর্তীতে আবার ডে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন নাকি।
@rupaie22 দাদা,না আমি তো ডে স্কুলে ভর্তিই ছিলাম।আমি নাইট স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলাম।আসলে আমরা দিনে যেমন স্কুল করতাম ঐরকম রাতেও আবার নাইট স্কুলে টিউশন পড়তাম ক্লাসের মতো করে ।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।ডে স্কুল তো আলাদা,অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে ব্লগটি পড়ার জন্য।