"একটি বৃষ্টির দিনের করুণ অভিজ্ঞতা"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার

বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই?আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের আশীর্বাদে।আজ আমি আপনাদের সামনে একটি নতুন পোষ্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।আজ আমি কোনো অঙ্কন বা রেসিপি বা diy শেয়ার করবো না আপনাদের সঙ্গে।আজ শেয়ার করবো "একটি বৃষ্টির দিনের করুণ অভিজ্ঞতা" নিয়ে।

বন্ধুরা ,টাইটেল দেখেই বুঝতে পেরেছেন আমি বর্ষাকালের কথা বলছি।আর এই বর্ষাকাল জুড়ে নানান অনুভূতি কাজ করে আমাদের মনে।বৃষ্টির মুহূর্ত অনেক গান,কবিতা, গল্প লেখার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় নানান মানুষের মধ্যে।এমন অভিজ্ঞতা আমারও আছে মাঝে মাঝেই বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে কবিতা লেখা।তাছাড়া বৃষ্টির সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান শুনতে ও মুভি দেখতে ও ভাজাপোড়া খাবার খেতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।বৃষ্টির সময় মজার অভিজ্ঞতা তো থাকবেই সেই স্কুল থেকে আসার সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে দুই বন্ধু মিলে একটি কলাপাতা কিংবা একটি কচুপাতাকে আশ্রয় করে বাড়ি ফেরা।কখনো বা পা পিছলে পড়ে গিয়ে অন্যের হাসির খোরাক হওয়া আবার কখনো বৃষ্টির জলে ভিজে ভিজে পুকুরে সাঁতার কাটা আবার কখনো উঠানে মাছ-কাঁকড়া ধরার অদ্ভুত আনন্দ।বর্ষাকাল মানেই নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া।তেমনি একটি দিনে------

pexels-photo-459451.jpeg
সোর্স

বর্ষার এক বিকাল।আকাশের কোণে মেঘ জমে গর্জন করছে মাঝে মাঝেই।কিছুটা অন্ধকার হয়ে আসলো এই বুঝি বৃষ্টি নামবে।মা তখন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে টিউবওয়েলের জল নিয়ে আসতে গিয়েছে মেটে ইয়া বড়ো কলস নিয়ে।আমি বাড়িতেই আর আমাদের ভালোবাসার চারপেয়ে জীবেরা আমাদের পশ্চিম দিকের ভিটেই বাঁধা রয়েছে দড়ি দিয়ে।আমাদের ঘরের পিছনে ক্যানেল আর ক্যানেল ওপারেই জল নিয়ে আসতে গেলে পশ্চিমের ভিটে স্পষ্ট দেখা যায় ।বৃষ্টির জন্য মা তাড়াতাড়ি জল নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।মায়ের চোখে মুখে চিন্তার প্রতিচ্ছবি।ইতিমধ্যে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।মা কলস রেখে দ্রুত আমাদের গরু নিয়ে আসতে গেল সঙ্গে আমিও গেলাম পিছে পিছে হাতে একটি বালতি নিয়ে।দুই-একটি বজ্রপাতের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝেই বিদ্যুতের আলোর ঝলকানির সঙ্গে।মা গরুর কিছুটা কাছে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।আমি ও দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে অবাক-------

pexels-photo-5368171.jpeg
সোর্স

আমাদের ছোট্ট দুরন্ত বাছুরটি কাঁদায় লুটিয়ে পড়ে আছে চোখ ও জিভ বের করে।মা ছটফট করে কাঁদতে কাঁদতে বাছুরের গরুর গলায় জড়ানো দড়ি ছাড়িয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে গলা থেকে।অনেক চেষ্টার পর ছাড়িয়ে সযত্নে বাছুরটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।অন্যদিকে আমি তাড়াতাড়ি আমাদের পুকুর থেকে জল নিয়ে আসলাম বালতি করে।তারপর মা তাড়াতাড়ি জল দিয়ে কাদা মাখা বাছুরের গা ধুয়ে দিয়ে নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছে দিতে লাগলো।তখন ও বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার প্রিয় বাছুরটির,থেকে থেকে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।জল দিয়ে ধুয়ে দেখলাম বাছুরটির গলায় দড়ির মোটা দাগ পড়ে গিয়েছে।আর 15-20 মিনিট হলেই হয়তো আমাদের মিষ্টি বাছুরটিকে আর ফেরানো যেত না😢😢।এরপর মা বাছুরটিকে কোলে করে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়।

pexels-photo-2684821.jpeg
সোর্স

তারপর আমি অন্য গরুগুলো ছেড়ে দিয়ে দড়ি গুটিয়ে নিলাম।বৃষ্টিতে গরুগুলোর মন ও চলে গিয়েছিল বাড়িতে যাওয়ার জন্য এবং হাম্বা---- করে ডেকে ও উঠছিল।
বিষয়টি ছিল এইরকম দুপুরের আগে মা প্রত্যেকটা গরু আলাদা আলাদা জায়গায় বড়ো দড়ি দিয়ে বেঁধে ছিল।কিন্তু বাছুরটি তার মায়ের দুধ পান করছিল তাই মায়ের কাছেই দড়ি দিয়ে বাঁশের খোটা পুতে রেখেছিল।কে জানে এমনটি হবে।বাছুরটির গলার দড়ি কিছুটা ছোট ছিল তাই ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে গিয়ে তার মায়ের বাঁশের খোটার সঙ্গে সমস্ত দড়ি পেঁচিয়ে যায়।এভাবে বাছুরের গলার দড়ি ছোট ছোট হতে হতে একসময় আর দড়ি না থাকায় বাছুরটির গলায় টান পড়ে লুটিয়ে পড়ে সে।আর খোটার গোড়ায় ছটফট করতে থাকে একসময় জিভ বের হয়ে যায়। আমার মা যখন ক্যানেলের ওপারে জল আনতে গিয়েছিল তখন বাকি গরুকে দেখলে ও বাছুরটি দেখতে পাননা ,এইকারনে চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল মায়ের।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা যে বাছুরটি বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু তার গলায় দাগটি মুছে যায়নি।
সেদিন আমিও খুব কেঁদেছিলাম কিন্তু বৃষ্টিতে জলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল আমার চোখের জল।সেদিনের করুণ দৃশ্যটি মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে আমার।তো এটাই ছিল করুণ একটি বৃষ্টির দিনের অভিজ্ঞতার গল্প।

তো আজ এই পর্যন্তই।আশা করি আমার বৃষ্টির দিনের গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 2 years ago 

আপনার বৃষ্টির দিনের অনুভূতির কথা শুনে আমারও একটি গল্প মনে পড়ে গেল। তবে তা বলব না অন্য একদিন বলব। তবে বাচুর দড়ি ছোট থাকায় ঘুরে ঘুরে দুধ পান করতে করতে গলায় ফাঁস পড়ে যায়। হয়তো আর কিছুক্ষণ থাকলে বাছুরটি মারা যেতো, খুবই দুঃখ এবং কষ্টের ছিল। আবেগপ্রবণ পশুর প্রতি মায়া থাকলে যা হয়। আর বোভ জিনিস কথা বলতে পারেনা। তাই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছি সৃষ্টি তাই তাদের প্রতি মানুষের মায়াটা একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার বৃষ্টির দিনের অনুভূতির কথা গুলো পড়ে বেশ ভালই লাগলো। সবথেকে ভালো লাগলো
আপনার ছোট বাছুরকে বিধাতা বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছে । পশুর প্রতি মায়া ও ভালোবাসা থাকলে যা হয়। বৃষ্টির দিনের অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

বিষয়টি অনুভব করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

যাক উপর ওয়ালার ইচ্ছায় বাছুরটি প্রানে বেঁচেছে। আসলে অবলা প্রানীতো তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে।
ধন্যবাদ দিদি আবেগ জড়িত একটি অনুভূতি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া, গল্পটি পড়ার জন্য।

 2 years ago 

আপনার এই গরুর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এর পোস্ট পড়ে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আসলে অনেক সময় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাই আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা প্রয়োজন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

বৃষ্টি আমাদের সবার জীবনেই কিছু স্মৃতি রেখে যায়। কারো দুঃখের বা কারো সুখের। আপনার কাহিনীর প্রথম টুকু পরে ভেবেই নিয়েছিলাম যে গরুটি আর নেই। আলহামদুলিল্লাহ। পড়ে যখন শুনতে পেলাম গরুটি বেঁচে আছি খুবই ভালো লাগলো। আমাদের পোষা প্রাণীগুলো আমাদের কাছে সন্তানের মত হয়ে যায়। তাদের কিছু হলে নিজেরা ঠিক থাকতে পারিনা। যাই হোক এরপর থেকে সাবধান থাকবেন। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমাদের পোষা প্রাণীগুলো আমাদের কাছে সন্তানের মত হয়ে যায়।

ঠিক বলেছেন, সবই মায়া।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 64401.36
ETH 2627.01
USDT 1.00
SBD 2.83