"প্রবল ঝড়ের তান্ডবে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির কিছু দৃশ্য"
নমস্কার
প্রবল ঝড়ের তান্ডবে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির কিছু দৃশ্য:
সকাল থেকেই আবহাওয়া বেশ গরম কিন্তু যতই বেলা বাড়তে থাকে ততই হালকা হাওয়া বইতে লাগলো।দূর আকাশে হালকা মেঘ জমে কালো হয়েছে প্রতিদিনের মতোই।মায়ের ডাকাডাকিতে ফোন ছেড়ে উঠে পড়লাম টাইম কল থেকে খাওয়ার জলের বোতল ভরতে।কিছু বোতল জল ভরা বাকি থাকতেই তীব্র বাতাশে ছাই ও ধুলো উড়তে শুরু করলো।ভাবলাম প্রতিদিন যেমন ঝড় হয় তেমনিই হবে।কিন্তু না এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল,হঠাৎ তীব্র বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো।আমি বাতাসের তান্ডবে বোতল,গামলা,বালতি কলতলায় ফেলে রেখে ঘরে দরজার সামনে চলে গেলাম।বাবাও বাড়ি ছিল না তখন ,ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন সেই চিন্তাও মাথায় ছিল।
বাবা সবে বৈচিগ্রামে ট্রেনে করে এসেছে ঝড় ওঠার কারণে ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়েছিল।আর আমার দাদা টয়লেটের মধ্যে ছিল।কিন্তু আমাদের চিন্তাটা ছিল সন্তুকে নিয়েও।আসলে আমাদের বাড়ির বিড়াল সন্তু এতটাই প্রিয় সকলের যে বাড়ির একজন পূর্ন সদস্য এর মতো।হঠাৎ ঝড় ওঠার ফলে আমরা মিনিকে আটকাতে পেরেছিলাম খাঁচার মধ্যে।কারন বিড়ালরা ঝড়-বৃষ্টি হলে খুবই ভয় পেয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।আর সন্তু হলো ভীতুর ডিব্বা সে তো মাঠে ছিল।মা ঝড় কমানোর জন্য ঘর থেকে পিড়ি ফেলে দিল উঠানের মাঝে।তখনই সন্তু এক দৌড়ে ঘরে এসে ঢুকলো আরেকটু হলে পিড়ির আঘাত লাগতো তার গায়ে।কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলাম যদিও পুরোপুরি নয়।
আমি আর মা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ঝড় দেখছি আর ঠাকুরের নাম স্মরণ করছি।কলাগাছ ও অন্যান্য গাছগুলো ঝড়ের তান্ডবে বিভৎসভাবে দুলতে লাগলো আর ভেঙে পড়তে লাগলো।হালকা বৃষ্টি শুরু হলো,জামরুলগুলি ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো।খড়ের বড় গাদা ভেঙে পড়লো পুকুরের মধ্যে আর উড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।শুধু আমাদের নয়,অনেকেরই বেশ ক্ষতি হয়েছে।কারো ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে,কারো জলের ট্যাংক উড়িয়ে নিয়ে গেছে তো কারো পাকা ঘরের পুল ভেঙে পড়েছে।হঠাৎ এই প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ করে দিয়ে গেছে আমাদের বর্ধমান শহর সেটা নিউজ দেখলেই বোঝা যায়😢😢।কয়েকটা গাড়ির উপর গাছ পড়ে কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এবং মারাও গেছে কেউ।
এতদিনে ঝড় দেখে আমার কখনো কান্না পায়নি,এমনকি আমফ্যান ঝড়েও নয়।কিন্তু খুবই কান্না পাচ্ছিল গতদিনের ঝড় দেখে,তারপর মা হঠাৎ করে বাইরে বের হলো উঠানে কলাগাছ দেখতে।তখনই আমাদের টয়লেটের আলবেস্টরের ছাউনী বাঁশসহ উড়ে চলে আসলো কলতলার দিকের উঠানে উড়ন্ত প্লেনের মতো।মা দুইলাফে ঘরে দরজার সামনে আসলো ,নাহলে মায়ের কি যে হতো----।মায়ের ঘাড়ে এসে পড়ত আর অনেক বড় বিপদ হতো।ভগবানের অশেষ কৃপা যে আমার মায়ের কিছুই হয়নি।এটা ভেবেই আমি শিউরে উঠছি বারবার তারপর আলবেস্টরের ছাউনী যেই শব্দ করে পড়লো ওমনি সন্তু ঘর থেকে কোথায় চলে গেল।আমাদের বাঁশের ঘেরা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।
অনেকক্ষণ ধরে সন্তুকে ডাকতে লাগলাম সবাই মিলে এবং ঘরের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি কোথাও পাচ্ছি না।যেখানে এক ডাকেই সন্তু কাছে চলে আসে ,কিছুক্ষণ পর বাবা বাড়ি ফিরে আসলো।সন্ধ্যা নেমেছে,আকাশে তখন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সঙ্গে দুই একটা বাজ পড়ার শব্দ।টয়লেটের ঘরের চাল ভেঙে পড়েছে তাতে প্রায় 5-6 হাজার টাকার ক্ষতি।কিন্তু তাতে আমাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই বাবা ও দাদা পাশের বাড়িগুলোতে গেল বিড়াল খুঁজতে রাতে।কিন্তু কোথাও পেলাম না,মাঠের দিকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে কানে।শিয়ালে বিড়ালকে ধরে নিয়ে চলে যায় কিনা সেই চিন্তাও ছিল তাই বারবার ডাকতে লাগলাম সন্তুকে।আসলে বাথরুমে ঘরের চালে টান বাধা থাকলে সহজে উড়িয়ে নিতে পারতো না।যদিও বড়ঘরে টায়ার বাধা ছিল আর কিছু টায়ার ঘরে রাখাও ছিল।যাইহোক হঠাৎ পুকুরের কোনায় মরমর করে আওয়াজে কলাগাছ ভেঙে পড়ার শব্দ শোনা গেল তখনই সন্তুকে দেখা গেল।মনে হয় পাশের বাড়ির টয়লেটের মধ্যে ছিল কারণ সেখানে আমাদের ঘেরার জিওল গাছ ও কলাগাছ অনেক সাপোর্ট দিয়েছিল।
যাইহোক অন্তত অর্ধভেজা অবস্থায় সন্তুকে ফিরে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম কিন্তু এই বীভৎস ঝড়ের মধ্যে সন্তু পুরোটা সময় জুড়ে ঘরের বাইরে ছিল।খুবই ভয় পেয়েছে আমাদের বিড়ালটি।ঝড়ের প্রাথমিক পর্যায়ে আমি একবার কলতলায় যেতেই আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায় এমন মনে হচ্ছিল।যাইহোক সকালে উঠে লেগে পড়লাম বাড়ির সবাই মিলে কলাগাছ ও ঘরের চাল গুছাতে।দূরের যে ব্রিজ দেখা যাচ্ছে এবং রাস্তা,অতটা দূর পর্যন্ত আমাদের আলবেস্টরের চাল ভেঙে ভেঙে উড়িয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে।তাই দাদা মাঠ থেকে আলবেস্টরের বড় খন্ডগুলি কুড়িয়ে নিয়ে আসলো ,যদিও গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলেছে অনেক।কুড়ালে 4-5 ঝুড়ি তো হবেই ,সবাই রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ কাটতে শুরু করলো।আমাদের বাড়ির সব কলার ঝাড় নষ্ট হয়ে গিয়েছে এমনকি 4 কাধী কলাও নষ্ট করে দিয়েছে।এছাড়া পুরো বর্ধমান শহর জুড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে এই প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ে।
সবাই সাবধানে থাকবেন এই ঝড়ের দিনে।পরের দিন আবারো নতুন কোনো ব্লগ নিয়ে হাজির হবো।ততক্ষণ সকলে ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।
টুইটার লিংক
আপনাদের ওখানে তো দেখছি ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এখানে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আসলেই ঝড় মানুষের জীবনে খারাপ মুহূর্তগুলো ডেকে আনে। খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছি আমরাও যেটা বলে বোঝাতে পারবো না। অনেক গাছপালা পড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে যেটা আপনি শেয়ার করেছেন।
সত্যিই মুখে বলে বোঝানো যায় না সেই ভয়াবহ দৃশ্যগুলি স্বচক্ষে না দেখলে।ধন্যবাদ ভাইয়া।
বেশ কিছুদিন ধরেই মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। বিশাল ঝড় যে হবে সেটা অনেকটা আবহাওয়ার দেখে অনুমান করা হচ্ছে। আরে ঝরে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঠিক এমন ঘটনা আপনাদের এলাকায় ঘটেছে। কলাগাছ সহ ঘরবাড়ি সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আসলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। সৃষ্টিকর্তার মানুষকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক এই দুর্যোগের সময়।
সত্যিই,আমাদের শহরকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য।
আমাদের এদিকে গতকাল প্রচন্ড পরিমাণে ঝড় উঠেছে আপু। এই ঝড়ে বেশি ভাগ মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । অনেক খারাপ লাগলো আপু এত ক্ষয়ক্ষতি দেখে। ধন্যবাদ আপনাকে
আপনাদের ওদিকে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আপু।জেনে খারাপ লাগলো।
আপু,গতকাল আমাদের এদিকেও কাল বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব নৃত্যে অনেকেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার বাড়িতে ২টি সুপারির গাছ ভেঙে পড়েছে টিনের চালের উপরে। এছাড়াও আমার এলাকায় অনেক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। তবে আপনার ক্ষয়ক্ষতি দেখে অনেক বেশি মনে হচ্ছে। যাক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আপনার মা বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছেন এটা জেনে বেশ ভালো লাগছে। আর অবশেষে আপনার প্রিয় বিড়াল সন্তুকে খুজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সব মিলিয়ে প্রবল ঝড়ের তান্ডবে আপনাদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আপনার অনুভূতিটুকু প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সত্যিই ভাইয়া, আমাদের শহরকে তছনছ করে দিয়েছে।আপনাদের ওখানে এমন ক্ষতি হয়েছে জেনে খারাপ লাগছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রবল ঝড়ের তান্ডবে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির কিছু দৃশ্য শেয়ার করেছেন। ছবি গুলো দেখে খারাপ লাগলো। গতকাল আমাদের এখানেও বৃষ্টি আর ঝড় দুটাই হয়েছে। আপনাদের বিড়াল হারিয়ে গিয়েছে অবশেষে পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
এখন সবদিকেই ঝড় হচ্ছে, ধন্যবাদ ভাইয়া।
আজ কয়েক দিনে প্রায় কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। এবং অনেকেই অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আপনাদের এখানেও তো দেখছি অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এখান থেকেও আপনাদের ওদিকে ক্ষয়ক্ষতি আমার মনে হয় বেশি হয়েছে । আপনার মা বড্ড বেঁচে গেছে এবং আপনার প্রিয় বিড়াল টিকে ও খুঁজে পেয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো প্রবল ঝড়ের তাণ্ডবে আপনাদের ক্ষয়ক্ষতির অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
সত্যিই,আমাদের শহরকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে আপু।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা যে মায়ের কোনো ক্ষতি হয় নি।ধন্যবাদ আপু।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
Thank you💝.
কালকের এই প্রবল ছেড়ে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমার অনেকগুলো কলাগাছ এভাবেই নষ্ট হয়েছে আর এমন দৃশ্য সত্যি বড় বেদনাদায়ক আমাদের পাশে একটা বাড়িতে বড় এক গাছ পড়ে গেছে। তবুও ধৈর্য ধরতে হবে আপু এক দিকে ক্ষতি হলে সৃষ্টিকর্তা আর একদিকে উন্নতির দুয়ার খুলে দেয়
আপনাদের ওখানে এমন ক্ষতি হয়েছে জেনে খারাপ লাগছে।ধন্যবাদ ভাইয়া।