কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "পাহাড় চূড়ায়"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)
নমস্কার
বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই?আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের আশীর্বাদে।
আজ আমি @green015 ভারত থেকে আবারো অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি এই কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো @blacks দাদার আয়োজিত কবিতা আবৃত্তিতে।এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য @blacks দাদাকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা। এছাড়া কমিউনিটির সকলকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।আমার খুবই ভালো লাগে যখন আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।কিন্তু কবিতা আবৃত্তি করার জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন।আমি ছোটবেলায় স্কুলের অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝেই কবিতা আবৃত্তি করতাম।কিন্তু অনেক বছর হলো কবিতা আবৃত্তি করা হয় না।কিন্তু আমার স্বল্প জ্ঞানে মাঝে মাঝে কবিতা লেখার চেষ্টা করি।কমিউনিটির অনেকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণাও পাই কবিতা লেখার প্রতি।যাইহোক আজ অনেক বছর পর দুঃসাহস করলাম কবিতা আবৃত্তি করার।আসলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটি এতটাই সুন্দর ও গভীর ভাবনার যেটি আমার জীবনের সঙ্গে যেন মিশে গেছে।একবার পড়লে বারবার পড়ার আগ্রহ জন্মে এই কবিতাগুলো।তাইতো আজ আবার চলে আসলাম কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে।আশা করি আপনাদের কাছে খুব একটা খারাপ লাগবে না।তো চলুন শুরু করা যাক---
পাহাড় চূড়ায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই
কিনতাম।
কারণ, আমি ঠকতে চাই।
নদীটাও অবশ্য কিনেছিলামি একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো,
ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল আমার বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার
কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু
একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড়
একটা নদী পেয়েছিস?
খুব জিতেছিস তো মাইরি!
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ
সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি,
সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না,
সে জানতো! সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সেই পাহাড়ের পায়ের
কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ
কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার
খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,
প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-
এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে কবিতাটির মূলভাব ব্যাখ্যা:
"পাহাড় চূড়ায়" কবিতাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতাটি উদ্বাস্তুদেরকে নিয়ে বা উদ্বাস্তুর প্রেক্ষাপটে লিখেছেন। কারণ তিনি একদিকে যেমন ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী তেমনি অন্যদিকে ছিলেন বাস্তবতার কবি বা লেখক।
এখানে কবি তার নিজস্ব শখের কথা বলতে চেয়েছেন।আমরা গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবো যে ,বাস্তবে পাহাড় কেউ কোনোদিন কিনতে পারেন না এমনকি নদীও কারো নিজস্ব হয় না।তাই কবি এখানে পাহাড়কে একটা ভালোবাসার স্থান বা নারীর টান এমন কিছুকে বুঝিয়েছেন।পাহাড়ের ভূমি সাধারণত সূক্ষ্ম-রুক্ষ ও গাছপালায় ভর্তি হয়ে থাকে।কিন্তু নদীতে জীবনদায়ী জল আছে,মাছ আছে এবং চাষবাস করার জল আছে।পাহাড় একটি জায়গায় স্থির থাকে, কোথাও চলাফেরা করতে পারে না।কিন্তু নদী চঞ্চলা, চলমান।তাই কবি তার কবিতায় নদীকে বেশি দামি হিসেবে দেখিয়েছেন।তবুও কবি সেই নদীর বদলে শিলাখণ্ডের মতো দামহীন স্থির পাহাড়কে কেনার জন্য বেছে নিয়েছেন ।এখানেই কবিতার আসল রহস্য উঠে আসে।কারণ তিনি জীবনের কোনো একটি জায়গাতে এসে বুঝিয়েছেন যে,দুনিয়ার সবকিছুই যেন দামি।স্বাভাবিকই আমরা দামি জিনিসকেই ভালো বলি এবং কমদামি জিনিস ভালো নয় বলে গণ্য করি।তাই কবি কমদামি ও মূল্যহীন পাহাড়টাকে কিনে ঠকতে চান।কারণ তিনি ঠকার মাধ্যমে কিছু শিখতে চান।
ছোটবেলায় আমরা যেমন দলবদ্ধভাবে খেলাধুলা করতাম
তখন আমাদের মনে হতো একটা নির্দিষ্ট স্থান আমার অধীনে ঘেরাও।অর্থাৎ সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।তেমনি কবির জীবনপর্বে ও যে কাঁটাতারের জায়গাটা ছিল পূর্ববঙ্গ ও পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময়ে সেটিকেই কবি তুলে ধরেছেন তার কবিতায়।শৈশবে কবি পূর্ববঙ্গে মানুষ হয়েছেন তখন দেশটি ভাগ হয়ে যাচ্ছে।সেইসময় কবির নিজের দেশ ছেড়ে আসার যে তীব্র দুঃখ নিয়ে সেটিই তিনি ছোট্ট ছিমছাম দ্বীপের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন।শৈশবে আমরা সবাই প্রজাপতি দেখে আনন্দ পেতাম তেমনি পূর্ববঙ্গের পদ্মার অপূর্ব রূপ ছিল খুবই সুন্দর যেটি কবির কাছে প্রিয় ছিল।শৈশবে বন্ধুরা যেমন আমাদেরকে উৎসাহ দিত কিছু জিনিসের বদলে যাতে বেশি কিছু জিনিস পাওয়ার জন্য।তেমনি কবিকে সবাই বাহবা বা সাবাসী দিচ্ছেন যে,তিনি তার ছোট্ট দেশ ছেড়ে এসে একটি বড়ো দেশে থাকতে পারছেন।তিনি শান্তির দেশে বাস করছেন, যেখানে কোনো বৈষম্য নেই,হিন্দু-মুসলিমের ভেদাভেদ নেই।
যখন কবি তার নিজের দেশকে ভালবাসতে শিখেছেন তখন তিনি প্রকৃতির কাছে প্রশ্ন করেছেন মানুষের মনের আশা ব্যক্ত করে।এমনকী প্রকৃতি বা নদীও যেন একসময় কবির কথায় জানান দেয় প্রবাহমান হয়ে।কবি তার যে প্রান্ত অর্থাৎ জন্মভূমি ছেড়ে চলে এসেছেন সেই দ্বীপেই শুধু বৃষ্টি হচ্ছে।১৯৭১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ হচ্ছে এবং উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তখন ভারতবর্ষকে দক্ষিণ গরম হাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি।সেই সময় উদ্বাস্তুরা ভারতবর্ষে ঢুকছে এবং বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মানুষরা ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন।এখানেই কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আক্ষেপ করেছেন কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না বাংলাদেশে।আমরা শৈশবে থাকতে তাড়াতাড়ি বড়ো হওয়ার আশা করতাম আবার বড়ো হওয়ার পর শৈশবকে ফিরে পাওয়ার আশা করি যেটি শুধুই এখন স্মৃতি।ঠিক তেমনি কবি যখন পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে চলে আসেন তখন খুবই আক্ষেপ করেও তিনি ওপার বাংলায় যেতে পারেননি।
কবি এত হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি দেখতে পারছেন না তাই তিনি একটি নির্জন জায়গায় থাকতে চান।যেখানে কোনো সবুজ গাছপালা নেই শুধু ধূ-ধূ মরুভূমি।তিনি একদম পাহাড়ের শিখরে উঠতে চান এবং পৃথিবীকে খুব কাছ থেকে দেখতে চান ।যখন কবি পাহাড়ের চূড়ায় তখন সেখান থেকে কোনো মানুষকে দেখতে পাওয়া যায় না এমনকি কবির কথার প্রতিধ্বনি বা প্রতিউত্তরও আসে না।কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় বোঝাতে চেয়েছেন তিনি একজন নাস্তিক ছিলেন।মানুষ যেমন ঈশ্বরের পায়ের কাছে ঝুঁকে থাকেন অর্থাৎ কবির মাথায় ঈশ্বর আশীর্বাদ দেবেন না সেটাই বুঝিয়েছেন।এছাড়াও তিনি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে অহংকারী বলেছেন।কারণ যে যুদ্ধের দামামা বেঁধেছে এতে সবার মধ্যে অহংকার রয়েছে নিজ নিজ ভাষা নিয়ে।যেমন-বাংলা ভাষা আমার অহংকার তেমন উর্দু সেই অহংকার আর সেটা নিয়েও দ্বন্দ্ব।কবি বলতে চেয়েছেন যখন দেশটা ভাগ হলো তখনই যুদ্ধ বাঁধলো।কিন্তু সেইসময় কোনো এক পক্ষ ক্ষমা চাওয়াটাই শ্রেয় ছিল,যে আমরা পূর্বেও ভুল করেছি ।আমাদের ১০ টি দিক আছে।যেমন-পূর্ব,পশ্চিম, উত্তর ,দক্ষিণ ইত্যাদি ইত্যাদি।তাই কবি এখানে ১০ দিককে বলেছেন- আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে ফিরেছি তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আশা করি আমার কবিতা আবৃত্তিটি ও কবিতা সম্পর্কে আমার অনুভূতি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।
টুইটার লিংক
খুবই চমৎকার আবৃত্তি করেছ প্রিয় আপু মনি।
মুগ্ধতার ছুঁয়ে গেল আমার প্রানে তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা♥♥
অনেক ধন্যবাদ আপু,অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য💝💝.
কোকিল কন্ঠের মিষ্টি আপু সত্যি চমৎকার আপনার শুর অনেক সুন্দর ৷আমার কাছে যে এতো ভালো লেগেছে ৷?ধন্যবাদ আপু
দাদা, আমার কন্ঠ একদম ভালো নয়।তবুও আপনার প্রশংসা শুনে খুশি হলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দিদি কথাটা শুনে ভালো লাগলো আসলে নিজের প্রসংশা করে না ৷এটাই ঠিক
😊
অনেক সুন্দর ভাবে কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন। এবং আপনার কবিতাটি শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
একবার আপনার কন্ঠে আবৃত্তি শোনার ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম যাক সেই আশাটাও পূর্ণ হলো।খুব সুন্দর আবৃত্তি করেছেন আপু।অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।🖤
আমার কন্ঠ একদম ভালো নয়,তাই কিছু করা হয় না ইচ্ছা থাকলেও।আপনি শুনেছেন জেনে ভালো লাগলো, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
কে বলেছে ভালো নয়,আমার কাছে কিন্তু দারুন লেগেছে।🖤🖤🖤
😊
দিদি সত্যি বলতে খুবই চমৎকার আবৃত্তি শুনলাম আপনার কন্ঠে বেশ ভালো লাগলো। সেইসাথে আপনি কবিতার মূলভাবটিও অনেক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যা পড়ে আর মুগ্ধ হয়েছি। শুভকামনা অবিরাম আপনার জন্য।
আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ভাইয়া, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনার কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনে আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম। অসাধারণ জাস্ট অসাধারণ হয়েছে আপনার কবিতা আবৃত্তি। এত সুন্দর করে কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। অসাধারণ এই কবিতাটি আবৃত্তির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনার মুখে প্রশংসা শুনে খুশি হলাম এবং অনুপ্রাণিত হলাম।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।😊
আপনার কন্ঠে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পাহাড় চূড়া কবিতাটি আবৃত্তি অনেক সুন্দর লাগছে দিদি। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে কবিতাটি আবৃতি করতে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি আপনি এই প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
ভাইয়া আসলে যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমার খুবই ভালো লাগে সেইজন্যই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করলাম।ফলাফলের আশা করি না।অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনার চমংকার ভাবে কবিতা আবৃতি করেছেন। কবিতা আবৃতি শুনে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কবিতা আবৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
অনুপ্রেরণা ও উৎসাহিত হলাম ভাইয়া।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।