"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -14 || আমার জীবনের মজার গল্প: "জেঠুর গাছের সফেদা চুরি"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

নমস্কার

বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই?আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের আশীর্বাদে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" আয়োজিত প্রতিযোগিতা -14 তে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য @hafizullah ভাইয়াকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।এছাড়া "আমার বাংলা ব্লগের"সকল শ্রদ্ধেয় ভাইয়াদেরকে ,আপুদেরকে ও কমিউনিটির সকলকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ,ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আমার খুবই ভালো লাগে যখন আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।তাইতো আজ আবার চলে আসলাম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে একটি ফল চুরির গল্প নিয়ে।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে শৈশবের কোনো না কোনো ঘটনা রয়েছে।যেগুলো এখন শুধু আমাদের কাছে স্মৃতিময় ও মজার ঘটনা বলে বিবেচিত।তাছাড়া এটি কখনোই ভুলবার নয়,যেটি মনে পড়লেই মনে অপার আনন্দ ও হাসিতে ঠোঁটের কোণ ভরে ওঠে।যাইহোক এইরকম আমার জীবনেও নানারকম শৈশব বিজড়িত ঘটনা রয়েছে।তো চলুন গ্রীষ্মের ফল চুরির মজার একটি ঘটনা শেয়ার করি আপনাদের সঙ্গে----

জেঠুর গাছের সফেদা চুরি

pexels-photo-4552178.jpeg
সোর্স

আমাদের ছিল ইয়া বড়ো নামকরা বাড়ি।আমার ঠাকুরদাদার এলাকাতে বেশ খ্যাতি ছিল, সবাই একনামেই চিনতো।কিন্তু ঠাকুরদাদার মৃত্যুর পর আমার মেজো জেঠু 30 বছর টানা রানিং চেয়ারম্যান হওয়ার ফলে এখন সবাই জেঠুর নামেই চিনে থাকেন।আমার বাবারা ছয় ভাই ছিলেন।আমার বাবা ছিলেন চতুর্থ জন।বড়ো তিনজনের ভিটা ছিল বামপাশে এবং ছোট তিনজনের ভিটা ছিল ডানপাশে আর ঠিক মাঝবরাবর ছিল চলাচলের পাকা ইটের রাস্তা।সকলেই আলাদা তাই জিওল গাছ ও তারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও সকলের ভিটা।আমাদের গোটা বাড়িটা ছিল খুবই সাজানো -গোছানো।সকলের ভিটাতেই নানান ফলমূল গাছের সমাহার ছিল তাই গ্রীষ্মকালে ফলের কোনো কমতি ছিল না।পুরো বাড়িটাই ফলমূলের ঠাসা ছিল একেবারে।শুধু আমাদের নিজেদেরই ছিল 24 টি নারিকেল গাছ,15 টি নানান জাতের আম গাছ,3 টি সফেদা ও গবেদা গাছ।এছাড়া কাঁঠাল,লিচু,পেয়ারা,বাতাবিলেবু,জাম,আমলকি,গাব,
জামরুল, বেদানা, বরই,কাঠবাদাম ও কলাগাছে আমাদের ভিটাটি পুরো ঠাসা।সারাবছর ফলের সমাহার লেগেই থাকতো।এইরকম অন্যান্য কাকা ও জেঠুদের ভিটাতেও ছিল।তাই আম চুরির ঘটনা নেই,কারণ বৃষ্টি হলেই বাইরের ছেলেমেয়েরা আমাদের বাড়িতেই আম কুড়াতে আসতো।সবথেকে বড়ো বিষয় এক একজনের দুটি করে ভিটা ছিল শুধু ডাক্তার বড়ো জেঠুর ছাড়া।কারন বড়ো জেঠুর ভিটা ছিল বাড়ির পশ্চিমদিকে তাই একটিই বড়ো ভিটা আর পঞ্চম জনের বাড়ির পূর্বদিকে 2 নম্বর ভিটা রয়েছে ।যেটি মাছ চাষ করার ঘের-বেরি।বাকি চারজনের বাড়ির পশ্চিমদিকে 2 নম্বর ভিটা রয়েছে।যেটি ছিল সম্পূর্ণ খোলামেলা।তাই এটিই ছিল আমাদের খেলার মূল কেন্দ্রস্থল।
পশ্চিমদিকে আমাদের ভিটায় কলাবাগান ও চেয়ারম্যান জেঠুর ভিটাতে গুটিকয়েক পেয়ারা ও নারিকেল গাছ,অনেকগুলো চাম্বল গাছ ও একটি রসালো সফেদা গাছ ছিল।বাড়িতে 7জন ছেলে ও 7 জন মেয়ে ছিল।মেয়েদের মধ্যে আমি ছিলাম সবার ছোট।এছাড়া 5 জন বড়ো ও 2 জন খুবই ছোট থাকায় বাকি আমরা 7 জন ছিলাম খেলার সঙ্গী।আমার ও দাদা দিদিদের মধ্যে চার-পাঁচ বছর বয়সের পার্থক্য ছিল ।যাইহোক বিকাল 4 টা বাজলেই আমরা হাজির হতাম পশ্চিমের ভিটাতে।কিৎকিৎ,হাইজাম্প ও লুকোচুরি খেলা ছিল আমাদের অন্যতম খেলা।গ্রীষ্মকালে লুকোচুরি অর্থাৎ যাকে আমরা পলাপলি বলতাম, সেই খেলাটাই বেশি হতো আমাদের।

IMG_20220330_074539.jpg
সোর্স

সেদিন ছিল চৈত্র মাসের এক বিকেল।আমরা ভাইবোন সবাই জড়ো হয়ে লুকোচুরি খেলছিলাম ফুরফুরে ঝড়ো হাওয়ার মাঝে।তখন আমার এক দাদা সফেদা গাছে উঠে উপরের ডালে লুকিয়ে বসেছিল।গাছে তখন প্রচুর পরিমানে সফেদা ঝুলছে ,প্রত্যেক শাখা-প্রশাখায়।কয়েকটি সফেদা নরম বা পাকা পেয়ে সে গাছে বসে বসে ভক্ষণ করেও নিয়েছে সেইসময়।সফেদা বেশ পরিপক্ক তখন, তাই সে আমাদেরকে ডেকে একটা পরিকল্পনা করলো।সফেদা চুরির পরিকল্পনা😊😊।যে কথা সেই কাজ।আমরা সবাই মিলে বড়ো সাইজের সফেদা ডাল টেনে পাড়তে শুরু করলাম ,কেউ বা গাছের ডালে উঠে।পাশেই জেঠুর পুকুর তাই বাড়ির রাস্তাসংলগ্ন পুকুরের পাড়ে গিয়ে একজন পাহারা দিলো।কেউ আসলে সংকেত ছিল মুখে শীষ দিয়ে সতর্ক করা বা পুকুরের জলে ঢিল ছুড়ে সতর্ক করা।এরপর পুকুরের অপর প্রান্তের পাড়ে থাকা সফেদা গাছ থেকে আমরা সফেদা পেড়ে মাটিতে জড়ো করলাম অনেকটা। দুইহাতে তখন দুধের মতো সাদা সফেদার আঠা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে।যাইহোক এরপর কিছু সফেদা পাশে থাকা খড়ের গাদার মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম ,বাকিগুলো গাছের পাতা জড়ো করে তার মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম।যাতে গরম পেয়ে সফেদা দ্রুত পেকে যায় আর কেউ টের না পায়।3-4 দিন পর সেগুলো বের করে জমিয়ে খাওয়া হবে।3 দিন অপেক্ষার পর বিকালে আমরা সবাই সফেদাগুলি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের করে পাকা সফেদাগুলি ভাগ করে খেলাম প্রকৃতির মাঝে।যেগুলো পাকেনি সেগুলো আবার জড়ো করে খড়ের গাদার গরম স্থানে রেখে দিলুম।সেই আনন্দের কথা ভুলবার নয়।কারন সফেদাগুলি ছিল রসে টলমলে, খেতে একদম রসগোল্লার মতো।পাতলা ছিপছিপে খোসা ছিল। এটিই ছিল আমার শৈশব জীবনে গ্রীষ্মের ফলচুরির গল্প।

আমরা সাধারণত সফেদা পেড়ে মাটির কলসির ভিতর চালের কুঁড়োর মধ্যে রেখে দিতাম,তারপর প্রতিদিন সকালে উঠে কলসি চেক করতাম।পাকা সফেদা বের করে হালকা ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেতাম।কিন্তু দুঃখের বিষয় 😢😢হলো ,আমরা এখন সেই বাড়িতে থাকি না তাই সেই সফেদা গাছের ছবি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারলাম না।আশা করি আমার শৈশব জীবনের ফলচুরির গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

(10% বেনিফেসিয়ারী প্রিয় লাজুক খ্যাককে)

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 3 years ago 

সফেদা আমার কাছে খেতে খুব ভালো লাগে, বেশ রস রসে মিষ্টি লাগে। আসলে কম বেশী সবাই গ্রীস্মকালীন ফল এভাবে খেয়ে থাকে। ধন্যবাদ অংশগ্রহনের জন্য।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, আমার কাছে তো সফেদা রসগোল্লার মতো লাগে।😊তাছাড়া এটি আমরা কাঁচাও জাব করে মেখে খেতাম।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার মূল্যবান মতামত জানানোর জন্য।💐

 3 years ago 

সফেদা আমার খুবি প্রিয়। মাঝে মধ্যেই খাই । ফল পাকুড় চুরির গল্প গুলো পড়ছি আর ভাবছি আমরা কি তা হলে এক সময় চোর ছিলাম। হা হা হা। সত্যি চুরি করে ফল পেড়ে খায়াওয়া মজাই আলাদা। ভাল লাগলো সফেদা চুরির গল্প। ধন্যবাদ বোন ভাল থাকবেন।

 3 years ago 

ফল পাকুড় চুরির গল্প গুলো পড়ছি আর ভাবছি আমরা কি তা হলে এক সময় চোর ছিলাম।

দারুণ বলেছেন দাদা,নিজেদের গাছের চোর।হি হি😊,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।আপনি ও ভালো থাকবেন দাদা।

 3 years ago 

আসলে ফল চুরি করে খেতে অন্যরকম একটা মজা লাগে। অনেকেই বলে যে নিজের কাছের ফুল থাকতে মানুষের ফল কেন খাওয়া হয়। আসলে এটা কোন কারন হয়না। কারণ যারা খায় তারা এটা মজা বোঝে। আপনি আপনার জেঠুর সবেদার গাছ থেকে সবেদা চুরি করে খেয়েছেন। খুব সুন্দর করে গল্পটি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

অনেকেই বলে যে নিজের কাছের ফুল থাকতে মানুষের ফল কেন খাওয়া হয়। আসলে এটা কোন কারন হয়না। কারণ যারা খায় তারা এটা মজা বোঝে।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, নিজেদের গাছের ফলে সেই টেস্ট পাওয়া যায় না।😊অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আসলে আপু নিজেদের গাছের যতইফল থাকুক না কেন ছোটবেলায় অন্যের গাছের ফল চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল। আপনার সফেদা খাবার গল্প পড়লাম খুবই ভালো লাগলো। আর সফেদা আমার অনেক বেশি পছন্দের একটি ফল। ধন্যবাদ আপনাকে এই গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

সফেদা আমার ও খুব পছন্দের ভাইয়া।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

সফেদা ফল আমার খুবই প্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। চুরি করে আপনি ভুল করেননি অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

চুরি করে আপনি ভুল করেননি।

হি হি 😊,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ভাইয়া।

 3 years ago 

ওয়াও আপনার জেঠুর গাছের ছবেদা চুরির গল্প পড়ে খুবই মজা পেলাম। খুব দক্ষতার সাথে চুরি করেছিলেন সেটা আপনার গল্প পড়ে জানতে পারলাম ।আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনি চমৎকার একটা গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.035
BTC 91413.32
ETH 3152.41
USDT 1.00
SBD 3.07