||প্রতিযোগিতা-২৩||আমার স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
আজ- ১২ই, আশ্বিন , | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | শরৎকাল ||
নমস্কার
স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি:
জীবনের দিনগুলো কখনো এক জায়গায় লিপিবদ্ধ থাকে না৷ এগিয়ে যাওয়াই হল তার মূল উদ্দেশ্য৷ এইতো সেই কদিন আগে দুরু দুরু বুকে সাহস নিয়ে সাহস নিয়ে ভূল্লিপাড়া গ্রামের এক ছোট্ট বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছিলাম৷ যা আজ শুধু স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে৷ মনে হচ্ছে এই কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে পা বাড়ালাম বিদ্যালয়ের পথে৷
আসলে আমার গ্রামের বাড়ি ভুল্লিপাড়া গ্রাম৷ আমি গ্রামে থাকায় সেখানেই বড় হওয়া এবং কি ভূল্লিপাড়া গ্রামের ছোট্ট একটি বিদ্যালয় আমার পাঠশালার প্রথম পর্ব শুরু হয়৷ যদিও প্রথমে স্কুল যেতে অনেকটাই ভয় লাগছিল৷ একটা পর্যায়ে বাবা প্রতিদিন হাত ধরে ধরে স্কুলে নিয়ে যেত ৷এবং কি ছুটি পর আবার নিয়ে আসতে এভাবেই চলছিল আমার স্কুল জীবন৷
এভাবে করে স্কুলে যেতে যেতেই তখন আর আগের মতো কোনো ভয় বা লাগে না ৷ তখন গ্রামের অনেক জন মিলে সবাই পায়ে হেটে হেটে স্কুলে যেতাম ৷আবার অন্য গ্রামের অনেক জনের সাথে পরিচয় বেশ ভালো ছিল কত দুষ্টামী তার কোনো হিসাব নেই৷রোজ প্রতিদিন ক্লাশ রুমে মারামারি বিশষে করে জায়গা নিয়ে ৷ কেউ কাউকে ছাড়া দিব না ৷আবার কিছুক্ষণ পর আবার সেই আগের মতো গলা ঝরিয়ে এক সাথে বসে থাকা ৷
আর সত্যি বলতে আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম ৷ স্যার ম্যাডাম দের প্রতিদিন পড়া দেওয়া ৷এবং কি বাড়িতে এসে সন্ধায় আবার মা রান্না করছে আর আমাকে ছোট লাটি নিয়ে পড়ায় ৷আর আমি প্রতিদিনের পড়া দেওয়ার চেষ্টা করি ৷
আর এভাবে চলতে চলতেই ক্লাস টু তে উঠে পড়লাম৷ তখন আরো ভালো লাগছে নতুন বই নতুন পড়া সব কিছু মিলিয়ে নতুন কিছু উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে৷ ক্লাস টু তে ওঠার কিছুদিন পরেই আমার নিজ কাকুর বিয়ে ঠিক হলো৷ আরে বিয়ের ধুম ধামতে বেশ আনন্দ আর উল্লাসে দিন চলছিল৷ আর তখন সত্যি বলতে বিয়ের কদিন আগে থেকেই স্কুলে আসার ইচ্ছে করেছিল না ৷
কারন বিয়ে বাড়ি তো কদিন আগে থেকেই সবকিছু ঠিকঠাক করা বলতে গেলে বাড়িতে বেশ গল্প গুজব ৷আর বিয়ের দুদিন আগে বাড়িতে ডেগারেটর কাপড় দিয়ে সারা বাড়ি সাজাচ্ছে ৷আর এসব দেখে স্কুলে যেতে একদম ইচ্ছেই করছে না ৷ কি করার ইচ্ছে না করলে তো হবে না আমার মা যে রাগি মানুষ ৷ যদিও রাগি তবে পরে ঠিক আদর করে ৷ আর পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না ৷ মনটা যেতে না চাইলেও যেতে হবে নইলে মা পিঠে লাঠি পড়বে ৷ মা অবশ্য বলেছিল যে বিয়ের দিন যাবি না কিন্তু আমার কি ভালো লাগে ৷সারা বাড়ি রঙিন কাপড় সাজিয়ে লাইট দিয়ে কি চমৎকার ৷যা হোক মা কপালে চুমু দিয়ে স্কুলে ব্যাগ দিয়ে দিলো কি করার গেলাম ৷ যদিও গেছি তবুও সম্পুর্ণ মনটা ছিল বিয়ে বাড়িতে ৷ আর ওই ভাবে সেদিন আনমনা মন নিয়ে ক্লাশ করলাম ৷যদিও ক্লাস করার কোনো মন ছিল না ৷
ক্লাস শেষ মনে মনে ভাবছি কখন ছুটি দিবে ৷আসলে পুরো অস্থির অস্থির লাগছিল ৷ তখন শুধু মনের মধ্যে একটাই গুন গুন করছে কখন ছুটি দিবে কখন বাড়ি যাবো৷ আর সেদিন কোন শুধু ক্লাস নিয়েছে কিন্তু পড়া হয়নি৷ যদিও সেদিন কিছু বলেনি ওইভাবে৷ তার কিছুক্ষণ পরেই স্কুলের ঘন্টা তখন আর কি করব ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এক দৌড়ে বাড়ি৷ তারপর তো রাতের বেলায় ঝিকিমিকি বাতি সবমিলিয়ে সারা বাড়ি আনন্দে মেতে উঠেছে ঐ দিন রাতে কোন বই পড়ি নি৷ অর্থাৎ স্কুলের যে পড়া দিয়েছিল সেগুলো কিছুই করিনি৷ আর তারপর দিন ছিল বিয়ের একদিন বাকি অর্থাৎ সেদিন আমাদের সনাতন ধর্মের বিয়ের বাড়ির একদিন আগে অদিবাস বলা হয়৷ সেদিন আর আমি স্কুলে যাব না এরকম বাহানা ধরলাম ৷ আসলে বাড়িতে এত জ্বালা যন্ত্রণা অনুষ্ঠান স্কুলে যেতে কি ভালো লাগে৷কি করার যেতে হবে নইলে মা পিঠে লাঠি ৷ সেদিন কি করেছি সকালে কোনো কিছু না খেয়েই কান্না কান্না করতে করতে গেছি স্কুলে ৷আর স্কুলে তো প্রতি দিন প্রিটি করায় ৷ আর সেদিন ছিল পরিমানে রোদ আর গরম ৷ সেদিন স্কুলে অনেক দেরি করে গেছি ৷আমি যেতে যেতে রুমে স্যার ঢুকেছে ৷ আমি গেলাম আদেশ নিয়ে প্রবেশ করলাম৷
আর আমার মনে মনে ভয় লাগছে যে বই তো একদম পড়ি নি ৷ আজ আমাকে মার খেতে হবে মনের মধ্যে বুকটা যেন ঢোল বাজতেছে ৷যা হোক স্যার লেখা দিলো না দেখে তখন আমি চুরি করে লিখেছি৷ কিন্তু আফসোস পরে স্যার না দেখে মুখে মুখে ধরালো ৷ কিন্তু পারি নি তারপর আমাকে কান ধরে হাটু গুড়ে লিনডাউন করে রাখলো ৷ আর তখন যে আমার কতটা কষ্ট লাগছিল ৷ সত্যি বলতে বোঝানো সম্ভব না ৷ স্যার এক এক করে সবাইকে পড়া ধরাচ্ছে৷আর আমি হাটু গুড়ে লিনডাউন হয়ে আছি ৷থাকতে থাকতে আর সহ্য হচ্ছে না ৷আর সেদিন কিন্তু কোনো কিছু না খেয়েই স্কুলে গেছি৷
এভাবে থাকতে থাকতে আমি কখন যে কখন জ্ঞান হারিয়ে রুমের পাকা ফ্লোরে পড়ে মাথায় একটা বড় ধরনের আঘাত লেগেছে৷ তখন যে আমাকে কি করছে আমি নিজেও জানি না ৷ তখন আমার বাবা মাও খবর পেয়ে স্কুলে আসে ৷ তখন আমাকে অফিস রুমে বসে মুখে পানি দিয়ে জাগানোর চেষ্টা ৷ এক পর্যায়ে আমি চোখ মেলে তাকালাম দেখি আমাকে স্যার তার কলে ধরে রেখেছে আর আমার সামনে আমার বাবা মা ৷
আর তারপর দেখি আমার মাথা ভুলে গেছে অনেকটা কিন্তু ফাটে নি ৷ তখন ওই দিনে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় ৷এরপর ডাক্তার ওষুধের মাধ্যমে কমিয়ে আনে ৷
আর তখন বিয়ে আর কি আমাকে নিয়ে সবাই চিন্তিত৷ যা হোক বিয়েটা হলো কিন্তু বিয়েতে কোন আমি আনন্দ করতে পারিনি ৷কারণ তখন আমি ছিলাম অসুস্থ৷
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার স্কুল জীবনের তিক্ততা অভিজ্ঞতার অনুভূতি৷ আসলে সত্যি বলতে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি কে অনেক ধন্যবাদ ৷এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য৷ আর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করার ফলেই হয়তো আজ আমি সেই অতীতের স্কুল জীবনের তিক্ততা অনুভূতিটা শেয়ার করতে পারলাম ৷নয়তো সেটা আজও মনে অগোচরে রয়ে যেত৷ আর সত্যি বলতে আজকে আমার এই তিক্ততা অনুভূতি টা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে নিজেকে অনেকটা হালকা এবং কি ফুরফুরে লাগছে৷ আর আজকে আবারও সেই পুরনো অতীতের স্মৃতি দেখে মনে পড়ল ৷
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!!
@gopiray
সবাইকে ধন্যবাদ
সবাইকে ধন্যবাদ