মহাভারতের চরিত্ররা -মহামহিম ভীষ্ম।। পর্ব -০২
Image
মহাকাব্য মহাভারত এর প্রধান চরিত্র গুলো নিয়ে আমার ধারাবাহিক পোস্ট এর দ্বিতীয় এপিসোড এটি।গত এপিসোড এ মহামহিম ভীষ্ম কে নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম।তাকে নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো এই পর্বে।গত পর্বে শেষ করে ছিলাম ভীষ্ম নিজ বংশের উত্তরাধিকার এর অনিশ্চয়তায় সূর্য দেব কে শেষ করতে উদ্যত হয়ে ছিল।ঠিক তখনই সৃষ্টিকে বাঁচাতে ভীষ্ম এর কাছে হাজির হন সূর্য দেব।সূর্য দেব ভীষ্ম কে নিজের বংশ রক্ষার এক পথ এর সন্ধান দেন।আজকে সেই পথ টা কি?সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবে।এই আলোচনার মাধ্যমে যেমন ভীষ্ম এর চরিত্রের নানা দিক উঠে আসবে তেমনি মহাভারত এর মূল ঘটনার ও প্রবাহ চলতে থাকবে।
সূর্য দেব ভীষ্ম কে বলেন মাহমুনি বেদব্যাস এর মাধ্যমে বিচিত্রবীর্য এর দুই স্ত্রী সন্তান লাভ করতে পারবে।এটা ধর্ম সম্মত ও শাস্ত্র অনুযায়ী বৈধ।মাহমুনি আশীর্বাদ এ কুরু বংশের বংশধর এর আবির্ভাব হবে।এদিকে রাজমাতা সত্যবতী ও ছিলেন মহামুনি বেদব্যাস এর মাতা।তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাজমাতা ভীষ্ম কে সূর্য দেবের কথা মতো কাজ করার আদেশ দেন।ভীষ্ম ও সেই মতো ব্যাবস্থা করেন।খবর পাঠানো হয় মহামুনি বেদব্যাস এর কাছে।তিনি সব শুনে রাজি হন এবং মহান কুরু বংশের মঙ্গল কার্যে হস্তিনাপুরে যথা সময়ে উপস্থিত হন।
Image
বেদব্যাস এর কৃপা লাভের সময় প্রথম স্ত্রী অম্বিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।আর দ্বিতীয় স্ত্রী আম্বলিকা ও এই প্রক্রিয়ায় ভয় পেয়ে কালো ও শীর্ণ হয়ে যায়।এই দুই স্ত্রীর আকস্মিক এই ভুলে তাদের দুই সন্তান জন্ম থেকেই ত্রুটি নিয়ে এই পৃথিবীতে আসে।দুই পুত্র সন্তানের আগমনে সারা হস্তিনাপুরে শুরু হয় উৎসব আর আলোর রোশনাই।রাজমাতা সত্যবতী ও মহামহিম ভীষ্ম এর বিশাল দুশ্চিন্তা দূর হয়।কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও একটা দুঃসংবাদ রাজমাতা ও ভীষ্ম কে দারুন ব্যথিত করে।কারণ বড় পুত্র ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হয় আর পাণ্ডু শারীরিক ভাবে একটু শীর্ণকায়।এই অন্ধ শিশুর ভবিষ্যত কি হবে?কি করে একজন অন্ধ রাজা হবে?কি করে হস্তিনাপুর ও তার প্রজাদের সে রক্ষা করবে?কারণ একজন অন্ধ তো অন্যের বোঝা হয়েই সারা জীবন বেঁচে তাকে ।এই মহা চিন্তায় রাজমাতা সত্যবতী প্রচন্ড ভেঙে পড়েন।
কিন্তু মহামহিম ভীষ্ম এগিয়ে আসেন পরম করুনা ও পিতার স্নেহ নিয়ে।তিনি অন্ধ শিশুটিকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নেন।আর রাজ মাতা কে কথা দেন তিনি ধৃতরাষ্ট্র কে তার নিজের মতো জগৎ বিখ্যাত বীর হিসেবে গড়ে তুলবে।ধৃতরাষ্ট্র হবে জগৎ বিখ্যাত বীর।ভীষ্ম এর এই কথায় রাজমাতা আশার আলো দেখতে পান।তার দুশ্চিন্তা দূর হয়।কারণ ভীষ্ম যাকে নিজের শিষ্য রূপে গ্রহণ করে সে কখনো দুর্বল থাকতে পারে না।এদিকে বিচিত্রাবীর্যের এক ঘনিষ্ট দাসী চিল সে ও বেদ ব্যাস এর কৃপায় এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, তার নাম রাখা হয় বিধুর।
Image
এর কেটে গেল অনেক বছর।তিন রাজ কুমার নিজেরদের শিক্ষা সমাপ্তি করে এখন তিন জনই যুবক।এখন সময় এসেছে হস্তিনাপুরের রাজ সিংহাসনে বড় কুমার ধৃতরাষ্ট্র কে রাজা হিসেবে বসানো।সেই মতো আয়োজন শুরু হয় সারা হস্তিনাপুরে।এক এক বিশাল উৎসবের মেজাজ।বহুকাল পরে হস্তিনাপুর বাসী একজন রাজা পাচ্ছে।এক এক করে সকল আয়োজন সম্পন্ন হলো।সকল গুরু মুনি ঋষি ও অতিথিরা উপস্থিত হলেন।ধৃতরাষ্ট্র কে সম্রাট পাণ্ডু কে সেনাপ্রধান ও বিধুর কে মহামন্ত্রী রূপে মনোনীত করা হলো।
এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।আজকে ধৃতরাষ্ট্র এর রাজ্যাভিষেক।সকল ধর্মীয় নিয়ম পালন করার হলো।এখন ধৃতরাষ্ট্র সিংহাসন এর বসলো।তার মাথায় রাজ গুরু কৃপাচার্জ রাজ মুকুট পরাতে যাবেন,ঠিক তখনই বিধুর উঠে দাঁড়ালো।সে ধৃতরাষ্ট্র কে রাজা করতে আপত্তি করলো।তার যুক্তি একজন অন্ধ মানুষ প্রজার চোখ মুখ দেখতে পারে না ,সে কি করে প্রজার সুখ দুঃখ বুঝতে পারে ।যে রাজা প্রজার সুখ দুঃখ বুঝতে পারবে না সে রাজা হাওয়ার যোগ্য নয়।তাকে রাজা করা ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ।থেমে গেল ধৃতরাষ্ট্র এর রাজা হাওয়া।রাজমাতা ও ভীষ্ম পড়ে গেলেন সংকটে।বিধুর যা বলছে সেটা ন্যায় সঙ্গত আবার এদিকে বড় পুত্র হাওয়ার জন্য ধৃতরাষ্ট্র ও রাজা হাওয়ার প্রথম দাবিদার।
কি করবে এখন ভীষ্ম?ধৃতরাষ্ট্রই বা কত তা আঘাত পেয়ে এই কর্মে?
তৃতীয় পর্বে আলোচনা করবো এই অনিশ্চয়তার পরিণতি কি হয় তা নিয়ে।
ধন্যবাদ ।।
জানতে ভালই লাগে । এজন্যই প্রথম পর্ব পড়েছি এবং দ্বিতীয় পর্ব পরলাম অপেক্ষায় থাকলাম তৃতীয় পর্বের জন্য । ধন্যবাদ।