আজ- ২৪ বৈশাখ | ১৪২৯, বঙ্গাব্দ | শনিবার | গ্রীষ্মকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার একটি পছন্দের বইয়ের রিভিউ নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে আমার সবচাইতে প্রিয় লেখক। যার প্রত্যেকটি বই আমি পড়েছি। সাম্প্রতিককালের তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন কারি এই লেখকের কলমে যেন জাদু ছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের প্রাত্যহিক জীবন তার কলমে ফুটে উঠেছে দারুণ আকর্ষণীয় ভাবে। নিতান্তই সাধারণ কাহিনীকে তিনি এমন আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। তার অসংখ্য গল্প এবং উপন্যাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভুতের গল্প আছে। তবে গল্পগুলো চিরাচরিত বাংলা ভূতের গল্পর মত নয়। যা পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
গ্রন্থের নাম | আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প |
লেখক এর নাম | হুমায়ূন আহমেদ |
ধরণ | ভৌতিক গল্প সংকলন |
প্রথম প্রকাশ | জুলাই 1997 |
মূল্য | 138 টাকা |
প্রকাশক | কাকলী প্রকাশনী |
আইএসবিএন | 984 437 149 এক্স |
ভেতরে যা আছে
হুমায়ূন আহমেদ লেখক হিসেবে যেমন ছিলেন প্রথম শ্রেণীর, তেমনি পাঠক হিসেবে ছিলেন খুবই উপরের স্তরের। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কিছু লেখক এর বাছাই করা ভূতের গল্প নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প সংকলন। যেখানে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন লেখকের মোট ২৬ টি গল্প। লেখকদের মধ্যে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, পরশুরাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কামাক্ষী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, মনোজ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের নিজের দুটি ভুতের গল্প ভয় এবং আয়না স্থান পেয়েছে গল্প সংকলনটিতে।
এরমধ্যে যেমন আছে নিখাদ ভয়ের গল্প, যা পড়লে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। তেমনি আছে ভূতের গল্পের আড়ালে মানুষের নির্যাতন নিপিরণের অন্য এক রূপ। যাদের গল্পগুলো এখানে স্থান পেয়েছে তারা প্রত্যেকেই বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক। ভয়ের গল্প হলেও প্রত্যেকটি লেখাতেই পাওয়া যাবে ভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চ। সবগুলো গল্পের সারসংক্ষেপ করা সম্ভব নয়, বিধায় হুমায়ূন আহমেদের একটি গল্পের সংক্ষেপ তুলে ধরছি। ভয় গল্পটি লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। শিক্ষকতা পেশায় থাকাকালীন তিনি সাইন্স এর এক্সটার্নাল এক্সামিনার হিসেবে গিয়েছিলেন একটি মফস্বল এলাকার কলেজে। মফস্বল এলাকা হওয়াতে তার থাকার ব্যবস্থা হয় কলেজেরই একটি অব্যবহৃত রুমে। সেখানেই পরিচয় হয় কলেজের একজন শিক্ষক এর সঙ্গে। যিনি মিষ্টভাষী এবং সদালাপী। তবে এক পর্যায়ে তিনি আবিষ্কার করেন যতবার তার সঙ্গে দেখা হয় ততোবারই রাতের বেলায় তিনি এমন প্রচন্ড ভয় পান যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যে ভয়ের জন্ম এই পৃথিবীতে নয় অন্য কোথাও। শুধু তিনিই নন, কলেজের প্রিন্সিপাল সাহেবের একটি ছেলে এই সহজ-সরল মানুষটির অজান্তেই ভয়ের শিকার হয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে। এই জটিল বিষয়টি আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সেখান থেকে শহরে পালিয়ে আসেন। তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন ভয়ের সঙ্গে এই লোকের সম্পর্ক প্রমাণ করা অসম্ভব। অথচ তিনি নিজে এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন বেশ কয়েকবার। সহজ সরল সদালাপী এই ভাল মানুষটির সঙ্গে ভয় পাবার সম্পর্ক ব্যাখ্যাতীত। নিজের অজান্তেই তিনি আশেপাশের মানুষের মধ্যে ভয়ের বীজ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এভাবেই শেষ হয়েছে তার ভৌতিক গল্প ভয়।
ব্যক্তিগত মতামত
ভৌতিক গল্প পড়তে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি হতে পারে বেস্ট চয়েস। হরেক রকমের ভৌতিক গল্প আপনার মধ্যে জাগিয়ে তুলবে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি। অত্যন্ত সহজ সাবলীল বাংলা ভাষায় রচিত এই সব গল্পগুলো সম্পূর্ণ দেশীয় পটভূমিতে লেখা। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত বিভিন্ন কাহিনী ফুটে উঠেছে বিভিন্ন লেখকের সুনিপুণ দক্ষতায়। ভূতের গল্পের ফ্যান হিসেবে আমি বলতে পারি এ বইটি নিঃসন্দেহে সেরাদের মধ্যে একটি।
ব্যক্তিগত রেটিং
৯/১০
আজকের মতো এতোটুকুই। আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।।
ভূতের গল্প গুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে । আর হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই হলে তো কথাই নেই । আজকের এই বইটার রিভিউ পড়ে গেল খুব ভালো লাগলো। আপনি অনেক গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে পোস্টটি সাজিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
হুমায়ূন আহমেদ আমারও প্রিয় লেখক। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি সুন্দর একটি কমেন্ট শেয়ার করার জন্য। ভাল থাকবেন।
সত্যি বলছি বহু লেখকের বই পড়েছি কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা কোন বই আমি পড়িনি। তার বই কে কেন্দ্র করে যে নাটক গুলো পরিচালিত হয়েছে সেগুলো দেখেছি। ভুত প্রেত আছে কিনা জানি না তবে বিশ্বাস করি হয়তো কিছু একটা রয়েছে।কারন সাইন্স এর এক্সটার্নাল এক্সামিনার হিসেবে তিনিই তার বাস্তবিক অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। ধন্যবাদ ভাই ভাল থাকবেন।
শুনে খুবই আশ্চর্য হলাম এত লেখকের বই পড়েছেন অথচ দেশের একজন নামকরা গুনী লেখকের একটি বই পড়েন নি। সত্যি বলতে কি উপন্যাস থেকে নাটক চিত্রায়িত করা অনেকটাই কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাটকগুলো উপন্যাসের মূল কাহিনীকে সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে না। যাই হোক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
কেন জানি না ভাই নাটক গুলোই আমার হৃদয়ে বেশী নাড়া দেয়। সত্যি অসাধারন সব লেখা আর যখন নাটক তৈরী হয় তখন বাস্তবতার ছোয়া টা বেশী পাই। ধন্যবাদ ভাই।
খুব চমৎকারভাবে আপনি বই টি রিভিউ করে উপস্থাপন করলেন, বেশ অনেকগুলো লেখক এর নাম উপস্থাপন করেছেন, বেশ কয়েকটি নাম পরিচিত হলেও কয়েকটি নাম অপরিচিত আমার। খুব ভালো লাগলো আপনার আজকের গোছালো এই পোস্ট দেখে। আগে বই পড়ার একটি অভ্যাস ছিল এখন তা নেই বললেই চলে, হুমায়ূন আহমেদের অনেক বড় একজন ফ্যান ছিলাম আমি, তবে এই বইটি আমার পড়া হয়নি খুব ভালো লাগলো আপনার রিভিউ পড়ে।
পড়ে দেখবেন, গ্যারান্টি দিচ্ছি ভালো লাগবে। বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকদের দারুন দারুন সব গল্প। শুভকামনা রইল আপনার জন্য
হুমায়ূন আহমেদের লেখা ভৌতিক বইটি আজও কখনো পড়িনি তবে আপনার পোস্ট টি পরে ভিতরে জানি একটু আতঙ্ক কাজ করছিল । আমি ছোটবেলা থেকে এসব ভৌতিক বইগুলো পড়তে অনেক ভয় বোধ করি কেননা ভূতকে আমি অনেক ভয় পাই । তাইতো রাতে তেমন একটা বাড়ি থেকে বের হতে পারে না যাইহোক চমৎকারএকটা জিনিস আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ।
রাতেই তো ভূতের গল্প পড়তে বেশি মজা। তবে ভূত বলে কিছু নেই এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন না। করলে ভয়টা কিসের।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা খুবই সুন্দর একটি ভৌতিক গল্প বইয়ের রিভিউ আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। আসলে সত্য কথা বলতে ভৌতিক গল্প শুনতে এবং পড়তে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। যদিও এই বইটি এর আগে আমি পড়েছিলাম না কিন্তু আপনার রিভিউ পোস্ট পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম বইটি পড়া আমার দরকার।
আপনারা আছেন বলেই এ ধরনের রিভিউ পোস্ট লেখার ভরসা পাই। অনেক ধন্যবাদ আপনার গোছানো ও সুন্দর মন্তব্য শেয়ার করার জন্য।