বাংলাদেশের মৎস্য পরিচিতি। ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। মাছে ভাতে বাঙালি একসময় কথাটি বেশ প্রচলিত ছিল। তখন বাংলার ঘরে ঘরে ছিল গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ। এখন আর সেদিন নেই। বসতি আর ফসলি জমির প্রয়োজনে পুকুরগুলো সব ভরাট হয়ে গেছে। নদী গুলোও প্রায় মাছ শুন্য। বর্তমানে বাঙালির মাছের চাহিদার এক বৃহদাংশ পূরণ করে মৎস্য খামার গুলো। সত্যি বলতে কৃত্রিমভাবে যদি মাছ চাষ করা না হতো তাহলে হয়তো এদেশের গরিব জনসাধারণের পক্ষে মাছের স্বাদ গ্রহণ করাই অসম্ভব হয়ে পড়ত। একসময় এদেশের খাল বিল নদী-নালায় প্রায় আড়াইশো প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। যার মধ্য এখন মাত্র গুটি কয়েক অবশিষ্ট আছে। আমাদের মধ্যে যারা সচ্ছল পরিবারের মানুষ তাদের খাবারের প্লেটে প্রত্যেকদিনই হয়তো কোন না কোন মাছ থাকে। তবে এই মাছ এর প্রজাতি আমরা কতজন চিনি সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাজারে গিয়ে দরদাম করে মাছ কেনা রীতিমতো একটা যুদ্ধ জয়ের মতো ব্যাপার। মাছ বিক্রি করে যেসব ব্যবসায়ীরা তাদের প্রবণতাই থাকে ১০০ টাকার মাছ 500 টাকা দাম চেয়ে বসা। তারপর খরিদ্দার এর কাজ দরদাম করে সেটাকে যতটা কমিয়ে আনা। এজন্যই হয়তো আমরা কথায় কথায় উদাহরণ দিয়ে থাকি "এটা কি মাছের বাজার পেয়েছ নাকি"। যাই হোক যাদের পক্ষে বাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না বা মাছের প্রজাতি সম্পর্কেও ধারণা কম তাদের জন্যই আমার আজকের এই প্রয়াস। চেষ্টা করব ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের কমন কিছু মাছের উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরার।

শিং

20230216_105148.jpg

খুব কম বাঙালি আছে যারা শিং মাছ চেনেন না। এগুলো আমাদের খাল বিল নদী-নালার মাছ। পুকুর, ডোবা, হাওর বাওর সব জায়গায় এই মাছ একসময় অনেকে দেখা যেত। এই মাছগুলো মূলত পানির তলদেশে বাস করে। রুগীর পথ্য এবং রক্ত বৃদ্ধিতে এই মাছগুলো খুবই উপকারী। এই মাছগুলোর মাথার দুপাশে দুটো কাটা থাকে, যার খোঁচা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।

চিতল

20230216_105136.jpg

চিতল মূলত একটি রাক্ষুসে প্রজাতির মাছ। এই মাছগুলো আকৃতিতে অনেক বিশাল আকৃতির হয়ে থাকে এবং অন্যান্য সকল ছোট মাছ খেয়ে সাবার করে। এই মাছগুলোর ছোট প্রজাতিকে অনেকে ফলি মাছ বলে থাকে। এরাও মূলত পানির তলদেশে বসবাস করে।

বেলে

20230216_105129.jpg

এগুলোর নাম বেলে মাছ। বেলে মাছ প্রধানত দু ধরনের। একটা মিঠা পানির বেলে আরেকটা সামুদ্রিক পানির বেলে। ছবিতে যেগুলো দেখা যাচ্ছে এগুলো মিঠা পানির বেলে। সাধারণত নদীতে পাওয়া যায়। খসখসে স্যান্ড পেপার এর মত ত্বকের এই মাছগুলো পানির মধ্যে বালির উপরে সব সময় শুয়ে থাকে। তাই হয়তো এর নাম হয়েছে বেলে।

চিংড়ি

20230216_105124.jpg

চিংড়ি মাছ চেনে না এমন কোন মানুষ সম্ভবত নেই। সারা পৃথিবীতেই প্রচুর জনপ্রিয় এই মাছটি। যদিও এদেরকে ঠিক মাছ বলা যায় না। সঠিকভাবে বলতে গেলে এরা এক ধরনের পানি পোকা। আমাদের দেশে গলদা, বাগদা, চাকা, হরিনা এবং টাইগার চিংড়িসহ আরো কয়েক প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়।

কালি বাউশ

20230216_105116.jpg

এই মাছগুলোর নাম কালি বাউশ। স্থানীয়ভাবে এই নামেই এদেরকে ডাকা হয়। অন্য কোন শুদ্ধ নাম আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এটা বাংলাদেশের একটা বিলুপ্ত প্রায় মাছ। এগুলো মূলত নদীর মাছ। পুকুরে বা হ্যাচারিতে এই মাছগুলো সাধারণত চাষ করা হয় না।

টাকি

20230216_105108.jpg

এই টাকি মাছ গুলোর প্রাণশক্তি অতুলনীয়। অনেকটা বিড়ালের মত। পানি ছাড়াও এই মাছ দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। পুকুর, নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর, বাওর বাংলাদেশের সর্বত্র এ মাছ দেখতে পাওয়া যায়। টাকি মাছ মূলত দুই প্রকার। একটা ভোলা টাকি আরেকটা চেং টাকি।

সিলভার কার্প

20230216_105157.jpg

এই মাছ দুটির নাম সিলভার কার্প। এগুলো সম্ভবত আমাদের দেশের আদি মাছের প্রজাতি নয়। কার্প জাতীয় মাছ মানেই শংকর অথবা বিদেশি প্রজাতি। তবে এ প্রজাতির মাছ বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। দামে সস্তা এবং বৃদ্ধি অনেক বেশি বলে বাজারে এগুলো প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়।
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationTepakhola, Faridpur
Sort:  
 2 years ago 

অনেক ভালো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আসলে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলে এই মাছগুলো এখন বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। বিশেষ করে নদী নালা যেখানে মাছের ছোট ছোট বাচ্চা পর্যন্ত মেরে ছাটাই করে দিচ্ছে। ছোটবেলা আমিও দেখেছি নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এখন একদমই নেই আর পুকুরের কথা কি বলবো ঘনবসতি হওয়ার কারণে সবাই পুকুর ভরে বসবাসের জায়গা করে নিয়েছে। পুকুরে তেমন মাছ চাষ হয় না সেজন্যই চাহিদার তুলনায় প্রচুর ঘাটতি অনেক ধরনের মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

 2 years ago 

ভবিষ্যতে এ দেশে পুকুর বলে যে কিছু থাকবেনা এটা নিশ্চিত। তখন হয়ত ঘরের মধ্য বা বাসার ছাদে বিশেষ পদ্ধতিতে মাছ চাষ হবে। তবে প্রাকৃতিক ভাবে জনসংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে ভিন্ন কথা। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।

 2 years ago 

মোটামুটি অনেক পরিচিত মাছ আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন অনেক বর্ণনার সাথে। আপনার এই পোস্টে আমি আমার নিজের অনেক মাছ দেখতে পারলাম। আপনার এত সুন্দর বর্ণনা আমার খুবই ভালো লেগেছে। তবে এই মাছগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মাছ টাকি।

 2 years ago 

আমি শুধু মাত্র টাকি মাছের ভর্তা খাই এছাড়া অন্যকোন ভাবে রান্না করলে টাকি মাছ খাইনা। যাইহোক সামনে আরো অনেক মাছ নিয়ে পোষ্ট করবো ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আজকে আপনি খুবই সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আপনি যে বিষয়ে আলোচনা করেছেন তা হল মাছ আর মাছ হল বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক সম্পদ। এই মাছ বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণ চাষ করা হয়। বর্তমানে এ মাছ চাষে কোন বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। আপনি বেলে মাছের ফটোগ্রাফি দিয়েছেন আমি বহুদিন ধরে বেলে মাছ দেখিনি।আপনার ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে দেখতে পেলাম। তাছাড়া বাকি যেগুলো আপনি আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন এগুলো আমরা চাষ করেই থাকি। যাক আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

বেলে মাছ আমাদের পুকুরেও একসময় প্রচুর ছিল । আর নদীতে তো অহরহ দেখা যেত। ছোট নদীগুলো এখন শুকিয়ে গেছে আর বড় নদীতেও মাছ তেমন নেই। হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলোর মধ্যে অনেক মাছই আর দেখতে পাবেনা।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন একসময় এই কথাটি অনেক প্রচলিত ছিল যে মাছে ভাতে বাঙালি। যা এখন আমাদের দেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে। সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আজকে আপনি আলোচনা করেছেন। আগে শুনেছি পুকুর ভরা মাছ গোলা ভরা ধান এখন আর এগুলো দেখাই যায় না। যাইহোক আপনার মাছের ফটোগ্রাফি গুলো এবং সাথে বর্ণনা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ইচ্ছা আছে পরবর্তী পর্বগুলোতে মাছগুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব। তখন হয়তো আপনার অজানা আরো অনেক মাছ দেখতে পাবেন। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

মাছে ভাতে বাঙালি এই প্রবাদটি হয়তো একসময় আর থাকবেনা। যে হারে মাছের বিলুপ্তি ঘটছে আর দাম বাড়ছে, তাতে সামনে মধ্যবিত্ত মানুষের মাছ খাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
যাক আমার প্রিয় কিছু মাছ নিয়ে কথা বলেছেন আজ, বিশেষ করে কালবাউস মাছটার স্বাদ আমার দারুন লাগে।
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার পোস্টটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 2 years ago 

কালবাউশ মাছ চিনি তবে কখনো খেয়েছি কিনা মনে করতে পারছিনা। হয়তো আপনার কথাই ঠিক। এক সময় এদেশে আর এত প্রজাতির মাছ থাকবেনা। তবুও ইচ্ছে করে হারানো ঐতিহ্য যদি আবার ফিরে পাওয়া যেত।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 55216.42
ETH 2325.60
USDT 1.00
SBD 2.33