নদী ও জীবন। ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। টেলিভিশন চ্যানেলে এক সময় নদী ও জীবন নামের একটি অনুষ্ঠান দেখানো হতো। আমরা সবাই জানি ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ একটি ডেল্টা বা বদ্বীপ। যার সৃষ্টি হয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর যাবত নদী বি্ধৌত পলি মাটি সঞ্চিত হয়ে। নদীমাতৃক এই দেশের একসময় নদীই ছিল প্রাণ। সারাদেশ ব্যাপী অসংখ্য নদী নালা জালের মত প্রবাহিত হয়েছে। এইসব নদীগুলোর বেশিরভাগই উৎপত্তি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালের বিভিন্ন পর্বতমালা থেকে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট কারণে বাংলাদেশের এইসব নদীগুলো আজ অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু বড় বড় নদী ছাড়া আর সব নদী পলি জমে তার নাব্যতা হারিয়েছে। বড় নদী গুলোর অবস্থাও যে খুব একটা ভালো তা নয়। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এইসব নদীর উপর তৈরি হয়েছে বৃহদাকৃতির সব সেতু। সেতু তৈরি করার জন্য দুই পাশে করা হয়েছে নদী শাসন। অর্থাৎ নদীর উভয় তীরে মাটি ও পাথর দিয়ে নদীর মাঝে অনেকটা বাঁধের মতো তৈরি করা হয়েছে। এই নদী শাসন ও সেতু তৈরির সমগ্র প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে গিয়ে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়।
আজকের পোস্টে যে ছবিগুলো দেখছেন এ এলাকা আপনাদের পূর্ব পরিচিত। আমার পোস্টে অসংখ্যবার এই নদী এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার ছবিগুলো আপনারা দেখেছেন। এই নদীটির নাম পদ্মা। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এক নদী। ছোটবেলায় যখন এই নদীটি দেখেছি তখনো এর যৌবন শেষ হয়ে যায়নি। নদীর এপার থেকে ওপারে খালি চোখে দেখা যেত না। বর্ষায় ফুলে থেকে ওঠা প্রচন্ড খরস্রোতা এই নদীর নাম ছিল কৃত্তিনাসা কিন্তু ৩০-৩৫ বছরের ব্যবধানে আজ এই নদীটিকে আর চেনা যায় না। জায়গায় জায়গায় নদী সংকুচিত হয়ে খালের আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুমে তিন চার মাস পানি থাকলেও শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে মরুভূমির আকার ধারণ করে। নদীর বুকে তখন শুধু দেখা যায় বিস্তীর্ণ বালুরাশি। পণ্য পরিবহনের প্রধান উপায় যখন ছিল এই নদী নাব্যতার সংকটের কারণে এখন সেখানে কোন জলযানই চলাচল করতে পারে না।
যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌ পথ তাই হারিয়েছে তার অতীত। সে স্থান দখল করে নিয়েছে সড়ক পথ। ফেরির মাধ্যমে যানবাহন পারাপারে সময় বেশি লাগে তাই নদীর বুকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় সেতু। এইসব সেতুর পিলার এবং নদী শাসনের কারণে সেতু সৃষ্টির অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এর তলদেশে জমতে থাকে পলি মাটি। এভাবে যেখানেই সেতু তৈরি হয় তার নিকটবর্তী এলাকায় তৈরি হয় বিশাল বিশাল সব চর। নদী হারায় তার গতিপথ। বর্ষার সময় উজান থেকে ধেয়ে আসা পানি তাই নিম্নাচল প্লাবিত করে। আর সৃষ্টি হয় ভাঙ্গনের। সারা পৃথিবীব্যাপী নদীগুলো যখন মানুষের কাছে আশীর্বাদ আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে নদী ভাঙ্গনের ফলে বিস্তীর্ণ জনপদ যেমন বিলীন হয়ে যায় ঠিক তেমনি বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হয় প্রলয়ংকরি বন্যা। অতীতে নদী খনন ও সংরক্ষণের ব্যাপারে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যত কোন সুফল-ই পাওয়া যায়নি। মাঝখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় হয়েছে। (চলবে....)
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer | @ferdous3486 |
---|---|
Device | Samsung M21 |
Location | Dholarmor, Faridpur |
আপনার নদী ও জীবন নিয়ে লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগল। ঠিক বলেছেন নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে। আসলে নদী পথে বর্তমানে সেতু হয়ে নদী তার গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। শুধু বর্ষা মৌসুমে নদী পথে দেখা যায় বিস্তৃত বালুরাশি।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
মাঝে মাঝে মনেহয় সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই আশির্বাদকে আমরা কিভাবে অভিশাপ বানিয়ে ফেলেছি। কবে যে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে শিখব আল্লাহই জানে।
বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হলেও আজ আমাদের উন্নয়নের জোয়ার এবং কিছু ভূমিদস্যুদের জন্য নদী তার অস্তিত্ব সংকটে। আসলে দেখার কেউ নেই, বোঝার মানুষগুলো আজ বোবা হয়ে গেছে। একদিন হয়তো মরুভূমি হয়ে যাবে এই সুজলা সুফলা দেশটা। সবকিছুই নিজের চোখে দেখতে হবে আর আফসোস করতে হবে ভাই।
ভীষণ গভীর এবং অর্থবহ একটি পোস্ট ছিল।
আসলেই ভাই আমাদের শুধু দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নীতি নির্ধারকদের মধ্যে যতিদিন পরিবর্তন না আসবে আর আমারা যতদিন সচেতন না হব ততদিন কিছুই হবেনা।
বর্তমানে এটা বলতে পারেন, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ ছিল কিন্তু বর্তমানে সেটা আর নেই। কারণ উন্নয়নের জোয়ারে সবকিছু ভেসে যাচ্ছে হাহাহা। যাই হোক আপনার মতামত গুলো অনেক ভালো লাগলো ভাই।
এই উন্নয়নের জোয়ারে এখন শুধু আমাদের ভেসে যাওয়ার অপেক্ষা। যে হারে এই জোয়ার বয়ে চলেছে সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের রক্ষা করেন।
একটা সময় বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ ছিল তা না এখনো ভাড়া ছিল নদী, খাল ,বিল, এবং তাদের ছোট বড় অনেক শাখা প্রশাখা। কিন্তু এগুলো আস্তে আস্তে সব
বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একদিন হয়তো সুজলা সুফলা আর শস্য শ্যমলা নদীমাতৃক এই দেশ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার আজকের এই পোস্টটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
জলবায়ুগত আর মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারনে আজ আমাদের দেশের এই অবস্থা। সামনে হয়তো আরো খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে। তবে আশাকরি একদিন এ দেশের মানুষ ভাবতে শিখবে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু এখন ছোটখাটো সব নদী বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটা বড় নদী আছে সেগুলো এখন বিলীন হওয়ার পথে। তবে আপনি অনেক সত্য কথাই বললেন বড় বড় সেতু এবং বিভিন্ন ধরনের কাজের কারণে সেই নদীগুলো এখন নৌ চলাচল অনেক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আর বর্ষাকাল আসলে অনেক অঞ্চল ডুবে যায়। আর এখন বাংলাদেশকে নদী মাত্রিক দেশ বলাই যাবে না।
আপনার কথার সাথে একমত পোষন করছি। এখন আর এ দেশকে নদী মাতৃক দেশ বলাই যাবেনা। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় সময় হয়তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ধন্যবাদ।