কাঁচা বাজারের চ্যালেঞ্জ। ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে খেতে হয়। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী এই খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। আদিম যুগে মানুষ শিকারের মাধ্যমে তার খাদ্য সংগ্রহ করত। দলবদ্ধভাবে শিকার করা খাদ্য দিয়ে তারা উদরর্পূর্তি করত। শিকার করতে পারলে তাদের খাদ্য জুটত না করতে পারলে অনাহারে থাকতে হতো। এরপর আসলো কৃষি যুগ। মানুষ বপন ও পশু পালন করতে শিখলো। তারা আবিষ্কার করল বীজ থেকে গাছ তৈরি হবার প্রক্রিয়া। কৃষিকাজ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে শিকারের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক কমে গেল। এভাবে হাজার হাজার বছরের পরিক্রমায় মানুষ বর্তমান সভ্যতায় উপনীত হয়েছে। এখন সব মানুষকেই আর কৃষিকাজ বা শিকারের উপর নির্ভর করতে হয় না। বিনিময় প্রথার মাধ্যমে মানুষ একে অপরের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে চালু হয়েছে সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রা ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে এই বিনিময় কেন্দ্র বা স্থানগুলোকে আমরা সাধারণত হাট বাজার, শপিং সেন্টার বা ট্রেড সেন্টার বলে থাকি। এ জায়গাগুলো থেকে আমরা অর্থের বিনিময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারি। এবার আসি মূল বিষয়ে, আমাদের দেশে বাজার করা বেশ কঠিন একটা কাজ। কারণ এখানে সাধারণত দরকষাকষি করে দ্রব্য ক্রয় করতে হয়। বিক্রেতারা চেষ্টা করে তাদের পণ্য সর্বাধিক দামে বিক্রি করতে আর ক্রেতার চেষ্টা থাকে সর্বনিম্ন দামে তা ক্রয় করা। এভাবে দর কশাকশির মাধ্যমে কেউ লাভ করে আবার কেউ বা ঠকে। সেই ছোটবেলা থেকে মাঝে মাঝেই আমি আমাদের বাসার বাজার করে থাকি। যখন বাবা বাসায় থাকতেন না তখন এই দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হতো। বাবার মৃত্যুর পর স্থায়ীভাবে এ দায়িত্ব আমার উপর এসে বর্তায়। মাছ মাংস বা সবজি ক্রয় করার ক্ষেত্রে সবচাইতে কঠিন হচ্ছে মাছ কেনা। জেলেরা সাধারণত ন্যায্য মূল্যের চাইতে তিন বা চার গুণ দাম চেয়ে বসে থাকে। এছাড়াও সুযোগ পেলেই তারা পচা বা নষ্ট মাছ কাস্টমারদেরকে গছিয়ে দেয়। এই প্রতিবন্ধকতা গুলো এড়িয়ে কম দামে ভালো মাছ কেনা সত্যিই অনেক দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। তবে ইদানিং এর চাইতেও সবচাইতে বড় সমস্যা যেটা হয়েছে তা হচ্ছে ঘুষখোর আর অবৈধ উপার্জন কারী ব্যক্তিদের দৌরাত্ম। বাজারে এদেরকে দেখলেই চেনা যায়। এরা সাধারণত কোন মাছেরই দরদাম করে না। পছন্দ হলেই বিক্রেতাকে ব্যাগে উঠিয়ে দিতে বলে। এমনকি বাজারের অর্ধেক মাছ এ ধরনের লোকদের ব্যাগেই চলে যায়।
একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি, কয়েকদিন আগে যখন বাজারে গিয়েছি, এক পরিচিত ভদ্রলোককে দেখলাম মাছ বিক্রেতার সঙ্গে দরদাম করে তাকে যখন প্রায় রাজি করিয়ে ফেলেছে এমন সময় এক পুলিশ এসে দরদাম ছাড়াই মাছটি ব্যাগে পুরে নিলেন। তিনি হয়তো ন্যায্য দামের চাইতে অনেক বেশি দাম দেবেন আর মাছ বিক্রেতাও অতিরিক্ত দামে তার কাছে মাছ বিক্রি করতে পেরে খুশি। এ ধরনের মানুষের জন্য সমাজের দরিদ্র মানুষের কাছে দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এরা একদিকে যেমন গরিব মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তেমনি মানুষের নৈতিকতা বোধকে প্রহসন করছে। ভালো খাওয়া বা ভালো পড়া দোষের কিছু নয়। তবে তা যেন অবৈধ উপার্জনের না হয় সেদিকে আমাদের সবারই লক্ষ্য রাখা উচিত। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর একটি হাদিসে বলা আছে "যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না "। আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer | @ferdous3486 |
---|---|
Device | Samsung M21 |
Location | Tepakhola bazar, Faridpur |
ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে বাজার থেকে অনেক কিছু কিনতে গিয়ে অনেক সময় আমরা ঠকে যাই। পঁচা দ্রব্য আমাদেরকে গছিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো চোখের আড়ালে কিংবা ইচ্ছে করেই এই কাজগুলো তারা করে। আসলে ব্যবসায়ী যদি সৎ না হয় তাহলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। জনসচেতনতা মূলক একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তবে দুঃখের বিষয় কি জানেন আপু, আমার মনে হয় বেশিরবাগ ব্যবসায়ীই অসৎ। দ্রুত পয়সা করার জন্য যত রকমের অসৎ পন্থা আছে তার সবকিছুই প্রয়োগ করে এই ব্যবসায়ীরা। যে কারনে আমাদের দেশে লাগামহীন ভাবে এই দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে চলেছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
একমাত্র এই কথাটার জন্য জীবনে অনেক কিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে আজ আমরা মধ্যবিত্ত। তবে সত্যিই অন্তর থেকে একটা শান্তি পাওয়া যায়, অন্তত উপর ওয়ালা হারাম খাওয়াচ্ছেন না।
আজকাল বাজারে গেলে সত্যিই মাঝে মাঝেই দামের একটা ধাক্কা বুকে এসে লাগে। তবুও ভাই মধ্যবিত্ত মানেই সব সামলিয়ে এগিয়ে চলা। কিছু মানুষের পরকালের ভয় নেই, শুধুমাত্র ভোগ বিলাস বড় ব্যাপার তাদের কাছে।
অনেক বিষয় বোঝার রয়েছে আপনার পোস্টটি থেকে।
যত যাই বলেন আমার মনে হয় এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীরাই সমাজের সবচাইতে ভাইটাল রোল প্লে করে। আর এই শ্রেণীর মানুষের জীবনটাই সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং। আমরা যেহেতু পরকালে বিশ্বাসী সুতরাং আমাদের একটই প্রার্থনা যাতে সৎভাবে জীবনটা পার করে দিতে পারি। ধন্যবাদ ভাই এভাবে সবসময় পাশে থাকার জন্য।
এখন বাজারে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে যে ভালো সবজি রেখে ব্যাগের মধ্যে পঁচা সবজি গুলো দিয়ে দেয়। এখনকার যুগে সৎ মানুষ আর সব ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। সুন্দর ছিল আজকের পোস্টটি ভাইয়া।
ঠিক বলেছেন আপু। এখন সৎ মানুষ পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। তবে যতক্ষন পর্যন্ত আমরা নিজেরা সৎ না হতে পাারব ততক্ষন অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ধন্যবাদ।