মানব সভ্যতা ও মহাকাশ গবেষণা। পর্ব-৩ (ভয়েজার মিশন)। 10% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

আজ- ২৮ ফাগুন/১৩ মার্চ| ১৪২৮, বঙ্গাব্দ/২০২২ খ্রিস্টাব্দ| রবিবার | বসন্তকাল |


আসসালামু-আলাইকুম।

কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। প্রথম পর্বে আমরা জেনেছিলাম মানুষের তৈরি প্রথম কোন যান আমাদের সৌরজগতের সীমানা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছিল যার নাম ভয়েজার। আজ আমরা এই ভয়েজার মিশন সম্পর্কে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব। তবে পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে আমি জটিলতা এড়িয়ে যতটা সম্ভব সহজভাবে বলার চেষ্টা করব।

stars-g646f2f8e9_1920.jpg

Source

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দুই প্রধান পরাশক্তি আমেরিকা এবং রাশিয়া মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। কক্ষপথে নিত্যনতুন স্যাটেলাইট স্থাপন সেইসঙ্গে প্রযুক্তিগত নানা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে একে অপরের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে তারা। শুরুর দিকে রাশিয়া মহাকাশ গবেষণায় অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকে। ১৯৬৯ সালে চন্দ্র বিজয়ের পর মানুষের আগ্রহ জন্মায় সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ গুলি সম্পর্কে জানার। এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই তৎকালীন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ভয়েজার মিশন প্রকল্প হাতে নেয়।

space-probe-g2365d01b2_1920.jpg

Source

১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ভয়েজার 2 নামে একটি স্পেস প্রোব উৎক্ষেপণ করে। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শনি গ্রহের বলয় এবং বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে অনুসন্ধান। ভয়েজার ২ লক্ষ্য অর্জনে সফলতা অর্জন করলে পরবর্তীতে মিশন বর্ধিত করে ভয়েজার 2 কে ইউরেনাস এবং নেপচুন গ্রহের দিকে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার ১ নামে আরেকটি প্রোব উৎক্ষেপণ করা হয়। ইউরেনাস এবং নেপচুন গ্রহের কক্ষপথ ছাড়িয়ে 2012 সালের আগস্ট মাসে ভয়েজার 1 ইন্টারস্টেলার স্পেসে প্রবেশ করে। এটাই প্রথম মানুষের নির্মিত প্রথম কোন বস্তু যা এত বিশাল দূরত্বে আসতে সক্ষম হয়েছে। প্রসঙ্গত ইন্টারস্টেলার স্পেস বলতে এক নক্ষত্র হতে অন্য নক্ষত্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব কে বোঝানো হয়ে থাকে। এই ভয়েজার মিশনের দায়িত্বে ছিলেন কার্ল সাগান নামক একজন বিখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী। সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে ইন্টারস্টেলার স্পেসে প্রবেশের মুহূর্তে এই যন্ত্র পৃথিবীর একটি ছবি তোলে। যার নাম A pale blue dot। যেখানে আমাদের বসবাসকারী এ পৃথিবী গ্রহ কে মহাকাশের মাঝে দেখা যায় একটি ধূলিকণার মত। এ বিখ্যাত ছবিটি থেকেই মানুষ প্রথম ধারণা করতে পারে মহাবিশ্বের বিশালত্বের তুলনায় আমাদের এই গ্রহ কল্পনার চাইতেও ক্ষুদ্র। কপিরাইট বিধিনিষেধ থাকায় ছবিটি শেয়ার করা গেল না।

planet-ga395f61c5_1920.jpg

Source

বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের জল্পনা-কল্পনা বহুদিনের। তাই এই ভয়েজার মিশন এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধান। এজন্য এই প্রোবটিতে একটি গোল্ড প্লেটেড ডিস্ক সংযুক্ত করা হয়। এতে আছে পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত গান, ছবি সহ পৃথিবী সম্পর্কে কিছু তথ্য। যদি কখনো বহির্বিশ্বের কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে এই যানটি যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় তাহলে তারা যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে বা আমাদের সম্পর্কে ধারনা করতে পারে এটাই ছিল এই গোল্ডেন ডিস্ক স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য। ভয়েজার এ পর্যন্ত প্রায় ২৩.৩০৭ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এখনো ছুটে চলেছে মহাবিশ্বের গভীরে। এটিই মানুষের তৈরি একমাত্র যান যা দীর্ঘ ৪৫ বছর পরও সচল আছে এবং নিয়মিত তথ্য প্রেরণ করে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের কাছে।

আজকের মতো এতোটুকুই। আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।।

তথ্যসূত্রঃ

Sort:  
 3 years ago 

সত্যি অসাধারন একটি বিষয় আপনি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর করে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য

 3 years ago 

সময় নিয়ে আপনি পোস্টটি পড়েছেন সেইসঙ্গে আপনার মতামত জানিয়েছেন এজন্য রইল আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

এটিই মানুষের তৈরি একমাত্র যান যা দীর্ঘ ৪৫ বছর পরও সচল আছে এবং নিয়মিত তথ্য প্রেরণ করে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের কাছে।

আসলে উপরোক্ত এ বিষয়টি সম্পর্কে জানা ছিল না আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে। খুবই দুর্দান্ত একটা আবিষ্কার ছিল। আমার আমি মনে করি 45 বছর পর্যন্ত একটা আবিষ্কার সচল থাকে এবং সঠিকভাবে কাজ করে যাওয়ার এটি পৃথিবীর মানুষের জন্য বিশাল একটা আবিষ্কার। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সৌরজগৎ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন পর্ব আকারে, এজন্য আমরা আপনার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 

ভাই এই ধরনের পোস্ট আসলে কেউ পড়তে চায় না অথবা আমার উপস্থাপন তেমন আকর্ষণীয় হয় না তাই কেউ পড়ে না। যাই হোক ভয়েজারের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর পৃথিবীর যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও কয়েকমাস আগে শুনতে পেলাম আবারো সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। সব সময় এভাবে উৎসাহ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 
মহাকাশ গবেষণা রিলেটেড লেখা আর ভিড়িও খুবই আকর্ষনীয় হয়। আমি ইউটিউবে এই রিলেটেড ভিডিওগুলো অনেক দেখি। আপনার লেখার কোয়ালিটি ১০০/১০০ আগেও আপনার লেখা পড়েছি। যখনি পড়ি তখনি নতুন কিছু জানতে পারি। অনেক ধন্যবাদ ভাই। ❣️
 3 years ago 

আমিও আপনার মত এই ধরনের ভিডিও বা আর্টিকেলগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। এগুলো জানতে আমার খুবই ভালো লাগে। উৎসাহ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।

New to Steemit?

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 97546.59
ETH 2745.14
SBD 0.62