ফান প্যারাডাইজে কিছু সময়। ১০ শতাংশ লাজুক শিয়ালের জন্য।
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। সেই নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক ঘুরে আসার পর বলতে গেলে প্রায় শুয়ে বসেই সময় কাটছে। তাই কোথাও ঘুরতে যাবার জন্য মনটা আঁকুপাকু করছিল। আমাদের জেলা শহর ফরিদপুরে ভালো মানের তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র বা পর্যটনের স্পট নেই। যেগুলো আছে তার প্রত্যেকটিতেই যাওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। নতুনদের কাছে হয়তো এ সমস্ত জায়গাগুলো ভালোই লাগে, তবে আমার কাছে এগুলো আকর্ষণ হারিয়েছে। বাড়িতে বসে বসে যখন বোর হচ্ছিলাম হঠাৎ পরিকল্পনা করলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসি ফরিদপুর শহর থেকে অদূরে অবস্থিত ফান প্যারাডাইস পার্কটিতে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ধুলদি রেলগেট নামক স্থানে হাইওয়ের ঠিক পাশেই অবস্থিত এই পার্কটিতে বেশ কয়েক বছর আগে এসেছিলাম একবার। বাসা থেকে বের হয়ে একটি ইজিবাইক রিজার্ভ করে পৌঁছে গেলাম পার্কের প্রবেশপথের সামনে। আমাদের দেশে যেহেতু শীতকালই পর্যটন মৌসুম আর এসময় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকে তাই প্রত্যেকটি বিনোদন কেন্দ্রগুলো সেজে ওঠে ভিন্ন সাজে। পার্কে প্রবেশ ফি জন প্রতি ৭০ টাকা। তিন বছরের অধিক বয়সী শিশুদের প্রবেশ ফি দেবার কথা থাকলেও আমার ছেলের বয়স ৪ বছর হওয়া সত্ত্বেও কোথাও তার জন্য টিকিট কাটতে হয়নি। এদিক দিয়ে কর্তৃপক্ষ বেশ নমনীয়ই বলা যায়। প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম ভেতরে বেশ কিছু বাস এবং প্রাইভেট কার নিয়ে দূর দুরান্ত থেকে বেশ কিছু ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এখানে বেড়াতে এসেছে।
গোটা পার্ক জুড়েই সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন ধরনের পাতা বাহারের গাছ সাজিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে গোটা পার্কটি। আর স্থানে স্থানে আছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। হাতি, বাঘ, সিংহ, জিরাফ, ড্রাগন, প্রজাপতি, পানির ফোয়ারা সহ বিভিন্ন ধরনের এইসব শিল্পকর্ম প্রথম দেখাতেই যে কারো ভালো লেগে যাবে। পার্কটির বিভিন্ন অংশ পিকনিক করার জন্য আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে আছে রান্না করা এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। অনেক বড় আকৃতির একটি অডিটরিয়ামও আছে ভেতরে। চাইলে যে কেউ ভাড়া নিয়ে এখানে যে কোন ধরনের অনুষ্ঠান করতে পারেন। তবে পার্টিতে বাচ্চাদের জন্য রাইড এর সংখ্যা ছিল খুবই কম। সবমিলিয়ে মাত্র চারটি। পার্কের একেবারে শেষ প্রান্তে আছে ম্যাজিক বা সুইং বোট, এরপর দোলনা, এর ঠিক পাশেই নাগরদোলার মত একটি রাইড। পার্কের ঠিক মধ্যখানে আছে বিশাল আকৃতির একটি দিঘি। যেখানে রাজহাঁস আকৃতির বেশ কয়েকটি প্যাডেল বোট ভেসে বেড়ায় সবসময়। প্যাডেল বোটগুলোর ভাড়া জনপ্রতি 50 টাকা। এখানকার প্রত্যেকটি রাইডের টিকেটের মূল্যই জনপ্রতি 50 টাকা।
ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আছে একটি স্নাক্স বার। যেখানে চটপটি, ফুচকা, দই, আইসক্রিম সহ টুকটাক হালকা খাবার পাওয়া যায় সবসময়। আরো আছে খেলনার বেশ কয়েকটি দোকান। শহরের বাইরে কোলাহলমুক্ত নির্জন পরিবেশে সময় কাটাতে চাইলে পরিবার পরিজন অথবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে আসতে পারেন এই পার্কটিতে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পার্কটি। স্থানীয় পর্যটকদের জন্য শুধু একটি সমস্যা। আর তা হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থা। নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকলে এখানে আপনাকে আসতে হবে ইজিবাইক ভাড়া করে। আর বাংলাদেশের অন্য সব জায়গার মতো এখানেও গড়ে উঠেছে এক সিন্ডিকেট। ১০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা চেয়ে বসে থাকবে এবং আপনাকে তাতেই যেতে হবে বাধ্য হয়ে। কিছুই করার নেই এদের বিরুদ্ধে। যাই হোক ভেতরের পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। আশা করি তাতে আপনার যাতায়াত ভাড়া বৃথা যাবে না।
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer | @ferdous3486 |
---|---|
Device | Samsung M21 |
Location | Fun paradise, Faridpur |
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া একই জায়গায় বারবার গেলে তার প্রতি তেমন একটা আকর্ষণ থাকে না। যেমন আমি দেখেছি আমাদের বাড়ির পাশে লালন এবং রবি ঠাকুরের বাড়িতে সারা বাংলাদেশের দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে দেখতে কিন্তু আমাদের কাছে এখন তেমন একটা কিছু মনে হয় না। পার্ক টির মধ্যে আপনি অনেক সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন আসলে আপনার ফটোগ্রাফি গুলা দেখেই বুঝতে পারছি চারিদিকে সবুজে মোড়ানো। সবুজে ছাওয়া এমন জায়গা ভ্রমন করতে আমার অনেক ভালো লাগে
ঠিক বলেছেন আপনারা হয়তো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তাই আর আকর্ষন বোধ করেন না কিন্তু আমরা যারা দুর থেকে যাই তাদের কাছে দারুন লাগে। অনেকদিন রবী ঠাকুরের বাড়ি যাওয়া হয়না। পরের বার গেলে আপনার সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে। ধন্যবাদ ।
ইনশাআল্লাহ